হ্যান্সি ক্রনিয়ে: প্রয়াত দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক - নায়ক থেকে যার পতন হয়েছিল সন ১৯৯৪, নেলসন ম্যান্ডেলা সুদীর্ঘ ও বহুল আলোচিত নির্বাসন কাটিয়ে ফেরার চার বছর পর ঐতিহাসিক এক নির্বাচনে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অফিস করা শুরু করেছেন। বর্ণবাদে ক্ষতবিক্ষত একটি দেশের ঘা তখনো শুকোয়নি। তখনও তার হাতে একটা জটিল এবং কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট। একটা এক ও অভিন্ন লক্ষ্যের দক্ষিণ আফ্রিকান জাতি গঠন করার মিশনে নামেন ম্যান্ডেলা। এই জাতি গঠন করার কাজে নেলসন ম্যান্ডেলার বড় অস্ত্র ছিল ক্রীড়া। উনিশশো পঁচানব্বই ১৯৯৫ সালের রাগবি বিশ্বকাপ জয় সাহায্য করেছে বটে তবে ক্রিকেট ছিল তার অন্যতম হাতিয়ার। এই পথে ম্যান্ডেলার অন্যতম সঙ্গী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দলের তৎকালীন অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে। "মনে হয় ম্যান্ডেলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিক ছিলেন ক্রনিয়ে"- নেটফ্লিক্সে হ্যান্সি ক্রনিয়েকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিতে বলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ক্রিকেট কোচ প্যাডি উপটন। জোহানেসবার্গের সাংবাদিক লুক আলফ্রেড নিজের স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, "বর্ণবাদী সেই ক্রান্তিকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরে গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা একজন নায়কের খোঁজে ছিল। অনেকেই ক্রনিয়ের মধ্যে সেই নায়ককে দেখতে পেয়েছিলেন, তরুণ-বৃদ্ধ সব বয়সের লোক তার ভক্ত ছিল সে সময়। একটা নতুন যুগের নতুন মানুষ ছিলেন ক্রনিয়ে।" দক্ষিণ আফ্রিকার এমন এক শহর যেখানে সত্তরের দশক, আশির দশকে বর্ণবাদ ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। হ্যান্সি ক্রনিয়ের ভাই, ফ্রান্স ক্রনিয়ের বয়ানে, "আমরা এমন এক এলাকায় বড় হয়েছিলাম যেখানে সাদা চামড়ার লোকেরা ছিল অগ্রসর এবং বর্ণবাদ ছিল একটা নিয়মের মতো। তবে আমরা পারিবারিকভাবেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ছিলাম। কখনোই এটা আমাদের মাথায় আসেনি। আমরা এক ও অভিন্ন দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থনেই বড় হয়েছি।" ফ্রান্স ক্রনিয়ের ভাষ্যমতে, সাদামাটা এক পরিবারেই বেড়ে ওঠেন হ্যান্সি ও তার ভাই বোন। বাবা-মা দুজনই ছিলেন শিক্ষক, খুব বেশি পয়সা ছিল না, ছিল না জৌলুস। আর ছোটবেলা থেকে ছিল স্বপ্ন, বড় ক্রিকেটার হয়ে ওঠার স্বপ্ন। হ্যান্সি ক্রনিয়ের বোন হেস্টার পারসন্স বলেন, "আমার মনে পড়ে না ক্রিকেট ছাড়া কোনও কথা হ্যান্সি বলতো। সে ক্রিকেটের জন্যই বেঁচে ছিল যতদিন বেঁচে ছিল।" উনিশশো আটাশি সালের দিকে হ্যান্সি ক্রনিয়ে ও তার ভাই ফ্রান্স ক্রনিয়ে একই দলের হয়ে প্রথম খেলেন, সেই ম্যাচে ক্রনিয়েদের দল অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গর্ডন পারসন্স যিনি প্রতিপক্ষ দল ট্রান্সভালের হয়ে খেলেছিলেন, তার স্পষ্ট মনে আছে, হ্যান্সি ক্রনিয়ে এই ৫১ রানের মধ্যে ১৬ রান তুলেছিলেন। লুক আলফ্রেডের লেখনীতে উঠে এসেছে, হ্যান্সি ক্রনিয়ের শুরুর দিকের ক্রিকেট জীবনের এসব গল্প। তিনি লিখেছেন, প্রতিপক্ষ দলের সেই গর্ডন পারসন্স ছিলেন ইংলিশম্যান। শীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে আসতেন। হ্যান্সি ক্রনিয়ের শেখার ইচ্ছা ও অদম্য আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অধিনায়কত্ব পাওয়া সেই ক্রনিয়ে জাতীয় দলে থিতু হলেন কেপলার ওয়েসেলসের যুগে, ১৯৯২ বিশ্বকাপের দলেও জায়গা পেয়েছিলেন হ্যান্সি ক্রনিয়ে। কেপলার ওয়েসেলস ছিলেন ক্রিকেটারদের জন্য উদাহরণ, যিনি অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন। ওয়েসেলস ১৯৯৩-৯৪ সালের একটি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে হাতে চোট পান। তখন হ্যান্সি ক্রনিয়ে অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। হ্যান্সি মাঝপথে দায়িত্ব নেয়ার পর সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকা তার নেতৃত্বে টেস্ট জেতে। সেই টেস্ট ম্যাচ ছিল নাটকীয় এবং স্মরণীয়। বাংলাদেশের বর্তমান পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন নেটফ্লিক্সের সিরিজ ব্যাড স্পোর্টের 'ফলেন আইডল' পর্বে- "ক্রনিয়ে তখনও বলতে গেলে নবাগত। কিন্তু তার চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল দারুণ।" অ্যালান ডোনাল্ড বলেন, "হ্যান্সি ক্রনিয়ে মাথা ঠান্ডা রাখেন, যেটা ছিল সবচেয়ে জরুরি। ম্যাচের নানা উত্থান পতনে সে ঘাবড়াননি। আমি ব্যাখ্যা করতে পারবো না ক্রনিয়ে কতোটা শান্ত ছিল সেই জয়ের আগে।" কিন্তু তখনো স্থায়ীভাবে ক্রনিয়েকে অধিনায়কত্ব দেয়া হয়নি। সাঁইত্রিশ বছর বয়সেও ওয়েসেলস অধিনায়কত্ব চালিয়ে যান কিন্তু তেমন আর পারফর্ম করতে পারেননি। পাকিস্তানের মাটিতে ১৯৯৪ সালে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজে সবগুলো ম্যাচে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, তবে ক্রনিয়ে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। সিরিজের সব ম্যাচ হারের পরেও শেষ পর্যন্ত হ্যান্সি ক্রনিয়ে ছিলেন সর্বোচ্চ রানের মালিক। দলের হার ও বড় ক্রিকেটার হিসেবে ক্রনিয়ের আবির্ভাব, সব মিলিয়ে ওয়েসেলসের দিন ফুরিয়ে আসছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দলে। শেষ পর্যন্ত হ্যান্সি ক্রনিয়ের নাম ঘোষণা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে। একটা নতুন যুগের সুচনাও হলো বটে। বিবিসি প্যানোরোমার একটি প্রামাণ্যচিত্রে ২০০৮ সালে হ্যান্সি ক্রনিয়ের সাবেক হেডমাস্টার আন্দ্রে ভোলসটিড বলেছিলেন, "ক্রনিয়ে যে অধিনায়কত্বের জন্য যোগ্য একজন ছিলেন, সেটা নিয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি কখনো।" নেলসন ম্যান্ডেলা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, গোটা বিশ্বে নিপীড়িতদের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার গৃহযুদ্ধের সময়কার জোহানেসবার্গের একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার ররি স্টেইন বলেন, "ম্যান্ডেলার ওপর সবার আস্থা ছিল না। অনেকে তাকে সন্ত্রাসীও ভাবতো। কিন্তু ম্যান্ডেলা ছিলেন জাদুকর। তিনি জানতেন যে ক্রীড়া এমন সব জায়গায় পৌঁছাতে পারে যেখানে রাজনীতি হাত দিতে পারে না।" "তখন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গরা বলা শুরু করলো, তাকে একটা সুযোগ দেই, দেখি তিনি দেশটা কোথায় নিয়ে যান।" একই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন অ্যালান ডোনাল্ড, তিনি বলেন, "হ্যান্সি বলতেন আমরা সাউথ আফ্রিকাকে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল করবো, সেরা ওয়ানডে দল হিসেবে খেলবো, এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটিং জাতি হিসেবে তৈরি হবো।" স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিক দিয়ে ম্যান্ডেলা ও হ্যান্সি ছিলেন সমান্তরাল। বিবিসির ক্রিকেট লেখক ও বিশ্লেষক জনাথন অ্যাগনিউর মতে, "হ্যান্সি ক্রনিয়ে একটা মানদণ্ড তৈরি করে দিতেন।" উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে ইউনাইটেড ক্রিকেট বোর্ড অফ সাউথ আফ্রিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ড. আলী বাশের, তিনি বলেন, "তখন দেশটা একটা নতুন দিগন্তের দিকে আগাচ্ছিল, যেখানে সাদা ও কালো একই পথে হাঁটতো।" নেলসন ম্যান্ডেলা হ্যান্সি ক্রনিয়ের ওপর একটা নতুন দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন, ড. আলি বাকের বলেন, "হ্যান্সিকে নেলসন ম্যান্ডেলা একজন রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি নিজে শ্বেতাঙ্গ হয়ে অন্য শ্বেতাঙ্গদেরকে একটা বর্ণবাদহীন দক্ষিণ আফ্রিকা গড়ায় অনুপ্রাণিত করতে পারবেন।" উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের জানুয়ারি মাসে নেলসন ম্যান্ডেলা একটি ভাষণে বলেছিলেন, "স্পোর্টসের একটা দায়িত্ব আছে, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, দেশকে এক করার। আমি হ্যান্সি ক্রনিয়েকে আলাদাভাবে অভিনন্দন জানাবো, তিনি যেভাবে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" এই প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে সকল কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটাররা বড় হয়ে উঠছিলেন, তাদের আইডল ছিলেন এই হ্যান্সি ক্রনিয়ে। এটাকে একটা সাফল্য হিসেবেই দেখা যেত তখন। এই দেশে ৪০ লাখ শ্বেতাঙ্গ মানুষ একটা সময় ২ কোটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছিল। সেই সময় ততদিনে অতীত। উনিশশো একানব্বই থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের ম্যানেজার গুলাম রাজার কাছে ক্রনিয়ে এসে অনুযোগ করেন, এই দলে এখনও শুধুই শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার কেন? গুলাম বলেন, "ক্রনিয়ে চাইতেন নানা রঙের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা দল।" তখন মাখায়া এনটিনি, হার্শেল গিবসের মতো ক্রিকেটাররা দলে ঢুকতে শুরু করেন। কেপটাউনের মিশ্র বর্ণের ক্রিকেটার হার্শেল গিবস স্মৃতিচারণ করেন, "যখন আমাকে দলে নেয়া হয়েছিল, অনেকেই বলেন, তুমি কেবলই কোটাপূরণের জন্য দলে সুযোগ পেয়েছো। কিন্তু আমি জানতাম আমি পারফর্ম করবো এবং দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলব।" হ্যান্সির জন্য সবাই জীবন দিতে রাজি ছিলেন, বলতেন তখনকার সতীর্থরা। গিবস, ডোনাল্ড এই কথা বলেন। তাকে ক্রিকেট যারা অনুসরণ করতেন এবং হ্যান্সি ক্রনিয়ের সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন তারা জানতেন এই সময়ে হ্যান্সি ক্রনিয়ের জীবনে একটা পরিবর্তন এসেছিল। সহজ অর্থ পছন্দ করতেন হ্যান্সি ক্রনিয়ে হ্যান্সির বড় ভাই ফ্রান্স ক্রনিয়ে নেটফ্লিক্সের সিরিজ ব্যাড স্পোর্টের 'ফলেন আইডল' পর্বে বলেন, "অর্থ আয় করা একটা নেশা ছিল হ্যান্সির। যত সহজে আয় করা যায় ততই উপভোগ করতেন তিনি।" হ্যান্সি ক্রনিয়ে ছিলেন তখন বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার। একের পর এক বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ডে ছবি, টেলিভিশন থেকে পত্রিকার পাতা সবখানেই হ্যান্সি ক্রনিয়েকে পাওয়া যেত। দুই হাজার সালে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে একটা ঘটনা ঘটে। লম্বা সময়ের বৃষ্টির জন্য নিশ্চিত ড্র হতে যাওয়া টেস্ট জমিয়ে তুলতে হ্যান্সি ক্রনিয়ে সিদ্ধান্ত নেন এক ইনিংস ব্যাট করবেন না। তিনি ইংল্যান্ডের তৎকালীন অধিনায়ক নাসের হুসেইনকে এই কথা জানান। বিবিসির জনাথন অ্যাগনিউ বলেন, "তখন এটা ছিল দারুণ প্রশংসিত একটা সিদ্ধান্ত। জনপ্রিয় এক সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা কেউ জানতাম না এর পেছনে কী ছিল।" অ্যালান ডোনাল্ডও তখন নিশ্চিত ছিলেন না, কেন ক্রনিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। "খুব একটা বোধগম্য হচ্ছিল না। আমি তো শত সহস্র বছরেও ইংল্যান্ডকে কোনও ম্যাচ জয়ের সুযোগ দিতে রাজি নই।" দুইশ উনপঞ্চাশ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড জিতে গিয়েছিল সেদিন। তবে হ্যান্সি ক্রনিয়ে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিলেন প্রায় নিশ্চিত অমীমাংসিত একটি টেস্টে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন এক তথাকথিত সাহসী সিদ্ধান্তে। কিন্তু এই টেস্টের নাটকীয় ইনিংস ঘোষণার পেছনে হ্যান্সি ক্রনিয়ের চিন্তাই মূল ছিল না। যা অনেক পরে বেরিয়ে আসে। যা একটি দেশে অবিংসবাদিত নায়ককে মাটিতে নামিয়ে আনে। তার পতন ঘটায়। মার্লন অ্যারনস্ট্যাম ছিলেন একজন জুয়াড়ি। ক্রীড়াজগতে যাদের বুকমেকার বলা হয়। তিনি সেই ম্যাচের মধ্যে হ্যান্সি ক্রনিয়েকে ফোন দিলে হ্যান্সি ক্রনিয়ে তাকে দেখা করতে বলেন। হ্যান্সি ক্রনিয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হন। সেই ম্যাচে আড়াই হাজার ডলার জিতেছিলেন মার্লন অ্যারনস্ট্যাম। রেকর্ড অনুযায়ী সেটা ছিল মাত্র শুরু। পতন ও মৃত্যু এপ্রিল ২০০০, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ চলার সময়ে দিল্লি পুলিশ একটি কল রেকর্ড প্রকাশ করে। যেখানে হ্যান্সি ক্রনিয়ের সাথে ভারতের জুয়াড়ি সিন্ডিকেটের এক প্রতিনিধির কথোপকথন শোনা যায় বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সেখানে শোনা যাচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার অফ স্পিনার ডেরেক ক্রুকস এই সিরিজের কোনও একটি ম্যাচে শুরুতেই বল করবেন এবং হার্শেল গিবস ২০ রানের বেশি করবেন না বলে সম্মত হন ফোনের লাইনে থাকা দুই ব্যক্তি। প্রথম বোলিং পরিবর্তনের পর ক্রনিয়ে বল হাতে নেন, তিনি ৬৯ রান দেন সেই ম্যাচে পুরো দশ ওভার বল করে। তৃতীয় ম্যাচে ফরিদাবাদে হার্শেল গিবস ১৯ রানে আউট হন এবং শেষ ম্যাচে ডেরেক ক্রুকস বল হাতে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন। ছয় ওভারে ৫৩ রান দিয়েছিলেন ক্রুকস এবং তাকে যখন বল করতে বলা হয় তখন তিনি হতভম্ব হয়ে যান। দিল্লির পুলিশ নিশ্চিত করে তখন, গিবস, নিকি বোয়ে ও পিটার স্ট্রাইডমকেও সন্দেহ করা হচ্ছিল। একটি প্রেস কনফারেন্স ডেকে তিনি বলেছিলেন, "১৯৯২ সাল থেকে আমি এই দলে খেলছি এবং এখানে জয়ের জন্য আমি শতভাগ দিচ্ছি।" ইউনাইটেড ক্রিকেট বোর্ড অফ সাউথ আফ্রিকার তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলি বাকের প্রথমে অধিনায়কের পক্ষেই ছিলেন।
কিন্তু পরে হ্যান্সি ক্রনিয়ে একসময় নিজেই ড. আলী বাশেরের কাছে স্বীকার করেন, তিনি সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছিলেন তা 'পুরোপুরি সত্য নয়'। এই ঘটনার পর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ক্রনিয়ের ওপর। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক ক্রিকেটার সামনে আসেন এবং হ্যান্সি ক্রনিয়ে কবে কোন ম্যাচের জন্য তাদের কতো অর্থ প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা স্বীকার করতে থাকেন। কেপটাউনে আদালত বসে, যেখানে ২০০০ সালের ২৩শে জুন হ্যান্সি ক্রনিয়ে স্বীকার করেন তিনি প্রায় ১ লাখ ডলার নিয়েছিলেন বিভিন্ন সময়ে ম্যাচ পাতানোর জন্য। পরবর্তীতে বিভিন্ন সতীর্থের বয়ানে উঠে আসে ক্রনিয়ে তাদের মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের মতো প্রস্তাব দিয়েছিলেন খারাপ খেলার জন্য। হ্যান্সি ক্রনিয়েকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড ও সরকার নিজেদের প্রতারিত বলে মনে করে তখন। অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি। অনেকে বিশ্বাস করতে চাননি তখন। ক্রনিয়ের ক্রিকেট না খেলা, ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা, ক্রিকেট ভক্তদের অনুসারীদের প্রতারিত অনুভূত হওয়া সবই ফিকে হয়ে যায় ২ বছর পরে। দুই হাজার দুই সালের পয়লা জুন খবর আসে, সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কেপটাউন থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল যেই বিমানে ছিলেন মাত্র তিনজন যাত্রী। মৃত্যুর সময় হ্যান্সি ক্রনিয়ের বয়স ছিল ৩২ বছর। ঠিক আজ থেকে কুড়ি বছর আগে। ক্রিকেট লেখক জেমস বোরোডেল হ্যান্সি ক্রনিয়েকে নিয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট ম্যাগাজিন দ্য ক্রিকেট মান্থলিতে লিখেছেন, "কোনও ক্রিকেটারই ক্রনিয়ের মতো করে ক্রিকেট পুরাণের অংশ হতে পারেননি, পারবেনও না। ক্রনিয়ের মৃত্যু যেভাবে হয়েছে তা হয়তো তাকে মুক্তিই দিয়েছে।"Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
politics
» হ্যান্সি ক্রনিয়ে: প্রয়াত দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক - নায়ক থেকে যার পতন হয়েছিল
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: