Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » সূর্যকে কি পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব




সূর্যকে কি পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব দূর থেকে সূর্যকে মনে হয় বিশাল একটা আগুনের গোলা। সেখানে যেন দিনরাত দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের আলো ও উত্তাপেই আলোকিত হচ্ছে পৃথিবী এবং এ গ্রহে টিকে আছে তাবৎ প্রাণিকুল। তবে আমাদের ভাবনায় আসলে ভুল আছে। আপাতত ধরে নিই এই ভাবনাটাই সঠিক। তাহলে সূর্যকে নিভিয়ে ফেলতে চাইলে কী করতে হবে? আগুন নেভানোর কথা এলেই মাথায় প্রথমেই পানির কথা আসবেই। তাহলে সূর্য নেভাতে কী পরিমাণ পানি লাগবে? সূর্যকে কি পানি দিয়ে সত্যিই নিভিয়ে ফেলা সম্ভব? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আগে বুঝতে হবে, সূর্য জ্বলে কীভাবে?

আগেই বলেছি, সূর্য নিয়ে আমাদের প্রথম ধারণাটা আসলে ভুল। এই বস্তুটি আমাদের পরিচিত আগুনের গোলার মতো নয়। সেখানে পৃথিবীর আগুনের মতো জ্বলেও না। পৃথিবীতে দহন বা আগুন জ্বলার জন্য অক্সিজেন দরকার। দহনের জন্য তিনটি জিনিস জরুরি—জ্বালানি, বাতাস বা অক্সিজেন এবং তাপ। এই তিনের সমন্বয়ে পৃথিবীতে আগুন জ্বলে। কাঠ বা তেল নিজেই জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। যথেষ্ট তাপ ও অক্সিজেন পেলে এতে আগুন ধরে যায়। কিন্তু সূর্যের ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। বিজ্ঞানীদের হিসেবে, সূর্য প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন (বা ৬,০০,০০,০০,০০০ কিলোগ্রাম) হাইড্রোজেনকে নিউক্লীয় ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে। সূর্যের শক্তির উৎস হলো নিউক্লিয়ার ফিউশন বা পরমাণু সংযোজন। আর সেখানে জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে হাইড্রোজেন গ্যাস। প্রচণ্ড ভরের কারণে সূর্যের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচণ্ড চাপের মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু একসঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম পরমাণু। এই প্রক্রিয়াটা ঘটে সূর্যের কেন্দ্রে। সেখানে চাপ অনেক বেশি—পৃথিবীর প্রায় তিন লাখ তেত্রিশ হাজার গুণ বেশি। আর তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একসঙ্গে জুড়ে তৈরি করে হিলিয়াম। একেই বলে ফিউশন বিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াতে সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে বিপুল পরিমাণ শক্তি। আসলে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় যখন হাইড্রোজেন পরমাণু মিশে হিলিয়াম তৈরি হয়, তখন কিছুটা ভর হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া ভরই বিখ্যাত সমীকরণ E= mc2 অনুসারে পরিণত হয় শক্তিতে। এই শক্তিই আমরা পাই আলো এবং তাপ হিসেবে। শুধু তাই নয়, সূর্য থেকে এই প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসছে নিউট্রিনো, পজিট্রন আর গামা রশ্মি। মূল কথা হলো, সূর্য আসলে একটা বিশাল পরমাণু চুল্লি, যা ক্রমাগত হাইড্রোজেন পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করছে। বিজ্ঞানীদের হিসেবে, সূর্য প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন (বা ৬,০০,০০,০০,০০০ কিলোগ্রাম) হাইড্রোজেনকে নিউক্লীয় ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে। এই রূপান্তরের ফলে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৯৬ মিলিয়ন টন হিলিয়াম তৈরি হয়। আর বাকি প্রায় ৪ মিলিয়ন টন ভর (E=mc2 সূত্রানুসারে) শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এতক্ষণে জেনে গেছেন, সূর্যের জ্বালানি হলো হাইড্রোজেন? তার মানে, পানি ঢেলে আমরা সূর্যকে নেভানোর বদলে উল্টো তাকে আরও বেশি জ্বালানি দিয়ে দিলাম! হাইড্রোজেন পেয়ে সূর্য আরও তীব্রভাবে জ্বলবে। এবার ধরুন, আমরা যদি কোনোভাবে সূর্যের সমান পরিমাণ পানি জোগাড় করতে পারি! অসম্ভব শোনাচ্ছে, তাই না? কিন্তু কল্পনায় ধরে নিন, কোনোভাবে আমরা এতটা পানি যোগার করে ফেলতে পারলাম। কিন্তু মহাকাশে এই পানি হয়ে যাবে শক্ত বরফের মতো। কারণ সেখানে তাপমাত্রা অনেক কম। এই বিশাল বরফের গোলাটা যদি আমরা সূর্যের দিকে ঠেলে দিই, তাহলে কী হবে? সূর্য কি নিভে যাবে? প্রথম সমস্যা হলো, এই বরফ সূর্যের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাষ্প হয়ে যাবে। সূর্যের বায়ুমণ্ডল এত গরম যে বরফ টিকতেই পারবে না। আবারও ধরে নিচ্ছি, আমরা কোনোভাবে সেই বাষ্পকে সূর্যের কেন্দ্রে পাঠাতে পারলাম। তাহলে কি সূর্য নিভে যাবে? এবারও উত্তর হলো, না। সূর্যের পরিবেশ এতই চরম যে পানির বাষ্পও সেখানে টিকতে পারবে না। প্রচণ্ড তাপে পানি ভেঙে যাবে তার মৌলিক উপাদানে। অর্থাৎ হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। এতক্ষণে জেনে গেছেন, সূর্যের জ্বালানি হলো হাইড্রোজেন? তার মানে, পানি ঢেলে আমরা সূর্যকে নেভানোর বদলে উল্টো তাকে আরও বেশি জ্বালানি দিয়ে দিলাম! হাইড্রোজেন পেয়ে সূর্য আরও তীব্রভাবে জ্বলবে। সেটা অনেকটা আগুন নেভাতে গিয়ে তেল ঢেলে দেওয়ার মতো ব্যাপার। সূর্য নিয়ে আপনার যে ধারণাগুলো একদম ভুল! সূর্যে সাধারণত যে ফিউশন হয় তাকে বলে প্রোটন-প্রোটন ফিউশন। কিন্তু অক্সিজেন পেলে শুরু হবে কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বা সিএনও ফিউশন (CNO Fusion)। এ ধরনের ফিউশন অনেক বেশি শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, পানি থেকে অক্সিজেন পাওয়ায় সূর্যে একটা নতুন ধরনের নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হবে। সূর্যে সাধারণত যে ফিউশন হয় তাকে বলে প্রোটন-প্রোটন ফিউশন। কিন্তু অক্সিজেন পেলে শুরু হবে কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বা সিএনও ফিউশন (CNO Fusion)। এ ধরনের ফিউশন অনেক বেশি শক্তিশালী। নতুন হাইড্রোজেন পেয়ে সূর্যের ভর বেড়ে যাবে প্রায় দেড় গুণ (সঠিকভাবে বললে প্রায় ১.৭ গুণ)। আর তখন সূর্য হয়ে উঠবে আগের চেয়ে দেড় গুণ বড়। তার উজ্জ্বলতাও বেড়ে যাবে প্রায় ছয় গুণ। সেই সঙ্গে সূর্যের রংটাও যাবে বদলে। এখন আমরা সূর্যকে দেখি হলুদাভ। কিন্তু দেড় গুণ বড় সূর্যটাকে দেখাবে নীলাভ-সাদা। তখন তাপমাত্রাও হবে বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি। সূর্য থেকে ছড়াতে থাকবে মারাত্মক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি। এর প্রভাবে পৃথিবী হয়ে উঠবে আগের চেয়ে ছয় গুণ বেশি গরম। এই তাপে পৃথিবীতে কোনোকিছুই টিকে থাকতে পারবে না। আমরা সবাই পুড়ে স্রেফ ছাই হয়ে যাব। তাহলে বুঝতেই পারছেন, পানি দিয়ে সূর্য নেভানো মোটেও ভালো ধারণা নয়। সুপারনোভার জন্য নক্ষত্রের ভর কমপক্ষে সূর্যের ভরের ৮ গুণ বা তারও বেশি হতে হয়। কিন্তু এর ভর মাত্র ১.৭ গুণ। আরেকটা ব্যাপারও ঘটে। সিএনও ফিউশনে চলা নক্ষত্ররা খুব দ্রুত মরে যায়। এমনিতে আমাদের সূর্যের আরও কয়েক বিলিয়ন বছর টিকে থাকার কথা। কিন্তু এই নতুন সূর্য টিকবে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর। এই ভরের কোনো নক্ষত্রের বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পুড়ে শেষ হয়ে গেলে তা প্রথমে ফুলে গিয়ে একটি লোহিত দানবে বা রেড জায়ান্টে পরিণত হবে। সবশেষে সঙ্কুচিত হয়ে পরিণত হবে শ্বেত বামন নক্ষত্রে। তবে কোনোভাবেই সেটা সুপারনোভা হতে পারবে না। কারণ সুপারনোভার জন্য নক্ষত্রের ভর কমপক্ষে সূর্যের ভরের ৮ গুণ বা তারও বেশি হতে হয়। কিন্তু এর ভর মাত্র ১.৭ গুণ। কাজেই একদিক থেকে ভাবলে, পানি বা বরফ ঢেলে সূর্যকে নিভিয়ে ফেলা যাচ্ছে, কিন্তু সেটা অনেক দেরিতে। আরেকটা উপায় আছে, কিন্তু সেটা হবে আরও পাগলামি। আগের মতোই সূর্যের সমান পানি লাগবে, কিন্তু এবার সেই পানিকে প্রায় আলোর গতিতে ছুঁড়ে মারতে হবে সূর্যের দিকে। এতে সূর্যের মহাকর্ষীয় ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। এভাবে সূর্যকে সত্যিই ধ্বংস করা সম্ভব। অবশ্য শুধু পানিই নয়, যেকোনো কিছুই দিয়ে এ কাজটা করা যায়, যদি সেটা যথেষ্ট বড় ও যথেষ্ট দ্রুত গতিতে সূর্যে আঘাত করে। তবে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। সূর্য না থাকলে পৃথিবীসহ সব গ্রহ জমে বরফ হয়ে যাবে। সূর্যের মহাকর্ষ বল না থাকায় সব গ্রহ মহাকাশে ছিটকে চলে যাবে এলোমেলোভাবে। সৌরজগতের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট ডট সিও ডট ইউকে, গিজমো, সায়েন্স এবিসি ও ইউনিভার্স টুডে






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply