ভারতের লোকসভার প্রথম দফায় ভোটের হার আশানুরূপ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটলেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছেন। গতকাল রোববার রাজস্থান রাজ্যে এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বিলি করে দেবে। পারিবারিক সোনা-রুপার সঙ্গে বিবাহিত নারীদের গলায় পরা পবিত্র মঙ্গলসূত্র পর্যন্ত তারা কেড়ে নিয়ে বাঁটোয়ারা করে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, প্রথম দফার ভোট বিরুদ্ধে গেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ওই ভাষণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও জানানো হয়েছে। জনসভায় আসা মানুষের কাছে মোদি জানতে চান, তাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে, যাঁদের অনেক বাচ্চাকাচ্চা হয় তাঁদের মধ্যে, অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বাঁটোয়ারা হতে দেবেন কি না। এবারের ভোটে কংগ্রেস ও মুসলমানদের সমার্থক করে এভাবে প্রথম সরাসরি আক্রমণাত্মক হলেন নরেন্দ্র মোদি। এবং তা করতে গিয়ে তিনি যে দাবি করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভুল বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। মোদি বলেছেন, মুসলমানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করার কথা কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন সিংও বলেছিলেন, দেশের সম্পত্তির ওপর মুসলমানদের অধিকার সবার আগে। জনসভায় আসা মানুষের কাছে মোদি জানতে চান, তাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে, যাঁদের অনেক বাচ্চাকাচ্চা হয় তাঁদের মধ্যে, অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বাঁটোয়ারা হতে দেবেন কি না। এ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে মোদি বুঝিয়ে দিলেন, এ দেশের মুসলমানরা অনুপ্রবেশকারী। একমাত্র তাঁরাই গাদাগাদা সন্তানের জন্ম দেন। সম্পদ বিলিকে হাতিয়ার করার নেপথ্য কারণ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এক সাম্প্রতিক ভাষণ। তেলেঙ্গানায় দেওয়া সেই ভাষণে রাহুল বলেছিলেন, কোন শ্রেণির হাতে দেশের কত সম্পদ, জাতগণনার পাশাপাশি ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস তা জরিপ করে দেখবে। রাহুল বরাবর অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি শুধু ঘনিষ্ঠ কিছু পুঁজিপতির স্বার্থ দেখেন। তাঁর আমলে দেশের ১ শতাংশ মানুষ ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, বেশ বোঝা যাচ্ছে, মোদি হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, প্রথম দফায় ‘ইন্ডিয়া’ জোট এগিয়ে গেছে। মোদি তাই ঘৃণা ভাষণের আশ্রয় নিয়েছেন। -ADVERTISEMENT- Ads by রাহুলের সেই ভাষণের রেশ ধরেই রাজস্থানের বাঁশবাড়া কেন্দ্রের জনসভায় মোদি গতকাল রোববার বলেন, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বলেছিলেন, দেশের সম্পদের প্রথম অধিকারী মুসলমানরা। এবার কংগ্রেস তার ইশতেহারে বলেছে, ক্ষমতায় এলে আপনাদের রোজগারে অর্জিত সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দেবে। মা-বোনেদের কাছে থাকা সোনা–রুপার হিসাব কষা হবে। তারপর তা বিলি করা হবে তাঁদের মধ্যে, যাঁরা অনুপ্রবেশকারী, যাঁদের অনেক বাচ্চাকাচ্চা হয়। মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রও তাঁদের হাত থেকে রেহাই পাবে না। মোদি এই ভাবনাকে শহুরে নকশালদের মনোবৃত্তির সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি জানতে চান, জনগণ তা হতে দেবে কি না? মোদির ওই ভাষণ সম্প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, বেশ বোঝা যাচ্ছে, মোদি হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, প্রথম দফায় ‘ইন্ডিয়া’ জোট এগিয়ে গেছে। মোদি তাই ঘৃণা ভাষণের আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষমতার জন্য অসত্য কথা বলছেন। বিরোধীরা যা বলেনি, তা বলে মানুষকে বিপথে চালিত করছেন। আরএসএস ও বিজেপির প্রশিক্ষণই এমন। রাহুল গান্ধী বলেন, এটা হতাশার লক্ষণ। প্রথম দফার ভোট বিরুদ্ধে গেছে বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী এখন মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। মিথ্যা ভাষণে তিনি এতটাই নিচে নেমেছেন যে এখন মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন সিং বারবার মুসলিম সমাজের ক্ষমতায়নের কথা বলে এসেছেন। মোদি তা বিকৃত করছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল বলেন, কংগ্রেসের এবারের ইশতেহার বৈপ্লবিক। এবার মানুষ তার পরিবার, কর্মসংস্থান, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দেবে। অন্য ভাবনায় বিচ্যুত হবে না। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, তরুণ-তরুণী, কৃষক, দলিত, অনগ্রসরদের অভিযোগ নিয়ে একটি প্রশ্নেরও জবাব দিচ্ছেন না মোদি। লজ্জাজনকভাবে তিনি শুধু দেশের মানুষকে অপমান করে যাচ্ছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা মোদির উদ্দেশে বলেছেন, ‘মিথ্যুক।’ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসিও। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, মোদি মুসলমানদের অনুপ্রবেশকারী বললেন। বহু সন্তানের জন্মদাতা বললেন। ২০০২ সালে থেকে এটাই তিনি করে আসছেন। মুসলমানদের গালি দিচ্ছেন। এটাই তাঁর একমাত্র গ্যারান্টি। এসব করেন ভোট পাওয়ার জন্য। মোদির আমলেই দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে ৪০ শতাংশ সম্পদ। সাধারণ হিন্দুদের তিনি মুসলমানদের ভয় দেখাচ্ছেন অথচ তাঁদের সম্পদ কেড়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ধনী করছেন। মোদির সমালোচনা থেকে পিছিয়ে পড়েননি সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। তিনি বলেছেন, মোদি যে মিথ্যা বলেন, তা শুধু দেশবাসীই নয়, গোটা পৃথিবী জানে। যেভাবে তিনি কংগ্রেসের ‘ন্যায়পত্র’ ও মনমোহন সিংয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিলেন, তা নোংরা রাজনীতির উদাহরণ। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সাকেত গোখলেও সরব। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘ক্ষমতার ব্যবহার করুন।’ প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে অভিযোগ জানানোর আবেদন জানিয়ে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন, অন্তত এক হাজার বিশিষ্ট মানুষ ইসিকে বলবেন, দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সম্মিলিত দাবি ইসি অগ্রাহ্য করতে পারবে না। মোদির ভাষণের সমর্থনে প্রথমে বিজেপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় মনমোহন সিংয়ের সেই ভাষণের ২২ সেকেন্ডের এক ক্লিপিং। সেটা যে কত বড় প্রবঞ্চনা, তার প্রমাণে কংগ্রেস ওই ভাষণের প্রাসঙ্গিক অংশটুকু প্রচার করে। ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ওই ভাষণে তাঁর সরকারের সম্মিলিত অগ্রাধিকার ব্যাখ্যা করেছিলেন। সেগুলো ছিল কৃষি, সেচ ও পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ অবকাঠামো ও সাধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লগ্নি। পাশাপাশি তিনি তফসিলি জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর, সংখ্যালঘু, নারী ও শিশুদের উন্নয়নের জন্য কর্মসূচির কথা বলেছিলেন। মনমোহন সিং বলেছিলেন, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের গৃহীত প্রকল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। উন্নয়নের ফল লাভের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সমাজ, বিশেষ করে মুসলমান সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়নের নতুন উপায় বের করতে হবে। সম্পদের ওপর তাঁদের অধিকার সর্বাগ্রে। মনমোহন সিংয়ের দেওয়া ভাষণের মধ্য থেকে ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের এই অংশ প্রচার করে কংগ্রেস বুঝিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা বিজেপি ও মোদি কীভাবে বিকৃত করেছেন। মনমোহন বলেছিলেন ক্ষমতায়নের কথা, মোদি বলেছেন মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেওয়ার কথা। সেই সঙ্গে মুসলমানদের তিনি ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলতেও ছাড়েননি। নির্বাচন কমিশনে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে গাদাগাদা অভিযোগ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা হলো, আজ পর্যন্ত মোদি বা অমিত শাহর বিরুদ্ধে কমিশন একবারও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
lid news
»
politics
»
world
» কংগ্রেসকে জড়িয়ে মুসলমানদের আক্রমণ মোদির, ভারতের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: