তুরস্কে অটোমান সাম্রাজ্য সুলতান সুলেমান:১৫২০ সালে নিজের ছেলের মৃত্যুর আদেশ দিয়েছিলেন
তুরস্কে অটোমান সাম্রাজ্য যখন প্রতিষ্ঠিত এবং ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে তখন ষোড়শ শতাব্দীতে দশম সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন সুলতান সুলেমান খান। ১৪৯৪ সালের ৬ই নভেম্বর তিনি জন্ম নেন তুরস্কে। তার পিতা সেলিম খান (প্রথম) মারা গেলে তিনি ১৫২০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর বিশাল রাজ্যের দায়িত্ব নেন। সুলতান সুলেমানের শাসন আমলে অটোমান সাম্রাজ্যের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির এতটা বিস্তার লাভ করে, যার ফলে এশিয়া ছাড়া ইউরোপ, আফ্রিকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলছিলেন, রাজ কাজ পরিচালনা করার জন্য যে প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা দরকার সেটা সুলতান সুলেমানের মধ্যে ছিল। এই জন্য পশ্চিমারা তাকে 'ম্যাগনিফিসেন্ট বা মহামতি' বলতেন। আবার তুরস্কে তিনি 'কানুনি সুলতান' নামে পরিচিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুলতানা সুকন্যা বাশার বলছিলেন, তিনি অসম্ভব দৃঢ়চেতা একজন মানুষ ছিলেন যার নমুনা দেখা গেছে বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁর ভূমিকার সময়। মিজ বাশার বলছিলেন, "অটোমানদের সাথে যখন পার্শ্ববর্তী দেশের যুদ্ধ হয়েছে, তখন তিনি তাঁর বাচনভঙ্গি, বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মনোবল দৃঢ়চিত্ত করেছেন"। "যারা ইতিহাস গবেষক আমরা একজন শাসককে বিচার করি তার শাসন প্রক্রিয়া এবং কতটা মনোবল নিয়ে তিনি শত্রুদের মোকাবেলা করতে পেরেছেন, সেটা শক্তি দিয়ে হোক বা যুক্তি দিয়ে।" "এই দুই দিক দিয়েই সুলতান সুলেমান তাঁর বংশের অন্যান্য শাসকদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ছিলেন," বলছিলেন তিনি। সুলতান সুলেমানের সেনাবাহিনী রোমান সাম্রাজ্য এবং হাঙ্গেরির পতন ঘটায়। পারস্যের সাফাভিদ সুলতান, প্রথম তাহমাসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং মধ্য প্রাচ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করে নেন। তিনি উত্তর আফ্রিকার আলেজেরিয়া সহ বড় বড় অঞ্চলগুলো রোমান সাম্রাজ্যের হাত থেকে দখল করে নেয়। অটোমান নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর পর্যন্ত তাদের আধিপত্য বজায় রাখে। অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলছিলেন, "ইউরোপে সেই সময় তার সমকক্ষ কোন শাসক ছিল না। আইন প্রণয়ন, শাসন বিধি প্রণয়ন , সামরিক সাফল্য, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সব মিলিয়ে তিনি ঐ সময়ের রাজন্যবর্গের মধ্যে ছিলেন অনন্য।" প্রশাসনিক কাজ 'উসমানী সালতানাত: রাজনীতি সমাজ সংস্কৃতি' বই এর লেখক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলছিলেন, "তিনি যে শুধু সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন সেটাই না, সাম্রাজ্যের সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক প্রণালী তৈরি করেছিলেন তিনি। পরবর্তী তাঁর উত্তরাধিকারীরা সেটা অনুসরণ করেছেন এমনকি আধুনিক তুরস্কে তার কিছু অনুসরণ করা হয়।" "এই কারণে সুলেমান আল কানুনি বা আইন প্রণেতা হিসেবে তাকে ডাকা হয়"। বিশাল এলাকা তিনি কেন্দ্র থেকে অর্থাৎ আজকের ইস্তানবুল থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রেমিক কবি সুলেমান বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উন্নয়ন ঘটেছিল তাঁর সময়। তাঁর সময়কে 'স্বর্ণযুগ' হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন ইতিহাসবিদরা। তিনি নিজে কবিতা লিখতেন। 'মুহিব্বি' নামে তিনি অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। মুহিব্বি অর্থ প্রেমিক। তিনি প্রেম-বিষয়ক কাব্য লিখতেন। এছাড়া তার সময়ে বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য নির্মিত হয়েছে। নামকরা স্থপতি সিনান মিনার পাশা ছিলেন তাঁর সময়ে। যিনি সুলেমানী মসজিদ যেটা 'ব্লু মস্ক' নামে পরিচিত সেটা নির্মাণ করেন। এছাড়া তোপকাপি প্রাসাদে সিনান মিনার পাশার কাজ রয়েছে। এই রকম নানা বিষয়ের মধ্যে তার প্রচণ্ড সাংস্কৃতিক মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিতর্ক সুলেমান তাঁর শাসনকালে যে বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন সেটা হল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাঁর কাছের মানুষদের মৃত্যুর আদেশ দেন। এর মধ্যে অনেকের কাছে মর্মান্তিক মনে হয়েছে তাঁর ছেলে মুস্তাফার মৃত্যুর আদেশ। এবং তারপরে তাঁর বাল্যবন্ধু এবং সাম্রাজ্যের উজির ইব্রাহীম পাশার মৃত্যু। এর পর তাঁর ছেলে সেলিম (২য়) কে আদেশ দেন আরেক ছেলে বায়েজিদের মৃত্যু কার্যকর করার জন্য। যার ফলে বায়েজিদকে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাঁর চার সন্তানের সাথে। যেখানে সুলতান সুলেমানকে দেখা যায় সন্তানদের অসম্ভব ভালোবাসতে এবং বিপদে একে অপরের পাশে থাকার উপদেশ দিতে, তিনি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মানুষের মনে। অনেকেই তাকে "ক্ষমতা লিপ্সু" মনে করেছেন। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুলতানা সুকন্যা বাশার দুইটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলছিলেন, "আমরা যেকোন সম্রাটের জীবন নিয়ে যখন গবেষণা করি তখন দেখি তারা তাদের জীবনকালে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে চান না। স্বাভাবিকভাবে একজন যখন ক্ষমতা উপভোগ করা শুরু করেন, তখন তিনি চান তার জীবদ্দশায় সেই ক্ষমতা উপভোগ করবেন।" "একজন সুলতান যখন দেখবেন তার পুত্রের জনপ্রিয়তা তার চেয়ে বেশি এবং তার কানে যদি খবর আসতে থাকে সেই পুত্র বিদ্রোহ করতে পারেন, তাহলে তখন সেই ব্যক্তি কিন্তু বাবা হিসেবে সিদ্ধান্ত নেন না।" "তিনি সাম্রাজ্যের জন্য তখন একজন সুলতান হিসেবে সিদ্ধান্ত নেন। সেটিকে তিনি দেশদ্রোহীতার শামিল মনে করেছেন। যেটা হয়েছে মুস্তাফার ক্ষেত্রে," বলছিলেন তিনি। তবে অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলছিলেন, "উত্তরাধিকার নিয়ে যাতে কোন সমস্যা তৈরি না হয় সেজন্য সুলতান সুলেমানের আগেই একটি আইন তৈরি করা ছিল। সাম্রাজ্য যাতে হুমকির মুখে না পড়ে বা স্থায়িত্ব কম না হয় সেকারণে সেই আইনটি করা হয়েছিল। 'ভ্রাতৃহত্যা আইন' নামে একটি বিধিবদ্ধ আইন করা হয়েছিল। এ আইনে শুধু 'প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইদের ও সন্তানদের হত্যা করা যেত'। "এই আইনটি একটি অমানবিক আইন ছিল। যেটার চর্চা সুলতান সুলেমান নিজেও করেছেন তার সাম্রাজ্যকে এবং তার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য। যেটা ইতিহাসে আছে এবং তার চরিত্রে এটা একটা অন্ধকার দিক। যেটা তার ব্যক্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক," বলছিলেন তিনি। হেরেম ইস্তানবুলের তোপকাপি প্রাসাদে রয়েছে শত শত ঘর যেটা দাস-দাসীদের জন্য। হেরেম সম্পর্কে রাজকীয়ভাবে জানা যায় না কারণ তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হত না। তাই তা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য আছে বলে মনে করেন গবেষকরা। তবে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দাসীকে মুক্ত করে স্বাধীন নারী হিসেবে বিয়ে করার নিয়ম ছিল, যেটা সুলেয়মানের হেরেমে করা করা হয়েছে। সুলেমান নিজে একজন দাসীকে মুক্ত করে বিয়ে করেন যার নাম ছিল হুররাম। মি. খান বলছিলেন, "রাজনীতিতে হুররাম এবং সুলেমানের মায়ের ভূমিকা ছিল। এবং সুলেমান নিজেই সেটা করে দিয়েছিলেন।। তবে ইউরোপীয় গবেষণায় হেরেম সম্পর্কে চূড়ান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখতে পাওয়া যায়।" মৃত্যু তিনি দীর্ঘ ৪৬ বছর রাজত্ব করেন। ১৫৬৬ সালের হাঙ্গেরি অভিযানের নেতৃত্ব দেয়ার উদ্দেশ্যে কনস্টান্টিনোপল হতে রওয়ানা হয়েছিলেন, তিনি হাঙ্গেরিতে যিগেটভারের যুদ্ধে অটোম্যান বিজয়ের পূর্বেই মারা যান ৬ই সেপ্টেম্বর মারা যান। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, সেনাবাহিনীর মনোবল দুর্বল হয়ে যাবে একারণে তথ্য গোপন রাখা হয়। তাঁর মরদেহের একটি অংশ হাঙ্গেরি বিজয়ের পর সেখানে সমাহিত করা হয় এমন একটি বিতর্ক আজো চালু রয়েছে। তবে তুরস্কে সোলাইমানী মসজিদে তাঁর কবর রয়েছে। সুলতান সুলেমান মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে দ্বিতীয় সেলিম অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
Education
»
English News
»
others
»
world
» তুরস্কে অটোমান সাম্রাজ্য সুলতান সুলেমান:১৫২০ সালে নিজের ছেলের মৃত্যুর আদেশ দিয়েছিলেন
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: