সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের কতদূর দেখা যায়
১৬০৮ সাল। ডাচ চশমা প্রস্তুতকারক হ্যান্স লিপারশে এক অদ্ভুত জিনিস বানালেন—পৃথিবীর প্রথম টেলিস্কোপ। ছোট্ট কাচের লেন্স দিয়ে তৈরি সেই যন্ত্র বস্তুগুলোকে মাত্র তিন গুণ বড় করে দেখাতে পারত। সাধারণ সেই উদ্ভাবনা থেকে শুরু হলো এমন এক যাত্রা, যা আমাদের মহাবিশ্ব দেখার ক্ষমতাকে আমূল বদলে দিল। তবে সব টেলিস্কোপের ক্ষমতা এক নয়। কিছু টেলিস্কোপ এতটাই শক্তিশালী যে সেগুলো দিয়ে আমরা দূরের নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি দেখতে পাই। এমনকি ব্ল্যাকহোল বা আইনস্টাইন রিংয়ের মতো মহাজাগতিক ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ কোনটি? সেই টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাকাশের কতদূর পর্যন্ত দেখা যায়? বর্তমান সময়ে যারা মহাকাশ সম্পর্কিত খবরাখবর রাখেন, তাদের জন্য উত্তরটা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ হলো জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়। মানুষের সাধারণত অবলোহিত বা ইনফ্রারেড আলো চোখে দেখতে পায় না। কিন্তু তাপ হিসেবে তা অনুভব করতে পারে। এমন আলো শনাক্ত করার জন্যই এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বানানো হয়েছে। এর পূর্বসূরি হলো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। সেটি তৈরি হয়েছিল দৃশ্যমান আলো এবং অতিবেগুনি রশ্মি শনাক্ত করার জন্য। এ ধরনের আলো সাধারণত নতুন নক্ষত্র থেকে নির্গত হয়। মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। তখন সবকিছু ছিল উষ্ণ কণার স্যুপের মতো। প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন একসঙ্গে উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। সমস্যা হলো, মহাবিশ্বের অনেক বস্তুরই দৃশ্যমান আলো এত দূর্বল যে খালি চোখে তা দেখা যায় না। কিন্তু ইনফ্রারেড আলোর তরঙ্গ দীর্ঘ বলে বহুদূর থেকেও একে সহজে শনাক্ত করা যায়। এই দীর্ঘ তরঙ্গের আরও একটি বড় সুবিধা হলো, এটি মহাকাশের ঘন ধুলোর মেঘ ভেদ করে চলে যেতে পারে। এ কারণেই মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর দিকের দৃশ্য দেখতে আগ্রহী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি চিলিতে সম্প্রতি চালু হওয়া শক্তিশালী ভেরা সি. রুবিন টেলিস্কোপও এত দূরে দেখতে পারে না। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাজাগতিক ধুলার কারণে বাঁধা পায়। মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। তখন সবকিছু ছিল উষ্ণ কণার স্যুপের মতো। প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন একসঙ্গে উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব প্রসারিত ও শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সিগুলো তৈরি হতে শুরু করে। আজ আমরা যে পুরোনো নক্ষত্র দেখতে পাই, সেগুলোর বয়স প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ মহাবিস্ফোরণের মাত্র একশ মিলিয়ন বছর পরেই এসব নক্ষত্রের জন্ম হয়। ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক পিটার জ্যাকবসেন বলেন, ‘জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিস্ফোরণের ৯৮ শতাংশ পেছনে দেখতে সক্ষম হয়েছে। এটা আমাদের আশা ও প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।’ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এত দূর থেকে দেখতে পারে মূলত্র এর বিশাল প্রাইমারি মিররের কারণে। ব্যাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ক্যারল ক্রিশ্চিয়ান জানিয়েছেন, জেমস ওয়েবের আয়না ৬.৫ মিটার চওড়া। এটি হাবলের ২.৪ মিটার ব্যাসের আয়নার চেয়ে অনেক বড়। আয়না বড় হওয়ার সুবিধা হলো, এটি অনেক বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারে। তবে দুটি টেলিস্কোপই কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে দেখতে পারে, কারণ এরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেক বাইরে রয়েছে। পৃথিবীর ভেতর থেকে দেখা টেলিস্কোপ সবসময়ই সমস্যায় পড়ে। আলোর দূষণ, বায়ুর অস্থিরতা বা টার্বুলেন্সের কারণে ছবি ঝাপসা হয়ে যায়। কিন্তু মহাশূন্যে এসব সমস্যা নেই। জেমস ওয়েবের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর ইনফ্রারেড ডিটেক্টর। এর সাহায্যে হাবলের পক্ষে যা দেখা সম্ভব নয়, তাও দেখতে পারে জেমস ওয়েব। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট নামে একটি বিশেষ জায়গায় রয়েছে। সেখানে মহাকর্ষীয় ভারসাম্য এমন যে স্যাটেলাইটগুলো স্থিতিশীলভাবে ঘুরতে পারে। সূর্য থেকে বৃহস্পতিতে আলো পৌঁছাতে ৪৩.২ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু পৃথিবীতে লাগে মাত্র ৮ মিনিট। মহাবিশ্বের দূরতম প্রান্তের দূরত্ব আরও অনেক বেশি। জেমস ওয়েব ঠিক কতদূর দেখতে পারে আমরা যখন রাতের আকাশের দিকে তাকাই, তখন আসলে সময়ের পেছনে তাকানো হয়। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। মানে, দূর মহাকাশ থেকে যে আলো আমাদের কাছে পৌঁছায়, তা বহু বছরের পুরোনো। যেমন, আমাদের সূর্য থেকে বৃহস্পতিতে আলো পৌঁছাতে ৪৩.২ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু পৃথিবীতে লাগে মাত্র ৮ মিনিট। মহাবিশ্বের দূরতম প্রান্তের দূরত্ব আরও অনেক বেশি। এ কারণে একটা টেলিস্কোপ ঠিক কত দূর থেকে দেখতে পারে, তা সহজভাবে বলা যায় না। এই জটিলতা এড়াতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রেডশিফ্ট নামে একটি কৌশল ব্যবহার করেন। ধরুন, একটি অ্যাম্বুলেন্স আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর সাইরেনের শব্দটা কেমন পাল্টে যায় না? আলোর ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটে। মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। তাই দূরের গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। আর এই দূরে সরে যাওয়ার কারণে তাদের থেকে আসা আলোর তরঙ্গ দীর্ঘ এবং আরও বেশি লাল হয়ে যায়। আলো যত বেশি পথ পাড়ি দেয়, তার রেডশিফ্টও তত বেশি হয়। এই রেডশিফ্ট মেপেই বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন বস্তুটি কত দূরে বা কত পুরোনো। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রেডশিফ্ট রেকর্ড করা গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে একটি হলো JADES-GS-z14-0। এর রেডশিফ্ট পরিমাপ করে দেখা গেছে, এটি মহাবিস্ফোরণের প্রায় ২৯০ মিলিয়ন বছর পরে গঠিত হয়েছিল। আরেকটি সম্ভাব্য রেকর্ডধারী গ্যালাক্সির নাম MoM-z14। এটি মহাবিস্ফোরণের মাত্র ২৮০ মিলিয়ন বছর পরের বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এটি এখনো কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, জেমস ওয়েব এমন কিছু বিশাল ও প্রাচীন গ্যালাক্সি খুঁজে পেয়েছে, যেগুলোর বয়স মহাবিশ্বের বর্তমান মডেলকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সেই তুলনায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সর্বোচ্চ ১৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের মহাবিশ্ব দেখতে পেরেছিল। আর জেমস ওয়েব এখন তার থেকেও অনেক গভীরে তাকাতে সক্ষম। তবে এই প্রতিযোগিতা এখানেই শেষ নয়। চীন তৈরি করছে তাদের চায়না স্পেস স্টেশন টেলিস্কোপ। এটি এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যার মাধ্যমে জেমস ওয়েবের চেয়েও বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ধরা সম্ভব হবে। ফলে মহাবিশ্ব থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও স্পেস ডট কমSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: