অক্সিটোসিন থেকে টেস্টোস্টেরন: মনের অদৃশ্য রসায়নের গল্প হরমোন আমাদের শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও শক্তিশালী প্রভাব ফেলে |
হরমোন হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক। এগুলো শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ও অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্তে ভেসে সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। আমরা সাধারণত নিজেদের রাগ, ভালোবাসা, হতাশা বা ভয়কে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ভাবতে ভালোবাসি। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের মনের ওপর প্রভাব রাখে শরীরের হরমোন। রাসায়নিক এ বার্তাবাহকগুলো আমাদের মস্তিষ্কের নিউরো-ট্রান্সমিটারের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। আর এ কারণেই মাঝে মাঝে আমাদের মন হতাশা, উদ্বেগ, অস্থিরতাসহ বিভিন্ন রকম অনুভূতি পেয়ে থাকে। হরমোন হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক। এগুলো শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ও অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্তে ভেসে সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। দেহের বৃদ্ধি, বিপাক, প্রজনন, ঘুম, শারীরিক ও মানসিক অবস্থাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়া এ হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। হরমোনের তারতম্য স্বাভাবিক ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটিয়ে শরীরে নানারকম প্রভাব ফেলতে পারে কিভাবে কাজ করে হরমোন? হরমোন রক্তপ্রবাহে মিশে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকা রিসেপ্টর বা গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হয়। যুক্ত হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে এক ধরনের জৈবিক ‘হ্যান্ডশেক’ বলা যেতে পারে, এর মাধ্যমে এটি শরীরকে বিভিন্ন কাজের নির্দেশনা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ইনসুলিন হরমোন লিভার ও মাংসপেশিকে নির্দেশ দেয় রক্তের বাড়তি গ্লুকোজ শোষণ করতে। অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ মানুষের শরীরে এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি হরমোন শনাক্ত করা গেছে। এগুলো আমাদের বৃদ্ধি, ঘুম, যৌনতা, প্রজনন থেকে শুরু করে মেজাজ ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিটি অংশে ভূমিকা রাখে। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাফিসা ইসমাইল বলেন, ‘হরমোন মানুষের মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহকদের সঙ্গে মিশে কাজ করে। এরা শুধু মানুষের মনের ওপরই নয়, মস্তিষ্কে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।’ তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বড় ধরনের হরমোন পরিবর্তনের সময় মানসিক সমস্যাও বেড়ে যায়। এ কারণেই শৈশবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতার হার প্রায় সমান থাকলেও, কৈশোরের পর মেয়েদের মধ্যে এ হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়। আর আজীবন এটা প্রায় একই রকম থাকে। বয়ঃসন্ধির আগে ছেলে-মেয়েদের বিষণ্নতার হার প্রায় একই থাকলেও, কৈশোরে মেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায় নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের ওঠানামা নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের ওঠানামা মন ও মেজাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মেনস্ট্রুয়েশনের প্রভাব: মেনস্ট্রুয়েশন সাইকেলের আগে ও পরে অনেক নারীরই অকারণ বিষণ্নতা, ক্লান্তি বা উদ্বেগ হয়। কারণ তখন শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি বিরক্তির উদ্রেকও ঘটায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ রূপ নেয়, যার নাম প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিজঅর্ডার (পিএমডিডি)। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিসা হ্যান্টসু বলেন, ‘পিএমডিডি হচ্ছে এমন এক অবস্থা যা প্রতি মাসেই ফিরে আসে ও নারীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।’ ওভ্যুলেশনের সময়: ওভ্যুলেশনের সময় ইস্ট্রোজেন বেড়ে গেলে নারীরা অনেক সময় বেশি উদ্যমী ও খুশি বোধ করেন। প্রজেস্টেরন ভেঙে তৈরি হওয়া অ্যালোপ্রেগনানোলোন হরমোনও শরীরকে শান্ত করে। জন্ম ও মেনোপজের ধাক্কা: সন্তান জন্মের পর নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়। এর ফলে প্রায় ১৩ শতাংশ মা প্রসূতি-পরবর্তী বিষণ্নতায় ভোগেন। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা অধ্যাপক লিসা গালিয়া বলেন, ‘এটি শুধু হরমোনের ব্যাপার নয়। বরং শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সার্বিক পরিবর্তনের সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।’ মেনোপজের সময়ও নারীরা একইরকম ভাবে হরমোনের ওঠানামার মধ্যে পড়েন। শুরু হয় মনোযোগ কমে যাওয়া (ব্রেন ফগ), মেজাজ পরিবর্তন, হঠাৎ বিষণ্নতা কিংবা নির্লিপ্ততা। বাদ যান না পুরুষরাও পুরুষদের ক্ষেত্রেও হরমোন মনের ওপর প্রভাব ফেলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে আসে, যা অনেক সময় বিষণ্নতা বা মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। এছাড়াও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে তা ক্লান্তি, মেজাজ খারাপ (মুড সুইং), বিষণ্ণতা ও মনোযোগের অভাব তৈরি করতে পারে। আর বেশি হলে তা আক্রমণাত্মক প্রবণতা, হঠকারিতা ও মেজাজে অস্বাভাবিক পরিবর্তন যেমন অতিরিক্ত উত্তেজনা বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, ‘পুরুষদের ক্ষেত্রেও এ পরিবর্তন মনের ওপর প্রভাব ফেলে। যদিও এ বিষয়ে এখনো যথেষ্ট গবেষণা হয়নি। তবে কিছু প্রমাণ মিলেছে যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রার সামান্য পরিবর্তনও পুরুষের মধ্যে মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।’ মস্তিষ্কের ভেতরে হরমোনের কাজ হরমোন মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন নামের রাসায়নিকের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। ইস্ট্রোজেন আবার স্নায়ুকোষকে রক্ষা করে ও নতুন কোষ তৈরিতেও সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা বা অ্যালঝেইমারের রোগীদের হিপোক্যাম্পাস অংশে স্নায়ুকোষের ঘাটতি থাকে, যেখানে ইস্ট্রোজেন সক্রিয়ভাবে কাজ করে। অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, ‘ইস্ট্রোজেন মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। তাই মেনোপজের পর যখন ইস্ট্রোজেন কমে যায়, তখন নারীরা ব্রেন ফগ বা মনোযোগ কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন।’ স্ট্রেসের ছায়া মানুষের শরীরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হলো হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-অ্যাডরিনাল অক্ষ (HPA axis)। এটি মূলত শরীরের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্বেগের সময় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্রন্থিকে সংকেত পাঠায়, যা থেকে ACTH নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি অ্যাডরেনাল গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে। ফলে শরীরে কর্টিসল হরমোন ছড়িয়ে পড়ে। এটি শরীরকে অ্যাক্টিভ করে তোলে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রেস চলতে থাকলে কর্টিসল মস্তিষ্কে ব্যথা তৈরি করে, স্নায়ুকোষ নষ্ট করতে পারে। এছাড়াও স্মৃতি, মনোযোগ দেয়া ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ইসমাইল বলেন, ‘অ্যামিগডালা ও প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের ক্ষয় আমাদের আবেগ ও চিন্তার নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে দেয়।’ ভালোবাসার হরমোন অন্যদিকে অক্সিটোসিন হরমোনকে অনেকেই ভালোবাসার হরমোন বলে থাকে। এটি আমাদের মেজাজকে শান্ত করে, সহমর্মিতা ও বিশ্বাস বাড়ায়। এটি জন্ম, স্তন্যদান ও প্রজননের সময় নিঃসৃত হয়। ইসমাইল জানিয়েছেন, ‘যখন মানুষ নিরাপদ ও ভালোবাসার মধ্যে থাকে, তখন অক্সিটোসিন কর্টিসলের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়।’ অক্সিটোসিন ‘ভালোবাসার হরমোন’ নামে পরিচিত। এটি মানুষের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যমে মানসিক চাপের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয় থাইরয়েড ও মানসিক ভারসাম্য গলায় অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন টি৩ ও টি৪ হরমোন হৃদস্পন্দন, তাপমাত্রা ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। অতিরিক্ত হলে উদ্বেগ, আর কম হলে বিষণ্নতা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলেন, হরমোনের মাত্রা ঠিক করে দিলেই অধিকাংশ রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন হরমোনের প্রভাব বুঝে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজছেন। যেমন, ব্রেক্সানোলোন নামের একটি ওষুধ আছে। এটি অ্যালোপ্রেগনানোলোন হরমোনের মতো কাজ করে। তাই এটি প্রসূতি-পরবর্তী বিষণ্নতায় আশ্চর্য ফল দিচ্ছে। টেস্টোস্টেরন কম থাকা পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করলে কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের কার্যকারিতাও বেড়ে যায়। — বিবিসি থেকে নেয়াSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
games
» হরমোন আমাদের শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও শক্তিশালী প্রভাব ফেলে রসায়নের গল্প
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: