Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » » সাহিত্য ও প্রকাশনায় মেহেরপুর জেলার ইতিহাস - নাফিজ উদ্দিন খান




সাহিত্য ও প্রকাশনায় মেহেরপুর জেলার ইতিহাস - নাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা । স্বাধীনতার পিঠস্থান এ জেলায় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তবে কালের প্রবাহে এখানকার সাহিত্যচর্চা ও প্রকাশনার প্রাথমিক যুগের ইতিহাসের অনেকাংশ বিস্মৃত হয়ে গেছে।ফলে প্রাচীনযুগের ইতিহাস জানার কোন সুযোগ নেই। মধ্যযুগে মেহেরপুর জেলার সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের গৌরবময় ইতিহাস উল্লেখ করার মত। যদিও মধ্যুযুগের অনেক স্মৃতি এখনও অজানা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভারতে চলে যাওয়ায় এবং ভারত থেকে এখানে এসে বসতিস্থাপন করায় এখানকার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে ইতিহাসের অনেক কিছু জনশ্রুতিতে পরিণত হয়ে আছে। এই জনশ্রুতির সূত্রধরে অনেকে ইতিহাসগ্রন্থও রচনা করেছেন।ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না থাকলেও মেহেরপুরের সাহিত্য ও প্রকাশনার গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি স্মরণ করার মত।বৃটিশও পাকিস্তান শাসনামলে মেহেরপুরে শিক্ষা ও চাকুরী উপলক্ষ্যে আগত অনেকেই সাহিত্য রচনা ও প্রকাশনায় অবদান রেখেছেন। শ্রীচৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) প্রেমভক্তিবাদ নদীয়া জেলার নবদ্বীপ সন্নিহিত মেহেরপুরে এনেছিল ভাব-ভাবুক তার জোয়ার। সেইভাবের জোয়ারে ভাবাবিষ্ট হয়ে মেহেরপুর নিবাসী কবি জগদীশগুপ্ত, রমনী মোহন মল্লিকসহ অসংখ্য বৈষ্ণব পদকর্তা সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত থেকে উদ্ধার করেন অসংখ্য বৈষ্ণব পদাবলী।চৈতন্য প্রবর্তিত সেই বৈষ্ণবীয় ধারাটি আজও মেহেরপুরে বহমান রয়েছে।বৈষ্ণব ধর্মের অবক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আঠারো শতকের শেষে বলরাম হাড়ী সম্প্রদায় নামে একটি লৌকিক গৌণধর্মের আবির্ভাব ঘটে মেহেরপুরে।এধর্মের প্রবর্তক বলরাম হাড়ি ছিলেন হিন্দুভক্তের কাছে হাড়িরা মআর মুসলমান ভক্তের হাড়ি আল্লা।এ সম্প্রদায়ের অনুসারীরা অধিকাংশই হাড়ি, ডোম, বাগদী, মুচি এবং নিচু শ্রেণির মুসলমান।রবীন্দ্রনাথের‘পাগলাহাওয়ারবাদলদিনে’গানে‘কোন বলরামের আমি চেলা’শব্দের লক্ষ বলরাম হাড়িও তার সম্প্রদায়।বলরাম হাড়ি সারাজীবন মানুষ ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন এবং তার অনুসারীরা বৈদিকমন্ত্র, পূজাঅর্চনা, দেব-দেবতা, গুরুবাদমানেননা। মধ্যযুগের প্রথমার্ধে মেহেরপুরের সাহিত্যঅঙ্গনে কৃষ্ণকান্তভাদুড়ীর(জন্মঃ১১৯৮(১৭৯১ খ্রূষ্টাব্দ)বঙ্গাব্দ - মৃত্যুঃ১২৫১(বঙ্গাব্দ(১৭৯১ খ্রূষ্টাব্দ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দ) নাম উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী মেহেরপুরের বাড়েবাঁকা গ্রামে দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি বাল্যকাল থেকেই পাদপূরণও ছোট ছোট কবিতা রচনা করতে পারতেন।তিনি চাকুরির সন্ধানে কৃষ্ণনগর আগমন করলে তদানীন্তন রাজা গিরীশচন্দ্র তাকে মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তিতে নদিয়া রাজপরিবারের সভাসদের পদ প্রদান করেন।এসময় তিনি ছোট ছোট পুঁথি রচনা করতেন।তবে এসময়ের কোন প্রকাশনার স্মৃতি সংরক্ষিত নেই।এসময় তিনি কৃষ্ণ হরিদাস নামে পরিচিতি পান। মেহেরপুরের অন্যতম সুসাহিত্যিক রমেশচন্দ্রদত্ত (১৩আগস্ট১৮৪৮ - ৩০নভেম্বর১৯০৯) একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক ছিলেন।তিনি বঙ্কিম চন্দ্রের অনুরোধে বাংলা উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন এবং বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের কারণে ১৮৭৪ সালে নদীয়া জেলার মেহেরপুরে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়৷ এখানে জরুরী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত অপরিহার্য হয়েপড়ায় রমেশ চন্দ্রকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া দিয়ে মেহেরপুরে বদলি করা হয়৷ রমেশ চন্দ্র দত্ত একটি এক বিশিষ্ট বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পরিবারের প্রায় সবাই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত৷ উচ্চ শিক্ষিত৷ তার বাবা ছিলেন ঈশান চন্দ্র দত্ত এবং মা ছিলেন থাকোমণি দেবী।৷তার বাবা ঈশান চন্দ্র তৎকালীন বাংলার ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন৷ অফিস চলাকালীন সময়ে রমেশ চন্দ্র দত্ত তার সঙ্গে থাকতেন৷ রমেশ চন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী মথুরানাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশুনা করেছেন।এছাড়াও তিনি ডেভিড হেয়ার প্রতিষ্ঠিত হেয়ার স্কুলে পড়াশোনা করেন৷ নৌকা দূর্ঘটনায় তার বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ১৮৬১ সালে তার কাকা শশী চন্দ্রদত্ত, যিনি একজন প্রখ্যাত লেখক ছিলেন, তার অভিভাবকত্ত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ রমেশ চন্দ্র তার কাকা সম্পর্কে লিখেছেন যে রাতের বেলা তিনি পরিবারের অন্যান্যদের সাথে বসতেন এবং তাদের প্রিয় বিষয় ছিল ইংরেজি কবিদের কবিতা চর্চা করা৷ রমেশচন্দ্র ১৮৬৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন৷ পরে ১৮৬৬ সালে তিনি মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে এবং স্কলারশীপ অর্জনের মাধ্যমে আর্টস পরীক্ষায় পাস করেন৷ ১৮৬৮ সালে বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় পরিবারের অনুমতি না নিয়ে তিনি এবং তার দুই বন্ধু বিহারীলাল গুপ্ত এবং সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান৷ রমেশচন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ ১৮৫৩সালের আগে ওপরে, যখন ইংল্যান্ডে আইসিএস পরীক্ষা চালু করা হয়, তার পূর্বে মূলত বিট্রিশ কর্মকর্তারাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন৷ ১৮৬০সালের দিকে ভারতীয়রা, বিশেষ করে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে আসীন হতে শুরু করেন৷ ১৮৭১সালে রমেশ চন্দ্র দত্ত আলীপুরের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আইসিএস (ইন্ডিয়ানসিভিলসার্ভিস) এ যোগদান করেন৷ পদটিতে তার নিয়োগ ১৮৫৮সালের ১লা নভেম্বর রাণী ভিক্টোরিয়ারর রঙ ও ধর্মমত নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমান সুযোগের ঘোষণার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে৷ ভয়ঙ্কর সাইক্লোনের কারণে ১৮৭৪ সালে নদীয়া জেলার মেহেরপুরে মহকুমায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়৷ এলাকাগুলোতে জরুরী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ পরবর্তী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়ে৷ রমেশ চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে একাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়৷ ১৮৮২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রমেশ চন্দ্রকে সার্ভিসের নির্বাহী শাখায় নিয়োগ দেয়া হয়৷ তিনিই প্রথম ভারতীয়, যাকে নির্বাহী পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়৷ রমেশচন্দ্রদত্তের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনাহল- বঙ্গবিজেতা (১৮৭৪), মাধবীকঙ্কণ (১৮৭৭), মহারাষ্ট্রজীবন-প্রভাত (১৮৭৮), রাজপুতজীবন-সন্ধ্যা (১৮৭৯), সংসার (১৮৮৬), সমাজ (১৮৯৪), শতবর্ষ, (বঙ্গবিজেতা, রাজপুতজীবন-সন্ধ্যা, মাধবীকঙ্কণ ও মহারাষ্ট্রজীবন-প্রভাত একত্রে, ১৮৭৯), সংসারকথা – (সংসার উপন্যাসেরপরিবর্তিতসংস্করণ, ১৯১০)। হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মুখার্জী (জন্ম: ২৪জুলাই ১৮২৪ (১২৩১বঙ্গাব্দ) - মৃত্যু: ১৬জুন১৮৬১) একজন সাংবাদিক এবং সমাজসেবক।সমাজসেবক। জন্মস্থান মেহেরপুর। ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা সবার কাছে তুলে ধরেন। হরিশচন্দ্রমুখার্জী বাংলার নির্যাতিত নীল-রায়তদের একনিষ্ঠ সমর্থক।অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় প্রথম জীবনেই জীবিকার জন্য তাঁকে চাকরির খোঁজ করতে হয়।সামরিক অডিটর জেনারেলের অফিসে চাকরি কালে হরিশ চন্দ্র আইন-শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।১৮৫২সালে তিনি বাংলার জমিদারদের সংগঠন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন-এর(প্রতিষ্ঠা১৮৫১) সদস্য হন।হরিশ চন্দ্র মুখার্জী হিন্দুপ্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন এবং পরে এর স্বত্বাধিকারী হন।সমসাময়িক রাজনৈতিক চিন্তাধারায় তাঁর ব্যাপক প্রভাব ছিল।হরিশ চন্দ্র বিধবা বিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন।তিনি ডালহৌসীর (১৮৪৮-১৮৫৬) স্বত্ব বিলোপ নীতির ঘোর বিরোধিতা করেন।কিন্তু সিপাহী বিপ্লব এর (১৮৫৭) সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেন।১৮৫৯-৬০সালে নীল প্রতিরোধ আন্দোলন এর সময় তিনি নীল-রায়তদের (নীলচাষি) দাবির সমর্থনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রায়তদেরও পর নীলকরদের অত্যাচার জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য তিনি তাঁর লেখনী ব্যবহার করেন।মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ১৮৬২সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মেহেরপুরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব , সাংবাদিক, অনুবাদক, গোয়েন্দা ও রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পলেখক,রবার্টব্লেক সিরিজের জন্য প্রসিদ্ধ দীনেন্দ্রকুমাররায় (২৬ আগষ্ট ১৮৬৯ – ২৭ জুন ১৯৪৩) অবিভক্ত নদীয়ার মেহেরপুরের বাসিন্দা ছিলেন।তার পিতার নাম ব্রজনাথ রায়।১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে মহিষাদল হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে ভর্তি হন।১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী জেলা জজের কর্মচারী নিযুক্ত হন তিনি। ১২৯৫বঙ্গাব্দে তার প্রথম রচনা একটি কুসুমের মর্মকথা: প্রবাদ প্রশ্নে ভারতী ও বালক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।১৮৯৮খ্রিষ্টাব্দে বাংলা শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে বরোদায় দুই বছর কাটান।এসময় তিনি ঋষি অরবিন্দ ঘোষের বাংলার শিক্ষক ছিলেন।সেখান থেকে ফিরে তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক বসুমতী পত্রিকার সহসম্পাদক ও পরে সম্পাদক হন।এই সময়ে নন্দনকানন মাসিক পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। বাংলার পল্লীজীবন সম্পর্কিত তার লেখাগুলি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও মুগ্ধ করেছিল। সেকালের পল্লীজীবন নিয়ে লেখা তার বইগুলি(পল্লীচিত্র, পল্লীকথা, পল্লীবৈচিত্র্য) পড়ে তিনি মন্তব্য করে ছিলেন, "বাংলাদেশের হৃদয় হইতে আনন্দও শান্তি বহন করিয়া আনিয়া আমাকে উপহার দিয়াছেন”। দীনেন্দ্র কুমার রায়ের পিতা ব্রজনাথ রায় ছিলেন সাহিত্যসেবী, পেশাগত কারণে কৃষ্ণনগরে বসবাস করতেন।মেহেরপুরে জন্ম হলেও দীনেন্দ্র কুমারের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় পিতার কর্মস্থল কৃষ্ণনগরে।এখানেই তাঁর সাহিত্য জীবনের অভিষেক ঘটে।সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যাওয়ায় কাকা তাকে মহিষাদল নিয়ে আসেন এবং মহিষাদল হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্তি হন। দীনেন্দ্র কুমারের কাকা ছিলেন মহিষাদল এস্টেটের ম্যানেজার এবং মহিষাদল রাজস্কুলের প্রেসিডেন্ট।একপর্যায়ে এই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন।শিক্ষকতার সুবাদে সহকর্মী হিসেবে সাহচর্য লাভ করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক জলধর সেনের। মহিষাদলের দিনগুলি দীনেন্দ্র কুমারের জন্য বেশ সুখকর ছিল।কাকার বাসাতে জলধর বাবুর সাথে একত্রে বসবাস করার সুবাদে পেয়েছিলেন সাহিত্য চর্চার অফুরন্ত সুযোগ।আর তাঁর কাকাও ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রবল অনুরাগী। সে সময় তার কাকার বাসায় আসতেন সাহিত্যিক চন্দ্র শেখর কর এবং দ্বিজেন্দ্র লাল রায়।কাকার বাসায় অনুষ্ঠিত এক মজলিসে তিনি শুনেছিলে ডি.এল রায়ের স্বকণ্ঠে স্বরচিত হাসির গান, ‘পারো তোজো নমুনা ভাই, বিষ্যুৎ বার বার বেলায়’, ‘তার রং কি বড্ড ফরসা,।এ সময় থেকে তিনি স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত ‘ভারতী’পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। জনপ্রিয় এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যাতম বিখ্যাত নাটক ‘হেঁয়ালীনাট্য’। এই নাটক প্রকাশনার জন্য পত্রিকা সম্পাদিকা স্বর্ণ কুমারী দেবী পাঠকে রবি রূপ সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন।মহিষাদলের সুখকর দিনগুলি খুব বেশি স্থায়ী হয় নি দীনেন্দ্রকুমারের।নিদারুণ অর্থ কষ্টও জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে মহিষা দলত্যাগ করে তাঁকে রাজশাহীতে চলে যেতে হয়।জেলাজজের কর্মচারী হিসেবে সেখানে কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় আরম্ভ হয়।এচাকুরী পেতে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ সুহৃদ লোকেন্দ্রনাথ পালিত।অর্থকষ্টের কারণে সেখানেও তিনবছরের বেশি থাকতে পারেন নি।তবে রাজশাহীর দিনগুলি তারজীবনের এক অনন্য অধ্যায়। এখানে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রখ্যাতঐতিহাসিক, লেখক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদুনাথ সরকারের সাথে।দীনেন্দ্রকুমার ‘সেকালেরস্মৃতি’ গ্রন্থে যদুনাথ সরকার সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।তাঁর কাছে যদুনাথ যেন “দ্যুতিমান মধ্যমণি’ যার উজ্জ্বল প্রভায় আজ বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যাগৌরদীপ্ত।” ম্যাজিস্ট্রেট সুহৃদ লোকেন্দ্রনাথ পালিতের আতিথ্য গ্রহণ করে রবীন্দ্রনাথও মাঝে মাঝে রাজশাহীতে আসতেন।রাজশাহী তেলো কেন্দ্রনাথের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের সাথে তার পরিচয় হয়। দীনেন্দ্রকুমার আশৈশব সাহিত্য অনুরাগী। শৈশবেই সাক্ষাৎ লাভ করেন কবি, নাট্যকার ডি.এল রায়ের সাথে। তাঁর বয়স যখন দশ বছর তখন কবিবর দ্বিজেন্দ্রলাল একবার মেহেরপুরে বেড়াতে আসেন।মেহেরপুরে বেড়াতে এসে তিনি কবিতার একটি বক্তৃতা করে ছিলেন, সেই বক্তৃতা শুনে দীনেন্দ্রের সাহিত্য প্রীতি জন্মায়।বাবা ব্রজনাথ ছিলেন কবি ও সাহিত্যব্রতী। তিনি ‘আকিঞ্চন মনের কথা’নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।কাঙাল হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬) এর সাথে তাঁর বাবার ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।তারা দুজনেই ছিলেন সংসারে নির্লিপ্ত ও ধর্মনিষ্ঠ।রাজশাহীতে তিনি সান্নিধ্যলাভ করেন অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, যদুনাথ সরকার প্রমুখ খ্যাতিমানদের সাথে।পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠতা হয় সুরেশ সমাজপতি, রজনী কান্ত সেন ও শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব-এর সাথে।দীনেন্দ্রকুমার ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩২৪সংখ্যায় ‘কবিরজনীকান্ত’ শীর্ষক স্মৃতি কথা লেখেন। ‘পূজার ছুটির পর তিনি বাড়ী হইতে রাজশাহীতে ফিরিয়া যাইতেছিলেন, আমিও ছুটির শেষে রাজশাহী যাইতেছিলাম... স্টিমারেউঠিয়াদেখি, স্টিমারের ডেকের উপর একখানি শতরঞ্চি বিছাইয়া রজনীকান্ত আড্ডা জমাইয়া লইয়াছে।তাহার গল্প আরম্ভহইয়াছে।’ দীনেন্দ্র কুমারের অমরসৃষ্টি গোয়েন্দা রবার্ট ব্লেক ও তার সহকারী স্মিথ। আসলে এই গল্পগুলি স্যাক্সটন ব্লেকের অনুবাদ বা ভাবানুবাদ।দীনেন্দ্র কুমার ধার করেছিলেন ব্রিটিশ পপুলার সিরিজ শ্যাক্সটন ব্লেকের কাহিনী, যে গুলি প্রায় একশো বছরব্যাপী লন্ডন তথা ইংল্যান্ড এ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।সুলেখক দীনেন্দ্র কুমার রায় নিজের ভাষায় বাঙালি পাঠকের মনের মতো করে সাজিয়েছেন কাহিনীগুলিকে।এই স্যাক্সটন গোয়েন্দার লেখক এক জন নন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখক লিখে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন গোয়েন্দা সিরিজ।কমিক স্ট্রিপ, রেডিও প্রোগ্রাম, ইত্যাদিতে স্যাক্সটন গোয়েন্দা জনপ্রিয় ছিল। নন্দন কানন সিরিজ বা রহস্য লহরী সিরিজে ডিটেকটিভ রবার্টব্লেককে ইংরজি থেকে অনুবাদের মাধ্যমে বাংলার অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে পরিচিত করে তিনি প্রসিদ্ধ হন।এই সিরিজের প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ২১৭টি। দীনেন্দ্র কুমার রায় তাঁর জীবনের শেষ সময় টুকু মেহেরপুরে অবস্থান করেন। মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ছাপাখানা। কমলা প্রেস থেকে দীনেন্দ্র কুমারের বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়। কমলা প্রেসের সুবাদে সে সময় মেহেরপুর প্রকশনা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। শেখ জমিরুদ্দীন ১৮৭০ সালে মেহেরপুরের গাংনীর গাঁড়াডোব বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মেহেরপুর আমঝুঁপি খ্রিষ্টান স্কুল ও কৃষ্ণনগর নর্মাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।১৮৮৭সালে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে জন জমিরুদ্দীন রাখেন। জন জমিরুদ্দীন ১৮৯১ সালে এলাহাবাদ সেন্ট পলস ডিভিনিটি কলেজ থেকে ধর্মতত্ত্বে স্নাতক হন। পরবর্তীতে, তিনি কলকাতার ডিভিনিটি কলেজে ভর্তি হন।তিনি সেখানে খ্রিষ্টধর্মতত্ত্ব, সংস্কৃত, আরবি, গ্রিক এবং হিব্রু সাহিত্য ও ব্যাকরণ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি ও লাতিনভাষা জানতেন। জন জমিরুদ্দীন ১৮৯২ সালের জুন মাসে খ্রিষ্টীয় বান্ধব পত্রিকায় আসল কোরআন কোথায় শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন। এর জবাবে মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ঈসায়ী খ্রিষ্টান ধোকাভঞ্জন শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন যা ১৮৯২ সালের ২০ ও ২৭ জুন সুধাকর এ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধটিতে তিনি জন জমিরুদ্দীনের ছয়টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। এরপর, জন জমিরুদ্দীন সুধাকর এ একটি নিবন্ধ লেখেন।এর জবাবে মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আসল কোরআন সর্বত্র শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধটি পড়ে জন জমিরুদ্দীন পূনরায় ইসলামধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শেখ জমিরুদ্দীন ধর্মীয় বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন।এছাড়া, তিনি সামাজিক বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন ও অনুবাদ করেছেন।তিনি হযরত ঈসা, মেহের চরিত, ইসলামী বক্তৃতা, শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) ও পাদরীরধোঁকাভঞ্জন এর মত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত শিরোনামে আত্মজীবনী ও রচনা করেছেন। শেখ জমিরুদ্দীন ১৯৩৭ সালের ২ জুন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরে তাকে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছিল। মোগল আমলে মেহেরপুরের বাগোয়ানে ভবানন্দ মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন‘নদীয়া রাজবংশ’নামে এক বিশাল রাজবংশ।বাগোয়ানের সন্তান ভবানন্দ মজুমদারের জীবনালেখ্য নিয়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ভারত চন্দ্র(১৭১২-১৭৬০) রচনা করেন‘অন্নদামঙ্গল’কাব্য। এ কাব্যের তৃতীয় খণ্ড অন্নপূর্ণা মঙ্গল বা‘মানসিংহ,ভবানন্দ উপাখ্যান’। এই কাব্যে ভারত চন্দ্র একটি ঘাটের বর্ণনা করেছেন।এ ঘাটটি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ থেকে ৩/৪ কিলো মিটার পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত রসিকপুরের ঘাট।এঘাটেই খেয়া পারাপার করত ঈশ্বরী পাটুনী।মাঝি দেবীকে পার করার পর বর প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। তখন দেবী মাঝিকে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘দুধে ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান।’সেই থেকেবাংলাসাহিত্যে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’কথাটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৮০১ থেকে ১৯৪৭সাল পর্যন্ত মেহেরপুর শাসিত হত মল্লিক ও মুখার্জি পরিবারের প্রাধান্যে।তাঁরা জমিদারি ও পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মেহেরপুরবাসীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।মেহেরপুরের অন্যতম জমিদার মল্লিক বংশ নিজগুণে বিখ্যাত ছিলেন।মুখোপাধ্যায় ও মল্লিক বংশের সমৃদ্ধির আমলে মেহেরপুরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। উনিশ শতকে মেহেরপুরে জমিদারি ক্রয় করে জমিদার কৃষ্ণকান্ত মল্লিক মেহেরপুরে বসবাস শুরু করেন এবং তাঁর বসবাসের স্থান তাঁর পরিবারের নাম অনুসারে মল্লিকপাড়া নামকরণ করা হয়।আজো তাঁদের স্মৃতিবহন করে জেগে আছে মল্লিকপাড়া।জেগে আছে মেহেরপুরের ইতিহাস।আজো মেহেরপুরের মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।কৃষ্ণকান্ত মল্লিক,নন্দ কুমার মল্লিক,নব কৃষ্ণ মল্লিক,পদ্মলোচন মল্লিক,ব্রজকুমার মল্লিক, শ্রীকৃষ্ণ মল্লিক,সাধক ও ভক্তিমান পুরুষ জগদীশ্বরগুপ্ত,সাহিত্যসেবী ও বৈষ্ণব গ্রন্থের প্রচারক রমণী মোহন মল্লিক,মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইন্দুভুষণ মল্লিক ও সত্যেন্দ্র ভূষণ মল্লিকসহ মল্লিক পরিবারের সকল জমিদার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। এ অঞ্চলের পুরানো ইতিহাস গ্রন্থ কুমুদনাথ মল্লিক রচিত নদীয়া কাহিনী (প্রথম প্রকাশ১৩১৭বঙ্গাব্দ)।এই গ্রন্থে কুমুদনাথ মল্লিক মেহেরপুরের মল্লিক পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন ।তিনি লিখেন,‘মুখোপাধ্যায় বংশের যখন দুর্দান্ত প্রতাপ মেহেরপুরে তখন নদীয়ার অন্যতম জমিদার কৃষ্ণকান্ত মল্লিক মেহেরপুরে এসে বাসস্থান নির্মাণ করেন । কৃষ্ণকান্ত-পুত্র নন্দ অন্যূন লক্ষাধিক টাকা লাভের জমিদারী করেছিলেন ।ইহার ছয় পুত্র সন্তান।তন্মধ্যে পঞ্চম পুত্রের অকাল মৃত্যু হইলে নন্দকুমার প্রচণ্ড শোকাহত হয়ে পুত্রের নামে আনন্দ বিহারী বিগ্রহ স্থাপন করেন ।’ মল্লিক পরিবার মেহেরপুরের সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কুমুদনাথ মল্লিক তাঁর নদীয়া কাহিনী গ্রন্থে লিখেছেন,‘ শোনা যায় মুখোপাধ্যায় এবং মল্লিক বংশের প্রতিপত্তি কালে মেহেরপুর ছিলো প্রচণ্ড জাঁকজমক।জাঁকজমক।১২৬৯বঙ্গাব্দে জ্যৈষ্ঠ মহামারীতে অসংখ্য লোকের মৃত্যু হবার ফলে মেহেরপুর জনশূন্য হয়ে পড়ে‘।এসময়ে মল্লিক পরিবার মেহেরপুরে পৃথকভাবে দুটি চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলেন।কুমুদনাথ মল্লিক লিখেছেন, ‘১৮৫৮ খৃষ্টাব্দে এখানে মহকুমা স্থাপিত হইলে বিদেশী লোক লইয়া ইহার জনসংখ্যা কথঞ্চিত বৃদ্ধি পাইলেও পুর্বের সে শ্ৰী আর ফিরিয়া আসে নাই।’ সাহিত্য চর্চার একটি প্রধান মাধ্যম পত্র-পত্রিকা । এসব পত্র-পত্রিকার মধ্যে রয়েছে সাহিত্য সাময়িকী, লিটল ম্যাগিাজিন, স্কুল-কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকা, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা । সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী প্রত্যেকেই তাদের সাহিত্য সৃজনীতে কোন না কোন পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত থাকেন । কালের বিবর্তনে সেসব পত্রিকা হারিয়ে গেলেও সাহিত্যিকের অন্তুরে তা বেঁচে থাকে ।বাংলা সাহিত্যে মেহেরপুরের কবি-সাহিত্যিকদের অবদান এখান থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেশ কিছু সাহিত্য-সংগঠন । এসব সাহিত্য-সংগঠন এবং মেহেরপুর থেকে বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় । সে সব পত্র-পত্রিকা মেহেরপুরের প্রকাশনা ও সমৃদ্ধ সাহিত্যকে ধারণ করে রেখেছে । মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের রেয়াজউদ্দিন আহমেদের সম্পাদনায় ১৮৯১ সালে (১২৯৮ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয় ‘ইসলামপ্রচারক’পত্রিকা। ১৩১২ বঙ্গাব্দে‘সোলতান’নামেআরও একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো ।এসব পত্রিকা মেহেরপুর জেলায় ইসলাম প্রচারনায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। ১৯১২ সালের পহেলা বৈশাখ মেহেরপুরের দারিয়াপুর গ্রামের অধিবাসী হীরালাল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নদীয়া সাহিত্য সম্মিলনী’ নামের সাহিত্য-সংগঠন । এর মূখপত্র হিসেবে ১৯১৩ সালের পহেলা বৈশাখ প্রকাশিত হয় ‘সাধক’ নামের একটি সাহিত্য-সামায়িকী । সে সময় সাধক পত্রিকা মেহেরপুরের সাহিত্যাঙ্গনে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে । এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন – সতীশ চন্দ্র বিশ্বাস এবং প্রকাশক ছিলেন – অবিনাশ চন্দ্রবিশ্বাস।পত্রিকাটি দু’বছর নিয়মিতভাবে কৃষ্ণনগর থেকে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়।এ পত্রিকাটিকে মেহেরপুরের ইতিহাসের প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে।দু’বছরের প্রকাশনায় সাধক পত্রিকায় সাহিত্য-সংস্কৃতির পাশাপাশি তৎকালীন সময়ের নদীয়ার বিভিন্ন জনপদের বিবরণ প্রকাশিত হতো।পত্রিকাটি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল বলে জানা যায়। ১৯৩৫ সালের প্রথমদিকে (১৩৪২ সনে) প্রকাশিত হয় ‘পল্লীশ্রী’ নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা । অমরেন্দ্র বসু ওরফে হাবু বাবুর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘পল্লীশ্রী’ সেকালের মেহেরপুরের সাহিত্য-চর্চায় অনন্য ভূমিকা পালন করে । মেহেরপুর সামসুজ্জোহা পার্কের উল্টো দিকে অবস্থিত প্রমথ চন্দ্র রায়ের কমলা প্রেস থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো । সেসময়ের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যকদের সাহিত্য এইপত্রিকায় প্রকাশিত হয় । কবি অজিত দাস, বিখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক দীনেন্দ্র কুমার রায় এ পত্রিকায় লিখতেন । পল্লীশ্রী পত্রিকাটি ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। কেতকী কুশারী ডাইসন কবি, লেখিকা, অনুবাদক ও গবেষক যিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই তিনি লিখে থাকেন।তিনি রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম বিষয়ে তার গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত।পৈত্রিক সূত্রে তারনাম কেতকী কুশারী বোস। সাহিত্যিক ও গবেষক কেতকী কুশারী ডাইসনের জন্ম ২৩জুন, ১৯৪০ সালে মহানগর কলকাতায়; শৈশব কেটেছে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মেহেরপুরে।বড় হয়েছেন সাহিত্যিক পরিমন্ডলে; বুদ্ধদেব বসু, অজিতদত্ত, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণুদে ছিলেন তাঁর বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।বাবা অবনী মোহন কুশারী ছিলেন অবিভক্ত নদীয়া জেলার মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক।তিনি ১৯৪২-৪৫ সময়ে মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।কেতকী কুশারী বোস ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে রেকর্ড নম্বর পেয়ে তিনি বি.এ পাস করেন। ১৯৬৩-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৫খ্রিষ্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।ইতোমধ্যে রবার্ট ডাইসনের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধহন এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী হন।তিনি নামের শেষে ডাইসন পদবী ব্যবহার করতে শুরু করেন। প্রকাশিত গ্রন্থ- • বাংলাকাব্যগ্রন্থ: "বল্কল (১৯৭৭)", "সজীবপৃথিবী" (১৯৮০), "জলের করিডোর ধরে" (১৯৮১), "কথা বলতে দাও" (১৯৯২), "যাদুকর প্রেম" (১৯৯৯), "দোলন চাঁপায় ফুল ফুটেছে" (২০০০) প্রভৃতি। • উপন্যাস: "নারী, নগরী" (১৯৮১), "নোটননোটন পায়রাগুলি" (১৯৮৩), জলফুঁড়ে আগুন (২০০৩), "এই পৃথিবীর তিন কাহিনী" (২০০৬)। • গবেষণাগ্রন্থ: "রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ও কাম্পোরসন্ধানে" (১৯৮৫)। • প্রবন্ধগ্রন্থ: "ভাবনার ভাস্কর্য" (১৯৮৮), "শিকড়বাকড়" (১৯৯০), "রঙের রবীন্দ্রনাথ" (১৯৯৭), "চলন্তনির্মাণ" (২০০৫),''কাছে-দূরের কক্ষপথে'' (২০১৫)। • নাটক: "রাতেররোদ" (১৯৯৪), "মোত্সার্টচকোলেট" (১৯৯৮), "সুপর্ণরেখা" (২০০২)। ১৯৬২সালে মেহেরপুর থানা কাউন্সিলের উদ্যোগে সীমান্ত নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মোঃমফিজুর রহমান।মেহেরপুর বড়বাজারের এডলিক প্রিন্টিং প্রেস থেকে পত্রিকাটি চার বছর নিয়মিত প্রকাশিত হয় এবং ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।কুতুবপুরের জনৈক শিল্পী মোঃ নাসিরুদ্দিন ‘আম কাঁঠাল লিচুতে ভরপুর, তারই নাম মেহেরপুর’- এই কথাগুলো লিখে পত্রিকাটির প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬০সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে কোনপত্র-পত্রিকা সাহিত্য প্রকাশ হয়েছিল কিনা তার সঠিক তথ্য জানা যায় না । ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে মেহেরপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে মেহেরপুরে সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় । মেহেরপুর কলেজ এবং মেহেরপুর মাল্টিমিডিয়া মডেল হাইস্কুল (বর্তমানে মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়)সে সময়সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয় ।মেহেরপুরের তরুণ সম্প্রদায় এসময় সাহিত্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে । নাসিরউদ্দিন মীরু, সাহাবাজ উদ্দিন লিজ্জু, কামরুল হাসান হীরক, ফরহাদ খান, আনসার-উল-হক, কামাল উদ্দিনসহ অনেকেই সক্রিয়ভাবে সংগঠন ও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় অবদান রাখেন। ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমির প্রাক্তন পরিচালক প্রয়াত ফরহাদ খান মেহেরপুর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যায়ন করেন।তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৩ডিসেম্বর।পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রাম।মেহেরপুরে তার আত্মীয়র বাড়িতে থেকে তিনি মেহেরপুর কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। সে সময় তিনি মেহেরপুরের লোককাহিনী ওপ্রবাদ-প্রবচন সংগ্রহ করেন।তাকে সক্রিয়ভাবে সহযোহগিতা করেন কামরুল হাসান খান (হীরক)।পরবর্তীতে তিনি তার বিভিন্ন প্রকাশনায় সেগুলো ব্যবহার করছেন। ফরহাদ খান বাংলা একাডেমির সাবেকপরিচালক।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও এম এ করেন ফরহাদ খান।১৯৭০সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।ফরহাদ খান ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমিতে যোগদেন।তিনি বাংলাএকাডেমির ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।২০০২সালে এই পদ থেকে অবসরে যান তিনি। ফরহাদ খানের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—প্রতীচ্যপুরাণ, শব্দের চালচিত্র, বাংলা শব্দের উৎস অভিধান, চিত্র ও বিচিত্র, হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী, বাঙালির বিবিধ বিলাস, নীল বিদ্রোহ (যৌথ অনুবাদ), ব্যারন মুনশাউজেনের রোমাঞ্চকর অভিযান,গল্প শুধু গল্প নয় (শিশুতোষগল্প)।বাংলা একাডেমি ছোটদের অভিধানসহ কয়েকটি বই সম্পাদনায় তিনি যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সূর্যোদয় ঘটেছিল মেহেরপুরে । ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যিনাথতলার আম্রকাননে গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে এর নাম দেয় মুজিবনগর । আর এখান থেকেই মেহেরপুরের নাম মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সাথে একসূত্রে গাঁথা হয়ে যায় । মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে । মুজিবনগরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাঙালী জাতীকে মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত করে । ১৯৬৩ সালে মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় এ্যাডলিক প্রেস।মেহেরপুর বড়বাজারের মোজাম্মেলহক প্রেসটি প্রতিষ্ঠা করেন।এ্যাডলিক প্রেস মেহেরপুরের প্রকশনা জগতে যুগান্তকারী ভুমিকা পালন করেএবং এখনও তা অব্যাহত আছে।এই প্রেসটি চালু হলে মেহেরপুরেপত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, বই-পত্র প্রকাশে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬৯ সালে নাসিরউদ্দিন মীরুর নেতৃত্বে মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় মধুচক্র’সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন।মেহেরপুরের সমসাময়িক সাহিত্য-সাংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে মধুচক্র বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধুচক্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে এর সভাপতি ছিলেন মেহেরপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ আব্দুল বাকী এবং সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিনমীরু। সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার উন্নয়নে ডাঃ আব্দুল বাকী খুব উৎসাহী ছিলেন। অন্যান্য সাহিত্যনুরাগী ব্যক্তিদের মধ্যে ডাঃজাফরউল্লাহ, ডাঃ আবদুল্লা, মীর মোজাফ্ফর আলী, সফুরা রাজ্জাক, মোঃমফিুজুর রহমান, কামরুল হাসান খান (হীরক) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১৩ই মার্চ, বাংলা ১৩৮৫সালের ২৮শে ফাল্গুন মধুচক্র ‘প্রবাহ’ নামে একটিসাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ক বুলেটিন প্রকাশ করে।প্রবাহের সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে ছিলেন মুহঃআনছার-উল-হক, আলী ওবায়দুর রহমান ও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন মীরু। মেহেরপুরের এ্যাডলিক প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রবাহের কয়েকটি মাত্র অনিয়মিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়। অনিয়মিত এবং সাহিত্যবিষয়ক বুলেটিন হলেও পত্রিকাটি মেহেরপুরের বিদগ্ধমহলে খুবই সমাদৃত হয়েছিল।এই পত্রিকাটিতেই সর্বপ্রথম মেহেরপুরের ইতিহাস প্রসঙ্গে বৃটিশইন্ডিয়া কোম্পানীর নীলচাষের বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করাহয় । আমঝুপি নীলকুঠিতে নবাব সিরাজউদৌলা রবিরুদ্ধে লর্ডক্লাইভের কথিত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যে সঠিক নয় তা জনসমক্ষে প্রকাশিত হয় । এই পত্রিকাটিতে মেহেরপুরের হৃত প্রায় সাহিত্যের অনেক তথ্য প্রকাশিত হয় । মেহেরপুরের নামকরণের ইতিহাস, উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি, প্রবাদ-প্রবচন, ফোকলোর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনেক তথ্য প্রবাহ পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিতহয় । আলী ওবায়দুর রহমানের সম্পাদনায় ১৯৭১সালে প্রকাশিত হয়‘জয়বাংলা’নামে একটিপত্রিকা। ১৯৭০ দশক থেকে বাংলা কবিতা রচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন মেহেরপুরের কবি তারিক-উল-ইসলাম। মেহরেপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তার কলেজজীবন অতিবাহিত হয় যশোরে। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় সম্মানসহ মাস্টার্স করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শব্দায়ন নামে একটি কবিতা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শব্দায়ন দেশব্যাপী পরিচিতি লাভকরে। ১৯৭৯ সালে তারিক-উল-ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় কবিতা সংকলন ‘মাদল’ । মাদল লিটল ম্যাগাজিনটি যশোর থেকে মুদ্রিত হয় এবং সাড়ম্বরে এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় মেহেরপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে ।তারিক-উল-ইসলামের প্রকাশিত কবিতার বই সেএকদ্বিধা, আয় চেনা পথ রথ আমার। ৭০ ও ৮০ দশকে অন্যান্য কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে মুহম্মদ রবীউল আলম (প্রকাশিত বই মুন্সী শেখ জমির উদ্দিন),তিনি ও ড.মুহম্মদ ফজলুল হক ‘স্বাধীনতার প্রথম শহীদ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ নামে একটি বৃহৎ গ্রন্থ সম্পাদনা করেন।সৈকত রুশদী (প্রকাশিতবই ), এম.রফিকহাসান (প্রকাশিতবই ), সামাদুল ইসলাম (প্রকাশিতব ই ), তোজাম্মেল আযম (প্রকাশিত বই ১. মেহেরপুরের সংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্য,২. মুজিবনগর, যুদ্ধ জয়ের উপাখ্যান, ৩. মেহেরপুর জেলা ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ৪. মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস, মেহেরপুর জেলা, ২০১৭),মাসুদ অরুন, রফিকুর রশীদ (১. মেহেরপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ২. অপারেশন মুজিবনগর, ৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর, ৪. মেহেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস), গাজী রহমান (স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের কবিতায় সমাজচেতনা), সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, হাবিব আনিসুররহমান ( এ পর্যন্ত তাঁর দশটি উপন্যাস এবং দশটি গল্পগ্রন্থসহ মোট বিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে),কাজী হাফিজ, আব্দুল হাকিম, নাফিজ উদ্দিন খান অন্যতম । ১৯৭৯ সালে মেহেরপুরে ধারাপাত খেলাঘর আসর প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারাপাত খেলাঘর আসর মেহেরপুরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮১-১৯৮৭সালে ধারাপাত খেলাঘর আসর‘ধারাপাত’ধারাপাত, পলাশ ও পাতাবাহর নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করে । চার ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি সাইজের এই ক্ষুদ্র ম্যাগাজিনটি একঝাঁক তরুণ ছড়াকারের ছড়ায় সমৃদ্ধ ছিল । মুহাম্মদ রবীউল আলম ও নাফিজ উদ্দিন খানের সম্পাদনায় পত্রিকাটি হাসিব খানের প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় । ‘৮০ ও ’৯০ দশকে মেহেরপুরে বেশ কয়েকটি প্রেস স্থাপিতহয়। এসব প্রেসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোনালী প্রিন্টিং প্রেস থেকে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশিত হয় । লুমা প্রিন্টিং প্রেস, গফুর প্রিন্টিং প্রেস, কামাল প্রিন্টিং প্রেস ইত্যাদি। ১৯৮২ সালে ধারাপাত খেলাঘর প্রকাশ করে একুশের সংকলন ‘পলাশ’ । মুহাম্মদ রবীউল আলমের সম্পাদনায় সংকলনটি সাইক্লো স্টাইলে মুদ্রিত হয় । এসব প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক পরিচয় (১৯৮৫), সাপ্তাহিক চুম্বক (১৯৮৬), সাপ্তাহিক মুজিবনগর (১৯৮৮), পাক্ষিক পশ্চিমাঞ্চল (১৯৯২, ঢাকা থেকে মুদ্রিত হতো), দৈনিক আযম (১৯৯২), সাপ্তাহিক মেহেরপুর (১৯৯২)। এসব পত্রিকা পুরোপুরি সাহিত্যধর্মী না হলেও পত্রিকাগুলো সাহিত্য প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এই সময়কালে মেহেরপুরে বেশকিছু সাহিত্য-সাংকৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রগতি পরিমেল, কচি কাঁচার আসর, মুকুল ফৌজ, ভৈরব সাহিত্য-সাংকৃতিক সংগঠন। ৯০ দশকের পর বেশ কয়েকজন লেখক ও সাংবাদিক তাদের লেখনি দিয়ে মেহেরপুরের সাহিত্যঙ্গনের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহসীনআলীআঙ্গুর। তার রচিত রচিতগ্রন্থ ৭১ এর পাক কসা ইবাহিনী (২০২২), ছহিউদ্দিন এর সাফল্যে আলোকিত মেহেরপুর (২০২২)।আবদুল্লাহ আল আমীন ধুমকেতু,তার রচিত গ্রন্থ আজাদ শাহের পদাবলী (২০০৯), ব্রাত্যজনের রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১২), বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি : মেহেরপুর (২০১৩) ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালির সম্প্রীতি সাধনা ও ভাটপাড়া নীলকুঠি ও উনিশ শতকের বাংলাদেশ ইত্যাদি। ১৯৮৭ সালে নাফিজ উদ্দিন খানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘পাতাবাহার’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন । গফুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত পাতাবাহর ধারাপাত খেলাঘর আসরের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় । ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। নতুন প্রজন্ম এগিয়ে এসেছে। তাদের লেখনি ও কমতৎপরতায় মেহেরপুর জাতীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ নাফিজ উদ্দিন খান মেহেরপুরের অহংকার মুহম্মদ রবীউল আলমঃ মেহেরপুরের ছেলে নাফিজ উদ্দিন খান বাংলা সাহিত্য ও শিক্ষা অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সে মেহেরপুরের কাঁসারী পাড়ার কৃতী সন্তান। তাকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো দেখি। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। সে শিক্ষক উন্নয়নে একজন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। সরলতা তার জীবনের অহংকার। ধর্ম ও সততা তার জীবনের চাবিকাঠি। সবার সাথে তার চমৎকার ব্যবহার এবং দাম্ভিকতার লেশমাত্র নেই তার জীবনে। তাকে আমি চিনি সেই ছোট বেলা থেকে। যখন সে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমি তখন মেহেরপুরে শিশু-কিশোরদের জন্য ধারাপাত খেলাঘর আসর প্রতিষ্ঠা করি। সংগঠনের কাজে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে এবং ধারাপাত খেলাঘর আসরের সদস্য হয়ে আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। তাকে আমি ধারাপাতের সাহিত্য সম্পাদক করি এবং পরে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আমাদের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত আবদুল মতিন মাস্টার। আমাদের সাথে ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন মীরু, আবদুর রাজ্জাক মাস্টার,ননী গোপাল ভট্টাচার্য, মীর রওশন আলী মনা, আমার ক্লাসমেট পল্লব ভট্টাচার্য(তরুণ), আগাহেলালী মুক্তা, প্রলয় ভট্টাচার্য(তন্ময়), নাফিজউদ্দিন খান,আনোয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, মানস চৌধুরী, সুতপা চৌধুরী রিংকু, মোস্তফা জাহিদ কামাল বিপু সহ অনেকে। নাফিজ তখন থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে থাকে। সে তখন ছড়া লিখতো সুন্দর। পরে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে।বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে আমার রুমে তাকে রেখেছিলাম। ঢাকায় এসে আমার পত্রিকা অফিসে দিনের পর দিন আসা যাওয়া করেছে। মনে পড়ে আমার বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবেও সে উপস্থিত ছিল। আমার পরিবারে তার অবাদ বিচরণ।আমার পরিবারের সদস্যরা তাকে খুব ভালোবাসে। তবে তার বিয়ে ও বিভিন্ন স্থানে চাকরির কারণে আমাদের যোগাযোগ অনেক কমে গেছে। তবে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং ডাকলে সে এসে হাজির হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার শ্রদ্ধাভাজন সংবাদিক সৈকত রুশদীর দু‘টি অনুষ্ঠানে সে হাজির ছিল। কিছুটা শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন আর আগের মতো দৌড়াদৌড়ি করতে পারে না। তবুও সাহস করে এখানে ওখানে যায়। ক‘দিন আগে এক শুক্রবারে সকালে আমার বাসায় এসে হাজির হয়েছিল এবং বিকেল পর্যন্ত ছিল। ভালোই কেটেছিল সময়টা। তার রচিত একটি বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কৃর্তক অনুমোদিত হয়েছে। সে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদ ও খানবাহাদুর আহছানউল্লা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে শিক্ষকতা করেছে। বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশিত শিক্ষা বিষয়ক অভিধান 'শিক্ষাকোষ'-এর অন্যতম লেখক সে। শিক্ষক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল রিডিং এসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার হিসেবে বাংলাদেশ রিডিং এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছে সে এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছে। শিক্ষকদের জন্য ক্লাসরুম টিচিং নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছে। শিশু পঠন বিষয়ক একটি গবেষণার মাধ্যমে পি. এইচ. ডি সম্পন্ন করে। শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও সম্মেলনে যোগদানের জন্য সে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়াসহ ২৪টি দেশ সফর করেছে। নাফিজ উদ্দিন খান ৮০' র দশকে মেহেরপুরে ছড়াকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সু-বক্তা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলো। ৯০'র দশকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে সে শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ে কর্মজীবন শুরু করে। সে ১৯৬৬ সালে মেহেরপুরের কাঁসারী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা: মরহুম শামসুদ্দিন খান, মা:মরহুমা নোসেমা খাতুন। ১৯৭১ সালে মেহেরপুর বি. এম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করে। এরপর মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে এস.এস.সি ও মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে এইচ.এস.সি পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে। বি. এম. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রণিতে অধ্যয়নকাল সে মেহেরপুরের 'মধুচক্র' আয়োজিত কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাহিত্য -সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে। এরপর থেকেই মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তিনি নিয়মিত বিচরণ করতে থাকে। এসময় থেকেই সে ছড়া লেখা শুরু করেন এবং ছড়াকার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। মেহেরপুরসহ আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার তার অসংখ্য ছড়া প্রকাশিত হয়েছে। সে সময় সে বিতর্ক, বক্তৃতা, অভিনয়, গল্প বলা, বিজ্ঞান বিষয়ে উদ্ভাবন ইত্যাদি কর্মকান্ডে সেরা ছিল। সে মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠিত ধারাপাত খেলাঘর আসরের সাহিত্য সম্পাদক ছিলো, পরবর্তীতে তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। এক পর্যায়ে সে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করে। সে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সদস্য ছিল। উচ্চ শিক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে। এ পর্যায়ে সে রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন জাতীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার অসংখ্য সংবাদ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। শিক্ষাজীবন শেষে সে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে যোগদান করে সিলেটের হাওর ও পাহাড়ি এলাকার নিভৃত পল্লীর পিছিয়ে পড়া দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করে। পরবর্তীতে সে ঢাকা আহছানিয়া মিশনে যোগদান করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করে। এখানে তার বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়। সে নব্য সাক্ষরদের জন্য একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করে। এসময় সে নব্য সাক্ষর ও শিশুদের জন্য ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ (বীরশ্রষ্ঠদের কাহিনী), ‘কোন ফলের কী গুণ’, ‘চাঁদ সুলতানা’, ‘সমবায়ের গল্প’ ইত্যাদি বই রচনা করে। এখানে কর্মকালীন সে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষা অনুষদ থেকে বি. এড ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই. ই.আর থেকে এম. এড ডিগ্রি অর্জন করে। সে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদে প্রভাষক হিসেবে কাজ করে। একই সাথে খানবাহাদুর আহছানউল্লা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজেও শিক্ষক হিসেবে কাজ করে। এসময় সে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ে বহু কার্যক্রম ও গবেষণা করেছে। শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়েন জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষক সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে কাজ করেন। শিক্ষকদের জন্য ক্লাসরুম টিচিং নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে। শিশু পঠন বিষয়ক একটি গবেষণার মাধ্যমে পি. এইচ. ডি সম্পন্ন করে। শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও সম্মেলনে যোগদানের জন্য সে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আফ্রিকার মালি, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, নেপাল, ভুটান ও কম্বোডিয়া ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির অধিকাংশ পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য চর্চা ও লেখালেখি চলমান আছে। বর্তমানে সে শিক্ষা ও শিশুতোষ লেখালেখিতে সম্পৃক্ত। তার সাম্প্রতিক প্রকাশনা অ্যাকশন রিসার্চে শিক্ষকদের কর্মকৌশল নির্দেশিকা (অনুবাদ), পাহাড়ের কান্না ও লাউ চাষি বিনু (শিশুতোষ গল্প)। নাফিজ উদ্দিন খান একজন গুণী মানুষ। মেহেরপুরের প্রতি তার ভালোবাসা গভীর। তাই সে মাঝেমাঝে মেহেরপুরের চলে যায় এবং মেহেরপুরের পরিচিতদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে আসে। মেহেরপুর নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে। এখন সে থাকে ঢাকার মিরপুর-১০-এ। নিজের ফ্লাটে স্ত্রী ও একপুত্রকে নিয়ে ভালোই আছে। তার স্ত্রী শিক্ষকতার সাথে জড়িত।স্ত্রী হেলেনা খাতুন ইংলিস মিডিয়াম স্কুল শিক্ষক, পুত্র নাজিব হাসান খান (নিহাল) কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষের ছাত্র। দোয়া করি, আল্লাহ যেন নাফিজকে দীর্ঘ হায়াত দান করে এবং শারীরিক সুস্থতা দান করে। লেখালেখি ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান অব্যাহত থাকুক সুত্র:গ্রেটার কুষ্ঠিয়া






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply