চীন-রাশিয়া বাণিজ্যিক লেনদেনে রেকর্ড, দুশ্চিন্তায় পশ্চিমারা
ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে পশ্চিমাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন এগোচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। অভিযোগ ওঠেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আড়ালে রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধের কাঁচামাল সরবরাহ করছে চীন। ভূ-রাজনীতিতে যা চরম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে।
করমর্দন করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (বাঁয়ে) ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও বেশি। চীনা কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। এদিকে, দিন দিন বাড়তে থাকা মস্কো ও বেইজিংয়ের এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক এরই মধ্যে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে।
বর্তমানে চীনের সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে রাশিয়া। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ নাগাদ দুই দেশের বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৯৩.৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু মে মাসেই দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ২০.৫ বিলিয়ন ডলারের। মে মাসেও চীন রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ১১.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
পাশাপাশি রাশিয়ায় দিন দিন বাড়ছে চীনের রফতানি। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশটিতে বেইজিংয়ের রফতানি দাঁড়িয়েছে ৪২.৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭৫.৬ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে নতুন চুক্তিতে চীন-রাশিয়া
ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর সর্বাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়ে মস্কো। এ বিপদে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় প্রতিবেশী চীন। পশ্চিমা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেইজিং ঘোষণা দেয় দুদেশের বন্ধুত্বের কোনো সীমা নেই। শুধু ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা, অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে মস্কোর পাশে দাঁড়ায় দেশটি। মূলত বেইজিংয়ের দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের মুখেপড়া মস্কো অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়।
মস্কোর পাশে দাঁড়ানোয় বাণিজ্যিকভাবে বেইজিংকে নানাভাবে হেনস্তার চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চীনের অর্থনীতিতেও। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমা প্রভাবিত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে বেইজিংয়ের। ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ২৫ শতাংশ। অপরদিকে শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও চীনের বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ১২.৩ শতাংশ।
তবে মস্কোর সঙ্গে ক্রমেই বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে বেইজিং এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে চীন ও রাশিয়ার লেনদেন ২০০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে বলে গত মে মাসে বেইজিং সফরে গিয়ে আশা প্রকাশ করেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুসটিন।
Tag: English News others world
No comments: