টায়ারের রং কালো কেন
রাস্তায় যত গাড়ি দেখা যায়, তার সবগুলোর টায়ারের রং কালো। এর ব্যতিক্রম সাধারণত দেখা যায় না। শুধু গাড়ির ক্ষেত্রে এটি সত্য এমন নয়, সাইকেল-মোটরবাইক থেকে শুরু করে সব যানবাহনের টায়ারের রং কালো। গাড়ি কিনতে গেলে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে না, গাড়ির টায়ারের রং কী? সাধারণত সবাই জানতে চায়, গাড়িটা কী ধরণের জ্বালানিতে চলবে? গাড়ির কাঠামো কেমন, মডেল কী, ইঞ্জিন কত পাওয়ারের ইত্যাদি। কেউ টায়ারের রঙের দিকে মনোযোগ দেয় না। কারণ, গাড়ির টায়ারের রং যে কালো হবে, একথা সবার জানা। মডেল বা ধরন ভেদেও রঙের পরিবর্তন হবে না। টায়ারের গাড়ির ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রথম দিককার গাড়ির চাকায় টায়ার ছিল না। কাঠের চাকার ওপরে লোহার বেষ্টনি দেওয়া থাকত। গরু বা ঘোড়ায় টানা গাড়ির কাঠের চাকায় লোহার পাত বসানো থাকত। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে গাড়ির গতি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে চালকেরা বুঝতে পেরেছেন, ধাতব চাকার গাড়ি আরামদায়ক নয়। ভেজা বা পিচ্ছিল রাস্তায় ভালোভাবে এই চাকা দিয়ে গাড়ি চালানো যায় না। এই সমস্যা সমাধানে ১৮৯৫ সালে প্রথমবারের মতো রাবারের টায়ার তৈরি হয়। বিংশ শতকের প্রথম দিকে টায়ার নির্মাতারা টায়ারের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এক পর্যায়ে শিল্প কারখানার রাবারের সঙ্গে সুট (বা কালো ধোঁয়া) মেশাতে শুরু করেন। সুতা, কালো ধোঁয়া রাবারে মিশিয়ে টায়ারকে আরও টেকসই, স্থিতিশীল এবং তাপ প্রতিরোধী করে তোলা সম্ভব হয়। এই আবিষ্কারের হাত ধরে এসেছে আজকের দিনের টায়ার। কালো ধোঁয়ার আইডিয়া থেকে এসেছে আজকের টায়ারের অন্যতম প্রধান উপাদান ‘কার্বন ব্ল্যাক’। টায়ারের রং সবসময় কালো ছিল না। আবিষ্কারের প্রথম দিকে টায়ারের রং ছিল সাদা। টায়ার তৈরি হতো রাবার দিয়ে। এখনো তাই হয়। প্রাকৃতিক রাবারের নিজস্ব কোনো রং নেই। প্রথমদিককার টায়ার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো জিঙ্ক অক্সাইড। জিঙ্ক অক্সাইডের রং ধবধবে সাদা। জিঙ্ক অক্সাইড নরম রাবারের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পরে টায়ারের রং দ্রুত কালো হয়ে যায়। টায়ারের রং পরিবর্তনের পেছনে কারণ ছিল মূলত দুটি। প্রধান কারণ টায়ারের স্থায়িত্ব। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হয়, রাবারে কার্বন ব্ল্যাক যোগ করলে টায়ারের স্থায়িত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কার্বন ব্ল্যাক টায়ারকে তাপ সহনশীল, ঘর্ষণ প্রতিরোধী, শক্তিশালী এবং আরও টেকসই করে তোলে। কার্বন ব্ল্যাকের এ সব গুণের কারণে টায়ারের আয়ুষ্কাল বেড়ে যায়। টায়ারে থাকে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম রাবার (সিন্থেটিক রাবার)। টায়ার তৈরি করার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয় কিছু কেমিক্যাল। এর মধ্যে আছে কার্বন ব্ল্যাক, সিলিকা, তেল, সালফার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভলকানাইজেশন অ্যাক্সিলেটর। ভলকানাইজেশন অ্যাক্সিলেটর তরল রাবারকে ফোটানোর কাজে লাগে। সুতার বদলে বর্তমানে টায়ারে ‘কর্ড অ্যান্ড বেল্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি টায়ারের শক্তি ও স্থায়িত্ব বাড়ায়। টায়ারের আকৃতি দিতে ব্যবহার করা হয় পলিস্টার, রায়ন ও স্টিল। শুরুর দিকে পর্যাপ্ত কার্বন ব্ল্যাক পাওয়া ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। তাই কিছু টায়ার নির্মাতা টায়ারের সাদা ও কালোর মিশ্রণযুক্ত টায়ার বাজারে নিয়ে আসেন। তবে ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে সব টায়ারের রং কালো হতে শুরু করে। রাবারের সংমিশ্রণে কার্বন ব্ল্যাক যোগ করায় টায়ার কালো হয়ে যায়। কার্বন ব্ল্যাক হলো একটি কালো পদার্থ, যা ভারী পেট্রোলিয়াম পণ্যের অসম্পূর্ণ দহন থেকে তৈরি হয়। কার্বন ব্ল্যাকের অন্যান্য ব্যবহার কালো রঞ্জক হিসেবে। মুদ্রণের কালি, টোনার, মাসকারা ইত্যাদিতে কার্বন ব্ল্যাক ব্যবহার হয়। এ ছাড়া কার্বন ব্ল্যাক টায়ারকে তাপরোধী করতে সাহায্য করে। ফলেও টায়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়। কার্বন ব্ল্যাকের মাধ্যমে সূর্যালোকের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি এবং ওজোন থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে টায়ারের ক্ষয় ধীরে হয়। টায়ারের স্থায়িত্ব বাড়াতে কার্বন ব্ল্যাক ভূমিকা রাখে। টায়ারই গাড়ির একমাত্র অংশ, যা গাড়িকে সরাসরি ভূমির সঙ্গে যুক্ত রাখে। টায়ার গতি, ব্রেক করা, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা এবং গাড়িতে চলার আরামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গাড়ি চলার সময় টায়ারের বিভিন্ন অংশ প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে। যদি এই তাপ সঠিকভাবে বের হতে না পারে, তাহলে টায়ার অতিরিক্ত গরম হয়ে দ্রুত ক্ষয় হতে পারে। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্বন ব্ল্যাক টায়ারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি টায়ারের আয়ু বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন, যদি কোনো টায়ারে কার্বন ব্ল্যাক না থাকে, তবে তা মাত্র ৫ হাজার মাইলের কম চলতে পারবে। বেশিরভাগ গাড়ি চালকের জন্য এটি অসুবিধাজনক। কারণ বারবার টায়ার বদল করতে চায় কে? একটি গাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো টায়ার। গাড়ির কেমন চলবে, তা নির্ভর করে টায়ারের ওপর। টায়ারের রং কালো হলেও সব টায়ারের গুণাগুণ বা কর্মক্ষমতা সমান নয়। কার্বন ব্ল্যাক টায়ারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি রাবারকে আরও বিদ্যুৎ অপরিবাহী করে তোলে। কার্বন ব্ল্যাক ছাড়া তৈরি টায়ার গাড়ির স্থির বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে পারে, যা যাত্রীর জন্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত শকের কারণ হতে পারে। টায়ারের কর্মক্ষমতা, স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য কার্বন ব্ল্যাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কালো টায়ার সহজেই পরিষ্কার রাখা যায়। ক্লাসিক গাড়ির মালিকরা জানেন, সাদা ছাপ দেওয়া টায়ার পরিষ্কার রাখা কষ্টকর, কারণ এতে সহজেই ময়লা ও দাগ লাগে। একটি গাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো টায়ার। গাড়ির কেমন চলবে, তা নির্ভর করে টায়ারের ওপর। টায়ারের রং কালো হলেও সব টায়ারের গুণাগুণ বা কর্মক্ষমতা সমান নয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের টায়ার পাওয়া যায়, যার ক্ষমতা বিভিন্ন। তবে সব টায়ারের একটি সাধারণ গুণ হলো, টায়ারটি কালো হবে। সূত্র: গুডইয়ার ডটকম, কিয়া ডটকমSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: