বৃত্তের কোণ ৩৬০ ডিগ্রি কেন
বৃত্তের কোণের পরিমাণ যে ৩৬০ ডিগ্রি, সে কথা স্কুলে আমরা প্রায় সবাই শিখেছি। কিন্তু এই কোণের মান ৩৬০ ডিগ্রি না হয়ে তো ১০ ডিগ্রি কিংবা ১০০ ডিগ্রিও হতে পারত। আবার ৫০০ ডিগ্রি হলেও কারো হয়তো ক্ষতি বৃদ্ধি হতো না। তাহলে হিসাব-নিকাশের ব্যাপারটাও আমাদের জন্য সরল হতো। কিন্তু তা না হয়ে এরকম সংখ্যা হলো কেন? এককথায় এ প্রশ্নের উত্তর হলো: এর সঠিক কারণ কেউ জানে না। তবে পেছনের কারণটা নিয়ে বেশ কিছু হাইপোথিসিস চালু আছে। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক, গাণিতিক এবং ব্যবহারিক বিভিন্ন কারণ। সেগুলোই একে একে চলুন জানার চেষ্টা করি। ঐতিহাসিক কারণটা ৪ হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনে বলে ধারণা করা হয়। তারও আগে সুমেরীয় সভ্যতাতেও এ ধারণা চালু ছিল বলে অনেকে অনুমান করেন। আমাদের বর্তমানের গণনা পদ্ধতিকে বলা হয় দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আমরা মাত্র ১০টি অঙ্ক ব্যবহার করি—০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯। মাত্র এই ১০টি অঙ্ক দিয়েই সব সংখ্যা লেখা যায়। কিন্তু প্রাচীন ব্যাবিলনের মানুষেরা আজকের মতো দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি জানত না। তারা ব্যবহার করত ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করেই আজকের মিনিট (৬০ সেকেন্ড) এবং ঘণ্টা (৬০ মিনিট) তৈরি হয়েছে। আধুনিক হিসেবে এ সময়ের পরিমাণ আসলে ৩৬৫.২৫ দিন। কিন্তু সে যুগের হিসাব অনুযায়ী ৩৬০ দিনই ছিল সঠিক। কারণ তাদের কাছে আধুনিক সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি ছিল না। তাদের কাছে ৬০ সংখ্যাটি ছিল একটি বিশেষ সংখ্যা। তাই বৃত্তের কোণ নির্ধারণের জন্য তারা ৬০-এর গুণিতক ৩৬০-কে বেছে নেয়, যা তাদের গণনা পদ্ধতির সঙ্গে ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা যেমন ১০, ২০, ৩০ বলে গুনি, তেমনি তারা গুনত ৬০, ১২০, ১৮০ বলে। এই ৬০ সংখ্যাটা তাদের কাছে ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৬০-কে অনেক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়। যেমন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১০, ১২, ১৫, ২০, ৩০ দিয়ে। এটা তাদের হিসাব-নিকাশে অনেক সুবিধা দিত। এটুকু না হয় বোঝা গেল; কিন্তু প্রশ্ন হলো, ৬০ থেকে ৩৬০ এল কীভাবে? এর পেছনে আছে প্রাচীন মানুষের আকাশ দেখা। আসলে সে কালের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছিল, সূর্য প্রতিদিন আকাশে একটু একটু করে সরে যায়। অর্থাৎ আকাশে সূর্যটা যে জায়গায় আজ দেখা গেল, ঠিক একই সময়ে কাল সূর্যটা একই জায়গায় দেখা যাবে না। তার অবস্থান বদলে যাবে। এভাবে প্রতিদিনই সূর্য জায়গা বদল করে চলে। প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের হিসেবে, সূর্য এভাবে স্থান বদলাতে বদলাতে আবার তার আগের জায়গায় ফিরে আসতে সময় নেয় প্রায় ৩৬০ দিন। অবশ্য আধুনিক হিসেবে এ সময়ের পরিমাণ আসলে ৩৬৫.২৫ দিন। কিন্তু সে যুগের হিসাব অনুযায়ী ৩৬০ দিনই ছিল সঠিক। কারণ তাদের কাছে আধুনিক সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি ছিল না। তাই প্রাচীন মানুষেরা ধারণা করল, সূর্য একটি বৃত্তাকার পথে চলে এবং সেই বৃত্তে ৩৬০টি সমান ভাগ আছে। এই চিন্তাভাবনা থেকেই একসময় জন্ম নেয় ডিগ্রির ধারণা। প্রাচীন জ্যোতির্বিদেরা ভাবলেন, আকাশটা যদি অনেক বড় একটা বৃত্ত হয় এবং সূর্য সেখানে ৩৬০ দিনে একবার ঘুরে আসে, তাহলে প্রতিদিন সূর্য এক ডিগ্রি করে সরে যায়। এভাবেই ৩৬০ ডিগ্রি ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু জ্যোতির্বিদ্যাই নয়, ৩৬০ সংখ্যাটির আরও কিছু গুণ আছে। সে কারণে এটি প্রাচীন গণিতবিদদেরও আগ্রহী করে তুলেছিল। গণিতের দৃষ্টিকোণ থেকেও ৩৬০ একটি অসাধারণ সংখ্যা। ৩৬০ এমন একটি সংখ্যা, যার অনেকগুলো উৎপাদক বা ভাজক আছে। মানে এ সংখ্যাকে অনেক ছোট ছোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় এবং ভাগফল পূর্ণ সংখ্যা হয় (মনে রাখা দরকার, সে কালে ভগ্নাংশ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা ছিল না। ভগ্নাংশ হিসেব করাও ছিল খুব কঠিন। তাই পূর্ণ সংখ্যাকে গুরুত্ব দিতেন গণিতবিদেরা)। ৩৬০-কে ভাগ করা যায় ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৮, ২০, ২৪, ৩০, ৩৬, ৪০, ৪৫, ৬০, ৭২, ৯০, ১২০, ১৮০ এবং ৩৬০ দিয়ে। অর্থাৎ মোট ২৪টি সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। এত সব সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় বলে বৃত্তকে সমান ভাগে ভাগ করা খুব সহজ। এর ফলে বৃত্তকে অনেকগুলো সমান অংশে ভাগ করা খুব সহজ হয়। যেমন বৃত্তকে অর্ধেক করতে হলে ১৮০ ডিগ্রি, এক-তৃতীয়াংশ করতে হলে ১২০ ডিগ্রি বা এক-চতুর্থাংশ করতে হলে ৯০ ডিগ্রি—এই সবই পূর্ণ সংখ্যায় পাওয়া যায়। নকশা তৈরির ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় সুবিধা। প্রকৌশল, স্থাপত্য ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এই বিভাজনের সুবিধা আজও অপরিহার্য। মজার দিক হলো, আমাদের হাতের আঙুল দিয়েও ৩৬০ গোনা যায়! একটি হাতের চারটি আঙুলের প্রতিটিতে তিনটি করে গিঁট আছে, মানে মোট ১২টি গিঁট। অন্য হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে এই গিঁটগুলো গুনলে ১২ পর্যন্ত গোনা যায়। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। ধরা যাক, আপনি একটি বৃত্তাকার কেক ৬ জনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করতে চান। তাহলে প্রতিটি টুকরার কোণ হবে ৩৬০÷৬ = ৬০ ডিগ্রি। আবার যদি ৮ জনের মধ্যে ভাগ করেন, তাহলে প্রতিটি টুকরা হবে ৪৫ ডিগ্রি। এভাবে অনেক সুন্দর পূর্ণ সংখ্যায় ভাগ হয়ে যায়। প্রাচীন গ্রিসের গণিতবিদেরাও এই ধারণা গ্রহণ করেছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যা ও ত্রিকোণমিতির কাজে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যবহার করেছিলেন বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ টলেমি। তাঁর গবেষণা ও বইপত্রের মাধ্যমে এ পদ্ধতি পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ৩৬০ ডিগ্রি মাপের সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছু মিলে যায়। একটি বর্গক্ষেত্রের চারটি কোণ—সবগুলোই ৯০ ডিগ্রি, এবং ৪×৯০ = ৩৬০। একটি সমবাহু ত্রিভুজের প্রতিটি বাইরের কোণ ১২০ ডিগ্রি, এবং ৩×১২০ = ৩৬০। একটি ষড়ভুজের (ছয় কোণবিশিষ্ট আকৃতি) প্রতিটি বাইরের কোণ ৬০ ডিগ্রি, এবং ৬×৬০ = ৩৬০। আরেকটি মজার দিক হলো, আমাদের হাতের আঙুল দিয়েও ৩৬০ গোনা যায়! একটি হাতের চারটি আঙুলের প্রতিটিতে তিনটি করে গিঁট আছে, মানে মোট ১২টি গিঁট। অন্য হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে এই গিঁটগুলো গুনলে ১২ পর্যন্ত গোনা যায়। এখন যদি বাকি চার আঙুল দিয়ে এই ১২-এর গুণিতক গুনেন (১২, ২৪, ৩৬...), তাহলে ৫×১২×৬ = ৩৬০ পর্যন্ত গোনা যায়। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা এভাবেই হিসাব করত! কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে, আজকের যুগে আমরা কি অন্য কোনো মাপ ব্যবহার করতে পারি না? আসলে গণিতে আরও দুটি কোণ মাপার একক আছে। সেগুলো হলো রেডিয়ান এবং গ্রেড। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে ৩৬০ ডিগ্রিই বেশি পরিচিত এবং বোধগম্য। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের কিছু ক্ষেত্রে রেডিয়ান ব্যবহার করার কারণ, এতে অনেক গাণিতিক সূত্র সহজ হয়ে যায়। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে, ভূগোলে, নৌবিজ্ঞানে, স্থাপত্যবিদ্যায় ৩৬০ ডিগ্রিই ব্যবহার হয়। কারণ এটি সহজবোধ্য। সূত্র: হিস্ট্রি টুডে ডট কম ম্যাথনেসিয়াম ডট কম টাইম ম্যাগাজিন আইএফএল সায়েন্স সায়েন্স এবিসি ডট কমSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: