Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠি বাড়ছে, কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি কতটা?




বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠি বাড়ছে, কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি কতটা? বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও আর মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে প্রবীণদের মোট সংখ্যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ছাড়িয়ে যাবে। প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ: বাড়তে থাকলেও ভবিষ্যতে এই জনগোষ্ঠির সেবা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবল এখনও অপ্রতুল। প্রবীণদের দুঃখ-কষ্ট দেখার জন্য বাংলাদেশে সম্ভবত কোন মানুষকেই খুব বেশিদূর যেতে হয় না।

ঢাকার এক রাস্তার পাশে রিকশা থামিয়ে ফুটপাথের চা-দোকানের বেঞ্চে বসে ছিলেন রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন। । ষাটের কিছু বেশি বয়সী শাহাদাত হোসেনের বাড়ি যশোরে, ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। তরুণ বয়সে যে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছিলেন অচেনা শহরে এসে, এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও তাঁর সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। "একদিন চালাই দুই-তিন দিন বসে থাকি, বয়স হয়ে গেছেতো, শরীর পাইরে ওঠে না"। বললেন, সন্তানরা বড় হলেও কেউ খোঁজ-খবর নেয়না, তাই পেটের দায়েই রিকশা চালান। বৃদ্ধ বয়সে এমন কঠিন কায়িক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এমন প্রবীণের সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশের সার্বিক বিবেচনায় অবশ্য রিকশাচালক মি. হোসেন একদিক দিয়ে স্বস্তিতে আছেন - তিনি এখনও কষ্ট করে হলেও নিজের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থাটি করতে পারছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ সেটা পারেন না - বিশেষ করে যাদের বয়স সত্তরের বেশি। ষাট বছরের বেশী বয়সী মানুষকে বাংলাদেশে প্রবীণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে, বাংলাদেশে বতর্মানে মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ছয় মাস। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু আরো বাড়বে বলেই ধরে নেয়া যায়। এই হারে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার একটি বিশাল প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারের ওপর। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম নুর-উন-নবী বলছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনেও একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে। "এই বয়স্ক মানুষদের যদি আমরা সমাজের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বিত করতে না পারি, তাহলে তারা একসময় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে," বলেন ড. নবী। বর্তমান হারে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবীণদের ৫৮ শতাংশের দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণেরই সামর্থ্য নেই। সেখানে তাদের বৃদ্ধ বয়সে অন্য সেবা পাওয়াটা যে কতটা কঠিন তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবায় প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে পুরনো সংগঠন, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান বলছেন যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা। "চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রবীণদের জন্য আলাদা করে কিছু নেই। কিন্তু অন্যান্য বয়স শ্রেণীর তুলনায় প্রবীণদের স্বাস্থ্য চাহিদা অনেক বেশি জটিল এবং ব্যয়বহুল"। তিনি আরও বলেন, চাহিদা বাড়লেও সাধারণত প্রবীণের আর্থিক সক্ষমতা কমে যায় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের তুলনায় তার চাহিদা অগ্রাধিকার পায় না। ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘে রয়েছে একটি প্রবীণ নিবাস। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে এধরণের প্রবীণ নিবাস বা বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও খুব কম। সব মিলিয়ে কয়েক'শো প্রবীণের জন্য এ ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রহমান। এই নিবাসে বর্তমানে ৪০ জনের বেশি নিবাসী রয়েছেন - তাদের একজন ৭৫ বছর বয়সী নার্গিস জাহান। তিনি জানান অল্পবয়সে স্বামীকে হারানোর পর চাকরি করে সন্তানকে বড় করেছেন। কিন্তু বৃদ্ধ অবস্থায় কেউ তাঁর দেখাশোনা করতে চায়নি। এরপর গত ১৪ বছর আছেন প্রবীণ নিবাসে। "বলেছি মরে গেলে লাশটা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দিতে। তারাই ব্যবস্থা করবে," বলেন নার্গিস জাহান। নার্গিস জাহান খুব ব্যতিক্রম নন - বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষরা সাধারণত স্বেচ্ছায় সেখানে যান না। প্রবীণরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সাথেই থাকতে চান এবং সামাজিকভাবেও সেটাই হয়ে আসছে। তবে সময়ের সাথে সাথে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবা-ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে আসছে এবং মানুষজন গ্রাম ছেড়ে শহরে বা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেক মা-বাবাই অরক্ষিত হয়ে পড়ছেন। "অরক্ষিত এই প্রবীণদের সেবা দেয়ার জন্য যে নতুন-নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন তা গড়ে উঠছে না"- বলেন অধ্যাপক রহমান। জনসংখ্যাবিদরা বলছেন, প্রবীণদের আনুষ্ঠানিক সেবার প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বিশেষ করে কয়েক দশক পরেই একজন কর্মক্ষম মানুষের ওপর প্রবীণ জনগোষ্ঠির যে চাপ পড়বে, তা সামাল দেয়া অনেকের জন্যই বেশ কঠিন হবে। "এই অবস্থা যদি স্থবির থাকে, তাহলে একটা সময় একজন কর্মক্ষম মানুষকে তিনটি প্রজন্মের দায়িত্ব নিতে হবে - তার নিজের, তার আগের (মা-বাবা) এবং তারও আগের (দাদা-দাদী)। তিনটা প্রজন্মের দায়িত্ব নেয়ার মত অর্থনৈতিক অবস্থাতো সবার থাকবে না"- বলেন অধ্যাপক নুর-উন-নবী। প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। সবচেয়ে বড় কার্যক্রমটি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, যার আওতায় সাড়ে ৩১ লাখ প্রবীণকে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে ষাটোর্ধ্বদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্রে প্রবীণদের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পাবার কথা। যদিও এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৩ সালেই সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দেখভাল বাধ্যতামূলক করে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনও পাশ হয়েছে। কিন্তু সেটির প্রয়োগও খুব কম এবং এ নিয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। এর বাইরে বয়স্ক-ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত বিবেচনা বা বয়স বেশি দেখিয়ে ভাতা দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বয়স্ক-ভাতা প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা নিতে হয়, যে কারণে বয়স বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য শুধু সরকারি সাহায্যই সীমিত নয়, বেসরকারিভাবেও প্রবীণদের নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় না। অন্ততঃ যতটা হওয়া উচিত ততটা যে হচ্ছে না, সেবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রায় সবাই একমত। ঢাকার প্রবীণ হাসপাতালের চিকিৎসক মহসিন কবির সম্প্রতি তরুণদের জন্য 'প্রবীণ বন্ধু' নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তিনি বলছিলেন প্রবীণদের জন্য সামাজিক আন্দোলনে তরুণদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন, কারণ প্রবীণদের জন্য যখন সমস্যা প্রকট হবে তার ভূক্তভোগী থাকবে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। "প্রবীণদের জন্য আমরা যে ফ্যাসিলিটি তৈরি করে যাব, পরে সেটা আমরাই ভোগ করবো"- বলেন ডা. কবির। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণদের জন্য সরকারিভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু বৃদ্ধাশ্রম মিলিয়ে খুব অল্প কিছু প্রবীণের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অধ্যাপক নুর-উন-নবী বলেন, ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, তা না হলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না। বাংলাদেশে বৃদ্ধবয়সে সেবা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীও নেই। যেটা ভবিষ্যতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। "বয়স্ক মানুষদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে তিনটা কাজ হতে পারে - চিকিৎসা বা সেবাদান, সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ এবং অ্যাকাডেমিক - অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে কী করা যায় এ নিয়ে গবেষণা"। ভবিষ্যতে এই সেবাদান লাভজনক ব্যবসা হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক নবী। অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলছেন, প্রবীণদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এ বিষয়টি অনেকেই বুঝতে চান না। যার ফলে বার্ধক্য আসলে তখন হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে পেনশনের আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেও অধিকাংশ বেসরকারি চাকুরিতে সেটি নেই। এসব মিলিয়ে বার্ধক্যের জন্য যে দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, সেটা অনেকেই আমলে নেন না। অধ্যাপক রহমান বলেন, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে একটি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বৃদ্ধবয়সে কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে ভবিষ্যৎ প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য যে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, তা বেশ নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের কথায় এটাও স্পষ্ট যে এ অবস্থা মোকাবেলা করাও সম্ভব। আর এজন্যে সচেতনতা তৈরি, সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ, বিনিয়োগ ও পেশাদারিত্ব - কোন ক্ষেত্রেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply