Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » পরিবার: স্ত্রীর উপার্জন এবং স্বামীর সংসার সামলানো নিয়ে সমাজে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি একটি দম্পতি?




পরিবার: স্ত্রীর উপার্জন এবং স্বামীর সংসার সামলানো নিয়ে সমাজে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি একটি দম্পতি? ছাত্রজীবন থেকে শুরু, একটানা ২০ বছর নানা রকম চাকরি করেছেন তৌহিদ রিয়াদ। মহামারি শুরুর বছর মানে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে টানা ৪৫দিন ভুগেছেন। নেগেটিভ হয়ে যখন নিজের কর্মক্ষেত্র একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ফিরলেন, তখন নিজের কাজের ধরন আর পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে সময় সিদ্ধান্ত নেন চাকরিটি ছেড়ে দেবার। বাড়িতে আলাপ করলেন, তার স্ত্রী আর মা অকুণ্ঠ সমর্থন দিলেন, ব্যাস চাকরি ছেড়ে দিলেন তৌহিদ রিয়াদ। বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "২০২০ সালে খুব কাছাকাছি সময়ে আমার দুইজন চাচা মারা যান। আমার ছোটভাই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে, আর আমার বোন ডাক্তার, সে থাকে কক্সবাজার। তাহলে আমার বাবা-মা—এই দুটা মানুষকে আসলে কে দেখবে?"

"তখন আমার এটা মনে হচ্ছিল আমার ছেলেকে দেখে যদি তারা দুঃখ ভুলতে পারেন। তো এখন যে ঠিক আছে, আমি বাসায় আছি, বাচ্চাটাকে দেখছি, আমার ছেলে আমাকে পুরোটা সময় পাচ্ছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাদের সিদ্ধান্ত মি. রিয়াদের স্ত্রী নাজিয়া আমির একজন প্রকৌশলী, সরকারি চাকরি করেন। এখন তার পোস্টিং দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলায়। মি. রিয়াদ চাকরি ছেড়ে দেবার পর তারা ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে পরিবারের সাথে থাকতে চলে যান, আর নাজিয়া চলে যান কর্মস্থলে। তখন থেকে সংসারের অর্থনৈতিক দিকটির দায়িত্ব নেন নাজিয়া আমির। বাবা-মা আর সন্তানের দেখাশোনা করা এবং নিজের পছন্দমত শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করে তার দিন কেটে যায় রিয়াদের। নিজেকে তার এখন নির্ভার আর আনন্দিত মনে হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হলেও, চারপাশের মানুষ সহজে মেনে নেয়নি মি. রিয়াদ এবং তার স্ত্রীর সিদ্ধান্ত। মি. রিয়াদের সাথে সাথে তার স্ত্রীকেও পড়তে হয়েছিল নানাবিধ প্রশ্নের মুখে। নাজিয়া আমির বলছিলেন, পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে তেমন নয়, বরং প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল বাইরের মানুষের কাছে নাজিয়া আমির বলেন, প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যখন তারা ঢাকা ছেড়ে দিয়ে তার স্বামী আর সন্তান চট্টগ্রামে চলে গেলেন, আর তিনি কর্মস্থলে মানে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলায় চলে যান তখন থেকে। "নানা রকম প্রশ্ন, যেমন আপনার স্বামী এখন কী করছেন? ও আচ্ছা, তাহলে হি ইজ নট আর্নিং এনিমোর! আচ্ছা, আপনিই তাহলে ফ্যামিলির একমাত্র আর্নিং পার্সন, ব্যাপারটা এই রকম? সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, সেটা হচ্ছে আপনি কেন আপনার বাচ্চাকে সাথে নিয়ে থাকছেন না?" বলেছেন নাজিয়া। আরও পড়তে পারেন: নারীরা কেন সন্তান নিতে চাইছেন না অবিবাহিত কিছু নারী কেন পরিবার থেকে আলাদা থাকতে চান যে নারীরা বয়সে ছোট পুরুষকে বিয়ে করেছেন বিয়ে না করেও একসাথে থাকেন বাংলাদেশের যে যুগলেরা বন্ধুত্ব আর বোঝাপড়া সংসারের সব বিষয়ে রিয়াদ আর নাজিয়ার বোঝাপড়া বেশ ভালো। দুই জনের কাজ এবং সিদ্ধান্ত দুজন আলোচনা করেই নেন। জানতে চেয়েছিলাম লোকের কথায় পরিবারে বা তাদের দাম্পত্যে কোন চাপ তৈরি হয় কি-না? নাজিয়া বলেছেন, স্বামীর কাজ ও চিন্তার প্রতি তার সম্মানবোধ আছে, যে কারণে তাদের বোঝাপড়ায় কোন সমস্যা নেই। আর সংসারে রোজগারের দায়িত্ব সব সময় পুরুষকেই নিতে হবে এমন ধারণাকে তিনি সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, "একটা সময় আমি বেকার ছিলাম, আমার স্বামী চাকরি করতেন। এখন উল্টো, এখন উনি সরাসরি কোন চাকরি-বাকরি করছেন না, আমি করছি। আমি কখনো এই স্টেরিওটাইপড চিন্তায় বিশ্বাসী ছিলাম না।" "আমার কাছে মনে হয়েছে দুইজনেই এক সঙ্গে ব্রেডআর্নার হতে পারেন, দুইজনেই একসঙ্গে হোমমেকার হতে পারেন, যেকোন একজন যেকোন একটা হতে পারেন। এবং যদি তারা এই শর্তে কম্প্যাটিবল থেকে থাকেন যে, ঠিকাছে স্ত্রী উপার্জন করবে আর স্বামী সংসার দেখবেন বা স্বামী এমন কিছু করবেন যাতে ঠিক রেডিলি অর্থ উপার্জন হয় না- তাদের নিজেদের মধ্যে যদি এ ব্যাপারে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে তাহলে বাইরের লোকের এ বিষয়ে কিছু বলা উচিত না বলে মনে করি" বলছেন নাজিয়া। সংসারে মি. রিয়াদকে ঠিক রান্নাবান্নার মত খুঁটিনাটি কাজ করতে হয় না, কিন্তু ছেলের যাবতীয় দেখাশোনা অর্থাৎ পড়াশোনা, খেলাধুলা, মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু তিনি নিজে করেন। ছুটিতে স্ত্রী বাড়ি আসেন কিংবা একসঙ্গে বেড়াতে যান। পরিবারের সব সিদ্ধান্ত যৌথভাবে নেন। সমাজের চোখে কেন কম গ্রহণযোগ্য কিন্তু পরিবারের সমস্যা না থাকলেও, এ ধরণের পরিবারের কাঠামো নিয়ে সমাজের লোকে কেন প্রশ্ন তোলে? সেটা কি এই ধরণের পরিবার দেখতে আমাদের চোখ অভ্যস্ত নয় বলে? নাকি সমাজের হিসাবে তথাকথিত পুরুষের যে চিত্রণ যে তিনি উপার্জনকারী হবে, একমাত্র সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী হবেন—এটি সে ধারণার চেয়ে আলাদা বলে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলছেন, এটি পুরোপুরি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। সেটা পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। "অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে আস্তে আস্তে এটাও নরমালাইজ করবে। আর কাজের জন্য নারীর দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রে ঘরের বাইরে থাকা যত বেশি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তত কিন্তু অন্য বিষয়ও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকবে। আর পুরুষ রান্না করলে বা ঘরের কাজ করলে যে সমস্যা হয় না, সে উদাহরণ বেশি বেশি সৃষ্টি হলেই সমাজে পরিবর্তন আসবে," বলেন তিনি। অধ্যাপক নীরা বলছেন, সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো যেভাবে বদলে যাচ্ছে, সে অনুপাতে সমাজের মনোভাব নারীর ইস্যুতে বদলায় না। তাই পরিবর্তনের জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু তাতে মি. রিয়াদ কিংবা নাজিয়ার সংসারে আপাতত কোন সংকট তৈরি করতে পারছে না। তারা বলছেন তারা দুইজন নিজেদের অবস্থান আর পরিবার নিয়ে সুখী।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply