Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার




গাভীর রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার গৃহপালিত পশুর মধ্যে গাভী পালন কৃষিজীবি সমাজের এক দীর্ঘ কালের প্রাচীন ঐতিহ্য। আমাদের দেশে গাভী পালন এক সময় কেবল গ্রামের কৃষিজীবি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দুগ্ধ চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তা গ্রামীণ কৃষিজীবীদের সীমানা চাড়িয়ে শহরের শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে বহুদিন আগেই। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে এবং তা ক্রমেই সমপ্রসারিত হছে। এটা নিঃসন্দেহে শুভ লক্ষণ। ফরে উন্নত জাতের বাচুর প্রজনন এবং গাভীর যত্নের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। গাভী পালনে এর পরিচচর্যা এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট দের সচেতনতা অপরিহার্য। নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হতে পারে আপনার বাড়ি কিংবা খামারের পোষা গাভী। এসব রোগ এবং এর প্রতিকার বিষয়েই এবার আলোকপাত করা যাক। ওলান পাকা রোগ নানা প্রকার রোগ-জীবাণু বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়। লক্ষণ ক) ওলান লাল হয়ে ওঠে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভব হয়। খ) ব্যাথার দরুণ গাভী ওলানে হাত দিতে দেয় না এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। গ) হলুদ বর্ণ দুধের সাথে ছানার মতো টুকরা বের হয়। পুরনো রোগে দুধ কমে যায় এমনকি একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ওলান শুক্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা ও প্রতিকার প্রথমত আক্রান্ত পশুকে পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে। ওলানে জমে থাকা দুধ বের করে দিতে হবে। বাঁচের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে টিটিসাইফন দ্বারা বাঁচের মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে। ১. ভেলুস ২০% ২. এ্যান্টিবায়েটিক ৩. ম্যাসটাইটিস টিউব ইত্যাদি। পেট ফাঁপা সাধারণত গরহজমের জন্য গাভীর পেট ফেঁপে যায়। এছাড়া কিছু কিছু রোগের কারণেও পেট ফাঁপে। চিকিৎসা ও প্রতিকার দানাদার খাদ্য বন্ধ করে দিতে হবে। শুধুমাত্র শুকনা খড় খেতে দেওয়া যেতে পারে। ১. নিওমেট্রিল ২. কারমিনেটিভ মিঙ্চার ইত্যাদি। জায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা অনেক রোগের দরুন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। তবে অস্ত্রর রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত পশু দূর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসা ও প্রতিকার ১. সকেটিল পাউডার ২. স্টিনামিন ট্যাবলেট ইত্যাদি। নিউমোনিয়া ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, রাসায়নিক দ্রবাদি, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে পশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। লক্ষণ ক) ঘনঘন নিঃশ্বাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ। খ) রোগের শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট হয় গ) শুল্ক কাশি হতে পারে। ঘ) তীব্র রোগে জ্বর হয় এবং নাক দিয়ে সর্দি পড়ে। ঙ) বুকের মধ্যে গরগর শব্দ হয়। চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। ভেলুসং ২০% ২। অ্যান্টিবায়টিক ৩। ক্লোরেটেট্রাসন ৪। টেরামাইসিন ৫। ভেটিবেনজামিন কৃমি কৃমি নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। কৃমিতে আক্রান্ত পশুকে ঠিক মতো খাবার দিলেও তার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয় না। বরং দি দিন রোগা হতে থাকে। লক্ষণ ক) পশু দূর্বল হয়ে যায় খ) খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয় গ) হাড্ডিসার হয়ে যায় ঘ) সময় সময় পায়খানা পাতলা হয় ঙ) শরীরের ওজন কমে যায় ছ) দুগ্ধবর্তী গাভীর দুধ কমে যায় চ) রক্তশুণ্যতায় ভোগে বলে সহজেই অন্যান্য আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। জ) দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধি পায় না। ঝ) ফলে পশুকে রোগা ও আকারে ছোট দেখায় চিকিৎসা ও প্রতিকার গোবর পরীক্ষান্তে কৃমিনাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। লক্ষণ প্রাথমিক অবস্থায় ক) আক্রান্ত পশু কিছু খেতে চায় না খ) হাটতে চায় না গ) জিহবা বের হয়ে থাকে ঘ) মাথা ও পায়ের মাংসপেশী কাপতে থাকে পরবর্তী অবস্থায় আক্রান্ত গাভী ক) বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে খ) মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাধের ওপর ফেলে রাখে গ) এ অবস্থায় গাভী অনেকটা চৈতন্য হারিয়ে ফেলে ঘ) গাভী কাত হয়ে শুয়ে পড়ে, উঠতে পারে না ঙ) ধমনীর মাত্রা বেড়ে যায় চ) অবশেষে গাভী মারা যায় চিকিৎসা ও প্রতিকার গাভীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দিতে পারলে দ্রুত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। কিটোসিস দেহের মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে দেহ বিষিয়ে তোলে। এই বিষক্রিয়ার ফলেই কিটোসিস রোগের সৃষ্টি হয়। লক্ষণ ক) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় খ) গাভীর দুধ কমে যায় গ) দৈহিক ওজন কমে যায় ঘ) কোষ্ঠাকাঠিন্য দেখা দেয় ঙ) এছাড়া আক্রান্ত পশুর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায় চ) অনেক সময় গাভী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে ঘোরে। চিকিৎসা ও প্রতিকার অপটিকরটেনল-এস ইনজেকশন। ফুল আটকে যাওয়া বাচ্চা প্রসবের পর অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বের হয়ে আসে না। এবং এসব ক্ষেত্রে গর্ভ ফুলের অংশ বিশেষ বাইরের দিক হতে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। অকসিটোসিন ২। ইউটোসিল পেশারিস ৩। এ্যানটবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি। জলুবায়ুর প্রদাহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগের জীবাণূ যোনিপথ হতে জরায়ুতে পৌছে এ রোগ হতে পারে। গর্ভ ফুলের টুকরা ভেতরে থেকে গেলে পচে যায় এবং প্রদাহের কারণ ঘটায়। কামপর্বে পশুর যৌন-ক্রিয়ার সয়ও অনেক সময় জরায়ুতে রোগ জীবানূ সংক্রমিত হয়ে থাকে। লক্ষণ ক) জ্বর হয় খ) দুর্গন্ধযুক্ত জলের মতো কিংবা কালচে লাল রঙের স্রাব পড়তে দেখা যায় গ) খাদ্যে অরুচি হয় ঘ) দুধ কমে যায় ঙ) গাভী পাল রাখে না চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। ইউটোলিস পেরারিস ২। এ্যান্টিবায়েটিক ইনজেকশন ইত্যাদি গর্ভপাত সাধারণত রোগ-জীবানুর কারণেই অধিকাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। এছাড়া আঘাত, বিষক্রিয়া, পক্ষাঘাত ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে। চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। ইউটোসিল পেশারিশ ২। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ইত্যাদি। অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব সাধারণত প্রজনন ইন্দ্রিয়সমূহের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি, হরমোন ক্ষরণের অনিয়ম, অসমতা, ওভারিতে সিস্ট ও পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়ে থাকে। চিকিৎসা ও প্রতিকার সঠিক কারণ নির্ধারণ করে হরমোন দ্বাা চিকিৎসা করলে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। যৌননালীর অসুখের দরুন বন্ধ্যাত্ব হলে ইউটোলিস পেশারিস, স্টিমাভেট ট্যাবলেট জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে। ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। খুরো বা খুর পচা খুরের ভিতরের বা চারপাশের টিস্যু পচনশীল অবস্থাকে ফুটরট বলে। লক্ষণ ক) আঘাতপ্রাপ্ত টিস্যুতে পচন যুক্ত ঘা হয় খ) আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায় গ) পশু খুড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না ঘ) পশুর ওজন ও দুধ কমে যায় ঙ) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। ভেসাডিন ২। ভেসুলাং ২০% ইনজেকশন ৩। এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ৪। ক্ষতস্থান ভালভাবে পরিস্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে। ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয় রক্ত মিশানো পাতলা পায়খানা, রক্ত শূণ্যতা ও শরীরের দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তি এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। লক্ষণ ক) শরীরের তাপমাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায় খ) হঠাৎ করে পায়খানা শুরু হয় গ) পায়খানার সময় ঘন ঘন কোথ দেয় ঘ) পায়খানা খুবই দুগর্ন্ধযুক্ত ঙ) আক্রান্ত পশু দিন দিন দূর্বল হতে থাকে চ) মলের সাথে মিউকাস অথবা চাকা চাকা রক্ত থাকে ছ) খেতে চায় না জ) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। ভেলুসং ২০% ইনজেকশন

২। সকেটিল পাউডার ইত্যাদি বেবিসিয়াসিস বা রক্ত প্রস্রাব আটালি দ্বারা এ রোগের জীবাণূ সংক্রামিত হয়। লক্ষণ ক) হঠাৎ জ্বর (১০৮ ডিগ্রী ফা.) হয় খ) জাবর কাটা বন্ধ করে দেয় গ) রক্তের সঙ্গে লোহিত কাণিকা ডাঙ্গা হিমোব্লোবিন যুক্ত হবে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে। ঘ) প্রস্রাবের রঙ লাল হয়। প্রতিকার ও চিকিৎসা ১। বেরিনিণ ইনজেকশন ২। শরীরের আটালিমুক্ত করার জন্য নেগুভন সপ্রে অথবা আসানটল সপ্রে দিতে হবে। উকুন/আটালি এরা এক প্রকার বহিঃ পরজীবী। অধিকাংশ গবাদি পশু উকুন/ আটালি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসা ও প্রতিকার ১। নিওসিডল ৪০ ডবি্লউ-পি ২। আসানটল ৩। নেগুভন সপ্রে ইত্যাদি মিশিয়ে পশুর গায়ের সপ্রে করতে হবে। তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply