মধ্যযুগ, ব্রটিশ ও বাংলাদেশ জন্মের পর সাহিত্য ও প্রকাশনায় মেহেরপুর জেলার ইতিহাস-(প্রথম পর্ব)
মধ্যযুগ, ব্রটিশ ও বাংলাদেশ জন্মের পর সাহিত্য ও প্রকাশনায় মেহেরপুর জেলার ইতিহাস-(প্রথম পর্ব)
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা । স্বাধীনতার পিঠস্থান এ জেলায় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তবে কালের প্রবাহে এখানকার সাহিত্যচর্চা ও প্রকাশনার প্রাথমিক যুগের ইতিহাসের অনেকাংশ বিস্মৃত হয়ে গেছে।ফলে প্রাচীনযুগের ইতিহাস জানার কোন সুযোগ নেই। মধ্যযুগে মেহেরপুর জেলার সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের গৌরবময় ইতিহাস উল্লেখ করার মত। যদিও মধ্যুযুগের অনেক স্মৃতি এখনও অজানা। উনিশ শত সাতচল্লিশ সালে ভারত বিভক্তির পর এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভারতে চলে যাওয়ায় এবং ভারত থেকে এখানে এসে বসতিস্থাপন করায় এখানকার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে ইতিহাসের অনেক কিছু জনশ্রুতিতে পরিণত হয়ে আছে। এই জনশ্রুতির সূত্রধরে অনেকে ইতিহাসগ্রন্থও রচনা করেছেন।ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না থাকলেও মেহেরপুরের সাহিত্য ও প্রকাশনার গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি স্মরণ করার মত।বৃটিশও পাকিস্তান শাসনামলে মেহেরপুরে শিক্ষা ও চাকুরী উপলক্ষ্যে আগত অনেকেই সাহিত্য রচনা ও প্রকাশনায় অবদান রেখেছেন।
শ্রীচৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) চৌদ্দ শত ছিয়াশি সাল থেকে পনোরো তেত্রিশ সাল ) প্রেমভক্তিবাদ নদীয়া জেলার নবদ্বীপ সন্নিহিত মেহেরপুরে এনেছিল ভাব-ভাবুক তার জোয়ার। সেইভাবের জোয়ারে ভাবাবিষ্ট হয়ে মেহেরপুর নিবাসী কবি জগদীশগুপ্ত, রমনী মোহন মল্লিকসহ অসংখ্য বৈষ্ণব পদকর্তা সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত থেকে উদ্ধার করেন অসংখ্য বৈষ্ণব পদাবলী।চৈতন্য প্রবর্তিত সেই বৈষ্ণবীয় ধারাটি আজও মেহেরপুরে বহমান রয়েছে।বৈষ্ণব ধর্মের অবক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আঠারো শতকের শেষে বলরাম হাড়ী সম্প্রদায় নামে একটি লৌকিক গৌণধর্মের আবির্ভাব ঘটে মেহেরপুরে।এধর্মের প্রবর্তক বলরাম হাড়ি ছিলেন হিন্দুভক্তের কাছে হাড়িরা মআর মুসলমান ভক্তের হাড়ি আল্লা।এ সম্প্রদায়ের অনুসারীরা অধিকাংশই হাড়ি, ডোম, বাগদী, মুচি এবং নিচু শ্রেণির মুসলমান।রবীন্দ্রনাথের‘পাগলাহাওয়ারবাদলদিনে’গানে‘কোন বলরামের আমি চেলা’শব্দের লক্ষ বলরাম হাড়িও তার সম্প্রদায়।বলরাম হাড়ি সারাজীবন মানুষ ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন এবং তার অনুসারীরা বৈদিকমন্ত্র, পূজাঅর্চনা, দেব-দেবতা, গুরুবাদমানেননা।
লেখক ও গবেষক-:: নাফিজ উদ্দিন খান মেহেরপুরের ছড়াকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সু-বক্তা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলো। মেহেরপুরের কাঁসারী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা: মরহুম শামসুদ্দিন খান, মা:মরহুমা নোসেমা খাতুন।
গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।
No comments: