Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » চে গেভারা ১৯৫৯ সালে যেভাবে কিউবার সশস্ত্র বিপ্লবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন




চে গেভারা যেভাবে কিউবার সশস্ত্র বিপ্লবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন “যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা কার মতো করে গড়ে তুলতে চাই? নির্দ্বিধায় বলবো, আমরা তাদেরকে চে’র আদর্শে গড়ে তুলতে চাই” মার্কসবাদী বিপ্লবী চে গেভারা মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো। বস্তুতঃ চে গেভারা ছিলেন মি. কাস্ত্রোর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। আর তাদের এই বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল রণাঙ্গনে। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে কিউবার বামপন্থী সশস্ত্র আন্দোলনকারীদের হাতে দেশটির বিতর্কিত সেনা শাসক ফুলখেনসিও বাতিস্তার পতন ঘটে, যেটি ইতিহাসে ‘কিউবার বিপ্লব’ নামে পরিচিত। সেই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো, আর চে গেভারা ছিলেন ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ বা দ্বিতীয় প্রধান নেতা। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করা মি. গেভারা ছিলেন কিউবা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের একটি দেশ আর্জেন্টিনার নাগরিক এবং বিপ্লবের পাঁচ বছর আগেও মি. কাস্ত্রোর সঙ্গে তার পরিচয় ছিলো না। তাহলে কবে এবং ঠিক কোথায় মি. কাস্ত্রোর সঙ্গে চে গেভারার প্রথম দেখা হয়েছিলো? কিউবার সশস্ত্র বিপ্লবের সঙ্গেই-বা তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন কীভাবে? যে ঘটনা বদলে দিয়েছিলো জীবন সারা বিশ্বের কাছে ‘চে’ নামে পরিচিত বিপ্লবী মি. গেভারার পুরো নাম- এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না। ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন তিনি আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই মি. গেভারার অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ ধরা পড়ে। ফলে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে তার বাবা-মা রোসারিও ছেড়ে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত আলতা গার্সিয়া নামের ছোট একটি শহরে বসবাস শুরু করে। হাঁপানির সমস্যা থাকায় মি. গেভারাকে ছোটবেলায় তার পরিবার খুব একটা বাইরে খেলতে পাঠাতো না। ফলে শৈশবের একটা বড় সময় তার কেটেছে অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থায়। মূলত: এই সময়েই মি. গেভারার বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়, যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বজায় ছিলো। বড় হওয়ার পর আরও একটি নেশা তাকে পেয়ে বসে, যা এক পর্যায়ে মি. গেভারার জীবনকে বদলে দিয়েছিলো। ১৯৪৮ সালে তিনি আর্জেন্টিনার ইউনিভার্সিটি অব বুয়েনস আয়ার্সের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ভ্রমণের নেশা মি. গেভারাকে পেয়ে বসে। ১৯৫০ সালে তিনি মোটরসাইকেলে চেপে নিজের দেশকে দেখতে বেরিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ভ্রমণের নেশা মি. গেভারাকে এতটাই পেয়ে বসেছিলো যে, ডাক্তারি পড়া শেষ না করেই আলবার্তো গ্রানাদোর সঙ্গে তিনি দক্ষিণ আমেরিকা দেখতে বের হন। ১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে শুরু করা এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও বিবরণী মি. গেভারা রোজনামচা আকারে লিখে রাখেন, যা পরে ‘মোটরসাইকেল ডায়েরিস’ নামে প্রকাশিত হয়। সেই রোজনামচা থেকে জানা যায় যে, দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের সময় মি. গেভারা সেখানকার শ্রমিক ও আদিবাসীদের দুঃখ-দারিদ্র্যের জীবন এবং সমাজে শ্রেণিভেদ খুব কাছ থেকে দেখেন, যা তার হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। ভ্রমণ শেষে আর্জেন্টিনায় ফেরার পর নিজের পরিবর্তন সম্পর্কে মি. গেভারা নিজেই তার ডায়েরিতে লিখেছেন, “আমি আর আগের মানুষটি নেই। ল্যাটিন আমেরিকায় উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণ আমাকে কল্পনার চেয়েও বেশি পাল্টে দিয়েছে।” বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া চে গেভারার জীবনী লিখে যারা খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাদেরই একজন হলেন মার্কিন সাংবাদিক জন লি অ্যান্ডারসন। ‘চে গেভারা: আ রেভ্যুলুশনারি লাইফ’ বইতে তিনি লিখেছেন, ডাক্তারি পড়া শেষ করে মি. গেভারা ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে আবারও দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু এবার তিনি এমন একটি সময়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন, যখন ক্যারিবিয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র কিউবাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। স্বৈরশাসক ফুলখেনসিও বাতিস্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে সেসময় অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে তখনকার তরুণ নেতা ফিদেল কাস্ত্রোও ছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই মি. গেভারা মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় পৌঁছান। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিউবায় বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অনেকে তখন গ্রেফতার এড়াতে গুয়াতেমালায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরই একজন হলেন আন্তনিও নিকো লোপেজ। সাংবাদিক মি. অ্যান্ডারসন বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে মি. লোপেজের সঙ্গে চে গেভারার দেখা হয় এবং দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জানা যায় যে, মি. লোপেজই সেসময় মি. গেভারাকে ‘এল চে আর্জেন্টিনো’ বা ‘আর্জেন্টিনার চে’ নামে ডাকা শুরু করেন, যা পরবর্তীতে আরও ছোট হয়ে ‘চে’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। মি. লোপেজের কাছ থেকে চে গেভারা কিউবার তরুণ নেতা ফিদেল কাস্ত্রো এবং তাদের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন। এর মধ্যে গুয়াতেমালাতেও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ১৯৫৪ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন গুয়াতেমালা ছেড়ে মি. গেভারা প্রথমে এল সালভেদর, তারপর মেক্সিকোয় চলে যান। ফিদেলের সঙ্গে দেখা মেক্সিকোয় যাওয়ার পর মি. গেভারা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সেখানেই বছরখানেক কেটে যায়। অন্যদিকে, কারাগারে বন্দী ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৫৫ সালের মে মাসে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান। এরপর পুনরায় গ্রেফতার এড়াতে তিনিও মেক্সিকোয় পালিয়ে যান। ১৯৫৫ সালে সেখানেই গ্রীষ্মের এক রাতে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা হয় চে গেভারার। দেখা হওয়ার পর সেই রাতে দু’জন কয়েক ঘণ্টা ধরে আলাপ-আলোচনা করেন। ‘চে গেভারা: আ রেভ্যুলুশনারি লাইফ’ বইতে সাংবাদিক মি. অ্যান্ডারসন বলছেন, পরের দিন সকালে ফিদেল কাস্ত্রো মি. গেভারাকে কিউবার গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং চে গেভারা প্রস্তাবে রাজি হন।

গেরিলা হয়ে ওঠা মেক্সিকোয় থাকতেই সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার তৎকালীন সেনা শাসক ফুলখেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাতের পরিকল্পনা করতে থাকেন ফিদেল কাস্ত্রো। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালের ২৫শে নভেম্বরে একটি ইঞ্জিন-চালিত নৌকায় চড়ে মি. কাস্ত্রো ও ৭৯ জন সঙ্গীদের সাথে কিউবায় পাড়ি জমান চে গেভারা। পূর্ব উপকূলে পৌঁছানোর পর নৌকাটি কেউবার সামরিক বাহিনীর হামলার শিকার হয়। এতে নৌকার বেশির ভাগ যাত্রী মারা গেলেও ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে গেভারা প্রাণে বেঁচে যান। এরপর তারা সিয়েরা মায়েস্ত্রা নামের একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং নতুন করে গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন। এরপর সেখান থেকেই তারা পরবর্তী দুই বছর হাভানার সরকারের উপর গেরিলা আক্রমণ চালাতে থাকেন। এই সময়ে সম্মুখ সমরে সাহসী ভূমিকায় রাখায় মি. গেভারাকে গেরিলা যুদ্ধের কমান্ডার করেন ফিদেল কাস্ত্রো। দুই বছর গেরিলা আক্রমণ চালানোর পর ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি গেরিলা যোদ্ধারা কিউবার রাজধানী হাভানায় প্রবেশ করে এবং সেনা শাসক মি. বাতিস্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেন। সমাতান্ত্রিক ধারায় চালু করেন এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা। শুভেচ্ছা দূত থেকে মন্ত্রী হওয়া বিপ্লবের পর মি. গেভারাকে কিউবার নাগরিকত্ব দেওয়া হয় এবং তিনি কাস্ত্রোর নতুন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। এরপর মি. কাস্ত্রো তাকে কিউবার শুভেচ্ছা দূত বানিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে সফরে পাঠান। ১৯৫৯ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মি. গেভারা কিউবা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দোনেশিয়া প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিলো- ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সদ্য স্বাধীনতা অর্জন করা দেশগুলোকে কেউবার বিপ্লবের পক্ষে আনা এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা। মি. গেভারা সফলভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন বলে জানাচ্ছেন তার জীবনীকার সাংবাদিক জন লি অ্যান্ডারসন। ফলে সফর শেষে দেশে ফেরার পর মি. কাস্ত্রো তাকে কিউবার শিল্পমন্ত্রী বানান। একইসঙ্গে, কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও প্রেসিডেন্ট করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর বাতিস্তার বহু সমর্থককে যুদ্ধাপরাধসহ নানান অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় কাস্ত্রোর সরকার। চে গেভারা নিজেও সেই বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন যে, সেই বিচার ‘পুরোপুরি নিরেপক্ষ’ ছিলো না।
ফের বিপ্লবের পথ চে'র জীবনীকার সাংবাদিক মি. অ্যান্ডারসন বলছেন, বেশ কয়েক বছর মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করার পর মি. গেভারা সিদ্ধান্ত নেন যে, এসব ছেড়ে কিউবার মতো বিপ্লব তিনি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দিবেন। সেই ভাবনা থেকে সরকারি সব দায়িত্বে ইস্তফা ১৯৬৪ সালের নভেম্বরে মি. গেভারা আবারও দেশ ভ্রমণ শুরু করেন। এশিয়ায় ও আফ্রিকার একাধিক দেশ ঘুরে তার দুইমাসের সফর শেষ হয় মধ্য আফিকার কঙ্গোতে। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে মি. গেভারা সিদ্ধান্ত নেন যে, কঙ্গো থেকেই তিনি তার নতুন সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করবেন। প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তিনি পুনরায় কিউবা ফিরে যান। এরপর ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে কিউবা থেকে একদল গেরিলা নিয়ে মি. গেভারা কঙ্গোর উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু সেখানে সফলতা না পেয়ে আবারও দক্ষিণ আমেরিকায় নজর দেন। বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৬৬ সালের নভেম্বর মি. গেভারা বলিভিয়ায় পৌঁছান। এর বছরখানেক পরেই ৩৯ বছর বয়সী এই বিপ্লবী দেশটির সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু ততদিনে সারা বিশ্বের মার্কসবাদী বিপ্লবীদের কাছে চে গেভারা এক কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply