ইউক্রেনকে সমর্থন করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ন্যাটো
ইউক্রেনকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ন্যাটো। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাতের কারণে জোটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাই সমাধান না করে ফেলে রাখছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ন্যাটো। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর কাছে এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক কর্মকর্তারা।
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে শুরু হতে যাওয়া ন্যাটো জোটের শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে ন্যাটোর সদস্যরা ইউক্রেনকে সমর্থনের কারণে সৃষ্ট ব্যয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি জোটের সদস্যদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কিছু সদস্য দেশ প্রশ্ন রেখেছে, কতটা সময় ধরে এবং কী পরিমাণ সাহায্য ইউক্রেনকে দেয়া হবে এবং এর পরিণতি কী হবে?
যদিও জনসমক্ষে ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বারবার দেখিয়ে এসেছেন যে, তারা ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছেন। এমনকি বলছেন, ইউক্রেনের যতক্ষণ প্রয়োজন, ততক্ষণ তারা পর্যন্ত সাহায্য দিতে প্রস্তুত।
এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের গত শুক্রবার (৭ জুলাই) দেয়া বক্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আমরা ইউক্রেনকে যতক্ষণ পর্যন্ত সহায়তা প্রয়োজন ততক্ষণ সমর্থন করে যাব এবং তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা দেব।’
আরও পড়ুন: মস্কোকে বাইডেনের হুমকি /ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগেই রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে
তবে এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ করে বাইডেনকে এবং তার প্রশাসনকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়তি সুবিধা দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের কারণে ন্যাটোর অন্য সদস্যদেরও অতিরিক্ত পরিমাণ সহায়তা দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা হেগার শেমালি বলেন, কিয়েভকে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি হয়তো শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হতে পারে। যেমন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাট পার্টির অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এ প্রক্রিয়া।
তার মতে, তবে একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ার জন্য তার পশ্চিমা সমর্থকদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু সহায়তা দেয়ার জন্য চাপ বাড়াচ্ছে। তবে এ চাপে হঠাৎ সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে।
আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরোপ সেন্টারের ফেলো রিচেল রিজ্জোর মতে, আবার ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ার যে বিষয়টি, তা স্বল্প মেয়াদে জোট তথা ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোকে চাপা দেয়ার উপায় হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য: এরদোয়ান
আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া হবে না, এমন কি রিজ্জো সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, কবে নাগাদ দেশটিকে সদস্যপদ দেয়া হবে সে বিষয়েও কোনো দৃঢ় বক্তব্য থাকবে না। রিজ্জো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এটি দেখতে পাচ্ছি যে, জোটের (ন্যাটো) একটি বড় অংশের দাবি হলো যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব ইউক্রেনে বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখা (সহায়তা চালু রাখা)।’
তবে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে - এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে রিজ্জো বলেন, ‘ন্যাটোকে অবশ্যই এ শীর্ষ সম্মেলনে একটি সমন্বিত ফ্রন্ট নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। তাই এখানে সহজ পদ্ধতি হল কেবল স্বল্পমেয়াদি সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানো। বিপরীতে জোটটি বড় বড় সমস্যাকে স্রেফ পদদলিত করে দমিয়ে রাখছে।’
এ অবস্থায় ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেয়ার বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়া নিয়ে ন্যাটো বিভক্ত বলেই মনে হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান সদস্য রাষ্ট্রগুলো কিয়েভকে জোটে নিতে অনিচ্ছুক। সম্প্রতি বাইডেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, কিয়েভকে এখন জোটে আমন্ত্রণ জানানো মানে রাশিয়ার সঙ্গে জোটের সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। মূলত এ কারণেই ইউক্রেনকে যেকোনো উপায়েই সমর্থন করা হোক না কেন, দেশটিকে নিয়ে ন্যাটোর মধ্যে বিভক্তি বাড়ছে
Tag: English News Featured others
No comments: