রিশাল সিটির ভোটে বিএনপি না থাকলেও চূড়ায় উঠেছে উত্তেজনার পারদ। বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের ভোট কোন দিকে যাচ্ছে আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট আদতে নৌকায় পড়ছে কিনা এর ওপর নির্ভর করছে ভোটের অঙ্কের শেষ ফল। জটিল এই নির্বাচনী হিসাবে, হাতপাখার প্রার্থীসহ অন্তত তিনজনের ভরসা বিএনপির ‘নীরব ভোট’। আওয়ামী লীগের আশা, বিএনপির ভোট ভাগাভাগিতে সহজেই বিজয় গন্তব্যে পৌঁছাবে নৌকা। রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটির ভোট কৌশলে এক মার্কায় পড়লেই নৌকার জন্য বিপদ। মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরদিন গত ২৫ মে গাজীপুর সিটিতে সুষ্ঠু ভোট দেখেছে পুরো দেশ। জাতীয় রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বরিশালেও অবাধ নির্বাচনের আশা সবার। নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ১২৬ কেন্দ্রের সবক’টিতে আজ সোমবার ইভিএমে হবে এ ভোট। ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ ভোটার নগরের মেয়র ও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেছে নেবেন। ভোটের আগের দিন গতকাল বরিশালে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। ১১৫ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। ঢাকায় বসে নজর রাখতে প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অতীতে কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভোট উৎসবের আমেজ ফিকে হলেও অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগের সম্ভাবনায় বরিশালে পুরোনো দিনের নির্বাচনী আনন্দ ফিরেছে। নির্বিঘ্নে তুমুল প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। সাধারণ ওয়ার্ডের ১২৫ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ৪২ কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট জমালেও মূল আকর্ষণ মেয়র পদ ঘিরে। করপোরেশনের শীর্ষপদে বসতে লড়ছেন সাতজন। এর মধ্যে হাতপাখা ও লাঙ্গলের প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন। তবে নৌকার প্রার্থী বলেছেন, ভোটের পরিবেশ চমৎকার রয়েছে। কে পাবেন বিএনপির ভোট ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল সিটি বিএনপি অধ্যুষিত। দলটি নির্বাচন বর্জন করলেও তাদের সমর্থকদের ভোটেই নির্ধারিত হতে পারে জয়-পরাজয়। খোকন সেরনিয়াবাত নামে পরিচিত আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহও আশাবাদী, তিনিও পাবেন বিএনপির ভোট। তবে সরাসরি বলেননি। ঘুরিয়ে বলেছেন, দলমত নির্বিশেষে ভোট পাবেন। সর্বাত্মক বর্জনের নীতি নেওয়া বিএনপি ভোটে প্রার্থী হওয়া ১৯ নেতাকে বহিষ্কার করেছে। যেসব নেতাকর্মী প্রচারে রয়েছেন, তাঁদেরও শাস্তি দিচ্ছে। গতকাল ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক মজনু বেপারিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী কেফায়েত হোসেনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান বরিশালে নেই। দলটির অন্য নেতারাও ভোট দেবেন না। কেন্দ্রে গেলে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি রয়েছে। তবে দলের সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের ‘বেঁধে রাখা’ কঠিন। কারণ, ১৮ ওয়ার্ডে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী। তাঁদের জন্য হলেও বিএনপি সমর্থকরা কেন্দ্রে যাবেন বলে সবাই মনে করছেন। মেয়র পদে টেবিলঘড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন দল থেকে বহিষ্কার হওয়া কামরুল আহসান রূপন। তিনি বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে। তাঁর প্রতিও দলের সমর্থকদের একাংশের সমর্থন রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, নৌকা ঠেকাতে বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমানের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে ঘড়িতে। তবে তিনি তা নাচক করেছেন। ধানের শীষের ভোট নৌকা কিছুতেই পাবে না দাবি করে তিনি সমকালকে বলেন, বিএনপির যারা কেন্দ্রে যাবে, তাদের ভোট ভাগাভাগি হতে পারে। ভোট ভাগাভাগিতে নৌকার আশা আওয়ামী লীগের নেতারা আশা করছেন, বিএনপির ভোট ভাগাভাগিতে নৌকা জিতে যাবে। একজন নেতার মূল্যায়ন, পৌনে তিন লাখ ভোটারের দেড় লাখ থেকে পৌনে দুই লাখ ভোট দিতে পারেন। নৌকা ৬০-৬৫ হাজার ভোট পেলেই রাস্তা পরিষ্কার। বাকি লাখ খানেক ভোট ভাগ হবে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে আলাপে একই ধারণা পাওয়া যায়। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মঞ্জুর হোসেন বলেন, বিএনপির লোকেরা যেখানে-সেখানে ভোট দেবে। নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হক বলেন, ধানের শীষের সমর্থকদের ভোট চরমোনাইয় পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা, জাতীয় পার্টির লাঙল এবং ঘড়িতে ভাগ হবে। নৌকার জয়ে সংশয় নেই। দলের সব ভোট নৌকা পাবে কিনা সংশয় দলের সব ভোট আওয়ামী লীগ পাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁরই চাচাকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। গত ৪ এপ্রিল থেকে বরিশালে নেই সাদিক। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, নৌকাকে হারাতে কাজ করছেন সাদিকপন্থিরা। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে খোকনপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমানের দাবি, সাদিকপন্থিররা স্লোগান তুলেছে, ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন, হাতপাখায় ভোট দিন’। যদিও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদিকপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থী সাফিন মাহমুদ তারিক এ দাবির সত্যতা নাকচ করেছেন। খোকন সেরনিয়াবাতের নীরবতাও বলছে, আওয়ামী লীগের সব ভোট নৌকায় আসবে না। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সমকালের প্রশ্ন ছিল, ভোটে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থন পাবেন কিনা। নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘এ নিয়ে আমার বক্তব্য নেই।’ এ কথা বলেই সংবাদ সম্মেলনের ইতি টানেন। ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ একচেটিয়া জয় পেলেও তাঁর অনুগতদের নিয়ন্ত্রণে কত ভোট রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন মেয়র সাদিক। তিনি ৩০ ওয়ার্ডে এবং অঙ্গসংগঠনের অনুগতদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বসালেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। খোকনপন্থি নেতাদের ভাষ্য, সাদিকের অনুগত হাজার দুইয়েক ভোট রয়েছে। তা না পেলেও জিতবে নৌকা। তবে সাদিকপন্থিদের দাবি, অন্তত ১০ হাজার ভোট আছে তাদের। তা নৌকায় না গেলে ফল বদলে যাবে। প্রতিটি এজেন্ট দেওয়ার মতো নিজস্ব কর্মী নেই নৌকার প্রার্থীর। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টের দায়িত্ব পাওয়া কর্মী নজরুল ইসলাম জানান, একসময় তিনি সাদিক বলয়ের রাজনীতি করতেন। আরেকজন এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোট কোথায় দেবেন, নিশ্চিত নয়। সাদিকপন্থি একজন প্রার্থী জানান, তাঁরা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন কিনা, গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি করেছে। ডেকে নিয়ে জেরা করছে। নিজ দল অবিশ্বাস করায় অনেক সাদিকপন্থি হতাশ। অন্যের ভোট ভরসা তিন প্রার্থীর প্রচারে নৌকাকে টেক্কা দেওয়া ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার চালানো জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের ভরসা বিএনপির ভোট। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন ইকবাল হোসেন। লাঙ্গলের প্রার্থীর ভাই তসলিম উদ্দিন মহানগর যুবদলের সভাপতি। ভাইয়ের কারণে ধানের শীষ সমর্থকদের ভোট তিনি পাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর হাতপাখার প্রার্থীর আশা, নৌকাকে ঠেকাতে তাঁকে ভোট দেবে বিএনপি সমর্থকরা। বরিশাল মহানগরের বর্ধিত এলাকা বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামীণ এলাকায় ঘরে ঘরে প্রচার চালিয়েছে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা। রূপনও রয়েছেন দলের নীরব ভোটের আশায়। তিনি বলেন, দল থেকে বহিষ্কার করলেও বাবার পরিচিতি এবং দলের প্রতি ভালোবাসার কারণে ধানের শীষের নীরব ভোট পাবেন। জাতীয় পার্টির এবং ইসলামী আন্দোলন সরকারের সমর্থক। তাদের ভোট দেবে না বিএনপির কেউ। তবে ভোটের মাঠের খবর, ধানের শীষের ভোট হাতপাখায় বেশি সংখ্যায় গেলে ইসলামী আন্দোলনের রিজার্ভ ভোটের সঙ্গে যোগ হয়ে, গাজীপুরের পুনরাবৃত্তিও হতে পারে। লাঙ্গলের নিজস্ব ভোটব্যাংক দুর্বল হওয়ায় অঘটন ঘটানোর সামর্থ্য কম জাতীয় পার্টির। জামায়াত কাকে ভোট দেবে খুঁজে পাচ্ছে না বরিশালে জামায়াতে ইসলামীর হাজার দশেক ভোট রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। দলটির চার নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াত সমর্থকরাও কেন্দ্রে যেতে পারেন নিজ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য। তবে মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন তা অনিশ্চিত। দলটির এক নেতা বলেন, সাত প্রার্থীর পাঁচজনকে রাজনৈতিক সমীকরণে ভোট দেওয়া অসম্ভব। বাকি দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একজন দুর্বল। ভোট কেটে চমকে দিতে অন্যরা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার বরিশালের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন। তিনি কাশীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। কাশীপুর ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় যুক্ত ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আলী হোসেনের হরিণ প্রতীকের ব্যাপক প্রচার রয়েছে। তিনি কয়েক হাজার ভোট পেলে ফল বদলে যেতে পারে। জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চুও কাশীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। জাকের মঞ্জিলের মুরিদদের ভোট পেলে তিনিও প্রভাবক হতে পারেন। গাজীপুরের অভিজ্ঞতায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেখানে বিএনপির সমর্থকরা নৌকায় ভোট না দিয়ে অচেনা প্রার্থীকে দিয়েছে। এতে বহুভাগে ভাগ হয় বিএনপির ভোট। বরিশালেও একই ধারা চললে নৌকারই লাভ।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: