দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলে অনেকের পেট ব্যথাসহ অস্বস্তি কেন হয়, চিকিৎসা কী? গরু, ভেড়া বা যেকোনো পশুর দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খাওয়ার পরে কারও কারও পেট ব্যথাসহ আরও নানা অস্বস্থির লক্ষণ দেখা দেয়। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। ল্যাকটোজ হলো পশুর দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া এক ধরনের চিনি জাতীয় উপাদান, আর ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হলো যখন আপনার শরীর এই ল্যাকটোজ ভেঙে ফেলতে বা হজম করতে পারে না। আরও যদি ভেঙে বলি, আমাদের পরিপাকতন্ত্রে চিকন পাইপের মতো যে ক্ষুদ্রান্ত আছ সেখানে ল্যাকটেজ বলে এক ধরনের অ্যানজাইম থাকে। এই অ্যানজাইমের কাজ হলো ল্যাকটোজ, অর্থাৎ দুধে থাকা চিনিকে ভেঙে দিয়ে শোষণ করানো, হজম করানো। যখন ক্ষুদ্রান্ত্র ল্যাকটেজ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করতে পারে না তখনই ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হয়। যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তারা দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে তাদের শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এশিয়ান, আফ্রিকান, মেক্সিকান এবং আদি আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আপনার ল্যাকটোস ইনটলারেন্স আছে কি না, তা জানতে কিছু লক্ষণের বিষয়ে খেয়াল রাখুন। এই প্রতিবেদনের সব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রােগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি এবং ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনএইএস থেকে নেয়া হয়েছে। লক্ষণ দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: পেট ফেঁপে থাকা বা গ্যাস হওয়া। বারবার ঢেকুর ওঠে। পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেকের আবার ফুঁসকুড়ি, মাথাব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি, মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কারো যদি দীর্ঘসময় ডায়রিয়া থাকে, টানা তিন সপ্তাহ কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে বা পায়খানার সাথে রক্ত যায়, পেট অনেক বেশি ফুলে থাকে, দ্রুত ওজন কমে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে একজন গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। অ্যালার্জি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের চাইতে অনেক বেশি গুরুতর হলো ফুড অ্যালার্জি। যদি কারো ল্যাকটোজযুক্ত খাবারে অ্যালার্জি থাকে তাহলে এর লক্ষণগুলো ভয়াবহভাবে প্রকাশ পায়। যেমন: দুধ খাওয়ার পরপরই ঠোঁট, মুখ, গলা বা জিহ্বা হঠাৎ ফুলে যায়। ফোলা জায়গায় ফুঁসকুড়ি ওঠে ও চুলকায়। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, এজন্য খুব দ্রুত শ্বাস নেওয়া লাগে। গলা শক্ত হয়ে যায় বা গিলতে কষ্ট হয়। ত্বক, জিহ্বা বা ঠোঁট নীল, ধূসর বা ফ্যাকাশে হয়ে যায় (যদি গায়ের রং কালো বা বাদামী হয়, তাহলে হাতের তালু বা পায়ের তলায় এই পরিবর্তন দেখা যাবে)। হঠাৎ খুব বিভ্রান্ত, তন্দ্রাচ্ছন্ন বা মাথা ঘোরা শুরু হয়। কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে জাগানো যায় না। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর অসাড় হয়ে যায়, মাথা হেলে পড়ে, কোনো সাড়া দেয় না। ফুড অ্যালার্জির গুরুতর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যতো দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। প্রসঙ্গত, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এবং ফুড অ্যালার্জি একই জিনিস নয়। খাদ্য অ্যালার্জি মৃত্যুর ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। ল্যাকটোজযুক্ত খাবার গরু, ছাগল এবং ভেড়ার দুধসহ পশুর দুধ এবং সেই দুধে তৈরি খাবারে ল্যাকটোজ পাওয়া যায়। দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে: দুধ, মাখন, পনির, ক্রিম, দই, আইসক্রিম। অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারেও ল্যাকটোজ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে: সিরিয়াল (গম, ওটস, চাল, বার্লি, ভুট্টা জাতীয় শস্য থেকে তৈরি খাবার), রুটি, ক্র্যাকার, কেক, বিস্কুট এবং পেস্ট্রির মতো বেকড খাবার, সস, সালাদ ড্রেসিং, মিল্ক শেক, প্রোটিন শেক ইত্যাদি। রোগ নির্ণয়/ পরীক্ষা আপনার ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে কিনা তা জানার সবচেয়ে সহজ পরীক্ষা হলো–– ল্যাকটোজযুক্ত খাবার খেলেই আপনার পেট ফাপে বা ডায়রিয়া কোষ্ঠকাঠিনের মতো লক্ষণ দেখা যায়।
আবার ল্যাকটোজযুক্ত খাবার খাওয়া ছেড়ে দিলে আপনা-আপনি তা ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া রক্তের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স পরীক্ষা এবং হাইড্রোজেন ব্রেদ টেস্টের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানা যায়। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স পরীক্ষা: এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় পাচনতন্ত্র কীভাবে ল্যাকটোজ শোষণ করে। পরীক্ষার প্রায় চার ঘণ্টা আগে আপনাকে সব কিছু খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত রাখা হবে। এরপর ল্যাকটোজযুক্ত পানীয় খাইয়ে পরবর্তী দুই ঘণ্টা ধরে রক্তের নমুনা নেওয়া হবে। মূলত ওই নমুনা রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। যদি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা না বাড়ে, তাহলে আপনি ল্যাকটোজ ইন্টরারেন্ট হতে পারে। হাইড্রোজেন ব্রেদ পরীক্ষা: হাইড্রোজেন ব্রেদ টেস্টে আপনকে এমন একটি তরল খাওয়ানো হবে যাতে প্রচুর ল্যাকটোজ আছে, এরপর আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হবে। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসে হাইড্রোজেনের উচ্চ মাত্রা থাকা মানে আপনি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট। মলের অ্যাসিডিটি পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি শিশু, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মলে কতটা অ্যাসিড আছে তা পরীক্ষা করে। যদি কেউ ল্যাকটোজ হজম না করে, তাহলে তার মলে ল্যাকটিক অ্যাসিড, গ্লুকোজ এবং অন্যান্য ফ্যাটি অ্যাসিড থাকবে। বায়োপসি: লক্ষণ তীব্র হলে এবং দীর্ঘ সময়ে ভালো না হলে গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার প্রয়োজন হতে পারে। এখানে একটি লম্বা, পাতলা, নল আপনার মুখের মধ্যে দিয়ে আপনার পেটে প্রবেশ করানো হয়। আপনার ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে কোষের ছোট নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। কেননা এখনো এমন কোন চিকিৎসা নেই যা আপনার শরীরকে আরও ল্যাকটেজ এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে অথবা ল্যাকটেজ সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সে হিসেবে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের মূল চিকিৎসা একটাই, ল্যাকটোজযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা বা একদম কম পরিমাণে খাওয়া। ল্যাকটোজযুক্ত খাবার খাওয়ার আগে ল্যাকটেজ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এসব লক্ষণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অনেকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের পেছনে বড় কারণ থাকে সিলিয়াক রোগ। এটি এক ধরনের অটো ইমিউন ডিজিজ যা ক্ষুদ্রান্তের আস্তরণকে দুর্বল করে ফেলে। এই সিলিয়াক রোগ নিরাময় করা গেলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স ঠিক হয়ে যেতে পারে। তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন দুধকে তো আদর্শ খাবার বলা হয়। যা ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ডি এর বড় উৎস। এক্ষেত্রে যাচাই করে দেখুন–– দুধ বা দুগ্ধজাত কোন খাবারগুলো কম লক্ষণ সৃষ্টি করে। সেগুলোই কম করে খেয়ে খেয়ে শরীরকে অভ্যস্ত করান। এছাড়া, বাজার থেকে ল্যাকটোজমুক্ত দুধ ও ল্যাকটোজমুক্ত খাবারগুলো বেছে নিতে পারেন। এগুলোয় ল্যাকটেজ এনজাইম যুক্ত থাকে। আবার অনেক সময় ল্যকটোজযুক্ত খাবার অন্য খাবারের সাথে মিলিয়ে খেলে লক্ষণগুলো সেভাবে দেখা দেয় না। এজন্য ক্র্যাকারের সাথে পনির খাওয়ার চেষ্টা করুন বা সিরিয়ালের সাথে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন। শক্ত পনির এবং দইয়ে ল্যাকটোজ বেশ কম মাত্রায় থাকে। তাই এগুলো খেয়ে দেখতে পারেন। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল যখন শরীর ল্যাকটেজ নামক এনজাইম পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করতে পারে না, যা আপনার ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে। সিলিয়াক রোগ, অন্ত্রের সংক্রমণ, অন্ত্রের অস্ত্রোপচার, অন্ত্রের আঘাত পেলে সেইসাথে পরিবারে কারো ল্যাকটোস ইনটলারেন্স থাকলে এবং অকালে জন্ম নেওয়া কিছু কিছু শিশুর মধ্যে ল্যাটোজ ইনটলারেন্স থাকতে পারে। এই রোগ যেকোনো বয়সেই হতে পারে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
politics
» দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলে অনেকের পেট ব্যথাসহ অস্বস্তি কেন হয়, চিকিৎসা কী?
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: