মস্তিষ্কেই রয়েছে প্রাকৃতিক ধাতু, ফেরাতে পারে হারানো স্মৃতিও! অবশেষে মিলল অ্যালঝাইমার্সের উত্তর? অ্যালঝাইমার্স রোগাক্রান্তদের মস্তিষ্কের কোষগুলি ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। স্মৃতি লোপ পায়। চিকিৎসায় এই রোগ সারে না। কেবল স্মৃতিবিভ্রমকে বিলম্বিত করা যায় মাত্র। অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসা আছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর প্রতিকারের কোনও উপায় আবিষ্কার করা যায়নি। এক বার অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। স্মৃতি লোপ পায়। আমেরিকার হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক দল গবেষক সম্প্রতি এর সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইঁদুরের উপর তাঁরা একটি গবেষণা করে দেখেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক সারিয়ে তোলা সম্ভব! এমনকি, স্মৃতিও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অ্যালঝাইমার্সের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে যে জটিলতা তৈরি হয়, অবশেষে তার একটি উত্তর পাওয়া যাচ্ছে, দাবি মার্কিন গবেষকদের। এই পরীক্ষা ইঁদুরের উপর করে দেখা হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রেও একই ফল পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশাবাদীঅ্যালঝাইমার্স কী? মস্তিষ্কের ভিতর বিষাক্ত কিছু প্রোটিন জমা হলে অ্যালঝাইমার্স হয়। প্রাথমিক ভাবে অ্যামিলয়েড বিটা প্লাক এবং টাউ ট্যাঙ্গেল্স প্রোটিন অ্যালঝাইমার্সের মূলে বলে দাবি গবেষকদের। এই প্রোটিনগুলি নিউরোনের কাজে বাধা দেয় এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে নিউরোনগুলি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে স্মৃতি লোপ পায়। মানুষ যা জানত, তা ভুলে যেতে শুরু করে। তা সে ছোটবেলায় শেখা সাঁতার কিংবা সাইকেল চালানো হোক বা ছাত্রজীবনে শেখা পড়াশোনা। কিংবা চাষবাসের খুঁটিনাটি। এমনকি, সামাজিক সহবত থেকে শুরু করে কী ভাবে খেতে হয় এই সামান্য জিনিসও ভুলে যাওয়া বিচিত্র নয়। চেতনার জগৎটাই এলোমেলা হয়ে যায় অ্যালঝাইমার্স আক্রান্তদের।অ্যালঝাইমার্স চিকিৎসায় সারে না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয়ের উপরেই জোর দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ, যদি রোগটা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তবেই অন্তত কিছু বছর পর্যন্ত উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা যায়। মস্তিষ্কের ক্ষয়ের গতিকে যত দূর সম্ভব কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা যায়। পাশাপাশি স্মৃতিভ্রংশের হাত ধরে যে সব শারীরিক সমস্যা আসতে শুরু করে, সেগুলির দিকেও নজর রাখা যায়। চিকিৎসকেরা স্মৃতিবিভ্রমকে বিলম্বিত করতে পারেন মাত্র। এর উপশম বা রোগীকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। সাধারণত অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হন বয়স্কেরা। ৬৫ বছরের পর থেকে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়তে থাকেমস্তিষ্কে লিথিয়ামের ভূমিকা কী প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া একটি নরম ধাতু লিথিয়াম। দীর্ঘ দিন ধরে মস্তিষ্কের রোগের চিকিৎসায় এই ধাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মানসিক রোগের ওষুধ তৈরি হয় লিথিয়াম দিয়ে। বাইপোলার ডিস্অর্ডার-এর চিকিৎসাতেও লিথিয়াম কাজে লাগে। বিজ্ঞানীদের মতে, মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ কোষীয় প্রক্রিয়াগুলিকে সহায়তা করে লিথিয়াম। নিউরোনগুলিকে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায়।নতুন কী মিলল? মার্কিন গবেষণার ফলাফল বুধবার নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রুস ইয়াঙ্কনার। অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসা যে লিথিয়ামের মাধ্যমে সম্ভব, তা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু এই রোগের নিরাময়ও যে সম্ভব, গবেষকেরা সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, আমাদের মস্তিষ্কে প্রাকৃতিক উপায়েই লিথিয়াম ধাতু তৈরি হয়। তার নির্দিষ্ট কিছু শারীরবৃত্তীয় ভূমিকা রয়েছে। এটি নিউরোডিজেনারেশন আটকায় এবং মস্তিষ্কের প্রধান কোষগুলিকে সচল রাখে। এই লিথিয়ামের বৃদ্ধি বা হ্রাসের সঙ্গে অ্যালঝাইমার্সের যোগ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অ্যামিলয়েড বিটা প্লাক মস্তিষ্কে লিথিয়ামের আয়নগুলিকে আটকে দেয় এবং নিউরোন ও অন্যান্য কোষের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এর ফলে মস্তিষ্কের রোগপ্রতিরোধক কোষগুলিতে লিথিয়ামের ঘাটতি তৈরি হয়। মস্তিষ্ক পরিষ্কারের কাজ ব্যাহত হয়। ত্বরাণ্বিত হয় স্মৃতিভ্রম।ইঁদুরে কী দেখা গেল লিথিয়াম নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কী ভাবে স্মৃতিভ্রমের সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছিল। লিথিয়ামেই যে উত্তর লুকিয়ে আছে, তা বোঝা যাচ্ছিল। কেবল উত্তরটুকু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেল, যে সমস্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কে লিথিয়ামের ঘাটতি রয়েছে, তাদের মস্তিষ্ক দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে। সেখানে বেশি করে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত প্রোটিন। এ থেকে বিজ্ঞানীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হলেন, লিথিয়ামের ঘাটতি কেবল একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। অ্যালঝাইমার্সের বৃদ্ধিতেও এর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।সমাধান কী? মার্কিন গবেষকেরা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন, লিথিয়াম ধাতুর একটি লবণে (সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক) লুকিয়ে আছে সাফল্যের চাবিকাঠি। তার নাম লিথিয়াম ওরোটেট। এত দিন লিথিয়াম নিয়ে যত গবেষণা বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে, তাতে হয় লিথিয়াম ধাতু ব্যবহৃত হয়েছে, নয়তো লিথিয়াম কার্বনেট প্রয়োগ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, লিথিয়ামের কার্বনেট রূপটিকে অ্যামিলয়েড বিটা প্লাক সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে। কিন্তু লিথিয়াম ওরোটেটে তা সম্ভব নয়। পরীক্ষাগারে ইঁদুরকে লিথিয়াম ওরোটেটের সামান্য ডোজ় দেওয়া হয়েছিল। তাতে অ্যালঝাইমার্সজাত ক্ষয় সেরে গিয়েছে। ফিরে এসেছে ইঁদুরের স্মৃতি! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, লিথিয়াম ওরোটেট প্রয়োগের ফলে মস্তিষ্কে বিষাক্ত কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।সারা বিশ্বে ৫.৫ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। তাঁদের অধিকাংশ অ্যালঝাইমার্সের রোগী। স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন বা ফেলছেন। প্রচলিত চিকিৎসায় স্মৃতিভ্রমকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হয়। লিথিয়াম সংক্রান্ত গবেষণাটি মানুষের উপর প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা সফল হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানী নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে, দাবি বিশেষজ্ঞদের। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট অ্যাশলে বুশ বলেছেন, ‘‘এটা যুগান্তকারী ঘটনা। আমরা সম্প্রতি অ্যালঝাইমার্সের একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু সেটা শুধু অ্যামিলয়ে়ড প্লাককেই নিশানা করতে পারে। মার্কিন গবেষণায় যা পাওয়া গিয়েছে, তাতে রোগের অন্যান্য দিকগুলির মোকাবিলাও সম্ভব।’’ গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
Featured
»
world
» মস্তিষ্কেই রয়েছে প্রাকৃতিক ধাতু, ফেরাতে পারে হারানো স্মৃতিও! অবশেষে মিলল অ্যালঝাইমার্সের উত্তর?
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: