Sponsor



Slider

দেশ - বিদেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » মেহেরপুরে গত দুই মাসে সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া ফসলে কীটনাশকের বিষক্রিয়া অসুস্থ হয়ে ৭৮ জন কৃষক হাসপাতালে নিয়েছেন




এক মাস আগের ঘটনা। মেহেরপুরের গাংনীর চেংগাড়া গ্রামের ৪২ বছর বয়সী কৃষক ওমর ফারুক নিজের ধান খেতে কীটনাশক দিচ্ছিলেন। তার মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা- এর কোনোটিই ছিল না। কীটনাশক দেওয়া শেষ হলে হঠাৎ তার বমি হয়। অসুস্থ অনুভব করায় ধান খেতেই নিজের মাথায় পানি ঢালেন। সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি চলে যাবেন। কিছু দূর যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। যখন জ্ঞান ফেরে তখন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় নিজেকে দেখতে পান। হাসপাতালটির কর্তব্যরত নার্স রাফিজা বেগম জানান, ওমর ফারুক কীটনাশকের বিষক্রিয়া বা কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা এবং স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হন। পরে বাড়ি পাঠানো হয়। প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগী হাসপাতালে আসেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জানা গেছে, সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া ফসলের খেতে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মেহেরপুরের কৃষকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। প্রায়ই তারা ফসলের পরিচর্চা করতে গিয়ে কীটনাশকের সংস্পর্শে এসে বিষক্রিয়া বা কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা ফুসফুসে ক্যানসারসহ ভয়াবহ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় (শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ) আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পরিকল্পনার মধ্যে এখনো আটকে আছে কৃষি বিভাগ। সংস্থাটি জানিয়েছে, সরকার থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

মেহেরপুরের তিন উপজেলার হাসপাতালগুলোর তথ্য বলছে, গত দুই মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ৭৮ জন কৃষক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের সবাই সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া অসংখ্য কৃষক পল্লি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে গিয়ে মেলে সত্যতা। প্রায় সকল কৃষকই সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবহার ছাড়াই জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তারা বলছেন, জমিতে বিষ (কীটনাশক) দেওয়ার পর শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব হয়। তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যান। কথা হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিষ প্রয়োগ করতে গিয়ে মাথা চিন চিন করে। কিছু সময় বিশ্রাম নিলে আবার ঠিক হয়ে যায়।’ একই উপজেলার তেরোঘড়িয়া গ্রামের কৃষক সাহারুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কীটনাশকের ঝাঁজ অনেক বেশি। শরীরের কোনো অংশে লাগলেই জ্বালাপোড়া করে। অনেকক্ষণ সাবান দিয়ে ধুলে তারপর ঠিক হয়।’ তবে এ পরিস্থিতির জন্য কৃষি বিভাগও দায়ী। তারা কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন করেন না বলে অভিযোগ মুজিবনগরের শিবপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সবুরের। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে জ্ঞান খুবই কম। কৃষি অফিসাররা তেমন কিছুই বলেন না। সরকার থেকে হেলমেট, মাস্ক কিংবা হাতমোজা (হ্যান্ড গ্লাভস) সরবরাহ করলে আমরা তা ব্যবহার করব।’ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে কন্টাক্ট পয়জনিংয়ে আক্রান্ত রোগীর দেখা পাওয়া যায়। তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই কৃষক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে বিষ প্রয়োগের পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসা পেলে তারা সুস্থ হয়ে যান। এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।’ হাসপাতালটির মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বেলাল হোসেন বলেন, ‘এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের ফুসফুসে ক্যানসারের পাশাপাশি ভয়াবহ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। অনেক ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।’ তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে জেলার ৬৫ হাজার কৃষক পরিবারকে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করতে বলা হয়। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলে সেগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সরবরাহের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply