চিৎ-ঘুম না কাত-ঘুম, শরীরের জন্য কোনটা বেশি ভাল? কেউ কেউ রাতে পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমাতে বেশি পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। কিন্তু রাতের পরিপূর্ণ বিশ্রামের জন্য কোন অবস্থায় ঘুমালে তা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো? সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহে জর্জরিত কোনও জায়গায় যদি আপনার বাস হয় তাহলে সম্ভবত আপনারও অনেক নির্ঘুম রাত কেটেছে, এবং আপনি বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেছেন। কিন্তু বিছানায় কোন ভঙ্গিতে ঘুমালে আপনার দেহের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর হবে- এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কী বলছে? নাইজেরিয়ার কন্টেইনারবাহী জাহাজের নাবিক থেকে শুরু করে কারখানার ওয়েল্ডার পর্যন্ত সবাই রাতে কোন ভঙ্গিতে ঘুমায়- তার ওপর কোন গবেষণা থাকলে তা হয়তো আমাদের কাজে আসতো। ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও খুবই অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হলো যে এনিয়ে এখন পর্যন্ত বড় মাপের কোন গবেষণাই হয়নি। প্রথমে জানা প্রয়োজন মানুষ ঘুমের মধ্যে কোন ভঙ্গিতে শুয়ে থাকে। এর সহজ উপায় হলো তাদের সেটা জিজ্ঞাসা করা। কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা শুধুমাত্র মনে করতে পারি ঘুম আসার আগে কোন ভঙ্গিতে শুয়েছিলাম, আর ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়টিতে আমাদের দেহের ভঙ্গি কেমন ছিল। এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে গবেষকরা নানা ধরনের কৌশল ব্যবহার করছেন, যার মধ্যে রয়েছে ঘুমন্ত মানুষের ভিডিও রেকর্ড করা কিংবা তাদের শরীরে নানা ধরনের ডিভাইস লাগিয়ে ঘুমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা। হংকংয়ের গবেষকরা, তাদের ভাষায়, "ব্ল্যাঙ্কেট অ্যাকমোডেটিভ স্লিপ পশ্চার ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম" নামে একটি পদ্ধতি তৈরি করছেন, যার মাধ্যমে ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মোটা কম্বলের নীচে শুয়ে থাকা মানুষের দেহের ভঙ্গি সম্পর্কে জানা যায়। ডেনমার্কের গবেষকরা পরীক্ষার ভলান্টিয়ারদের ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাদের উরু, পিঠের ওপরের দিক এবং বাহুর ওপরের দিকে ছোট ছোট মোশন-সেন্সর ডিটেক্টর ব্যবহার করে তাদের পছন্দের ঘুমের ভঙ্গি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন যে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকার সময় মানুষ অর্ধেকেরও বেশি সময় পাশ ফিরে ঘুমায়, প্রায় ৩৮% ঘুমায় চিৎ হয়ে আর ৭% ঘুমায় উপুড় হয়ে। যাদের বয়স যত বেশি হয়, তারা তত বেশি সময় ধরে কাত হয়ে ঘুমায়। পাশ ফিরে ঘুমানোর প্রতি আমাদের এই পক্ষপাতিত্ব এমন এক ব্যাপার যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিকশিত হয়। কারণ, তিন বছরের বেশি বয়সী শিশুরা পাশ ফিরে, চিৎ হয়ে এবং উপুড় হয়ে ঘুমানোর জন্য গড়পড়তা সমান পরিমাণ সময় ব্যয় করে। অন্যদিকে, তিন বছরের নীচে শিশুরা প্রধানত চিৎ হয়েই ঘুমায়, কারণ নিরাপত্তার কারণে এভাবেই তাদের বিছানার ওপর শুইয়ে রাখা হয়। সুতরাং, বেশিরভাগ লোক পাশ ফিরে ঘুমায় এবং কোন মানুষ কোন ভঙ্গিতে ঘুমায় এনিয়ে সাধারণ যেসব মতামত রয়েছে তার ওপর আমরা মোটামুটি ভরসা রাখতে পারি। কিন্তু এনিয়ে যেসব তথ্য রয়েছে সেগুলো কী বলছে? খুব ছোট একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, যারা ডান দিকে পাশ ফিরে ঘুমায় তাদের ঘুমের মান যারা বাম পাশ ফিরে ঘুমায় তাদের চেয়ে কিছুটা ভাল। এরপর রয়েছে যারা চিৎ হয়ে ঘুমায় তারা। পাশ ফিরে ঘুমানো যদি আপনার জন্য সহজ হয় তাহলে আশপাশে অন্য যে মানুষ ঘুমানোর চেষ্টা করছেন, সেটা সম্ভবত তাদের জন্যও ভাল। একবার বিবিসির জন্য একটি রেডিও রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে আমি সাবমেরিনের ভেতরে ঢুকেছিলাম। সাবমেরিনাররা আমাকে তাদের ঘুমের জায়গাটি দেখিয়েছিলেন, যেখানে শুয়ে থাকার বাঙ্কগুলি একটার ওপর একটা এত কাছাকাছি বসানো ছিল যে সেখানে পাশ ফিরে ঘুমানো ছিল খুবই কঠিন। এর মানে হলো, এদের সবসময় চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমাতে হতো। তখন তারা আমাকে জানিয়েছিলেন, তারা চেষ্টা করতেন পুরো কেবিনটি নাক-ডাকা লোকে ভর্তি হওয়ার আগেই কেবিনে ঢুকে একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে নিতে। কন্টেইনারবাহী জাহাজের নাবিকদের ওপর আরেকটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, নাক ডাকার মতো শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা যায় যখন নাবিকরা তাদের পিঠের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। নাক ডাকার কিছু গুরুতর সমস্যা তৈরি হয় ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র কারণে, যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস একবার বন্ধ, একবার চালু হয়। যারা নিয়মিত চিৎ হয়ে ঘুমান তাদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, পাশ ফিরে ঘুমালে আপনার শ্বাসনালীর ওপরের দিকটায় কোন বাধা থাকে না। উভুলা (আপনার মুখ-গহ্বরের ভেতরে তালুর পেছন দিকে থাকা মাংসের স্তর) ও জিহ্বা আপনার শ্বাসনালীতে কোন বাধা তৈরি করতে পারে না, ফলে নাক ডাকাও কম হয়। আসলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে পাশ ফিরে ঘুমালে স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়ে যায় বলে দেখা গেছে। কাত হয়ে ঘুমানোর অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। যেমন, নাইজেরিয়ার কন্টেইনার জাহাজের ওয়েল্ডারদের ঘুমের ধরণ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা চিৎ হয়ে ঘুমায় তাদের পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি, কাত হয়ে যারা ঘুমায় তাদের তুলনায়। তবে এর অর্থ এই নয় যে পাশ ফিরে ঘুমানোর ব্যাপারটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে কিংবা শরীরের সব ব্যথা-যন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে। এটা নির্ভর করবে আপনার অসুস্থতা কতখানি গুরুতর এবং আপনি কোন ভঙ্গিতে ঘুমাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তার ওপর। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা ভলান্টিয়ারদের বেডরুমে রাতে ১২ ঘণ্টা ধরে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা ব্যবহার করে দেখেছেন, যারা ঘুম থেকে উঠে জানিয়েছেন যে তাদের ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে, তারা সবাই বেশিরভাগ সময় কাত হয়ে ঘুমিয়েছেন। গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন ‘প্রভোকেটিভ সাইড স্লিপিং পজিশনস।‘ নামটি গুরুগম্ভীর শোনালেও এর সহজ মানে হলো, এক্ষেত্রে আপনি পাশ ফিরে বাঁকানো অবস্থায় বেশি সময় ঘুমিয়েছেন। যেমন, আপনার এক উরু অন্য উরুর ওপর দিয়ে ওপাশে চলে গেয়েছিল, যার ফলে দীর্ঘ সময় আপনার মেরুদণ্ডটি মোচড় খেয়ে বাঁকা অবস্থায় ছিল। এর বিপরীতে, যারা কাত কিন্তু সমানভাবে ঘুমান তাদের ঘাড়ে ব্যথা কম হয় বলে জানা যাচ্ছে। তবে এই গবেষণা থেকে এটা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে পাশ ফিরে ‘প্রভোকেটিভ’ অবস্থানে ঘুমানোর জন্যই তাদের ঘাড়ে ব্যথা হয়েছিল, না কি ঘাড়ে ব্যথা ছিল বলেই লোকে ঐ ভঙ্গীতে ঘুমাতো, কারণ তাতে তারা আরাম বেশি পেত। তাহলে, কেমন হতো যদি আপনি লোকদের নতুন একটি ভঙ্গিতে ঘুমাতে দিতেন এবং তারপর পরীক্ষা করে দেখতেন যে নতুন ভঙ্গিতে ঘুমানোর জন্য তাদের ঘাড়ের ব্যথা কমেছে কি না? পর্তুগালে ফিটনেস প্রোগ্রামে অংশ নেয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর এক গবেষণায় পিঠের ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশ ফিরে আর যাদের ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে তাদের চিৎ হয়ে ঘুমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। চার সপ্তাহ পর ৯০% অংশগ্রহণকারী জানিয়েছিলেন যে তাদের ব্যথা কমে গেছে। এই ফলাফলকে বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হলেও এর একটি সমস্যা রয়েছে। মাত্র ২০ জন লোক ঐ গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন। গবেষণার নমুনা হিসেবে এটি খুবই ছোট, তাই এর ওপর ভিত্তি করে এই উপসংহার টানা সম্ভব নয় যে ঘুমের অবস্থানে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে পিঠ কিংবা ঘাড়ের ব্যথা দূর করা সম্ভব। এনিয়ে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে দেহের একটি সমস্যার বেলায় চিৎ হয়ে কিংবা কাত হয়ে শুয়ে থাকার চেয়েও বড় কথা হলো আপনি কোন পাশে শুয়ে ঘুমিয়েছেন। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সময় আপনার পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক রস পেট থেকে ওপরের দিকে উঠে আসে, যার ফলে বুকে তীব্র জ্বালা-পোড়া হয়। ডাক্তাররা কখনও কখনও এধরনের বুক-জ্বালার উপশমের জন্য রোগীকে বালিশের সংখ্যা বাড়িয়ে মাথা কিছুটা খাড়া রেখে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এধরনের জ্বালা-পোড়া বারবার ঘটলে তাকে বলা হয় ‘গ্যাস্ট্রো-এসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ’ যার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। কেন এই রোগ হয় তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, বাম দিকে ফিরে ঘুমালে পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীর মধ্যে সংযোগস্থলটি গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের স্তরের ওপরে থেকে যায়। আর ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমালে অন্ননালীর নীচের দিকের স্ফিঙ্কটারটি শিথিল হয়ে আসে, যার ফাঁক দিয়ে অ্যাসিড বেরিয়ে যায়। তবে উত্তর যাই হোক না কেন আপনি যদি বুক-জ্বালায় ভোগেন, তাহলে বাম পাশে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এখন পর্যন্ত আমি পাশ ফিরে কিংবা চিৎ হয়ে ঘুমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি, কারণ বেশিরভাগ লোকই এভাবে ঘুমায়। কিন্তু সেই সব লোকদের কী হবে, সংখ্যায় ছোট হলেও যারা উপুড় হয়ে ঘুমায়? এক্ষেত্রে শুরুতেই একটি গবেষণার কথা বলা যেতে পারে যেখানে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে আপনি যদি চোয়ালের ব্যথায় ভোগেন তাহলে এভাবে না ঘুমানোই ভাল, যেটা সম্ভবত খুব অবাক হওয়ার মতো বিষয় না। এবং মুখের বলিরেখার সম্পর্কে কী বলা হচ্ছে? বালিশের ওপর মুখ রেখে ঘুমালে নিশ্চয় বলিরেখা আরও খারাপ হয়? ‘এসথেটিক সার্জারি জার্নালে’ লেখা এক নিবন্ধে একদল প্লাস্টিক সার্জন পরামর্শ দিয়েছেন, বরং কিছুটা কাব্যিক-ভাবে বলেছেন, আপনার মুখের ত্বকের সবচেয়ে ভালো যত্ন হবে যদি এর সাথে সমুদ্রের শৈবালের মতো আচরণ করা হয়, যেখানে শৈবালটি একটি ডাঁটার সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সাথে দুলতে থাকবে। তাই, ঘুমানোর সময় আপনার মুখের ওপর চাপ একেবারে কম রাখবেন এবং উপুড় হয়ে ঘুমানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে। এবং মুখের ত্বকের যত্নই যদি আপনার কাছে ভাল ঘুম কিংবা ব্যথা আর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চিন্তাও আদর্শ সমাধান নয়। তাহলে এসব গবেষণা থেকে আমরা কী উপসংহারে আসতে পারি? প্রথমত, অন্য সব কিছুর মধ্যে পাশ ফিরে ঘুমানোতে উপকার বেশি বলেই মনে হয়। তবে সুনির্দিষ্ট যে ভঙ্গিতে আপনি ঘুমাবেন আপনার ঘাড় এবং পিঠের ব্যথার ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে। এবং আপনি যে ভঙ্গিতে ঘুমাবেন তার ফলে আপনার অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়তে বা কমতে পারে। আপনি যদি চিৎ হয়ে ঘুমান তাহলে নাক ডাকা বাড়তে পারে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা সবাই আলাদা, তাই আপনার ঘুমের সবচাইতে আরামদায়ক ভঙ্গিটি খুঁজে পাওয়া সহজ নাও হতে পারে। নতুন ভঙ্গিতে ঘুমের চেষ্টা করে দেখতে পারেন এবং রাতে ঘুম ভাল না হলে সেকথা ডায়েরিতে লিখে রাখা দরকার। সবশেষে মনে রাখবেন, ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে ঘুমানো নিয়ে খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করবেন না। কারণ, এই দুশ্চিন্তার ফলেই হয়তো আপনাকে আরও বেশি নির্ঘুম রাত কাটাতে হতে পারে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: