ব্যাঙ রাজকুমারী হল শিশুদের জন্য রূপকথার গল্প। বাচ্ছারা মজার ও কাল্পনিক গল্প পড়তে ও শুনতে ভালোবাসে। আপনার আদুরে ছোট্টদেরকে রাজকুমারীর গল্প শুনাতে ব্যাঙ রাজকুমারী গল্পটি তাদেরকে শুনাতে পারেন। এটি রূপবতী, মায়াবতী ও যাদুকরী ভাসিলিসা গল্প যা আপনার সোনামনির জন্য উপযোগী। অনেকদিন আগে ছিল এক রাজা। তার তিন ছেলে। সবাই যখন সাবালক হল তখন একদিন রাজা তাদের ডেকে বলল, ‘দেখ বাছারা, আমি তোদের বিয়ে দিয়ে মরবার আগে নাতি-নাতনির মুখ দেখে যেতে চাই।’ ছেলেরা উত্তর দিল, ‘সে তো ভালো কথা বাবা, আশীর্বাদ করুন। বলুন কাকে বিয়ে করব?’ ‘তোমরা প্রত্যেকে এক-একটি করে তীর নিয়ে ফাঁকা মাঠে গিয়ে ছুড়বে । যার তীর যেখানে পড়বে তার ভাগ্য সেখানে বাঁধা।’ রাজপুত্ররা বাবাকে সালাম করে একটি করে তীর নিয়ে ফাঁকা মাঠে চলে গেল। ধনুক টেনে তীর ছুড়ল । বড় রাজপুত্রের তীর পড়ল এক আমিরের বাড়ির উঠোনে। আমিরের মেয়ে সেটি তুলে নিল। মেজো রাজপুত্রের তীর পড়ল এক সওদাগরের বাড়ির উঠোনে। সওদাগরের মেয়ে সেটি তুলে নিল । কিন্তু ছোট ইভান রাজপুত্রের তীর উঁচুতে উঠে কোথায় যে গেল, কে জানে । তীরের খোঁজে রাজপুত্র চলে আর চলে । যেতে যেতে একটা জলার কাছে এসে দেখে একটা ব্যাঙ তীরটা নিয়ে বসে আছে। রাজপুত্র বলল, ‘ব্যাঙ, ও ব্যাঙ, আমার তীর ফিরিয়ে দাও।’ আর ব্যাঙ বলে, ‘আগে বিয়ে করো আমায় !” ‘সে কী, একটা ব্যাঙকে বিয়ে করব কী? ‘ ‘বিয়ে কর, সেই যে তোমার ভাগ্য ।’ রাজপুত্রের ভীষণ দুঃখ হল । কিন্তু কী আর করে! ব্যাঙটাকে তুলে বাড়ি নিয়ে এল । রাজা তিনটে বিয়ের উৎসব করল : বড়জনের বিয়ে দিল আমিরের মেয়ের সঙ্গে, মেজোজনের সওদাগর কন্যার সঙ্গে আর বেচারি ছোট ইভান রাজপুত্রের বিয়ে হল একটা ব্যাঙের সঙ্গে ৷ একদিন রাজা ছেলেদের ডেকে বলল, ‘আমি দেখতে চাই, তোমাদের কোন বৌয়ের হাতের কাজ ভালো । কাল সকালের মধ্যে সবাই একটা করে শার্ট সেলাই করে দিক।’ ছেলেরা বাবাকে সালাম করে বেরিয়ে গেল । ছোট ইভান রাজপুত্র বাড়ি গিয়ে মাথা হেঁট করে বসে রইল । ব্যাঙটা থথপ্ করে এসে জিজ্ঞেস করে, কী হল রাজপুত্র, মাথা হেঁট কেন? কোনো বিপদে পড়েছ বুঝি?’ ‘বাবা বলেছেন, তোমায় কাল সকালের মধ্যে একটা শার্ট সেলাই করে দিতে হবে।’ ব্যাঙ বলল,’ভাবনা নেই ইভান রাজপুত্র, বরং ঘুমিয়ে নাও। রাত পোহালে বুদ্ধি খোলে।’ রাজপুত্র শুতে গেল। আর ব্যাঙ করল কী, থপথপিয়ে বারান্দায় গিয়ে ব্যাঙের চামড়া খসিয়ে হয়ে গেল যাদুকরী ভাসিলিসা—রূপবতী সেই, তুলনা তার নেই! জাদুকরী ভাসিলিসা হাততালি দিয়ে ডেকে বলল, ‘দাসীবাদীরা জাগো, কোমর বেঁধে লাগো! কাল সকালের মধ্যেই আমায় একটা শার্ট সেলাই করে দেওয়া চাই, ঠিক যেমনটি আমার বাবা পরতেন।’ পরদিন সকালে ইভান রাজপুত্র উঠে দেখে ব্যাঙ থথপ্ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আর টেবিলের ওপর তোয়ালেমোড়া একটি শার্ট। রাজপুত্রের আর আনন্দ ধরে না । শার্টটা নিয়ে এল সোজা বাপের কাছে। রাজা তখন অন্য ছেলেদের উপহার নিচ্ছে। বড় ছেলের শার্টটা নিয়ে রাজা বলল, : এ শার্ট পরে দীনদরিদ্র। মেজো রাজপুত্র শার্টটা মেলে ধরতেই রাজা বলল, : এটা পরে বাইরে যাওয়া চলে না। এবার ইভান রাজপুত্র তার শার্টটা মেলে ধরল। সে শার্টে সোনায় রুপোয় চমৎকার নকশা তোলা । চোখ পড়তেই রাজা বলল, : একেই বলে শার্ট। পালপার্বণে পরার মতো।’ বড় দুই ভাই যেতে যেতে বলাবলি করে, : ইভান রাজপুত্রের বৌকে নিয়ে আমাদের হাসাহাসি করা ঠিক হয় নি। ব্যাঙ নয় ও মায়াবিনী…’ আবার রাজা তিন ছেলেকে ডেকে পাঠাল। ‘তোমাদের বৌদের বলো কাল সকালের মধ্যে আমায় রুটি বানিয়ে দিতে হবে । কে সবচেয়ে ভালো রাঁধে দেখব।’ আবার ছোট ইভান রাজপুত্র মাথা হেঁট করে বাড়ি ফিরে এল । ব্যাঙ বলল, ‘রাজপুত্র, এত মনভার কেন?’ : রাজামশাই বলেছেন কাল সকালের মধ্যে রুটি বানিয়ে দিতে হবে।’ : ভাবনা কোরো না রাজপুত্র। শুতে যাও, রাত পোহালে বুদ্ধি খোলে। অন্য বৌরা ব্যাঙকে নিয়ে আগে হাসাহাসি করেছে। এবার কিন্তু এক বুড়ি দাসীকে পাঠিয়ে দিল দেখে আসতে, কী করে ব্যাঙ রুটি বানায় । ব্যাঙ কিন্তু ভারি চালাক। টের পেয়ে গেল ওদের মতলব । তাই ময়দা মেখে লেচি তৈরি করে নিয়ে চুল্লির উপরটা ভেঙে সবটা লেচি সেই গর্তে ঢেলে দিল। বুড়ি দাসী দৌড়ে গিয়ে রাজবধূদের খবর দিল । বৌরাও ঠিক তাই করতে লাগল । তারপর ব্যাঙ কিন্তু ওদিকে লাফিয়ে বাইরে গিয়ে যাদুকরী ভাসিলিসা হয়ে গেল। হাততালি দিয়ে ডেকে বলল, ‘দাসীবাদীরা জাগো, কোমর বেঁধে লাগো। কাল সকালের মধ্যেই আমায় একটা সাদা ধবধবে নরম রুটি বানিয়ে দিতে হবে, ঠিক যেমনটি আমি বাড়িতে খেতাম।’ পরদিন সকালে রাজপুত্র উঠে দেখে টেবিলের উপরে এক রুটি, গায়ে তার নানা রকম নকশা; চারিপাশে কত শত মূর্তি, উপরে নগর আর তোরণ। রাজপুত্র ভারি খুশি, তোয়ালেমুড়ে রুটি নিয়ে গেল বাবার কাছে । রাজা তখন বড় ছেলেদের রুটি নিচ্ছিল। বুড়ি দাসির কথামতো বড় দুই ভাইয়ের বৌ ময়দাটা সোজা চুল্লির ভিতর ফেলে দিয়েছিল। ফলে যা হল সে এক পোড়াধরা এক একটা তাল । রাজা বড় ছেলের হাত থেকে রুটিটা নিয়ে দেখেই পাঠিয়ে দিল নোকর মহলে । মেজো রাজপুত্রের রুটিরও সেই একই দশা হল । আর ছোট ইভান রাজপুত্র রাজার হাতে রুটি দিতেই রাজা বলে উঠল, : একেই বলে রুটি! এই হল পালপার্বণে খাওয়ার মতো।’ পরদিন রাজা তার তিন ছেলেকে বৌ নিয়ে নিমন্ত্রণ আসতে বলল । ইভান রাজপুত্র আবার মুখ ভার করে বাড়ি ফিরল, দুঃখে মাথা হেঁট করল । ব্যাঙ থথপ্ করে লাফায়, ঘ্যাঙর ঘ্যাং, ঘ্যাঙর ঘ্যাং, রাজপুত্র, মন খারাপ কেন তোমার? বাবা বুঝি কিছু মন্দকথা বলেছেন!’ : ব্যাঙ-বৌ, ব্যাঙ-বৌ, মন খারাপ না হয়ে করি কী? বাবা চান তোমাকে নিয়ে আমি নেমন্তন্নে যাই ৷ কিন্তু লোকজনের সামনে তোমায় দেখাই কী করে?’ ব্যাঙ বলে, : রাজপুত্র, ভাবনা কোরো না, একাই যেও নেমন্তন্নে, আমি পরে যাব। খটখট্ দুমদাম্ শব্দ হলে ভয় পেও না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলো, ‘আমার ব্যাঙ বৌ আসছে কৌটায় চড়ে।’ ইভান রাজপুত্র তাই একাই গেল । বড় দুই ভাই গেল গাড়ি হাঁকিয়ে, বৌ জাঁকিয়ে কত বেশ, কত ভূষা, গালে রঙ, চোখে কাজল। সবাই ছোট রাজপুত্রকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগল । : সে কী, তোর বৌকে আনলি না যে? একটা রুমালে করেও তো আনতে পারতি, সত্যি রূপসীকে জোটালি কোথা থেকে? কোন খাল বিল তল্লাশ করে?’ তিন ছেলে নিয়ে, ছেলের বৌ নিয়ে, অতিথি-অভ্যাগত নিয়ে রাজা সাহেব বসল জাজিম ঢাকা ওককাঠের টেবিলে। ভোজ শুরু হবে। হঠাৎ শুরু হল খটখট্ দুমদাম্ আওয়াজ। সে আওয়াজে সারা রাজপুরী কেঁপে উঠল থরথরিয়ে, অতিথিরা ভয়ে লাফিয়ে উঠল। কিন্তু ইভান রাজপুত্র বলল, ‘অতিথিসজ্জন ভয় নেই, ও আমার ব্যাঙ-বৌ এল কৌটায় চড়ে।’ ছ’টা সাদাঘোড়ার টানা সোনামোড়া এক জুড়িগাড়ি এসে থামল রাজপুরীর অলিন্দের কাছে । গাড়ি থেকে নেমে এল যাদুকরী ভাসিলিসা আকাশী-নীল পোশাকে তার ঝলমলে তারা, মাথায় জ্বলজ্বলে বাঁকাচাদ; সে কী রূপ, জানার নয় বোঝার নয়, রূপকথাতেই পরিচয় । ভাসিলিসা ইভান রাজপুত্রের হাত ধরে নিয়ে গেল জাজিম ঢাকা ওককাঠের টেবিলে শুরু হল পানভোজন, ফুর্তি। যাদুকরী ভাসিলিসা করল কী, গেলাস থেকে পান করে বাকিটুকু ঢেলে দিল বাঁহাতার মধ্যে। মরালীর মাংস কামড়ে খেয়ে হাড়গুলো রেখে দিল ডানহাতার মধ্যে। দেখাদেখি বড় বৌ দু’জনও তাই করল । খাওয়া হল দাওয়া হল, শুরু হল নাচ । যাদুকরী ভাসিলিসা ইভান রাজপুত্রের হাত ধরে এগিয়ে গেল। তালে-তালে নাচে, ঘুরে-ঘুরে নাচে—সবাই একেবারে অবাক । নাচতে নাচতে বাঁহাত দোলাল ভাসিলিসা আর হয়ে গেল একটা হ্রদ। ডান হাত দোলাল, অমনি সাদা সাদা মরালী জেগে উঠল । রাজা আর অতিথি-অভ্যাগতেরা সবাই বিস্ময়ে হতবাক । তারপর অন্য বৌরাও নাচতে উঠল । ওরাও এক হাত দোলাল, অতিথিদের গা ভিজল শুধু । অন্য হাত দোলাল, ছড়িয়ে পড়ল শুধু হাড়। একটা হাড় গিয়ে লাগল একেবারে রাজার চোখে । রাজা ভয়ানক রেগে গিয়ে তক্ষুনি দুই বৌকে বের করে দিল । ইতিমধ্যে ইভান রাজপুত্র করেছে কী, লুকিয়ে লুকিয়ে দৌড়ে বাড়ি গিয়ে ব্যাঙের চামড়াটা ছুড়ে সোজা একেবারে উনুনে । যাদুকরী ভাসিলিসা বাড়ি এসে ব্যাঙের চামড়া আর খুঁজে পায় না! মনের দুঃখে একটা বেঞ্চে বসে ভাসিলিসা রাজপুত্রকে বলল, : এ কী করলে রাজপুত্র! আর যদি তিন দিন অপেক্ষা করতে তবে আমি চিরদিনের মতো তোমার হয়ে যেতাম। কিন্তু এখন বিদায়। সাতসমুদ্দুর আর তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে যেখানে পিশাচরাজা থাকে সেখানে আমার খোঁজ করো… এই বলে যাদুকরী ভাসিলিসা একটা ধূসর রঙের কোকিল হয়ে উড়ে গেল জানালা দিয়ে । রাজপুত্র কাঁদে কাঁদে, তারপর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে সালাম করে চলে গেল যেদিকে দু’চোখ যায় : যাদুকরী ভাসিলিসাকে খুঁজে বের করবে। গেল অনেকদূর নাকি অল্পদূর, অনেকদিন নাকি অল্পদিন, কে জানে, বুটের গোড়ালি ক্ষয়ে গেল, জামার কনুই ছিঁড়ে গেল, টুপি হল ফাড়া-ফাড়া। যেতে যেতে এক থুড়থুড়ে ক্ষুদে বুড়োর সঙ্গে দেখা। : কুশল হোক কুমার, কিসের খোঁজে নেমেছ? কোন পথে চলেছ? : রাজপুত্র বুড়োকে তার বিপদের কথা খুলে বলল। : ক্ষুদে বুড়ো বলল, ‘হায়, হায়, ব্যাঙের চামড়াটা পোড়াতে গেলে কেন রাজপুত্র, ওটা তোমার পরার নয়, ওটা তোমার খোলারও নয়। যাদুকরী ভাসিলিসা তার বাবার চেয়েও বেশি যাদুজ্ঞান নিয়ে জনোছিল । তাই ওর বাবা শাপ দিয়ে তিন বছরের জন্য ওকে ব্যাঙ করে দিয়েছিলেন । যাক, এখন তো আর কোনো উপায় নেই । এই সুতোর গুটি নাও । এটা যেদিকে গড়াবে সেদিকে যেও। ভয় পেয়ো না ৷’ : ইভান রাজপুত্র বুড়োকে ধন্যবাদ দিয়ে সুতোর গুটির পিছন পিছন চলল। সুতোর গুটি আগে আগে গড়িয়ে চলে, আর রাজপুত্র পিছন পিছন যায়। একদিন এক ফাঁকামাঠে ভালুকের সঙ্গে দেখা। রাজপুত্র লক্ষ্যস্থির করে মারতে যাবে, হঠাৎ মানুষের গলায় কথা কয়ে উঠল ভালুক, : মেরো না রাজপুত্র, কোনোদিন হয়ত আমি তোমার কাজে লাগতে পারি। : রাজপুত্র ভালুককে আর মারল না । এগিয়ে চলল । হঠাৎ দেখে একটা হাঁস মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে । রাজপুত্র লক্ষ্যস্থির করতেই হাঁসটা মানুষের গলায় বলে উঠল : মেরো না রাজপুত্র, কোনোদিন হয়ত আমি তোমার কাজে লাগতে পারি । : রাজপুত্র হাঁসটাকে ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ একটা খরগোস দৌড়ে বেরিয়ে এল। রাজপুত্র তীর-ধনুক তুলে মারতে যাবে; খরগোসটা মানুষের মতো গলায় বলে উঠল : মেরো না রাজপুত্র, কোনোদিন হয়ত আমি তোমার কাজে লাগতে পারি । : রাজপুত্র খরগোসটাকে আর মারল না। এগিয়ে চলল । হাঁটতে-হাঁটতে দেখে কি, নীল সমুদ্রের ধারে একটা পাইকমাছ ডাঙার বালিতে পড়ে খাবি খাচ্ছে । : ইভান রাজপুত্র, দয়া করো আমায়, নীল সমুদ্রে ছেড়ে দাও!’ : রাজপুত্র পাইকমাছটা জলে ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটতে লাগল কতদিন কে জানে, সুতোর গুটি গড়াতে গড়াতে এল এক বনের কাছে। সেখানে রাজপুত্র দেখে মুরগির পায়ের উপর একটা কুঁড়েঘর ক্রমাগত ঘুরে চলেছে।
: কুঁড়েঘর, ও কুঁড়েঘর, বনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে আমার দিকে মুখ করে দাঁড়াও!’ : কুঁড়েঘরটা বনের দিকে পিঠ রেখে রাজপুত্রের দিকে মুখ করে দাঁড়াল । রাজপুত্র ঘরে ঢুকে দেখে চিমনির কাছে ন’থাক ইঁটের ওপর শুয়ে আছে বাবা-ইয়াগা ডাইনি, তার খ্যাংড়াকেঠো পা, দাঁত নেমেছে হেথা, নাক উঠেছে হোথা! রাজপুত্রকে দেখে ডাইনিটা বলে উঠল, ‘আমার কাছে কেন আগমন, সজ্জন কুমার কাজ আছে কি করার, নাকি কাজের ভয়ে ফেরার?” ‘ওরে পাজি বুড়ি থুবড়ি, আগে খাওয়া দে, দাওয়া দে, গোসলের জন্য জল দে, তারপর জিজ্ঞেস করিস।’ বাবা-ইয়াগা আগে রাজপুত্রকে গরম জলে গোসল করাল, খাওয়াল দাওয়াল, বিছানা পেতে শোয়াল । ইভান রাজপুত্র তখন বাবা-ইয়াগাকে বলল যে সে তার বৌ যাদুকরী ভাসিলিসাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে । ডাইনি বলল, ‘জানি জানি! তোমার বৌ এখন পিশাচ রাজার কবলে । ওকে ফিরে পাওয়া বাপু মুশকিল । পিশাচ রাজার সঙ্গে এঁটে ওঠা সহজ না। ওর প্রাণ আছে এক ছুঁচের ডগায়, ছুঁচ আছে এক ডিমের ভিতর, ডিম আছে এই হাঁসের পেটে, হাঁস আছে এক খরগোসের পেটে, খরগোস আছে এক পাথরের সিন্দুকে, সিন্দুক আছে এক লম্বা ওকগাছের মাথায় আর এ গাছটা পিশাচ রাজার চোখের মণি, কড়া পাহারা সেখানে।’ রাজপুত্র রাতটা বাবা-ইয়াগার বাড়িতেই কাটাল । পরদিন সকালে বুড়ি তাকে সেই লম্বা ওকগাছে যাবার পথটা দেখিয়ে দিল । অনেকপথ নাকি অল্পপথ, কতদূর রাজপুত্র গেল কে জানে । দেখে—দাঁড়িয়ে আছে এক লম্বা ওকগাছ। শনশন করছে তার পাতা, সেই গাছের মাথায় একটা পাথরের সিন্দুক। কিন্তু তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব । হঠাৎ কোথা থেকে সেই ভালুকটা এসে করল কী, শেকড়সুদ্ধ উপড়ে দিল গাছটাকে। সিন্দুকটা দুম্ করে মাটিতে পড়ে ভেঙে চৌচির। অমনি সিন্দুক থেকে একটা খরগোস বেরিয়ে যত জোরে পারে দৌড়ে পালাতে গেল। কিন্তু সেই আগের খরগোসটা ওকে তাড়া করে ধরে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল। অমনি খরগোসটার পেট থেকে একটা হাঁস বেরিয়ে সাঁ করে আকাশে উঠে গেল। তখন দেখতে না দেখতে সেই আগের হাঁসটা তাকে ধাওয়া করে ঝাপটা মারতেই ডিম পড়ল । সে ডিম পড়ল নীল সমুদ্রে … রাজপুত্র তখন ভীষণ কাঁদতে লাগল । সমুদ্র থেকে কী করে এখন ডিম খুঁজে পাবে! হঠাৎ দেখে সেই পাইকমাছটা সাঁতার কেটে পারের দিকে আসছে, মুখে সেই হাঁসের ডিমটা। রাজপুত্র ডিমটা নিয়ে ভেঙে ফেলল । তারপর ভাঙতে লাগল ছুঁচের ডগা । রাজপুত্র ভাঙে আর উথালপাথাল করে পিশাচ রাজা, দাপাদাপি করে। কিন্তু যতই করুক পিশাচ রাজা—-ছুঁচের ডগাটি ভেঙে ফেলল রাজপুত্র, মরতে হল তাকে । রাজপুত্র তখন চলল পিশাচের শ্বেতপাথরের পুরীতে । যাদুকরী ভাসিলিসা ছুটে এল রাজপুত্রের কাছে। চুমো খেল তার মধুঢালা মুখে। তারপর ভাসিলিসা আর রাজপুত্র দুজনে নিজেদের দেশে ফিরে এল। সেখানে তারা অনেক বুড়ো বয়স অবধি সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরকন্না করতে লাগল । গল্পের উৎস: রাশিয়ার রূপকথা।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: