Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত জাপানের হাচিকো নামের প্রভূভক্ত কুকুরের ১০০তম জন্মবার্ষিকীর গল্




বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত জাপানের হাচিকো নামের প্রভূভক্ত কুকুরের ১০০তম জন্মবার্ষিকীর গল্প সিনেমার পোস্টারে চীনা ভাষায় যে শ্লোগানটি লেখা তাতেই কিন্তু সব কথা বলা হয়ে গেছে: “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, যত দীর্ঘ সময়ই অপেক্ষায় থাকতে হোক না কেন।” এই চলচ্চিত্র হাচিকো নামের বিশ্বস্ত কুকুরের সত্যিকারের জীবন-কাহিনী নিয়ে। কুকুরটি তার মনিবের মৃত্যুর বহু বছর পরও প্রতিদিন জাপানের এক ট্রেন স্টেশনে তার জন্য অপেক্ষায় থাকতো। ক্রিম-হোয়াইট রঙের কুকুরটি ছিল আকিতা ইনু জাতের, এটির জন্ম হয়েছিল ১০০ বছর আগে। এই কুকুরের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, লেখা হয়েছে অনেক বই, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে তৈরি করা হয়েছে ভাস্কর্য। হাচিকোকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্রটি তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে জাপানে। এরপর ২০০৯ সালে হলিউডে তৈরি হয় আরেকটি ছবি, যাতে অভিনয় করেছিলেন রিচার্ড গের। এখন চীনা ভাষায় যে তৃতীয় ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেটিও বেশ ব্যবসা সফল বলে মনে হচ্ছে। এরকম প্রভু-ভক্ত কুকুর নিয়ে আরও অনেক কাহিনী হয়তো আছে, কিন্তু হাচিকোর মতো আর কোন কুকুরের গল্প বিশ্বজুড়ে এতটা প্রভাব ফেলেনি। টোকিওর শিবুয়া স্টেশনের বাইরে ১৯৪৮ সাল হতে হাচিকোর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি আছে। এই স্টেশনের বাইরেই হাচিকো তার মনিবের জন্য অনেকদিন ব্যর্থ প্রতীক্ষায় সময় কাটিয়েছে। হাচিকোর ভাস্কর্যটি প্রথম তৈরি করা হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। জাপানের স্কুলে শিশুদের চুকেন হাচিকো অর্থাৎ বিশ্বস্ত হাচিকোর গল্প বলা হয় ভক্তি এবং বিশ্বস্ততার উদাহরণ হিসেবে। “হাচিকো তার প্রশ্নহীন আনুগত্য এবং ভক্তির কারণে যেন এক আদর্শ জাপানি নাগরিকের প্রতিমূর্তি,” বলছেন ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই এর প্রফেসর ক্রিস্টিন ইয়ানো। “হাচিকো বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য, প্রভুর অনুগত, বুঝদার। সে কোন যুক্তির ওপর নির্ভর করে না এবং বিশ্বের বৃহৎ পরিসরে তার স্থান কোথায় সেটি নিয়ে সে চিন্তিত নয়।” হাচিকোর গল্প হাচিকোর জন্ম ১৯২৩ সালের নভেম্বরে জাপানের আকিতা প্রিফেকচারের ওডেট শহরে। আকিতা জাতের কুকুরের আদি জায়গা এটি। বড় আকৃতির এই জাপানি কুকুর জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং পুরনো জাতগুলোর একটি। ১৯৩১ সালে জাপান সরকার আকিতা কুকুরকে জাতীয় প্রতীক বলে নির্ধারণ করে। এক সময় জঙ্গলে শুকর বা হরিণ শিকারের জন্য এই কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। “আকিতা কুকুর বেশ শান্ত, আন্তরিক, বুদ্ধিমান, সাহসী এবং তার প্রভুর খুবই অনুগত”, বলছেন এইটসু সাকুরাবা। তিনি হাচিকোকে নিয়ে ইংরেজি ভাষায় শিশুদের জন্য একটি বই লিখেছেন। “অন্যদিকে এই কুকুরটির মধ্যে এক ধরনের গোঁয়ার্তুমি আছে, তার প্রভু ছাড়া অন্য যে কারও ব্যাপারেই সে বেশ সন্দিগ্ধ।” হাচিকোর জন্ম যে বছর, সে বছরই জাপানের এক নামকরা কৃষি বিজ্ঞানী এবং কুকুর-প্রেমী প্রফেসর হিদেসাবুরু ইয়েনো তার এক ছাত্রকে অনুরোধ করেছিলেন তার জন্য একটি আকিতা কুকুরের বাচ্চা জোগাড় করে দিতে। ট্রেনে চড়ে এক দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে এই কুকুরের ছানাটি শিবুয়া জেলায় ইয়োনোর বাড়িতে এসে পৌঁছায় ১৯২৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। তখন তার অবস্থা এতই খারাপ যে তাকে মৃত বলে ভেবেছিল সবাই। হাচিকোর জীবনীকার প্রফেসর মায়োমি ইতোহ জানান, ইয়েনো এবং তার স্ত্রী ইয়ে ছয় মাস ধরে অনেক সেবা-শুশ্রূষা করে হাচিকোকে সুস্থ করে তোলেন। ইয়েনো তার নাম রাখেন হাচি, জাপানি ভাষায় যার অর্থ আট। তবে এই নামের সঙ্গে ইয়েনোর ছাত্র সম্মান করে ‘কো’ শব্দ জুড়ে দেন। কুকুরটি পরিচিতি পায় হাচিকো নামে। ইয়েনো প্রতি সপ্তাহে কয়েক বার ট্রেনে করে তার কর্মস্থলে যেতেন। স্টেশনে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে থাকতো হাচিকোসহ তিনটি কুকুর। এরপর ইয়েনো কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে না আসা পর্যন্ত কুকুর তিনটি স্টেশনে অপেক্ষা করতো। ইয়েনো ১৯২৫ সালের ২১শে মে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান, তখন তার বয়স ছিল ৫৩ বছর। হাচিকো তার সঙ্গে ছিল মাত্র ১৬ মাস। প্রফেসর ইতোহ জানান, মৃত্যুর পর যখন ইয়েনোর শেষকৃত্যের আয়োজন চলছে, তখন হাচিকো গন্ধ শুঁকে বসার ঘরে হাজির হয়। সে ইয়েনোর কফিনের নীচে গিয়ে বসে এবং সেখান থেকে সরতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পরবর্তী কয়েক মাস হাচিকো ছিল শিবুয়া জেলার বাইরে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু ১৯২৫ সালের গ্রীষ্মে শেষ পর্যন্ত তার আশ্রয় হয় ইয়েনোর বাগানের মালি কোবায়াশি কিকুসাবারুর বাড়িতে। নিজের পরিচিত জায়গায় ফিরে আসার পর হাচিকো তার প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী আবার স্টেশনে যাওয়া শুরু করে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সে শিবুয়া স্টেশনে হাজির হতো। “সন্ধ্যায় হাচিকো স্টেশনের টিকেট গেটের কাছে চারপায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকতো, তারপর প্রতিটি যাত্রীর মুখের দিকে তাকাতো, যেন সে পরিচিত কাউকে খুঁজছে”, লিখেছেন প্রফেসর ইতোহ। স্টেশনের কর্মচারীরা শুরুতে তাকে উপদ্রব বলে গণ্য করতো। স্টেশনের হকাররা তার গায়ে পানি ঢেলে দিত, ছোট ছেলে-মেয়েরা তাকে উত্যক্ত করতো, মারতো। তবে ১৯৩২ সালে জাপানের আসাহি শিম্বুন পত্রিকায় হাচিকোকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। এরপর রাতারাতি দেশজোড়া খ্যাতি পেয়ে গেল হাচিকো। হাচিকোর জন্য প্রতিদিন স্টেশনে দান করা খাবার আসতে শুরু করলো। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে হাচিকোকে দেখতে আসতো লোকজন। তাকে নিয়ে কবিতা, হাইকু রচিত হতে থাকলো। হাচিকোর একটি মূর্তি তৈরির জন্য চাঁদা তুলতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৩৪ সালে, তাতে নাকি যোগ দিয়েছিল তিন হাজার মানুষ। হাচিকো মারা যায় ১৯৩৫ সালের ৮ মার্চ। তার মৃত্যুর খবর অনেক জাপানি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রার্থনা করেছিল এবং গণ্যমান্য লোকজন এসে তার প্রশংসা করেছিল। তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যটি দেখতে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন খুবই করুণ, তখন হাচিকোর স্মরণে একটি নতুন ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এই উদ্যোগে বিপুল সাড়া মেলে, প্রায় আট লাখ ইয়েন চাঁদা উঠে। তখনকার সময়ে এটি বিপুল অংকের অর্থ, আজকের হিসেবে প্রায় ৪ বিলিয়ন ইয়েন বা ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। “এখন আমার মনে হয় হাচিকো হয়তো জানতো প্রফেসর ইয়েনো আর ফিরে আসবেন না, কিন্তু তারপরও হাচিকো অপেক্ষায় থাকতো। হাচিকো আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে কারও ওপর বিশ্বাস রাখতে হয়,” ১৯৮২ সালে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধে লিখেছিলেন ওকামাতো তাকেশি। তিনি যখন হাইস্কুলে পড়তেন, তখন তিনি প্রতিদিন হাচিকোকে স্টেশনে দেখেছেন। হাচিকোর স্মরণে প্রতিবছর ৮ই এপ্রিল শিবুয়া স্টেশনের বাইরে হাচিকোর স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তার মূর্তিটি স্কার্ফ, সান্তা টুপি এবং ইদানীংকালে সার্জিকাল মাস্ক দিয়ে সাজানো হয়। টোকিওর ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব নেচার এন্ড সায়েন্সেও তার মূর্তি আছে। হাচিকোর দেহাবশেষ ইয়েনো এবং তার স্ত্রী ইয়ের সমাধিতে রাখা হয়েছিল। হাচিকোর ভাস্কর্য আছে ওডেট শহরে, ইয়েনোর নিজের শহর হিসাইতে, ইউনিভার্সিটি অব টোকিওতে, এবং রোডস আইল্যান্ডে, যেখানকার পটভূমিতে ২০০৯ সালে তাকে নিয়ে হলিউডের ছবিটি তৈরি হয়েছিল। এবছর হাচিকোর একশো তম জন্মবার্ষিকীতে ওডেট শহরে অনেকগুলো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান এই কুকুরটির কথা কি আরও একশো বছর মানুষ মনে রাখবে? প্রফেসর ইয়ানোর মতে অবশ্যই রাখবে, কারণ ‘হাচিকোর বীরত্ব’ কোন একটি যুগে সীমাবদ্ধ নয়, এটি চিরন্তন। মি. সাকুরাবাও একইরকম আশাবাদী। “একশো বছর পরও তার এই নিঃশর্ত, নিবেদিতপ্রাণ ভালোবাসা অপরিবর্তিত থাকবে, এবং হাচিকোর কাহিনী চিরদিন বেঁচে থাকবে।”






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply