‘হিন্দু ধর্মেরই অঙ্গ ১৯৬৬ সালে ইসকনের প্রতিষ্ঠা যেসব কারণে আলোচিত
ইসকনের জন্ম দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে জন্ম নেওয়া অভয়াচরন দে পরবর্তী জীবনে অভয়া চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী 'প্রভুপাদ' বা এসি ভক্তিবেদান্ত ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা। তাকেই ধর্মগুরু বলে মানেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইসকনের লাখো ভক্ত। কলকাতায় ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র রাধারমণ দাস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছেন। অনেক বেশি বয়সে তিনি এই কলকাতাতেই তার গুরু মহারাজের দেখা পান। তিনিই এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকে আদেশ দেন যে পশ্চিমী দেশগুলাতে গিয়ে হিন্দু ধর্মের প্রচার চালাতে। তার যখন প্রায় ৭০ বছর বয়স, সেই সময়ে তিনি একটি মালবাহী জাহাজে চেপে কলকাতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পৌঁছান। সেটা ছিল ১৯৬৫ সালের ১৬ই জুলাই।” ইসকনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার সময়ে এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামীর সঙ্গে মাত্র কয়েক ট্রাঙ্ক ভর্তি বই এবং মাত্র সাত মার্কিন ডলার ছিল। ইসকনের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৬ সালে আর এসি ভক্তিবেদান্তের মৃত্যু হয় ১৯৭৭ সালে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিশ্বের বহু দেশে গিয়েছেন, ৪০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বর্তমানে পাঁচশোটিরও বেশি বৃহৎ কেন্দ্র, এর বাইরেও বহু মন্দির, স্কুল, কয়েক হাজার স্থানীয় গোষ্ঠী, প্রায় একশো নিরামিষ রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে থাকে ইসকন। এছাড়াও নানা সমাজকল্যামূলক কাজ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বিলি করে থাকে তারা। এই সংঘের প্রধান কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার মায়াপুরে। সংঘটি দাবি করে এই মায়াপুরেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বৈষ্ণব সন্ন্যাসী চৈতন্যদেব। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার ইসকন দাবি করে যে তাদের আধ্যাত্মিক মতাদর্শের ভিত্তি হলো সংস্কৃতে রচিত ভগবৎ গীতা এবং ভগবৎ পুরাণ। রাধারমণ দাস বলছিলেন, “আমরা গৌড়ীয় ব্রহ্ম মাধব সম্প্রদায়। ইসকনের ভাবাদর্শ হলো এই বাংলার যে বৈষ্ণব মতবাদ, অর্থাৎ গৌড় অঞ্চলের বৈষ্ণব ধারা, সেটাই আমরা বিশ্বে ছড়িয়ে দিই।” ইসকন সদস্যরা নিজস্ব মন্দিরগুলিতে পুজোর বাইরেও নানাভাবে নিজেদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন। রাস্তায় খোল-করতাল নিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পাঠ করে নেচে অথবা সেমিনার সহ নানাভাবে তারা ইসকনের মতবাদ প্রচার করেন বিশ্বজুড়ে। ‘হিন্দু ধর্মেরই অঙ্গ ইসকন’ ইসকন যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার করে তা আদৌ হিন্দু ধর্ম কি না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। পশ্চিমবঙ্গ বৈদিক অ্যাকাডেমির প্রধান নবকুমার ভট্টাচার্য ব্যাখ্যা করছিলেন যে হিন্দু ধর্মে যে পাঁচটি সম্প্রদায় রয়েছে, তারই অন্যতম বৈষ্ণব সম্প্রদায়। অন্য সম্প্রদায়গুলি হলো শৈব, শাক্ত, সৌর, এবং গাণপত্য। তার কথায়, “হিন্দু ধর্ম হচ্ছে দর্শনের সমন্বয়ে একটা পরম্পরা। একেকটি সম্প্রদায়ের একেকটি দর্শন রয়েছে। এই যে শাক্ত সম্প্রদায়ের একেবারে বিপরীতে রয়েছে বৈষ্ণব সম্প্রদায়। আবার সবাই যে বেদের পক্ষে তা নয়। এই দর্শনে চার্বাকের মতো স্বীকৃত দর্শন আছে, যেখানে নাস্তিকতার কথা বলা হয়েছে।” “মূল হচ্ছে ব্রহ্মের ভাবনা। কেউ সাকার, কেউ নিরাকার-ভাবে ব্রহ্মের ভাবনায় যুক্ত থাকেন। ইসকন যে ভাবাদর্শ মেনে চলে, সেটা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের দর্শন, তার সঙ্গে সময়ের সঙ্গে কিছু নতুন ভাবনা যুক্ত হয়েছে। তাই ইসকনের ভাবধারা নিশ্চিতভাবেই হিন্দু ধর্মেরই অঙ্গ। তাদের সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে সবসময়ে। যারা হিন্দু ধর্ম বিরোধী, তারাই এসব প্রশ্ন তুলে থাকে,” বলছিলেন হিন্দু ধর্মের পণ্ডিত নবকুমার ভট্টাচার্য। ইসকনকে নিয়ে যেসব বিতর্ক পশ্চিমা দেশসহ বিশ্বের নানাদেশে ইসকনের লাখো ভক্ত ছড়িয়ে আছে। এদের মূল নাম ছাড়াও ইসকনের ভক্ত হিসাবে পৃথক একটি নাম দেওয়া হয়ে থাকে। ইসকনের বিখ্যাত ভক্তদের মধ্যে অনেকেই বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে ব্রহ্মচারীর জীবন বেছে নিয়েছেন। ইসকনের বিখ্যাত ও ‘কোটিপতি’ সদস্যদের মধ্যে আছেন ফোর্ড মোটর্সের মালিক হেনরি ফোর্ডের প্রপৌত্র অ্যালফ্রেড ফোর্ড, দ্য বিটলসের অন্যতম মুখ জর্জ হ্যারিসন, কবি অ্যালেন গিনসবার্গ এবং অ্যাপেলের প্রাক্তন সিইও স্টিভ জবস। বিখ্যাত মানুষদের সমাবেশ যেমন হয়েছে ইসকনে, তেমনই নানা সময়ে বিতর্কেও জড়িয়েছে ইসকন। যেমন সংঘ-প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিক থেকেই সিঙ্গাপুরে ইসকন নিষিদ্ধ থেকেছে দীর্ঘকাল। সংঘটির রেজিস্ট্রেশন আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে পরে অন্য নাম নিয়ে সেদেশে শুরু হয় ইসকনের কর্মকাণ্ড, এখন সেখানে একটি মন্দির আছে এবং ইসকনের ভক্তরা খোলাখুলিই কাজ করেন। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এখনও ইসকন তার কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারে না। চিনেও তাদের গোপনে কাজ করতে হয় বলে ইসকনের ওয়েবসাইটে একটি পুরণো নিবন্ধে লেখা হয়েছে। তবে পাকিস্তানে ইসকনের অন্তত ১২ টি মন্দির রয়েছে বলে সংঘটি দাবি করে। রাশিয়া সহ অনেক দেশে ইসকনের ধর্মীয় প্রচারণার পদ্ধতি নিয়ে মামলা হয়েছে নানা সময়ে। এই বিতর্কিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে প্রশ্ন করতেই কলকাতায় ইসকন কেন্দ্রের মুখপাত্র রাধারমণ দাস ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বলেন অন্য সময়ে কথা বলবেন। তবে হিন্দুত্ববাদের গবেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলছিলেন, “ইসকন নানা দেশে বিতর্কে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসবগুলোর কারণ একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম। ইসকনের বিভিন্ন সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠেছে যে তারা আর্যতত্ত্বে বিশ্বাসী, বর্ণবাদী ইত্যাদি। শিশু হেনস্থার অভিযোগ এসেছে। “বাংলাদেশে ইসকনের কার্যকলাপ নিয়ে বলা হচ্ছে যে তারা উগ্র এবং জঙ্গি ধর্মীয় সংগঠন। এটা বলা একেবারেই উচিত নয়। তারা হয়তো ধর্মীয় রক্ষণশীল সংগঠন, কিন্তু রক্ষণশীলতার প্রচার বিভিন্ন ধর্মের অনেক সংগঠনই করে থাকে,” বলছিলেন স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য। তার কথায়, “বাংলাদেশে ইসকনের বিরুদ্ধে যে মূল অভিযোগটা নানা সময়ে ওঠে, তা হলো ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যাপক ভক্ত সংখ্যা থাকায় তারা সেটাকে কাজে লাগিয়ে নানা সময়ে বাংলাদেশের নানা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।” “সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসকনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু সন্ন্যাসীর মুখে ভারতে মূলত বিজেপি নেতা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে প্রচারিত 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান শুনতে পাওয়া এই ভারত যোগের অভিযোগ দৃঢ় করেছে। এখানে ইসকনের সাথে ভারতের সম্পর্কের ব্যাপারটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ রাজনীতির ভারত-বিরোধী প্রবণতার প্রভাবে,” বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য। বাংলাদেশে ইসকন কী কাজ করে? সাম্প্রতিককালে ইসকনের বেশ কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশে নানা আলোচনা তৈরি হয়। তাদেরকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে। সেদিন রাতে এক বিবৃতিতে ইসকন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সনাতনী সংগঠন হিসেবে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যেমন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্যদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করেন তারা। ইসকন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সেবামূলক কাজ করি”। ইসকনকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মি. দাস বলেন, “সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেটি তারাই দেখবেন। ওনাদের কাছে সব তথ্য আছে সেটি তারা দেখবে”। গত মাসের শেষের দিকে আট দফা দাবিতে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে একটি সমাবেশ করেছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। সেখানে তারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের বিচার, জড়িতদের শাস্তি দেয়া, ক্ষতিপূরণ দেয়া, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার মতো দাবি জানান। ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মীয় আদর্শ ও সনাতনী মূল্যবোধকে ধারণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় চর্চা এবং মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা সর্বদা শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পক্ষে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও একই আদর্শে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ”।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: