Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » সাজা দেওয়ার প্রচলিত নিয়ম থাকছে না




হা সারা দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামিকে সাজা দেওয়ার প্রচলিত রীতিতে পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এই রায়ে অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত হলে রায় ঘোষণার আগে তার সাজা কী হবে, সে বিষয়ে পৃথক শুনানি করতে হবে। এই শুনানি কীভাবে করতে হবে, হাইকোর্টের রায়ে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই রায় প্রকাশ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা সার্কুলার আকারে জারি করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের অবহিত করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিত দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠিয়ে, সঙ্গে সাজা প্রদানের বিষয়ে রায়ের নির্দেশাবলী মেনে চলার জন্য সারা দেশের আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছেও এই রায়ের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। রায়টি বিশ্লেষণ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘একটি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায়ে একজন ব্যক্তি দোষী কি নির্দোষ, সেটা নির্ধারিত হওয়ার পর তার সাজা কী হবে, কে ঠিক করবে তার সাজা, কীভাবে ঠিক করা হবে—সেই গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। বিদেশে একটি কোর্টে দোষী কিংবা নির্দোষ নির্ধারিত হয়। দোষী নির্ধারিত হওয়ার পর অপর একটি কোর্টে শুনানি হয়, তাদের সাজা কী হবে—সেই শুনানিতে আসামির ব্যাকগ্রাউন্ডসহ অনেক কিছু দেখা হয়। এরপর সাজার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে এটি অনুপস্থিত। এর কারণে সাজার ক্ষেত্রে আমরা অনেক বিশৃঙ্খলা দেখতে পাই। অনেক ক্ষেত্রে অবিবেচনাপ্রসূত সাজা দেওয়া হয়।’ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ে সাজা নির্ধারণের আগে একটি শুনানি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই শুনানি নিয়ে সাজা নির্ধারণ করতে বলেছেন। এ রায়ের বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ক্রিমিনাল জাস্টিস ডেলিভারি সিস্টেমে একটা আমূল পরিবর্তন এসে যাবে। এ রায় বাস্তবায়ন হলে নতুন একটি দিগন্তের সূচনা হবে।’ রায়ের এই নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় আসামির শাস্তি নির্ধারণে আলাদা শুনানি করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নিম্ন আদালতের জন্য এখন বাধ্যতামূলক হবে। যদিও এ ধরনের পৃথক শুনানির ব্যবস্থা প্রচলিত আইনে নেই। এ কারণে এই রায়ের নির্দেশনা প্রতিপালন করা আইনগতভাবে কতটুকু সম্ভব সেটা নির্ধারণে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। কারণ, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এ বিষয়টি আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত হওয়া উচিত।’ হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়েছে, উভয়পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনানি যখন শেষ হয় এবং বিচারক অভিযুক্তকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কয়েক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন বিচারক উভয়পক্ষের কাছে উন্মুক্ত আদালতে বা ট্রাইব্যুনালে তার মতামত প্রকাশ করবেন। বিচারক তার মনের কথা পক্ষদের জানাবেন এবং তারপর অভিযুক্তের উপযুক্ত সাজা নির্ধারণের জন্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পৃথক শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন।’ রায়ে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের শুনানিতে পক্ষগুলো তাদের দখলে থাকা অপরাধের উত্তেজক এবং প্রশমিত উপাদানগুলোসহ অভিযুক্তের সামাজিক পটভূমি, অপরাধের রেকর্ড, বয়স, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি সরবরাহ করার অধিকারী হবেন, যা আমাদের আপিল বিভাগ আতাউর মৃধা ভার্সেস রাষ্ট্র মামলার সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে নির্দেশ করেছে। এ ধরনের শুনানিতে বিচারক সাজার প্রকৃতি, পরিস্থিতির তীব্রতা, অপরাধীর বয়স এবং চরিত্র, ব্যক্তিবিশেষ বা সমাজের প্রতি আঘাত, একজন অপরাধী অভ্যাসগত, নৈমিত্তিক বা পেশাদার অপরাধী কিনা, অপরাধীর ওপর দেওয়া শাস্তির প্রভাব, বিচারে বিলম্ব এবং দীর্ঘস্থায়ী বিচার চলাকালীন অপরাধীর মানসিক যন্ত্রণা ভোগসহ অপরাধীর সংশোধন ও সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়ার পরই বিচারক দোষী সাব্যস্ত করে সাজাসহ রায় ঘোষণা করবেন। মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, যশোর কোতোয়ালি থানায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আনোয়ার হোসেন ও লাভলুর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চে মামলা হয়। আসামিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন মারা যান। এরপর ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল লাভলুর বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে লাভলুকে মৃত্যুদণ্ড দেন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এরপর মামলাটি ডেথরেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া আসামি জেল আপিল করেন। ডেথরেফারেন্স খারিজ করে ও আসামির আপিল আংশিক মঞ্জুর করে গত ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তার সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, একজন বিচারকের সাজা প্রদান এখন এই উপমহাদেশে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইতোমধ্যে আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র মামলায় বিচারকদের উপযুক্ত এবং আনুপাতিক সাজা দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা (গাইডলাইন) না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছে, সাজা দেওয়ার নীতির জন্য একটি বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা (গাইডলাইন) প্রয়োজন। আতাউর মৃধা মামলায় বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী অপরাধের উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রশমিত পরিস্থিতি নির্ধারণের জন্য সাজা প্রদানের ব্যাপারে একটি পৃথক শুনানির প্রস্তাব করেছেন। আমাদের আইনে, বিশেষ করে ফৌজদারি কার্যবিধিতে পৃথক সাজা শুনানির জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধান নেই। তবে এ ধরনের শুনানি করতে কোনো বাধা নেই। রায়ে বলা হয়, একজন ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেওয়া একটি অত্যন্ত গুরুতর কাজ এবং আইনসভার আইন দ্বারা বাধ্য করা না হলে আদালত সর্বদা এ জাতীয় কোনো আদেশ দিতে অনিচ্ছুক। আধুনিক বিশ্বের কিছু দেশ ইতোমধ্যে মূলত এর ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে। একটি ফৌজদারি মামলার পক্ষগুলো মানুষ এবং তারা ভুল করতে বাধ্য। এর জন্য একজন ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। রায়ে বলা হয়েছে, এখন প্রশ্ন উঠছে, অভিযুক্তের কোনো শুনানি না হলে আদালত ঠিক কীভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি জানবে। বিশেষ করে যখন ইংল্যান্ডের মতো বাংলাদেশে এমন কোনো সেন্টেন্সিং কাউন্সিল বা বোর্ড নেই, যা আদালতকে এই ধরনের বিষয়ে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে। ফলে বিচারকরা যখন একটি নির্দিষ্ট শাস্তি আরোপের প্রয়োজন হয় তখন তারা দ্বিধায় পড়ে যান। রায়ে আসামি লাভলুর বিষয়ে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় অভিযুক্তের বয়স ছিল প্রায় ২৮ বছর। তার দুই সন্তান ও স্ত্রী ছিল। অন্যদিকে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, এই অভিযুক্ত শুধু একবার ধর্ষণ করেছে এবং ধর্ষণ করা ছাড়া তার কোনো বিকৃত মানসিকতা ছিল না। অন্যদিকে, ধর্ষণের সবচেয়ে জঘন্য কাজ করেছে আসামি আনোয়ার, যিনি এরই মধ্যে মারা গেছেন। আদালত বলেছেন, আমরা এই মামলার ক্ষেত্রে অপরাধের ক্রমবর্ধমান এবং প্রশমন পরিস্থিতিগুলো যত্নসহকারে যাচাই করেছি। যেহেতু প্রসিকিউশন মামলাটি বেশিরভাগই এই আপিলকারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে, তাই তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পুরো বিবৃতি এই ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রশমিত পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রাখার সময় বিবেচনা করা উচিত। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই আসামি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, নৃশংসতার সঙ্গে ধর্ষণের সবচেয়ে বিকৃত কাজটি অভিযুক্ত আনোয়ার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন, সেও একবার ধর্ষণ করেছে। সে আসামি আনোয়ারের ডাকে ঘটনাস্থলে যায় এবং তার প্ররোচনায় তা করেছে। নথিপত্রে প্রমাণ রয়েছে যে, এই আপিলকারীর বাড়িটি গ্রামের লোকেরা তছনছ করেছে। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজা প্রদানের বিষয়ে পৃথক শুনানি না হওয়ায় এই অভিযুক্তের স্ত্রী ও সন্তানদের কী হয়েছিল, তা আমরা জানতে পারিনি। আমাদের মতো দেশে একটি পরিবারের মহিলা সদস্যের পাশাপাশি শিশুরা বেশিরভাগই পুরুষ সদস্যের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, স্বীকৃত অবস্থান হলো আপিলকারী ইতোমধ্যে ৯ বছর কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে ৫ বছরেরও বেশি সময় কনডেম সেলে রয়েছেন। আতাউর মৃধা মামলার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কনডেমড সেলে থাকায় প্রতিদিনই তিনি মারা যান। তাই আমরা মনে করি, এই আপিলকারীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করা উচিত। হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তকে তার প্রশমিত পরিস্থিতির পক্ষে দাখিল করার বা অপরাধের মাত্রা নির্ধারণের জন্য কোনো শুনানি দেয়নি। এটা অস্বীকার করা যায় না যে, তাকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন অনেকাংশেই তার স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর করেছে। এই স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি ছাড়া অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রসিকিউশনকে অনেক লড়াই করতে হতো। অতএব, দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যখন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর নির্ভর করা হয়েছিল, তখন এ ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিতে প্রশমিত পরিস্থিতি, যদি থাকে, তাও ট্রাইব্যুনালের বিবেচনা করা উচিত ছিল। যেহেতু আইন অনুযায়ী আসামির সাজা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হয়, সে কারণে রায় ঘোষণার আগে সাজার ব্যাপারে পৃথক শুনানি ছাড়া বিচারকের পক্ষে এমন কারণ উল্লেখ করা যায় না।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply