Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » বিরোধ বা ঝগড়ায় নারীর চরিত্র নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হয়?




বিরোধ বা ঝগড়ায় নারীর চরিত্র নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হয়? নারীকে শায়েস্তা করতে বা হেনস্তা করতে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তার যৌন সম্পর্কের দিকে অঙ্গুলি তোলা বহুল প্রচলিত একটি অস্ত্র। নারী যে পেশাতেই থাকুন, যত খ্যাতিমানই হোন বা যে আর্থ-সামজিক স্তরে তার অবস্থান হোক না কেন - কোন ছাড় তিনি পান না। তার চরিত্র খারাপ বা তিনি বহু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন কথা রটিয়ে তার ওপর আক্রমণ করা হয়। তার নমুনা সম্প্রতি দেখা গেছে যখন বাংলাদেশের সুপরিচিত একজন নারী টিভি-সাংবাদিকের নামে একটি ভুয়া পর্ণ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয় । নারীকে আক্রমণ করতে হলে কেন তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়? "আমি যে টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করি তার এক ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সবাই মনে করে যে এটা আসলে সরকারের মুখপত্র হিসেবে কাজ করে বা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করে। সেদিক থেকে আমরা সব সময়ই এক ধরনের তোপের মুখে থাকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর।" তিনি বলেন, "প্রায় সময়ই দেখবেন দেশে বা দেশের বাইরে থেকে লাইভ স্ট্রিমিং-এ এসে তাদের নাম উল্লেখ করে অনেক অশ্লীল কথা ছড়ানো হয়। অনেক অশ্লীল ভিডিও, ট্রলও হয় অনেক।" "এটা অনেকদিন ধরে চলছে। তো একটা পলিসি ছিল যে, আচ্ছা, যার যা ইচ্ছা বলছে বলুক, আমরা আমাদের কাজ করি। কিন্তু আমার একটা নিজের পেইজ আছে, সেখানে একজন ফলোয়ার যখন আমাকে ভিডিওটি পাঠালেন, আমার জন্য আসলে খুবই খুবই শকিং ছিল," বলছিলেন তিনি। এ ঘটনায় হতবিহ্ববল মিজ মুন্নি মামলা দায়ের করেছেন। এর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে দু'জনকে আটকও করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তার সামাজিক পরিচিত সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। একারণে তার ঘটনাটি আলোচনায় এসেছে। কিন্তু অনেক নারীই পারিবারিক পরিসরে সম্মানহানি, বদনাম এবং হয়রানির শিকার হলেও সেসব নীরবে হজম করে যান। আর হয়রানির শিকার হলে খুব কম নারীই মামলা করতে যান। ডিভোর্স চাওয়ায় 'চরিত্রহীন' যেসব নারী এধরনের ঘটনার শিকার হলে তা প্রকাশ করতে চান না, তারা বলছেন সামাজিকভাবে আরেক দফা হেনস্থা হবার ভয়ে তারা এসব ঘটনা চেপে রাখতে চান। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত রুনা আক্তারের কথা ধরা যাক। এটি তার আসল নাম নয়, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তার নামটি বদলে দেয়া হয়েছে। মিজ আক্তার বলছিলেন, ২০১৫ সালে স্বামীর কাছে ডিভোর্স চাইবার পর তাকে বলা হয়েছিল যে তিনি 'চরিত্রহীন', তাই তার স্বামীই তার সঙ্গে থাকতে চান না। "খুব শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করত। বলত যে অফিসের ট্যুরে গিয়ে আমি পুরুষ সহকর্মীদের সাথে রাত কাটাই। এসব নিয়ে ঝগড়া হত। ডিভোর্স চাওয়ার আগ পর্যন্ত কেবল আমার সাবেক স্বামী এসব কথা বলত, কিন্তু তারপর থেকে ওদের বাসার সবাই একই কথা বলতে থাকে," বলেন তিনি। "আমি মুখ বুজেই থেকেছি। খুব লজ্জা লাগত ওইসব কথা শুনে। ভাবতাম প্রতিবাদ করতে গেলে আরো লোকে শুনবে। আমার বাচ্চাটা শুনে ফেলবে। তাই চুপ করে থাকতাম।" মিজ আক্তার এখনো চুপ করে রয়েছেন। এমনকি বিবিসিকে এই সাক্ষাৎকার দেবার সময়ও তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, তিনি চান না চেনা বা আশপাশের মানুষের মধ্যে আর একবারও উচ্চারিত হোক যে তিনি একজন "চরিত্রহীন" মানুষ। নারী চরিত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশে হরহামেশাই শোনা যায়, পারিবারিক বা পেশাগত বিরোধের জের ধরে কোন নারীকে আক্রমণ করতে হলে ওই নারীর বিরুদ্ধে যৌনতাকেন্দ্রিক বা নির্দিষ্ট করে বললে চরিত্রহীনতার অভিযোগ তোলা হয়। দেখা যায় কোনো বিরোধের ঘটনায় প্রতিপক্ষ পুরুষ হলে তার বিরুদ্ধে মারধর, লাঞ্ছিত করা, হত্যাসহ নানা ধরনের ভয়াবহ সহিংসতা হতে পারে, কিন্তু তার চরিত্র খারাপ এ কথা কেউ বলে না। নারীর বিরুদ্ধেও সহিংসতা হয়, সাথে বাড়তি হিসেবে নারীর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও ঠিক কী করলে একজন নারী চরিত্রহীন হন এবং কিসে তার চরিত্রহানি হয়, সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না- বিশেষজ্ঞ কিংবা ভুক্তভোগী- কোন পক্ষের কাছ থেকেই। কিন্তু তারপরও সমাজে নারীর চরিত্র খুব মূল্যবান একটি বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারের জন্য শত শত বছর ধরে সন্তানের পিতার পরিচয় নির্ধারণের ব্যাপার প্রচলিত আছে সমাজে। সেই সঙ্গে নারীর যৌনতার তথ্যের মাপকাঠিতে নারীর সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করা হয়, যেখান থেকে 'ভালো মেয়ে' আর 'মন্দ মেয়ের' ধারণা প্রচলিত হয়েছে সমাজে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা সুলতানা বলছেন, নারীর প্রতি সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা নির্ধারিত হয় পুরুষের মাধ্যমে, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। "আপনি সম্পত্তির উত্তরাধিকার যখন চাইবেন, কিংবা সন্তানের অভিভাবকত্ব- যেটাই বলেন, এসব ক্ষেত্রে মনে করা হয় যে নারীর তথাকথিত সামাজিক 'চরিত্র' নাই, সে এ বিষয়গুলো পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এটা হচ্ছে সাংস্কৃতিক মনন। এটা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব যা নারীর উৎপাদন-পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া এবং তার যৌনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়," বলেন তিনি। তিনি মনে করেন, এরই কৌশল হিসেবে নারীর যৌনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ফাতেমা সুলতানা বলছেন, "সমাজের একটি ধ্যানধারণা হচ্ছে, নারীর পেটে যে সন্তান সে সন্তানটা কার- এটা জানা সমাজের জন্য খুবই জরুরি। এ কারণেই আমাদের সমাজে দেখবেন, পিতার পরিচয় না থাকলে সন্তানের অধিকার থাকে না।" কিন্তু মামলা বা বিচার সালিশের সময় নারীর চরিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ কোন নারীর বিরুদ্ধে 'চরিত্রহীন' এমন অভিযোগ থাকলে তখন সেই নারীর অভিযোগ, আপত্তি বা না-রাজিকে গুরুত্ব দেয়া হয় কমই। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রচলিত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, যে নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ করছেন, তিনি 'দুশ্চরিত্র' হলে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন জারি করা যায়। সাক্ষ্য আইনের এই ধারাটির বিরুদ্ধে দেশের মানবাধিকার ও নারীবাদী সংগঠনগুলো বহুদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা হোসেন মনে করেন, একটা সময় পর্যন্ত নারী যেহেতু রোজগার করত না, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকত না, ফলে সমাজের প্রচলিত ধারণাই ছিল যে সমাজে নারী অধস্তন একটি সত্ত্বা, যেখানে বেশিরভাগ পরিবারের শিশুরা নারীকে সম্মান করতে শেখে না । সেই ধারণা এখনো চলছে, যা শুরু হয় একেবারে পরিবার থেকে। তিনি বলেন, "পুরুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা গড়ে উঠেছে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে। যে কোন নারীকে আমি ইচ্ছা করলেই ক্ষমতা দেখাত পারি যে আমি পুরুষ। আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় দেখবেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাটা তার। আর সমাজে নারীরাও চেষ্টা করে পুরুষের সাথে মানিয়ে চলার। " "এছাড়া নারীরা সব কিছুতে পিছিয়ে থাকে বা আচরণে সাহসী ভূমিকা রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। সেটা তো শিশুরা দেখে। পরিবারের পর বিদ্যালয়, বন্ধুবান্ধব সঙ্গী-সাথী। সব পরিবারেই একই রকম আচরণ দেখলে শিশুরা শেখে নারীর সম্মান কম," বলেন অধ্যাপক হোসেন। তিনি বলছেন, নারীর প্রতি সহিংস এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ সম্পর্কে শিশু বয়সেই যদি সচেতন করা যায়, তাহলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হয়ত সম্ভব। প্রতিকার কী? নারীর নামে মিথ্যা কলঙ্ক রটানো এবং তার মাধ্যমে হয়রানি যে অপরাধ সে সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা নেই। পুলিশ বলছে, সাইবার জগতে যত হয়রানিরর ঘটনা ঘটে তার খুব অল্প একটি সংখ্যাই আসেন অভিযোগ করতে। তাদের কাছে যত অভিযোগ আসে তার ৯০ ভাগই বিভিন্ন বয়সী নারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার এএফএম আল-কিবরিয়া বিবিসিকে বলেছেন, বেশিরভাগ অপরাধের শিকার কিশোরীরা৷ "কিন্তু চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারটা হলো অনেক ভিক্টিম এক্সপোজড হতে চান না। তারা হয়ত চায় না এটাকে জিডি বা মামলা বা এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যেতে। কিন্তু ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমে ভিক্টিম এক্সপোজড না হলে অভিযুক্তদের প্রসিকিউট করার প্রক্রিয়া খুব সহজ না," তিনি বলেন। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের হিসেবে সাইবার বুলিং, হয়রানি, হুমকি, প্রতারণা- এসব অভিযোগে যত মামলা হয়, তার প্রায় ৭০ ভাগের শিকার নারী৷ যদিও পুলিশের কাছে যাওয়া সব অভিযোগ মামলায় গড়ায় না। পুলিশ কর্মকর্তা মি. আল-কিবরিয়া বলেছেন, হয়রানির শিকার নারীরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে তারা সাহায্য পাবেন এমন ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযোগ জানাতে সরাসরি থানায় যেতে পারেন একজন নারী, ট্রিপল নাইনে ফোন করতে পারেন, বা সাইবার ক্রাইমে রিপোর্ট করতে পারেন। পুলিশ হেডকোয়াটার্সেও একটা অল-উইমেন বিভাগ আছে। সেখান থেকেও আইনি পরামর্শ দেয়াসহ অন্যান্য সাহায্য করা হয়। কিন্তু মি. কিবরিয়া পুলিশের যে সহযোগিতার কথা বলছেন, সেটি মূলত নগর-কেন্দ্রিক। মফস্বল এবং গ্রামাঞ্চলে যে নারীরা হয়রানির শিকার হন তাদের জন্য অভিযোগ জানাতে যাওয়া সহজ নয়। তারা জানেন না হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ জানিয়ে সাহায্য চাওয়া যায়, এবং অভিযোগ কিভাবে জানাবেন সে সম্পর্কেও তাদের ধারণা কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর প্রতি নিপীড়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। এবং সেজন্য নারীর নিজেরও সচেতনতা দরকার।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply