সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র: ফরেন পলিসি
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসি।
সিরিয়ায় এখনও প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেদন মতে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়ায় ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে মার্কিন সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হতে পারে। যদিও এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
তবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র দফতরের ভেতরের অন্তত চারটি সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস সিরিয়া মিশন চালিয়ে যেতে চাইছে না। তারা এটাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছে। কখন ও কিভাবে সেনা প্রত্যাহার করা যেতে পারে তা নির্ধারণ করতেই ভেতরে ভেতরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর জন্য এটা হবে উপহারস্বরূপ। উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও গোষ্ঠীটি সিরিয়ায় ফের নিজেদের শক্তিশালী করার সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন: ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলো হামাস
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের জুনে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের উত্থান ঘটে। কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ দুটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
গোষ্ঠীটিকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৮০টিরও বেশি দেশ নজিরবিহীন অভিযান শুরু করে। তিন বছরের অভিযানে ২০১৭ সালে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে যৌথ সামরিক জোট। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ায় এর চূড়ান্ত ঘাঁটিটিও মুক্ত হয়।
একইভাবে ইরাকেও আইএস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশটিতে গোষ্ঠীটির অবস্থা এমন হয়েছে যে, ২০১৪ সালে যেখানে তারা প্রতি মাসে প্রায় ৮৫০টি হামলা চালাত, ২০২৩ সালে সেখানে সেটা মাসে মাত্র নয়টিতে নেমে আসে।
আরও পড়ুন: ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় মার্কিন হামলা
প্রতিবেদন মতে, ইরাকে আইএস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সিরিয়ার পরিস্থিতি এখনও বেশ জটিল। ফলে সেখানে এখনও প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এসব সেনার মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় আইএসের উত্থান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কিন সেনাদের সহযোগিতা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)।
এদিকে ইরাক থেকেও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। তবে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি আরও কিছু থাকতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই ইরাক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার হিসেবে। তাছাড়া আইএসের ঘাঁটি ইরাকের মাটিতেই।
কিন্তু সম্প্রতি ইরাকে ইরানি প্রতিরোধ গোষ্ঠী ও মার্কিন বাহিনীর মধ্যে অভূতপূর্ব সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাগদাদে মার্কিন হামলা আবারও ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো খুলছে মদের দোকান
অন্যদিকে ইরাকের মাটিতে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে আঘাত হানছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এমন পরিস্থিতিতে দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে চাপ দ্রুত বাড়ছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি এখন প্রকাশ্যেই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে মার্কিন সেনা সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছে ইরাক সরকার। চলতি মাসের শুরুর দিকে এমনটাই জানায় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির কার্যালয়।
No comments: