Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » » কাঁটাতারে বাধা সত্বেও মমতার বন্ধনে মেহেরপুরের সীমান্তের নবীননগর ও মথুরাপুর দুটি গ্রামের মুসলমানরা ভারতের সীমান্ত মসজিদে নামাজ আদায় করেন।




কাঁটাতারে বাধা সত্বেও মমতার বন্ধনে মেহেরপুরের সীমান্তের নবীননগর ও মথুরাপুর দুটি গ্রামের মুসলমানরা ভারতের সীমান্ত মসজিদে নামাজ আদায় করেন। বৃটিশ আমালে অবিভক্ত বাংলার সময় নবীননগর গ্রামে একটি মসজিদ নির্মিত হয়। আশির দশকে ভারত তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়। বেড়ার এপারে ১ শত পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে থাকা নাগরিকদের ওপারে সরিয়ে নিলেও মসজিদটি থেকে যায়। যেখানে এখনো এপারে মেহেরপুরের মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুটি গ্রামের বাসিন্দারা দুটি আলাদা দেশের পরিচয় বহন করছেন। একই গ্রামের কেউ বাংলাদেশের নাগরিক, আবার কেউ ভারতের। ভাষা, সংস্কৃতি এক হলেও জাতীয় পরিচয় ভিন্নতা তাদের প্রতিদিনের জীবনে তৈরি করছে সীমাহীন জটিলতা। গাংনীর মথুরাপুর ও মেহেরপুর সদরে নবীননগর সীমান্তের গ্রাম দুটির একটি অংশ পড়েছে বাংলাদেশে, অপর অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের করিমপুর জেলায়। এপারে-ওপারে গ্রামের নাম একই। মাঝখানে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া আর সীমান্ত চৌকি। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ গ্রাম দুটিতে টহল দেয় নিয়মিত। যে কোনো সন্দেহ হলেই চলে জেরা, এমনকি কখনো গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে জীবনযাপন করছেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। কোনো উৎসব-পার্বণ বা বিয়েশাদিতেও কাছের স্বজনদের তারা নিমন্ত্রণ করতে পারেন না। আত্মীয়স্বজনদের অসুখ-বিসুখ, এমনকি মৃত্যু হলেও চোখের পানি ফেলা ছাড়া শেষ দেখার কোনো সুযোগ থাকে না। এভাবে মমতার বন্ধনে কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কাঁটাতারের বেড়া। ভারতবর্ষ থেকে বৃটিশরা বিদায় নিলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় তখন গ্রাম দুটি ভাগ হয়ে যায়। তখন গ্রাম ভাগ হলেও দুপারের মানুষের অবাধ বিচরণ ছিল। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি নজরুল ইসলাম বলেন, জনাত্রিশেক পরিবারের বসবাস এখানে। দেশ বিভাগের পরও দুই দ

েশের মুসলমান গ্রামের এই একটি মসজিদেই নামাজ পড়তাম। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর মুসল্লি কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, বিজিবি-বিএসএফ মসজিদের পাশে বসে পতাকা বৈঠক করে। আমরা তাদের সামনে মসজিদে গিয়ে আজান দিই ও নামাজ পড়ি। তারা কোনো আপত্তি করে না। তারা বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে বলেন। গাংনী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামও ভাগ হয়ে গেছে। এপারে মথুরাপুর, ওপারেও করিমপুর থানার অন্তর্গত মথুরাপুর গ্রাম। ওপারে বিএসএফ ক্যাম্প। এপারে বিজিবি ক্যাম্প। মথুরাপুর গ্রামের কাছে আরেকটি গ্রাম কাথুলী ইউনিয়নের সওড়াতলা গ্রাম। এই গ্রামেও একটি মসজিদ আছে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ভারতের মাটিতে। কাঁটাতারের বেড়ার কারণে ওই মসজিদে নামাজ আদায় করেন সওড়াতলা গ্রামের মানুষ। সওড়াতলা গ্রামের মিজানুর রহমান পল্টু জানান, গ্রামের মসজিদের জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনেও ফয়সালা হয়নি। গ্রামের লোকজন মসজিদে দীর্ঘদিন নামাজ আদায় করেন। সরেজমিন সওড়াতলা গ্রামে দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়ার এপারে গ্রামটির বাড়িঘরের পাশ দিয়ে মেঠোপথ। ওই পথ দিয়ে বিএসএফ লোকজনের বাড়ির পাশ দিয়ে টহল দিচ্ছে। ছবি ধারণ করতে গেলে বিনয়ের সঙ্গে ছবি না তোলার জন্য অনুরোধ করেন। ৫শত মিটার ফেলে রেখে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। কাঁটাতারের এপারে ভারত সীমান্ত এলাকায় সওড়াতলা গ্রামের ফুটবল খেলার মাঠ। ওই মাঠে বিকালবেলা গ্রামের কিশোর-যুবক ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখা যায়।গ্রামের হকালী মণ্ডল জানান, কাঁটাতার দেওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ওপারে পাকশী গ্রামে। যখন বিয়ে হয় তখন ছিল এপাড়া-ওপাড়া। একই সময়ে ওপারের ব্রজপুর গ্রামের এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে সওড়াতলা গ্রামে। ওই গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার বাবা-মা থাকে ওই পারে, ভারতের অংশে। বিয়ের পর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াতে আত্মীয়স্বজনের দেখাদেখি, রান্না করা খাবার নেওয়া-দেওয়া বন্ধ। তবে মোবাইল ফোনের দৌলতে যোগাযোগ আছে। কাঁটাতারের বেড়ার এপারে বাবার কুড়ি বিঘার মতো জমি। এপারের লোকজন বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে। আঁধার কার্ড কাঁটাতারের গেটের ওপারের সীমান্ত চৌকিতে জমা দিয়ে জমির বর্গা দেওয়া টাকা নিতে আসেন বাবা বা ভাইয়েরা। সেদিন দেখা মেলে, কথা হয় কিছু সময়ের জন্য। এই এলাকাতে অনেক পরিবারই আছে, যাদের আত্মীয়রা দুই দেশে ভাগ হয়ে পড়েছে। দেখা করতে হলে বিশেষ অনুমতি লাগে, যা পাওয়া কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান . মিজানুর রহমান বলেন, এটা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। এটি মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি ও স্বাভাবিক জীবনের প্রশ্ন। আমরা চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সমস্যা নিয়ে কথা হোক। তিনি মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে ‘মানবিক করিডর’ চালু করলে সীমান্তবর্তী এ ধরনের এলাকার মানুষ উপকৃত হতে পারে। এছাড়া পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীন চলাচল, চিকিৎসা ও পারিবারিক দেখা-সাক্ষাতের জন্য সীমিত ছাড় দেওয়া যেতে পারে। সীমান্ত কেবল একটি রেখা নয়, এটি অনেক সময় গ্রামের বুক চিরে যায়, ভাগ করে দেয় পরিবার, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও জীবনের স্বপ্ন। ‘সীমান্ত: গ্রাম, দুটি দেশ’ এই বাক্য তাই শুধু ভূগোল নয়, একটি করুণ বাস্তবতার চিত্রও। গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply