দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে ঈদে চাঙা অর্থনীতি । যার প্রভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান থমকে যায়। বাধার মুখে পড়ে বাজেট বাস্তবায়নও। সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রায় আটান্ন হাজার কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাসের মাথায় ঈদুল ফিতরকে ঘিরে গতি ফিরতে শুরু করেছে ব্যবসাবাণিজ্যে ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে। উৎসবকেন্দ্রিক কেনাকাটা এখন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই কেনাকাটা করেন। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল ফিতরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা। শুধু তৈরি পোশাকই বিক্রি হয়েছে সাতাশ হাজার কোটি টাকার। ৫০ হাজার কোটি টাকার জাকাত। ইফতারি বিক্রি হয়েছে ১শত বাইশ কোটি টাকার। মসলার বাজারে প্রায় আটাশ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। রেমিট্যান্সের গতি বাড়ায় স্থিতিশীলতা ফিরছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ছাব্বিশ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে ২ শত চুরানব্বই কোটি মার্কিন ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২শত বায়ান্ন কোটি ডলার। ব্যাংকারদের আশা, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে মার্চের শেষ নাগাদ প্রবাসী আয় (তিন বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটাও অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে, মুদ্রাস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে এই উচ্চমাত্রার রেমিট্যান্স দেশে খুচরা বাজার ও ভোক্তা ব্যয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বৈধ পথে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা এখন বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে বেশি উৎসাহী হচ্ছেন। ফলে রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করেছে, অন্যদিকে কমছে ডলারের বাজারে সংকট! এতে করে টাকার বিপরীতে ডলারের দামও কমে আসবে। যার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেখুন ডলারের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে এটা ঠিক। আবার মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ কমে গেছে সেটাও সঠিক। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিও চড়া। যদিও গত মাসে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে। তবে আশার দিক হলো- ঈদ ঘিরে মানুষ আবার জমজমাট কেনাকাটায় ফিরতে শুরু করেছেন। হয়তো কোরবানির ঈদে সেটা আরও বাড়বে। যার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গতির সঞ্চার ঘটবে। তবে আমাদের এখন কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগমুখী কিছু উদ্যোগ প্রয়োজন। সেটা যত তাড়াতাড়ি করা যাবে অর্থনীতিও তত তাড়াতাড়ি স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে বলে তিনি মনে করেন। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ঈদের অর্থনীতির আকার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। বছর ব্যাপী খাদ্য এবং খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি হয় ঈদের সময়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এই উপলক্ষে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়। কারণ তাদের বার্ষিক আয়ের ৪০ শতাংশ হয় ঈদে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চব্বিশ সালে ১ লাখ ছিয়ান্নব্বই হাজার কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়। তার আগের বছর ২০২৩ সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা হয় ১ লাখ সাতশি হাজার কোটি টাকা। দশ বছর আগে পনোরো সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা ছিল ১ লাখ পঞ্চান্ন হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো নেতিবাচকতা না থাকলে ঈদকে ঘিরে আরও জমজমাট কেনাবেচা হতো বলে মনে করেন চেইন শপ কিডস অ্যান্ড ফ্যামিলির স্বত্বাধিকারী তোফায়েল আহমেদ ভুইয়া।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ফলে সম্পদের পুনর্বণ্টন হয়। ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট এবং বাজার উৎসুক ঈদ ক্রেতাদের পদচারণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও ঈদের ভিড় অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে, চাহিদা মেটাতে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ঈদের সময় প্রায় ৩ কোটি যাত্রী যাতায়াত করে, ফলে পরিবহন খাতও চাঙা হয়ে ওঠে। দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, বিগত ঈদের সময় ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পোশাক আমদানি হলেও এ বছর পঞ্চাত্তর শতাংশ কমে আমদানি হয়েছে ১ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার। ফলে দেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। যা পোশাকের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। দোকান মালিক সমিতির অনুমান ঈদুল ফিতরের আগে পোশাকের জন্য পচিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিগত বছরে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। ঢাকার অভিজাত শপিং মল বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি এবং খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন ক্রেতারা। এসব মার্কেটের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিক্রয় স্থিতিশীল রয়েছে, প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চমূল্যের পাকিস্তানি পোশাক অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ক্রেতারা পাকিস্তানি পোশাকের রং এবং ফিটিংয়ের প্রশংসা করে বলেছেন, নকশাগুলো নিখুঁত এবং কাপড়ের মান চমৎকার। ইসলামপুর এবং পলওয়েল সুপার মার্কেটের মতো পাইকারি বাজারেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ঈদে অতিথি আপ্যায়নে রান্নার মসলা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে প্রায় সাতাশ হাজার ৫শত পঞ্চান্ন কোটি টাকা ব্যয় হয়। ঈদুল ফিতরের আগে পরিচালিত ব্যবসার পরিমাণ ১ লাখ পচাত্তর হাজার কোটি টাকা। বিগত বছরগুলোতে ২ লাখ কোটি টাকার মতো হলেও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এবার অর্থনৈতিক কর্মকা কমেছে। পাদুকা খাতে শীর্ষস্থানে স্থানে রয়েছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও বাটার মতো কোম্পানি। ঈদের সময় আসবাবপত্র বিক্রি বৃদ্ধি পায় পচিশ শতাংশ। ঈদের আগে সৌন্দর্য ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। রাজধানী শহরজুড়ে বিভিন্ন দোকান এবং ব্র্যান্ডেড আউটলেটগুলোতে মেকআপ কিনতে মহিলারা ভিড় করছেন। হেলাল উদ্দিন বলেন, সবাই ঈদকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপন করতে চান। সেদিন ভালো খাবার খেতে চান। নতুন কাপড় পরতে চান। সে সময় অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। ফ্রিজ-টেলিভিশনের মতো পণ্যের বিক্রি বাড়াতে লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচারণা ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করার প্রস্তুতি ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস আগেই নিয়ে থাকেন। রমজান শুরুর পরপরই শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে হাজারো মানুষের ভিড় হয়। গ্রন্থনা: মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
Featured
»
lid news
»
world
» দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়ে ঈদে চাঙা অর্থনীতি
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: