চুয়াডাঙ্গায় এত গরম কেন শীতের সময় হাড়কাঁপানো শীত গরমের সময় প্রচণ্ড গরম, শীতের সময় হাড়কাঁপানো শীত। এ বৈশিষ্ট্য দেশের যে কয়েকটি জেলার আছে, তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার নামটি আসে আগে। শীতের কথা বাদ থাক, এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে গরমের প্রসঙ্গেই আসি। চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের বাইশ বছরের ইতিহাসে ষোলো বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থেকেছে। মাত্র দুই বছর তাপমাত্রা আটত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকেছে। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘একটি স্টেশনে ধারাবাহিকভাবে এই তাপ খুব স্বাভাবিক নয়। অঞ্চলটি যে তপ্ত, তার প্রমাণ এখানেই পাওয়া যায়।কারণ ভৌগোলিক চুয়াডাঙ্গায় গরম বেশি হওয়ার একটি ভৌগোলিক ব্যাখ্যা আছে। এ ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে কল্পিত কর্কটক্রান্তি রেখার ব্যাখ্যায় যেতে হবে। চুয়াডাঙ্গার তপ্ত পরিস্থিতির জন্য সেটি খুব প্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর মানচিত্রে আঁকা প্রধান পাঁচটি অক্ষরেখার মধ্যে একটি হলো কর্কটক্রান্তি রেখা। সূর্য প্রতিবছরে একবার নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে। এ সময় উত্তর গোলার্ধের সর্বশেষ স্থান পর্যন্ত ঘুরে আবার নিরক্ষরেখার দিকে ফিরে আসে—সূর্যের ভ্রমণের কাল্পনিক রেখাটিই কর্কটক্রান্তি রেখা। এটি পৃথিবীর পূর্ব–পশ্চিমে বিস্তৃত। এ রেখা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপর দিয়েই গেছে। সূর্যের উত্তরমুখী যাত্রাকে বলা হয় উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণমুখী যাত্রাকে বলা হয় দক্ষিণায়ন। বছরে ছয় মাস সূর্য উত্তরায়ণে থাকে এবং পরবর্তী ছয় মাস থাকে দক্ষিণায়নে। বাইশ ডিসেম্বর থেকে একুশ জুন পর্যন্ত ছয় মাস ধরে সূর্যের উত্তরমুখী আপাতগতি হলো উত্তরায়ণ। আর একুশ জুনের পর থেকে বাইশ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস ধরে সূর্যের দক্ষিণমুখী আপাতগতি হলো দক্ষিণায়ন। এটি মূলত দিন ছোট হওয়া এবং রাত বড় হওয়ার সময় নির্দেশ করে। আবহাওয়াবিদ সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, সূর্যের উত্তরায়ণের সময় এই কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরই সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে এই রেখা যেসব দেশের ওপর দিয়ে গেছে, সেসব দেশে প্রচণ্ড গরম পড়ে। এই একটিমাত্র অক্ষরেখা, যা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেছে। এ সময় তাই গরম থাকা স্বাভাবিক এ রেখা স্পর্শ করা এলাকাতেই। কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশসহ সতেরো টি দেশের ওপর দিয়ে গিয়েছে। এটি পার্শ্ববর্তী ভারতের গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, ঝাড়খন্ড, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব এলাকার ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা গেছে, সেসব এলাকা এবং আশপাশের এলাকায় তাপ অনেক বেশি। এখানে সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পড়ে। বাংলাদেশে চুয়াডাঙ্গা এ রেখার একেবারে মুখে পড়েছে। সেখানে তাপ অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার এটাও একটা কারণ। চুয়াডাঙ্গার যেসব এলাকায় এ রেখা গেছে, তা এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়নি বলে জানান সেখানকার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, দেশের যেসব এলাকায় এ রেখা গেছে, সেখানকার সীমা নির্দেশ করে কোনো চিহ্ন থাকা উচিত, এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ।স্থানীয় ভূপ্রকৃতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে? তাপ ও শীত—দুয়ের গতি নির্ধারণে স্থানীয় নানা উপাদানও কাজ করে। এর মধ্যে আছে সবুজায়ন, জলাভূমি, ভূপৃষ্ঠের ভিন্ন কোনো বৈশিষ্ট্য। চুয়াডাঙ্গার ভূগঠনে ভিন্ন এমন কোনো কিছু কি আছে, যার ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে? কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘পুরো দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের যে ভূগঠন, তার কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়নি। ওই অঞ্চলে জলাভূমি ও সবুজায়নের কোনো ঘাটতি হয়েছে কি না, তা দেখা দরকার। চুয়াডাঙ্গার অতি তাপের পেছনে সেগুলোর ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু তা গবেষণায় প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত বলা যায় না। দেশে গত বুধবার (৭ মে) থেকে টানা তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল শনিবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বিয়াল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরে এ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ। গত বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তিতাল্লিশ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তা ছিল যশোরে। আর চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল তিতাল্লিশ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদেরা এই সামান্য পরিমাণ তাপের হেরফেরকে গণ্য করেন না। সে বিচারে গত বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এ জেলায়। // কেন চুয়াডাঙ্গায় এত গরম হয়? কারণ কি ভৌগোলিক, জলবায়ুগত? স্থানীয় এমন কোনো বিষয় আছে, যার সঙ্গে গরমের সম্পর্ক আছে? গরমের এ প্রবণতা কী সাম্প্রতিক, না অতীতেরও রেকর্ড আছে? প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা হয় আবহাওয়াবিদ, জলবায়ুবিশেষজ্ঞ, ভূতত্ত্ববিদদের সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গার এই অতি তাপের নেপথ্যে জেলাটির অবস্থান, উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহ, কর্কটক্রান্তি রেখার গতিপ্রকৃতি, স্থানীয় ভূমির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানা কারণ আছে।তাপপ্রবাহের প্রবেশমুখে অবস্থান বাংলাদেশে তাপ মোটামুটি বাড়তে শুরু করে মার্চ মাস থেকেই। এপ্রিলে দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এর পরেই আছে মে মাস। দেখা গেছে, এই দুই মাসে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে ধারাবাহিকভাবে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা থাকে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের। একে পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহও বলা যায়। ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এই বায়ুর প্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা—এসব জেলা মূলত এই গরম হাওয়ার প্রবেশদ্বার। এর কাছাকাছি এলাকাগুলোতেও তাপ বেশি থাকে। যেমন দক্ষিণের জনপদ না হলেও এ বায়ুর প্রবাহ রাজশাহী অঞ্চলে গিয়ে ঠেকে। দেখা যায়, দক্ষিণ–পশ্চিমের এলাকাগুলোর তুলনায় দেশের অন্যত্র তাপ ধীরে ধীরে কমে যায়।’ ভারতের মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ উপমহাদেশীয় উষ্ণ বায়ুপ্রবাহের এলাকা। এই মে মাসে ঢাকার গড় তাপমাত্রা থাকে তেতেত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে কলকাতার গড় তাপমাত্রা থাকে ছত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘গরম বায়ুপ্রবাহ তার পথপরিক্রমায় ধীরে ধীরে তাপ কমিয়ে ফেলে। এটাই স্বাভাবিক। ভারতের মধ্যপ্রদেশ, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে যতটা তাপ, তা বাংলাদেশে প্রবেশের সময় থাকে না। আবার বাংলাদেশের প্রবেশের দ্বার যেমন চুয়াডাঙ্গা বা যশোরের দিকে তাপ যতটা থাকে, ততটা ঢাকায় পাওয়া যায় না। চুয়াডাঙ্গা একদম মুখে পড়ে। তাই এ এলাকা এবং এর কাছাকাছি এলাকাগুলো এত তপ্ত।হঠাৎ নয়, আগে থেকেই এ অবস্থা চুয়াডাঙ্গায় এখন যে তাপ বাড়ছে, এটা কি সাম্প্রতিক সময়ের প্রবণতা? আবহাওয়ার তথ্য–উপাত্ত বলছে, তা নয়। চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের স্টেশন খোলা হয়েছে ২০০২ সালে। এর পর থেকে প্রতিবছর ওই স্টেশনে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৩৮ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টেশন তৈরির পর শুধু নয়, এর আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা বেশি থেকেছে। স্টেশন তৈরির পর আমরা একে নথিবদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছি। আর তাতে দেখা যাচ্ছে ফি বছর ধারাবাহিকভাবে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকছে।’’গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: