ভৌতিক গল্প 'পেত্তুনি' রুপুদের অ্যাপার্টমেন্টে, মানে ওদের পাঁচতলা বাসার দোতলায় বাইরের দিকের দেয়ালে স্যুয়ারেজ লাইনের ঠিক পাশেই একটা বটগাছ গজিয়েছে। ডালপালা ছড়িয়ে বেশ ভালো রকমেই গজিয়েছে গাছটা। রুপুর বাবা বেশ চিন্তিত। তিনি বলেছেন, এই গাছ জরুরি ভিত্তিতে কাটতে হবে। এর শিকর ভয়ংকর, বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরিয়ে দেবে। এই নিয়ে ওদের পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টে বেশ কয়েক দফা ছোটখাটো পারিবারিক মিটিংও হয়েছে। রুপুদের পাঁচতলা বাসার একতলায় গ্যারেজ। দোতলায় থাকে রুপুর বড় ফুফু, তিনতলায় ছোট ফুফু, চারতলায় রুপুরা আর পাঁচতলায় ছোট চাচা। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওদের বাসার যে দারোয়ান, যার নাম অহিদ, বয়স কত হবে, ৪০-৪৫! সে বিশেষ চিন্তিত এই গাছ নিয়ে। সে কিন্তু ভেতরে–ভেতরে এই গাছ কাটার ঘোর বিপক্ষে। ‘আপনি নাকি গাছ কাটতে রাজি না।’ একদিন রুপু জিজ্ঞেস করে। রুপুর প্রশ্ন শুনে অহিদ এদিক–ওদিক তাকায়। তারপর গলা এক ধাপ নামিয়ে ফিসফিস করে, ‘ওই গাছে একটা পেত্তুনি আছে।’ ‘পেত্তুনি কী?’ ‘আরে পেতনি পেতনি...’
‘আপনি কী করে জানলেন?’ রুপু বহু কষ্টে হাসি চেপে প্রশ্ন করে। ‘আমি দেখছি।’ ‘আপনি দেখছেন? কীভাবে?’ ‘একদিন ঠিক দুপুরবেলা... এই ধরো দশটা–এগারোটার সময় (রুপুর মাথায় আসে না, দশটা–এগারোটা দুপুর হয় কীভাবে) একটা পাঙাশ মাছ কিনে আমি ঢুকতে আছিলাম। তখনই দেখলাম...’ ‘কী দেখলেন?’ ‘ওই গাছে লম্বা লাল চুল ঝুলায়া পেত্তুনিটা বইসা আছে। কাঠির মতো সরু হাত পা... চোখ দুটো যেন আগুনের ভাটা।’ ‘ওই ছোট্ট বটগাছে একটা আস্ত পেতনি বসে থাকে কেমনে? গাছ তো ভেঙে পড়ার কথা।’ ‘আরে অগো কোনো ওজন নাই।’ ‘তারপর কী হলো?’ ‘তারপর আঁতকা দেখি, আমার ব্যাগে পাঙাশ মাছটা নাই।’ ‘বলেন কী?’ বারোটার দিকে রুপু স্কুলের বাড়ির কাজ পড়ছিল। এই সময় দরজায় টুক টুক শব্দ। রুপু গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে, মিলি আর মিনি দুই বোন দাঁড়িয়ে। ওরা তিনজন একই ক্লাসে পড়ে, একই স্কুলে। ‘তারপর দেখি কচকচ আওয়াজ!’ ‘আওয়াজ কিসের?’ ‘ওই যে আমার মাছটা পেত্তুনি খাইতেছিল, তার আওয়াজ।’ ‘আপনার ভয় লাগেনি?’ ফিক করে হেসেই ফেলে রুপু। ‘হাসলা যে?’ ভ্রু কুঁচকে যায় অহিদের। ‘না না, আমাদের স্কুলের অন্য একটা ঘটনা হঠাৎ মনে পড়ল, তাই... তারপর কী হলো?’ ‘তারপর আতকা দেখি, মাছও নাই, পেতনিও নাই।’ ওই দিন বিকেলে আবার পারিবারিক মিটিং। মেজ ফুফুর বাসায়। বিষয় ওই দেয়ালের বটগাছ কাটা। ছোট চাচা গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘এই গাছের শিকড় সুয়ারেজ লাইনে ঢুকে গেছে। একে শুধু কাটলেই হবে না। এর শিকড় পুরোটা টেনে বের করতে হবে। নইলে আবার গজাবে। তারপর অ্যাসিড ঢালতে হবে ওই জায়গায়।’ ‘কিন্তু কাটবি কীভাবে?’ রুপুর বাবা জিজ্ঞেস করেন। ‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ডিশ লাইনের লোকটাকে বলেছি, ও আমার পরিচিত। ওদের কাছে লম্বা মই আছে। ওই মই পাশের বাসার ছাদে বসিয়ে গাছটা কাটতে হবে।’ বড়রা ছাড়া ছোটরাও ছিল মিটিংয়ে। রুপু ছিল, নাদিয়া ছিল। নাদিয়া বড় ফুফুর মেয়ে। ভার্সিটিতে পড়ে। বড় ফুফুর দুই মেয়ে মিলি আর মিনিও ছিল। সাদিকও ছিল, সে ছোট চাচার ফাইভ পড়ুয়া ছেলে। রুপু ফট করে বলে বসল, ‘দারোয়ান চাচা বলেছে, ওই গাছে নাকি একটা পেতনি থাকে। ওই গাছ কাটলে সমস্যা হবে।’ ‘উফ!’ রুপুর বাবা বিরক্তি নিয়ে তাকালেন রুপুর দিকে। অন্যরা হেসে উঠল। ‘এই অহিদ গাধাটাকে বিদেয় করতে হবে। কী সব গপ্পো বানায়, বাচ্চাদের ভয় দেখায়।’ রুপুর বাবা বললেন। তবে সাদিক হাসল না, সে সিরিয়াস। রুপুকে বলল, ‘আর কী বলল অহিদ চাচা?’ ‘একদিন নাকি ওর পাঙাশ মাছ খেয়ে ফেলেছে ওই পেতনি...’ দ্বিতীয় দফায় সবাই হেসে উঠল। ‘মাছ যখন খেয়েছে, তাহলে ওটা পেতনি না। মেছো ভূত।’ মিলি গম্ভীর হয়ে মতামত দিল। এর মধ্যে মেজ ফুফু ট্রেতে করে ঘরে বানানো ডালপুরি আর পেঁয়াজু নিয়ে এলেন। সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল ট্রের ওপর। গাছ কাটার গপ্পো ওখানেই সমাপ্ত। ছোটরা পেঁয়াজু আর পুরি খেতে খেতে পেতনি আর মেছো ভূতের মধ্যে কোনটা বেশি ভয়ংকর, এ–ই নিয়ে গবেষণা শুরু করল। আর বড়রা আলাপ করল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকি শুরু হয়ে গেছে...। ওই দিন রাতে। বারোটার দিকে রুপু স্কুলের বাড়ির কাজ পড়ছিল। এই সময় দরজায় টুক টুক শব্দ। রুপু গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে, মিলি আর মিনি দুই বোন দাঁড়িয়ে। ওরা তিনজন একই ক্লাসে পড়ে, একই স্কুলে। ‘আমাদের ঘরে আয় জলদি।’ ফিসফিস করে মিলি। ‘কী হয়েছে?’ ‘এলেই দেখবি।’ ভীত গলায় মিলি বলে। রুপুর বুকটা ধক করে ওঠে। ওদের সঙ্গে যায় ওদের ঘরে। ‘ওই দেখ।’ মিনি আঙুল দিয়ে দেখায়। রুপু দেখে, ওদের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একগুচ্ছ লাল চুল ঝুলছে। এই জানালার ওপরেই ওই বটগাছ। তার মানে... রুপু আর ভাবতে পারে না। মিলি ফিসফিস করে, ‘অহিদ চাচার কথাই ঠিক। ওই গাছে এখন পেতনিটা বসে আছে। ওই যে দেখ, ওর লাল চুল।’| তবে ভয়ের কথা হচ্ছে, ওই রাতেই নাদিয়া আপু গা কাঁপিয়ে জ্বরে পড়ল। পরদিন ভার্সিটিতে যেতে পারল না। পরে ওদের পেতনির চুল টানার কাণ্ডকারখানা শুনে বড় ফুফু রীতিমতো রেগে গেলেন। কয়েক দফায় লবণপানি খাওয়ানো হলো নাদিয়া আপুকে। ভূত-পেতনির ভয় পেলে নাকি লবণপানি খেতে হয়। ‘অ্যাই, কী হয়েছে রে?’ ওরা তাকিয়ে দেখে পেছনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাদিয়া আপু। সে-ও খবর পেয়ে চলে এসেছে। তাকে কে খবর দিল, কে জানে। মনে হয় ওদের ‘কাজিন গ্রুপে’ কেউ লিখেছে ব্যাপারটা। ‘ওই দেখো আপু, পেতনির লাল চুল।’ নাদিয়া আপু চোখ গোল গোল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল জানালার দিকে। তারপর, ‘সর তো তোরা’ বলে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে ঝট করে লাল চুলটা ধরে দিল একটা হ্যাঁচকা টান। আর তখনই, ‘আঁআঁআঁআঁ...’ একটা মেয়েলি তীক্ষ্ণ চিত্কার শোনা গেল। এবার সবাই একসঙ্গে ভয় পেয়ে গেল, নাদিয়া আপুও ভয় পেল। যদিও সে যথেষ্ট সাহসী। ঠিক তখন তখনই জানালার বাইরে একটা ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা গেল। যেন অনেকগুলো পাখি একসঙ্গে হুড়মুড় করে উড়ে চলে গেল। পরদিন সবাই অবাক হয়ে দেখল, বাইরে বটগাছটা নেই, বটগাছের কোনো চিহ্নই নেই। আর অবাক কাণ্ড, বাসার কারও ফ্রিজে কোনো মাছের বংশও নেই, মেজ ফুফুর ডিপ ফ্রিজে নাকি ফুফা একটা বড় চিতল মাছ রেখেছিলেন, সেটা উধাও। একসঙ্গে সবার ফ্রিজের সব মাছ উধাও। এর ব্যাখ্যা কী? রুপু অবশ্য ভেতরে–ভেতরে মহাখুশি। মাছ তার অসহ্য, গন্ধ লাগে। তাদের ফ্রিজেও বাবা পাবদা মাছ কিনে রেখেছিলেন, রুপুকে মাছ খাওয়ানো শেখাবেন বলে। সেই সব মাছও উধাও। মেজ ফুফু অবশ্য বলছেন, এসব ওই পাজি হুলো বিড়ালটার কাণ্ড। একটা হোঁতকা টাইপের হুলো বিড়াল কদিন ধরে ওদের অ্যাপার্টমেন্টে ঘুরঘুর করছিল। তবে ভয়ের কথা হচ্ছে, ওই রাতেই নাদিয়া আপু গা কাঁপিয়ে জ্বরে পড়ল। পরদিন ভার্সিটিতে যেতে পারল না। পরে ওদের পেতনির চুল টানার কাণ্ডকারখানা শুনে বড় ফুফু রীতিমতো রেগে গেলেন। কয়েক দফায় লবণপানি খাওয়ানো হলো নাদিয়া আপুকে। ভূত-পেতনির ভয় পেলে নাকি লবণপানি খেতে হয়। অবশ্য নাদিয়া আপু খুব একটা ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না, তবে দুদিন ভালোই জ্বরে ভুগল আপু। রুপুর বাবা অবশ্য একজন ফকির টাইপের লোক এনে পুরো বাড়িতে কী সব ঝাড়ফুঁক দেওয়ালেন। ওদিকে দারোয়ান চাচা ওদের দেখলেই গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলে, ‘আগেই কইছিলাম, এই সব পেত্তুনির কাজ...!’Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: