জীবন রক্ষাকারী যে জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি সবারই জানা দরকার বাংলাদেশে অভিনেতা আহমেদ রুবেলের আকস্মিক মৃত্যু তার পরিচিতজন ও গুণগ্রাহীদের তো বটেই, দেশের আরও অনেককেই বেশ ধাক্কা দিয়েছে। বুধবার তিনি জ্ঞান হারানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে নিলেও ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হঠাৎ এরকম অসুস্থ হয়ে পড়ার সময় থেকে হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত এই সময়টা কারও জীবন বাঁচানোর জন্য হয়ে উঠতে পারে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে একটা জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা থাকলে তা আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যেটাকে বলে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সংক্ষেপে 'সিপিআর'। কেউ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারালে, তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে বা শ্বাস প্রশ্বাস চালু না থাকলে, সেই ব্যক্তিকে সিপিআর দিতে হয়। এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির ফুসফুসে অক্সিজেন দেওয়া হয়, একই সাথে শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সঞ্চালন করতে থাকে, ফলে জীবন বাঁচানোও সম্ভব নয়। সিপিআর বিশ্ব জুড়ে বহুল প্রচলিত এক জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি। বিভিন্ন নাটক বা সিনেমায় অনেকেই দেখে থাকবেন কোনও অচেতন ব্যক্তির বুকের উপর দুহাত রেখে বারবার চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে এবং তার মুখে শ্বাস দেয়া হচ্ছে, যার ফলে ঐ ব্যক্তির জ্ঞান ফিরে আসছে। এটাকেই সিপিআর বলে। ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তবে এর সঠিক পদ্ধতি যেমন জানা দরকার, তেমনি কোন ক্ষেত্রে সিপিআর দেওয়া যেতে পারে সেটাও জেনে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের তো অবশ্যই সিপিআর প্রশিক্ষণ নিতে হয়, আবার বিভিন্ন বিশেষ বাহিনী আর সংস্থার লোকজনেরও বাধ্যতামূলক সিপিআর প্রশিক্ষণ থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সাধারণ মানুষদেরও তাদের নিজেদের স্বার্থেই সিপিআর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা উচিত। যা বিশ্বের অনেক দেশে ছোট থেকেই ট্রেনিং দেওয়ানো হয়। তবে বাংলাদেশে এর যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যায়, অনেকেই এই জীবন রক্ষাকারী সিপিআর এর ব্যাপারে সচেতন নন। সিপিআর কখন দিতে হবে “আপনার সামনে যদি কারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, তাহলে দ্রুত ৯৯৯-এ ফোন করুন এবং সিপিআর দেওয়া শুরু করুন,” ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে এমনটাই বলা আছে। অনেকটা একই রকম কথা বলছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। তাদের ভাষায়, “যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয় তাহলে ৯৯৯-এ ফোন করতে হবে এবং সিপিআর দেওয়া শুরু করতে হবে।” বিশ্বজুড়ে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট। আমেরিকান রেড ক্রসের ভাষ্য অনুযায়ী, সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন কারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময় জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে থাকে। যখন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয় অথবা হার্টবিট নিয়মিত না হয়, তখন মস্তিষ্কে ও অন্যান্য জরুরি প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে না। ফলে তা মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলে, যার কারণে অনেক সময় ব্যক্তি মারাও যেতে পারে। কিন্তু সিপিআর দিলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট যে কারও হতে পারে। বাংলাদেশে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আশরাফ উর রহমান তমাল বলেন, “কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কার্ডিয়াক পেশেন্টেরও হতে পারে, আবার নন কার্ডিয়াক পেশেন্ট, যাদের কোনও হৃদরোগ নেই তাদেরও হতে পারে।” এই চিকিৎসক বলেন, “এক্ষেত্রে কেউ জোরে আঘাত পেলে বা পড়ে গেলে, যদি দেখা যায় যে তার হার্ট বন্ধ হয়ে আসছে, তিনি মাটিতে শুয়ে পড়ছেন তখন সিপিআর শুরু করলে তাকে বাঁচানোর সময় পাওয়া যায়।“ এরকম পরিস্থিতি যেমন হৃদরোগ থেকে হতে পারে, তেমনি ইলেকট্রিক শক, জোরে আঘাত, পানিতে ডুবে, শরীরে বড় ধরনের ইনফেকশন থাকা, এমন নানা কারণেই হতে পারে - যাতে করে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর এমন সময় গুলোতেই জরুরি ভিত্তিতে সিপিআর দেয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। “হার্ট বন্ধ হলে খুব অল্প সময় দেয়, ৫-৭ মিনিট, এরপর যদি হার্ট ফিরেও আসে পেশেন্টের ব্রেইন ডেথ হয়ে যায়”, বলেন ডা. আশরাফ। এ কারণেই সিপিআর দ্রুত একেবারে প্রথম অবস্থাতেই শুরু করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সিপিআরের সাতটি ধাপ রেড ক্রস সিপিআরের সাতটি ধাপের কথা বলেছে। যেখানে প্রথম ধাপেই নিরাপত্তার দিকটা দেখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশে আগুন বা পানির মতো কোন বিপদ আছে কি না, তিনি রাস্তার মাঝখানে কি না ইত্যাদি বিষয়। প্রয়োজনে পিপিই বা পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে দেখতে হবে ব্যক্তিটি কোনও সাড়া দেয় কি না। এজন্য তাকে ধাক্কা দিয়ে জোরে জোরে ডাকতে হবে। একই সাথে পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হতে হবে যে কোনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। যদি লোকটির কোনও সাড়া না পাওয়া না যায় এবং সে যদি নিঃশ্বাস না নেয়, তার পালস না থাকে অথবা যদি ঘড়ঘড় করে, তাহলে এই পর্যায়ে তৃতীয় ধাপে এসে সাহায্যের জন্য ডাকতে হবে ও ৯১১ নাম্বারে (অথবা সে দেশে যেটা ইমার্জেন্সি বা জরুরি পরিষেবার নম্বর) কল করতে হবে। এরপর চতুর্থ ধাপে হাঁটু গেড়ে ঐ ব্যক্তির পাশে বসতে হবে। এ সময় হাত কাঁধ বরাবর সামনে থাকবে, আর ঐ ব্যক্তিকে সমতল জায়গায় চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে। পঞ্চম ধাপে এসে মূল সিপিআর শুরু। প্রথমে ঐ ব্যক্তির বুকের উপর দুটো হাত প্রতিস্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে এক হাতের উপর আরেক হাত রেখে দুই হাতের আঙুলগুলো ধরে তালু দিয়ে চাপ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চাপটি অন্তত দুই ইঞ্চি গভীরে যায়। প্রতিবার চাপ দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে যাতে বুক আবার আগের অবস্থানে চলে আসে। এর গতি থাকবে মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার। তবে টানা ৩০ বার এরকম চাপ দেবার পর একটা বিরতি নিতে হবে। তখন আসবে ষষ্ঠ ধাপ অর্থাৎ মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস দেয়া। এজন্য মাথা সোজা রেখে থুতনিতে চাপ দিয়ে উপরে ঠেলে দিতে হবে, এরপর মুখটা হাঁ করতে হবে। তারপর ঐ ব্যক্তির নাক ধরে একটা স্বাভাবিক দম নিয়ে তার মুখে পুরো মুখ চেপে শ্বাস দিতে হবে। এর স্থায়িত্ব হবে এক সেকেন্ড এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে বুকটা একটা ফুলে উঠে। এরপর পরের শ্বাস দেবার আগে মুখ উঠিয়ে সেটি বের হয়ে যাবার সুযোগ করে দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি প্রথমবারে বুকের উঠানামা না হয়, তাহলে মাথাটা আবার নাড়িয়ে নিয়ে মুখটা খুলে দেখে নিতে হবে যে গলায় বা মুখের ভেতরে কিছু আটকে আছে কি না, যা নিঃশ্বাসের ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। ৭ম ধাপে বলা হয়েছে আবারও এরকম ৩০বার বুকে চাপ দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে। এবং আবার মুখে দুবার নিঃশ্বাস দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বুকে চাপ দেওয়ার বিরতি যেন ১০ সেকেন্ডের বেশি না হয়। এভাবে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনও সাহায্য না আসা পর্যন্ত সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় ছোট বাচ্চাদেরও সিপিআর দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেটা অবশ্য তাদের হৃদরোগের সমস্যার চেয়ে বেশি দেখা যায় যখন নিঃশ্বাসে কোনও সমস্যা হয়। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বলছে শিশুদের সিপিআরের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলার কথা। প্রথমেই এক হাত কপালে রেখে মাথাটা পেছনের দিকে নিয়ে থুতনিটা উঁচু করতে হবে। মুখ বা নাকে কোনও কিছু আটকে থাকলে সেটা সরিয়ে দিতে হবে। এরপর নাক ধরে মুখ থেকে মুখে পাঁচবার নিঃশ্বাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, একই সাথে খেয়াল রাখতে হবে বুকের উঠানামার দিকে। এরপর এক হাতের তালু শিশুটির বুকের উপর বসাতে হবে এবং ৫ সেন্টিমিটার (প্রায় দুই ইঞ্চি) পর্যন্ত চাপ দিতে হবে। এই গভীরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদি এক হাতে সেটা সম্ভব না হয় তাহলে দুই হাতের তালু ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এক বছরের নিচের শিশুর ক্ষেত্রে দুই হাতের বদলে দুটি আঙুল ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে চাপের গভীরতা হবে ৪ সেন্টিমিটার বা দেড় ইঞ্চি। একইভাবে বড়দের মতোই মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার চাপ দেয়ার গতিতে, ৩০ বার পরপর দুবার করে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস দিতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রেও অ্যাম্বুলেন্স বা কোনও সাহায্য না আসা পর্যন্ত এভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়। সেক্ষেত্রে সিপিআর জানা থাকলে তা জীবন বাঁচাতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: