কেন পারমাণবিক বোমার পক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখেছিলেন আইনস্টাইন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর ঠিক আগে, ১৯৩৯ সালের ২ আগস্ট পারমাণবিক বোমার পক্ষে উকালতি করে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্টকে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিলেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন। পরে সেই চিঠির সূত্র ধরেই পারমাণবিক গবেষণায় জোর দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ১৯৪৫ সাল নাগাদ পারমাণবিক বোমা তৈরিও করে ফেলে।
আলবার্ট আইনস্টাইন। ছবি: সংগৃহীত
জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসলে যেসব জার্মান দেশত্যাগ করেছিলেন তাদের মধ্যে আলবার্ট আইনস্টাইন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রে এসে তিনি জানতে পারেন জার্মান সরকার নিউক্লিয়ার ফিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আরও তিন বিজ্ঞানী লিও জিলার্ড, এডওয়ার্ড টেলার এবং ইউজিন ভিগনার আইনস্টাইনকে উদ্বুদ্ধ করেন রুজভেল্টের কাছে চিঠি লিখতে। এই তিনজনও অস্ট্রিয়া এবং জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে এসেছিলেন। অনেকে বলেন চিঠি লিখেছিলে জিলার্ড নিজে, আইনস্টাইন শুধু তাতে সই করেছিলেন। কারণ, তারা মনে করতেন তাদের চেয়ে মার্কিন সরকারের কাছে আইনস্টাইনের গুরুত্ব বেশি।
আইনস্টাইন লিখিত চিঠিতে রুজভেল্টকে সতর্ক করে লিখেছিলেন, ‘এই আবিষ্কারের (নিউক্লিয়ার ফিশন) আলোকে এমন শক্তিশালী বোমা তৈরি করা সম্ভব যা কিনা বড় আকারের বন্দর এবং তার আশপাশের এলাকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।’
আরও পড়ুন: সফল হতে যা করেছিলেন আইনস্টাইন
আইনস্টাইনের লেখা সেই চিঠি রুজভেল্টের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার আলেকজান্ডার স্যাকস। রুজভেল্টকে তিনি চিঠিটি পড়েও শোনান। শোনার পর রুজভেল্ট বলেন, ‘অ্যালেক্স, এখন আপনার কাজ হলো এমন একটা উপায় খুঁজে বের করা যার করলে নাৎসিরা আমাদের বন্দরগুলোকে উড়িয়ে দিতে পারবে না।’ জবাবে স্যাকস বলেন, ‘ঠিক তাই।’
পরে ঠিক তক্ষুনি রুজভেল্ট তার সচিবকে ডেকে পারমাণবিক গবেষণা জোরদার করা এবং বোমা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
আইনস্টাইনের চিঠি মার্কিন প্রশাসনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। রুজভেল্ট ১৯৩৯ সালের অক্টোবরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এগিয়ে নিতে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। আর তখনই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
যদিও প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ছিল না। পরে ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে পার্ল হারবার আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অবশ্য এর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ম্যানহাটান প্রজেক্ট শুরু করে দেয় এবং ১৯৪৫ সাল নাগাদ পারমাণবিক বোমাও আবিষ্কার করে ফেলে। পরে দুটি বোমা জাপানের নাগাসাকি এবং হিরোশিমায় ফেলা হয়। সেখানে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়। এর একদিন পর জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
আরও পড়ুন: ১০০ বছর পর এ আলো খুঁজে পেল বিজ্ঞানীরা
যদিও পরে প্রমাণ হয়ে যায় যে, জার্মানি পারমাণবিক বোমা তৈরি করেনি। এমনকি এটাও ধারণা করা হয় যে, জাপান কখনো এমন বোমা তৈরির চেষ্টাও করেনি।
এছাড়া আইনস্টাইনও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বোমা তৈরির প্রকল্পে কাজ করেননি। বলা ভালো তাকে কাজ করতে দেয়া হয়নি। কারণ, তিনি ছিলেন জাতে জার্মান এবং বাম ঘেঁষা রাজনীতির সমর্থক। যা তাকে ম্যানহাটান প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে।
জীবনের শেষ দিকে এসে আইনস্টাইন সেই চিঠির জন্য একাধিকবার আক্ষেপ করেছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, রুজভেল্টের কাছে লেখাই সেই চিঠি তার জীবনের ‘সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি’।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
Tag: English News lid news others world
No comments: