১৯৭২ সালে নভোচারীরা চাঁদ থেকে যেসব পাথর ও মাটি সংগ্রহ করে এখনো অক্ষত
১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনে নভোচারীরা চাঁদ থেকে যেসব পাথর ও মাটি সংগ্রহ করে এনেছিলেন, তার কিছু অংশ এতদিন সযত্নে সিল করা অবস্থায় ছিল। সেগুলোর কিছু এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরও উন্নতি হলে এই নমুনাগুলো খুলে পরীক্ষা করা হবে। সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে। অবশ্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে এই সংরক্ষিত নমুনাগুলো বিভিন্ন গবেষকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক জেমস ডটিন ও তাঁর দল সম্প্রতি এমনই একটি নমুনা নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁরা ব্যবহার করেছেন ‘সেকেন্ডারি আয়ন মাস স্পেকট্রোমিটার’ নামে একটি যন্ত্র। ১৯৭২ সালে এমন যন্ত্রের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করে যে ভুল করেননি, তা বলাই বাহুল্য। এবার চলুন জেনে নিই, অক্ষত চাঁদের মাটি থেকে বিজ্ঞানীরা কী পেলেন? অ্যাপোলো ১৭ মিশনের নভোচারী জিন সার্নান ও হ্যারিসন শ্মিট চাঁদের মাটিতে একটি ধাতব সিলিন্ডার প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার গভীরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এই পদ্ধতিতে তাঁরা চাঁদের পৃষ্ঠের একটু নিচ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন মাটি। পৃথিবীতে আনার পর থেকে সেই নমুনাটি অক্ষত ছিল। ডটিনের দল মূলত চাঁদের ম্যান্টল বা আবরণ স্তর থেকে আসা আগ্নেয় শিলা খুঁজছিলেন। চাঁদ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি প্রচলিত ধারণা আছে। তাঁদের মতে, মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি প্রাচীন গ্রহ ছিল, যার নাম থিয়া। এই থিয়া পৃথিবীর সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায়। ধাক্কার ফলে ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলো জমাট বেঁধে তৈরি হয় চাঁদ। তাই চাঁদের ম্যান্টলের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করলে সেই সংঘর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এর আগে চাঁদের নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, চাঁদের ম্যান্টলে অক্সিজেনের বিভিন্ন আইসোটোপের অনুপাত পৃথিবীর সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। এর থেকে মনে করা হতো, চাঁদ মূলত পৃথিবী থেকে ছিটকে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের টুকরো দিয়েই তৈরি। এবার একটু বুঝে নেওয়া যাক, আইসোটোপ জিনিসটা কী। কোনো মৌলের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা সবসময় একই থাকে, কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। এই ভিন্ন নিউট্রন সংখ্যার পরমাণুগুলোকেই বলা হয় আইসোটোপ। ডটিন চাইছিলেন সালফারের বিভিন্ন আইসোটোপের অনুপাত মাপতে। এ ব্যাপারে ডটিন বলেছেন, ‘তিনি এমন সালফার খুঁজছিলেন যার গঠন দেখে মনে হবে এটি আগ্নেয়গিরির লাভার সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে। মানে পরে অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সালফার যুক্ত হয়নি।’ কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল দেখে সবাই অবাক হলেন। সালফারের চারটি স্থিতিশীল আইসোটোপ আছে। এগুলো হলো সালফার-৩২, সালফার-৩৩, সালফার-৩৪ এবং সালফার-৩৬। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, চাঁদের মাটিতে সালফার-৩৩-এর পরিমাণ অনেক কম। ডটিন জানিয়েছেন, এর আগে ধারণা করা হতো চাঁদের ম্যান্টলে সালফার আইসোটোপের গঠন পৃথিবীর মতোই। তিনি নিজেও এটাই আশা করেছিলেন। কিন্তু ফলাফল এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পৃথিবীতে আমরা যা দেখি, তার সঙ্গে এই ফলাফল মিলছে না মোটেও। প্রথমে তাঁর মনে হয়েছিল কোথাও ভুল হয়েছে। তাই তাঁরা সব কিছু আবার যাচাই করেছেন। কিন্তু সব ঠিকঠাক ছিল। এই ফলাফল সত্যিই চমকপ্রদ! এই অদ্ভুত ফলাফলের দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন ডটিনের দল। প্রথমত, সালফারের এই আইসোটোপ অনুপাত হয়তো পৃথিবী থেকে আসেনি। এটি এসেছে প্রাচীন গ্রহ থিয়া থেকে। মানে যতটা ভাবা হতো, চাঁদ তার চেয়েও বেশি থিয়ার উপাদান দিয়ে তৈরি। আর দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি আরও বেশি মজার। হতে পারে চাঁদ তৈরি হওয়ার পর সালফার-৩৩ কমে গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদ যখন একেবারে নতুন ছিল তখন তার চারপাশে একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল ছিল। সেই বায়ুমণ্ডলে সালফার থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে সেটির বিক্রিয়া হতে পারত। এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সালফার-৩৩ কমতে পারে। এটাই সত্যি হলে ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে যায়। কারণ এর মানে হলো, চাঁদের প্রাচীন বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তিত সালফার কোনোভাবে পৃষ্ঠ থেকে গভীরে ম্যান্টল পর্যন্ত নেমে গেছে। এরপর আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে তা আবার ফিরে এসেছে পৃষ্ঠে। ডটিন বলছেন, এটি হবে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ম্যান্টলে উপাদান আদান-প্রদানের প্রাচীন প্রমাণ। পৃথিবীতে এই কাজটি করে প্লেট টেকটোনিকস। কিন্তু চাঁদে তো প্লেট টেকটোনিকস নেই। তাহলে প্রাচীন চাঁদে কোনো ধরনের আদান-প্রদান ব্যবস্থা থাকার ধারণাটি খুবই রোমাঞ্চকর। তবে এই মুহূর্তে কোন ব্যাখ্যাটি সঠিক তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে যদি মঙ্গল গ্রহ বা গ্রহাণুতে মহাকাশযান পাঠিয়ে সেখানকার সালফার আইসোটোপের অনুপাত মাপা যায়, তাহলে রহস্য খানিকটা উন্মোচিত হতে পারে। যদি দেখা যায় মঙ্গল বা গ্রহাণুতেও সালফার-৩৩ কম আছে, তাহলে বোঝা যাবে চাঁদের এই বৈশিষ্ট্য থিয়া থেকে পাওয়া। কারণ থিয়া হয়তো মঙ্গল বা গ্রহাণুর মতো একই উপাদান দিয়ে তৈরি ছিল। আর যদি না মেলে, তাহলে প্রমাণ হবে এটি চাঁদ তৈরি হওয়ার পরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল। এই গবেষণার ফলাফল গত সেপ্টেম্বরে জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: প্ল্যানেটস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভলপার, সফটভেঞ্চ সূত্র: স্পেস ডটকমSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
Entertainment
»
Featured
» ১৯৭২ সালে নভোচারীরা চাঁদ থেকে যেসব পাথর ও মাটি সংগ্রহ করে এখনো অক্ষত
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: