বাবা-মার বিচ্ছেদের পর কেমন কাটে সন্তানদের জীবন? বাংলাদেশে একটি বড় অংশের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনার কোন তথ্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে ভেঙে যাওয়া এইসব পরিবারগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না ।
তবে সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয় বলে মনে করেন গবেষকরা। পরিসংখ্যান খাকুক আর রা থাকুক, এটা বলা যায় যে, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে তার সব চেয়ে বড় প্রভাব গিয়ে পরে তাদের সন্তানদের ওপর। ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর সন্তানদের বেড়ে উঠতে হয় অনেকটাই একা একা। কুড়ি বছরের অপরাজিতা জানান, “আমার বাবা যখন চলে যায় আমি সারারাত কাদতাম। অনেকসময় অজান্তেই ঘুমের মাঝে হাটতাম। ধীরে ধীরে লেখাপড়ার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছিলাম”। অপরাজিতা জানান তার বাবার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে প্রায়ই তার মাকে মারধোর করতেন তিনি। তার মায়ের কোন রকম কর্মসংস্থান না থাকায় তখন বিপদে পড়তে হয় দুজনের এই পরিবারটাকে। অপরাজিতা জানান, কোনও রাতেই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম না। কারণ আমার মনে হত আমি এখনই ঘুমিয়ে পড়লে আমার মাকে হয়তো মারবে”। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এক দুপুরবেলা কথা হচ্ছিল নুহার সাথে। সতেরো বছর বয়সী নুহা এ লেভেল পড়ছেন। তার মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বাবা-ময়ের বিচ্ছেদের পরে শুরুর দিকে বাবার কাছে থাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার মায়ের প্রতি একধরনের ব্রীতশ্রদ্ধ মন নিয়ে বড় হতে হয় তাকে। “আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন আমার মা চলে যায়। ছোটবেলা থেকে আমি বড় হই এটা বিশ্বাস করে যে আমার মা আমাকে ফেলে চলে গেছে। আমার দাদা বাবা সবাই আমাকে এই বিশ্বাস নিয়েই বড় করেন”। পরে বাবার আর্থিক সংকট দেখা দিলে মায়ের কাছে চলে আসতে বাধ্য হন। তবে তার জীবন যে খুব একটা বদলেছে তা নয়। “কিছুদিন আগে আব্বুর চাকরি চলে গেলে দেড়বছর আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আম্মুর সাথে যোগাযোগ করি"। নুহা নিজের কষ্টের কথা ভুলতে নিজের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করতেন। নিজের হাত-পা পর্যন্ত কাটতেন তিনি। “ স্কুলে সবাই আমাকে অন্যরকম করে দেখতো। কেউ মিশতে চাইতো না। আম্মুর কাছে চলে আমার পর দেড়বছর আমরা খালার বাসায় ছিলাম। কিন্তু আমার ও লেভেল পরীক্ষার সময় একরাতে সেই আশ্রয়ও হারিয়ে ফেলতে হয়”। কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে নুহার। সে এখন চায় অন্য কোনও দেশে চলে যেতে। পরিচিত সবার চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে চান নিজেকে। নুহা বা অপরাজিতা নিজেদের জীবন নিয়ে কিছুটা হলেও স্বপ্ন দেখতে পারছেন। কিন্তু সেই সাহস নেই মোহাম্মদ স্বাধীন মিয়ার। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও সে হয়েছে জুতার দোকানের কর্মচারী। সে জানায় এগারো বছর আগে তাদের বাবা তাকে সহ তিন বোনকে ফেলে রেখে চলে যায়। মা বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে বড় করেছেন। অনেক কষ্টে বোনদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। এরকমই আরেকজন নিলুফার বেগম। বাবার অবর্তমানে যার মা বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে বড় করেছেন তাকে। একসময় পালিয়ে বিয়ে করলেও এখন পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে ভিক্ষা করে দিন চলে নিলুফারের। সামাজিক ও মানসিক প্রভাব বিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে একধরনের অনাগ্রহ কাজ করে অপরাজিতা কিংবা নুহার মাঝে। তারা মনে করেন ‘ব্রকেন ফ্যামিলির ছেলে-মেয়ে’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সমাজ তাদেরকে একদম আলাদা করে রেখেছে। সমাজে সহজ ভাবে নেয়া হয় না তাদের। ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন। গবেষণায় তারা দেখেছেন এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়। তারা সবসময় একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। “ এই শিশুদের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা দেখা যায় তারা স্কুলে যায় না। ফলে শিশু অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এর ওপর তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বা সামাজিকীকরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে থাকা দরকার তা থেকে তারা বঞ্চিত হচেছ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে”। অভিভবকত্ব নিয়ে সঙ্কট, টানাপড়েন পারিবারিক নির্যাতন, বিবাহ-বিচ্ছেদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র। সেখানে বিচ্ছেদের জন্য শালিসী বৈঠকে আসা স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে সন্তানদের অভিভবকত্ব নিয়ে সঙ্কট দেখা যায়। সংগঠনটির আইনজীবী নীনা গোস্বামী জানান, “সন্তান কার কাছে থাকবে এটা নিয়ে অনেকসময়ই অভিভাবকদের মধ্যে লড়াই দেখা যায়।। কিন্তু বাচ্চাটি কোথায় থাকলে তার জন্য মঙ্গলজনক হবে সে বিষয়ে হয়তো তারা ভাবছেনই না।" আদালতের শরণাপন্ন হলে হয়তো আদালত তার বিবেচনাপ্রসূত একটি রায় দেয়। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত যে টানাপড়েন চলে তাতে ওই ছেলেটি কিংবা মেয়েটির ওপর অনেক নেতিবাচক পড়ে। তাদের আচরণগত অসামঞ্জস্য দেখা যায়, পড়শোনায় মনোযোগ হারায়। আইনজীবী নীনা গোস্বামী আরও উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে অনেক মহিলা ছেলে-মেয়েরা ‘ব্রকেন ফ্যামিলির সন্তান’ বলে আখ্যা পাওয়ার ভয়ে দিনে পর দিন স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেন। 'বিচ্ছেদের হার বাড়ছে' অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, বর্তমান সময়ে এসে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষনায় পাওয়া তথ্যে তাদের মনে হয়েছে । তবে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না বলে তিনি জানান। “সমাজের একটি বড় অংশের মধ্যে বিচ্ছেদের বা পরিবার ভাঙার ঘটনাগুলোর কোনও রেকর্ড থাকে না। ফলে এইসব পরিবারের সন্তানদের সংখ্যা সম্পর্কেও সঠিক ধারনা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন শ্রেণীতে এই হার বিভিন্ন রকম। উচ্চবিত্তদের মধ্যে যে বিচ্ছেদের ঘটনাগুলো ঘটে তার রেকর্ড থাকে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদের যে ফাইলগুলো জমা পড়ছে সেখানে মেয়েরাই অধিক হারে আবেদন করছে। আর একেবারে নিম্মবিত্ত শ্রেণীতেও আমরা দেখেছি সেখানে ব্রকেন ফ্যামিলির সংখ্যা অনেকবেশি। কিন্তু কোনও রেকর্ড থাকে না। তারপরও বলা যায় গত দশবছরের পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় সংসারের ভাঙনের এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছেই”। তবুও স্বপ্ন আবার ফিরে যাই অপরাজিতার কাছে। তিনি এখন চান নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে। একদিন তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল যে বাবা, তাকে ছাড়াও যে জীবন চলে সেটাই প্রমাণ দিতে চান তিনি। কিন্তু সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে আরও নিচের দিকে অবস্থান যাদের, তাদের পক্ষে এমন স্বপ্ন দেখাটা বাহুল্যই বটে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: