১০ বছরের চেষ্টায় যে সূত্রে ওসামাকে খুঁজে পেল সিআইএ ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের একদিন। ওভাল অফিসে অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। অপেক্ষায় আছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিআইএর পরিচালক লিওন পানেত্তা কখন আসবেন। খুব জরুরি বিষয়ে তাঁদের আলোচনা প্রয়োজন। পানেত্তা যখন এসে পৌঁছালেন, প্রেসিডেন্টের চোখেমুখে তখনো অবিশ্বাসের ছাপ। আল–কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন কোথায় আছেন, সেই খবর নাকি নিশ্চিত হওয়া গেছে!
এক দশক ধরে মার্কিন গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন জঙ্গি সংগঠনটির প্রধানকে। কিন্তু খুব বেশি অগ্রগতি ছিল না। তাঁদের চোখে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তার মূল কারিগর ওসামা বিন লাদেন। অথচ এক দশক ধরে সেই ওসামা লাপাত্তা! পানেত্তা ওভাল অফিসে এসেছেন সিআইএর ‘বিন লাদেন’ টিমের দুজন দক্ষ গোয়েন্দাকে সঙ্গে করে। তাঁদের একজন সংস্থাটির শীর্ষ বিশ্লেষক। তিনি ‘জন’ নামে পরিচিত। এক দশক ধরে তিনি ওসামার অবস্থান শনাক্ত করার কাজ করে যাচ্ছিলেন। আরেকজন দুঁদে গোয়েন্দা। তাঁদের এই আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে রয়েছেন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ডেপুটি টমাস ডনিলন। ওভাল অফিসের এই গোপন আলোচনায় স্থান পেয়েছেন ‘আহমেদ আল–কুয়েতি’ নামের এক ব্যক্তি। ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের বিশেষ কৌশল খাটিয়ে ওই ব্যক্তি ও পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তাঁর বাড়ির আঙিনার সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধি শনাক্তের বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরছেন গোয়েন্দারা। পানেত্তা অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িকে উত্তর ভার্জিনিয়া শহরতলির একটি বাড়ির সঙ্গে তুলনা করেন। ওই বাড়ির আঙিনা আশপাশের অন্য বাড়ির আঙিনার তুলনায় আট গুণ বড়। এর চারপাশের সীমানা দেয়াল অস্বাভাবিক উঁচু। এর ওপরে কাঁটাতারের বেড়া। বাড়ির পাশ এমনকি ওপর থেকেও ভেতরে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাড়ির জানালাগুলোও প্রতিফলনযুক্ত কাচে বা বিশেষ রঙে তৈরি। টুইন টাওয়ারে হামলার পর মার্কিন গোয়ান্দারা যখন আল–কায়েদা প্রধানকে পাকড়াওয়ের চিন্তা করছিলেন, তখন থেকেই ওসামা বিন লাদেন ছবি তোলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই তাঁর সাম্প্রতিক চেহারা সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না গোয়েন্দাদের। ওবামাও জানতেন সে কথা। গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, লাদেন হয়তো কোনো পাহাড় বা গুহায় লুকিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁকে এ ধরনের লোকজনসহ বাড়িতে পাওয়া যাবে, তা অনেকের কাছে অনেক আশ্চর্যের ঠেকতে শুরু করে। তবে গোয়েন্দাদের কথা শুনে ওই বাড়িতে ওসামা লুকিয়ে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেননি প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি পানেত্তাকে বিষয়টি খোঁজখবর করে নিশ্চিত হতে বললেন। পানেত্তা ও তাঁর সংস্থা এ নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। তাঁরা দেখতে পান, অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িতে লুকিয়ে থাকা লোকজনের মধ্যে নিয়মিত একজন কেবল বাইরে আসেন। পশতু পোশাক ও টুপি পরা লোকটি প্রতিদিন দেয়ালের চারপাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। আকাশ থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির ছবিও সংগ্রহ করে ফেলে গোয়েন্দারা। কিন্তু সে ছবিতে তাঁর চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় না। তাঁকে লম্বা ও পাতলা দেখায়। গোয়েন্দারা তাঁর নাম দেন ‘পেসার’। কিন্তু এই পেসারই যে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ওসামা বিন লাদেন তা কিছুতেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। আবু আহমেদ আল-কুয়েতি প্রথম সূত্র প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে সিআইএর এই বৈঠকের আগে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল সিআইএকে। এ জন্য তাদের কাজে লেগেছিল ‘আবু আহমেদ আল-কুয়েতি’ নামের এক ব্যক্তির পরিচয়। অবশ্য এটি আসল নাম ছিল না। এটি ছিল ছদ্মনাম। এই নাম প্রথম প্রকাশ করেছিল মৌরিতানিয়ায় ধরা পড়া আল-কায়েদার সদস্য মোহামেদু সালাহি। এই নাম থেকেই মার্কিন গোয়েন্দারা আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের খুঁজে বের করার প্রথম সূত্র পেয়েছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়া আল-কায়েদার আরও তিনজন সদস্যের কাছে আল–কুয়েতি নামটির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন হলেন আল-কায়েদার তৃতীয় শীর্ষ নেতা আবু ফারাজ আল-লিবি। তিনি ২০০৫ সালের মে মাসে ধরা পড়েন। তিনি বলেন, তিনি কখনো এই নাম শোনেননি। পরে আরও পাঁচজন আল-কায়েদা সদস্যকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে চারজন আবু আহমেদ আল-কুয়েতির নাম শোনার কথা স্বীকার করেন। ধরা পড়া তিন ব্যক্তি বলেন, ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ আবু আহমেদ আল-কুয়েতি। একজন তাঁকে ‘কুরিয়ার’ বা বাহক হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁদের মধ্যে একজন অবশ্য বলেন, আল–কুয়েতি মারা গেছেন। তবে আল–কায়েদার শীর্ষ পর্যায়ের একজন খালিদ শেখ মোহাম্মদ বলেন, আবু আহমেদ আল–কুয়েতি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ছেড়ে দিয়েছেন। আল–কায়েদার এই নেতাদের কথা থেকে সিআইএর গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, আল-কায়েদার শীর্ষ নেতারা হয় আবু আহমেদ আল-কুয়েতির গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছেন, অথবা তাঁর অস্তিত্বই অস্বীকার করছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়—আল-কুয়েতি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ। এমনকি তাঁকেও বিন লাদেনের মতো কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে সিআইএর পক্ষ থেকে আল-কুয়েতিকে গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজা শুরু করা হয়। ২০০৭ সালে গিয়ে সিআইএর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আল-কুয়েতির প্রকৃত নাম ইব্রাহিম সাঈদ আহমেদ। তাঁর জন্মস্থান পাকিস্তানে এবং পরে তাঁর পরিবার কুয়েতে চলে যায়। তিনি ও তাঁর ভাই পশতু ও আরবি ভাষা শিখে বড় হয়েছেন। তাঁর আরেক ভাই আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মারা যান। ২০১০ সালের জুনে ইব্রাহিম সাঈদের মুঠোফোনের তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে চলে আসে। তাঁরা ইব্রাহিমের অবস্থান শনাক্ত করতে ও তাঁর ওপর নজরদারি করতে শুরু করেন। ইব্রাহিম সাঈদ আহমেদ ও তাঁর পরিবার অ্যাবোটাবাদের বড় একটি বাড়িতে বসবাস করেন। ওই বাড়িতেই থাকে পরিবারসহ তাঁর ভাই আবরার। সেখানে তাঁদের পরিচয় ভিন্ন। ইব্রাহিম সাঈদ আহমেদ সেখানে পরিচয় দেন আরশাদ খান ও তাঁর ভাই তারিক খান নামে পরিচিত। তাঁদের জন্ম কুয়েতে। কিন্তু জাতিগতভাবে তাঁরা পশতু। পারিবারিকভাবে ইব্রাহিমরা কখনোই সচ্ছল ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা যেখানে বাস করেন সেটি অনেক দামি। এখানে উঁচু পাচিলের পাশাপাশি দুই ভাই বাড়ির ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থাও রেখেছেন। মাদ্রাসা, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া ওই আঙিনার বাইরে শিশুরাও খুব একটা যায় না। ফোন কল করতে হলেও দূরে কোথাও গিয়ে তাঁরা কাজ সারেন। কখনোই তাঁদের বাড়ির অবস্থানের কথা বলেন না তাঁরা। সিআইএর পক্ষ থেকে ওই বাড়ির ওপর ব্যাপক নজরদারি শুরু হয়। আশপাশে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি আকাশ থেকেও ছবি তোলা হয়। গোয়েন্দারা কৌশলে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের সম্পর্কে প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চান। পানেত্তা প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে যা জানতে পারলেন, তা দ্রুতই প্রেসিডেন্টকে জানানোর জন্য সময় চাইলেন। সিআইএর গোয়েন্দারা জানতে পারলেন, ওই বাড়িতে তৃতীয় তলায় পৃথক একটি পরিবার থাকে। ওই পরিবারের কেউই কখনো বাইরে যাননি। ওই পরিবারের কোনো সন্তানও অন্যদের সঙ্গে স্কুলে যায় না। ওই পরিবারের দেখাশোনা করছেন নিচতলায় থাকা দুই পরিবারের সদস্যরা। গোয়েন্দাদের কাছে আরেকটি নিশ্চিত তথ্য সামনে এল। আর তা হলো, ইব্রাহিম সাঈদ আহমেদ এখনো আল-কায়েদার সক্রিয় সদস্য। মুঠোফোনে পুরোনো এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপকালে ইব্রাহিম স্বীকার করেন, তিনি এখনো পুরোনো কাজই করে যাচ্ছেন। তখনই গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়ে যান, যে পরিবারটিকে ইব্রাহিম ও তাঁর ভাই সুরক্ষা দিচ্ছেন, সেটি আল-কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ কেউ। সিআইএ জানতে পারল, লুকিয়ে থাকা পরিবারটি বেশ বড়। সেখানে তিনজন নারী, একজন তরুণ ও ১০ বা তার বেশি শিশু রয়েছে। নারী ও শিশুদের হিসাবে গোয়েন্দারা বুঝতে পারলেন, এটি ওসামা বিন লাদেনের পরিবার। তিনি সব সময় পরিবার সঙ্গে রাখেন। নিশ্চিত হলেন প্রেসিডেন্ট ওবামাও গোয়েন্দাদের কাছে সব কথা শুনে অন্যদের মতো ওবামাও আশ্চর্য হলেন। তবুও তিনি সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন। তিনি পানেত্তাকে ওসামাকে শেষ করার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমান থেকে হামলা বা ভূমি থেকে হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা ঠিক করে ফেলা হয়। এরপর ১৪ মার্চ ওবামার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়। মার্চের শুরুতেই সিআইএ অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সিআইএর বিশ্লেষক জন প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত। তবে কেউ কেউ ৪০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেন। সিআইএর তথ্য বলে সংশয় ছিল এর আগে অতীতে সিআইএর গোয়েন্দা তথ্যে ভুল হয়েছিল। বিশেষ করে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী অস্ত্রের তথ্য নিয়ে সিআইএ ভুল তথ্য দিয়েছিল। তা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। লাদেনকে নিয়ে তাই গোয়েন্দাদের নিশ্চিত তথ্য থাকলেও প্রেসিডেন্ট হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। কেউ কেউ বোমা হামলা করে বাড়ি উড়িয়ে দিতে বলেন। কারণ, বোমা হামলা করলে পুরো বাড়ি গুঁড়িয়ে যাবে। হিসাব করে দেখা গেছে, ওই বাড়িতে বিমান হামলা চালালে ৩০টি বোমা দরকার। আবার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে একই সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র লাগবে। এতে বাড়ির সবাই নিহত হবেন। প্রতিবেশীদেরও অনেকে নিহত হবেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ সিদ্ধান্ত থামিয়ে দিলেন। তিনি জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ম্যাকরাভেনের কাছে অভিযান বিষয়ে শুনতে চাইলেন। ওই সময় তাঁর দল অবশ্য অপারেশনের বিস্তারিত ঠিক করেনি। তবে তিনি বললেন, যদি নেভি সিল দিয়ে অভিযান চালানো যায়, তবে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে বিন লাদেনকে ধরা বা শেষ করে দেওয়া যাবে। ওই দুই সপ্তাহ পরে মার্চের শেষে ম্যাকরাভেন পুরো পরিকল্পনা নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে হাজির হলেন। ওই সময় বিমানবাহিনীও ছোট বোমা ও কম এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন বিস্ফোরণের পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হলো। তাঁরা জানালেন, দেয়ালের বাইরে বসবাস করা পরিবারগুলোর কোনো ক্ষতি ছাড়াই তাঁরা হামলা চালাতে পারবেন। কিন্তু এ ধরনের হামলায় মাটির নিচে কোনো কিছু থাকলে তার কোনো ক্ষতি হবে না—এমন নিশ্চয়তা নেই। ফলে এমন অভিযানেও সেখানে থাকা অনেকে নিহত হবেন। তাতে আবার নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিন লাদেন আছেন কি না, তা বলা মুশকিল হবে। ওই সময় ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল জেমস কার্টরাইট বললেন, ড্রোনের সাহায্যে ছোট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ওই পেসারকে একা লক্ষ্যবস্তু বানালে ক্ষতি কম হবে। তবে এমন হামলা কোনোভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বিন লাদেন পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ম্যাকরাভেন জানান, তাঁর দল মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অভিযানের জন্য প্রস্তুত। ওই সময় থাকবে অমাবস্যা। গোপন অভিযানে যাবেন নেভি সিলের সদস্যরা। ওবামা এতে সায় দিলেন। তিনি ম্যাকরাভেনের দলকে মহড়া করতে বললেন। কার্টরাইটকেও ড্রোন হামলার প্রস্তুতি নিতে বললেন। কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ দুটি মিশন চালু রাখতে নির্দেশ দিলেন তিনি। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ছিল বৃহস্পতিবার। ওই দিন বিকেলে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে চূড়ান্ত বৈঠক হয়। অনেকেই সরাসরি আক্রমণের পক্ষে কথা বলেন। সেখানে থাকা প্রত্যেককে তিনটি বিকল্পের মধ্যে পছন্দ করতে বলা হয়। অভিযান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বা কোনো কিছু না করা। প্রত্যেকেই নেভি সিলের অভিযানের পক্ষে কথা বলেন। সন্ধ্যার আগেই বৈঠক শেষ হয়। ওবামা বলেন, পরের দিন সকালে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন। সেদিন রাতে বারবার ওবামা তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তা করেন। তিনি ভাবেন, অপেক্ষা করলে কেমন হয়। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসবে বলে মনে করেন না তিনি। তবে, এতে ঝুঁকি আরও বাড়বে। পরদিন সকালে তিনি ঘূর্ণিঝড়–দুর্গত এলাকায় যাওয়ার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। নেভি সিলই অভিযান চালাবে। জালালাবাদ থেকে অভিযান ম্যাকরাভেনের সেনারা আফগানিস্তানের জালালাবাদে প্রস্তুত ছিল। ৩০ এপ্রিল তাদের হামলা চালানোর প্রস্তুতি রয়েছে। এ দলে রয়েছে সিল টিম সিক্স থেকে বাছাই করা ২৪ সদস্য। তাঁদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় হেলিকপ্টার ছাড়াও উড়োজাহাজ রাখা হয়েছিল। তবে তার প্রয়োজন পড়বে না বলেই মনে করেন ম্যাকরাভেন। সেনাদের জালালাবাদ থেকে অ্যাবোটাবাদে নিতে এমএইচ–৪৭ই চিনুক হেলিকপ্টার প্রস্তুত। এ ছাড়া প্রস্তুত রাখা হয় সেনাবাহিনী ও যুদ্ধবিমান। ওই দিন সন্ধ্যায় আবার হামলার সময় নিয়ে নতুন করে আলোচনা করা হয়। হামলা পেছানো হয় এক দিন। তবে ১ মে শনিবার রাতে অ্যাবোটাবাদের আবহাওয়া নিয়ে খারাপ খবর শোনান ম্যাকরাভেন। তিনি বলেন, সেখানে ঘন কুয়াশা থাকবে। তাই অভিযান আরও এক দিন পেছানো হয়। সব বিবেচনা করে ২ মে রোববার রাতে অভিযান চূড়ান্ত করা হয়। ওই দিন রাতেই হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে যাতায়াত কমিয়ে দেওয়া হয়। সিচুয়েশন রুমে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। ল্যাংলিতে সিআইএর প্রধান কার্যালয় থেকে মিশন পরিচালনার দায়িত্ব নেন পানেত্তা। তিনি ম্যাকরাভেনের অভিযানের সর্বশেষ তথ্য প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরছেন। অ্যাবোটাবাদের অনেক ওপরে আরকিউ–১৭০ সেন্টিনেল নামের একটি স্টিলথ প্রযুক্তির ড্রোন উচ্চ ক্ষমতার লেন্সের সাহায্য লাইভ ভিডিও দেখাতে শুরু করেছে। রাত ১১টার দিকে জালালাবাদ বিমানঘাঁটি থেকে অ্যাবোটাবাদের উদ্দেশ্যে দুটি স্টিলথ ব্ল্যাক হক উড়তে শুরু করে। তাতে রয়েছেন ব্ল্যাক সিল সেনারা। তাঁরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। তাঁদের কাছে আছে হালকা অস্ত্র। কারণ, আগেই খোঁজখবর করে রাখা হয়েছে, দেয়ালের কাছে খুব বেশি প্রতিরক্ষা নেই। ১০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান সীমানা অতিক্রম করল হেলিকপ্টার। এর পরপরই তিনটি বড় চিনুক জালালাবাদ থেকে উড়ে আফগান সীমান্তে একটি ও দুটি অ্যাবোটাবাদের অন্য পথে টহল দিতে শুরু করল। হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমের বড় স্ক্রিনে পানেত্তা হেলিকপ্টারের এগিয়ে চলার বিষয়টির ধারাবর্ণনা শুরু করলেন। ওবামাঘনিষ্ঠ একজন বললেন, অভিযান শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আপনি কি এখানেই অপেক্ষা করবেন? ওবামা বললেন, তিনি পুরোটাই দেখতে চান। অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়ির দিকে উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে এগোতে থাকল হেলিকপ্টার। এ সময় ড্রোন ক্যামেরায় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার দুটি দেখা যেতে শুরু করল। এরপর সবকিছুই দ্রুত ঘটতে থাকল। এর মধ্যে একটি হেলিকপ্টার নামতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেল। এ সময় সামলে নিলেন পাইলট। হেলিকপ্টার থেকে নেমে এলেন নেভি সিলের সদস্যরা। প্রথম হেলিকপ্টারটির পর দ্বিতীয়টি নামল আঙিনার বাইরে নতুন রোপণ করা ধানের জমিতে। এরপর দ্রুত হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে এলেন নেভি সিল সদস্যরা। এ সময় আলোর ঝলকানিতে অল্প কিছু দেখা গেল। নেভি সিলের সদস্যরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। হুট করে বাড়ির উঠানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় বাড়ির লোকজন চমকে গেছেন। বিন লাদেনের পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় আকস্মিক শব্দ শুনে বিন লাদেন তাঁর স্ত্রীদের বলেন, ঘরের আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু তাঁরা সে সুযোগ পাননি। কারণ, সিআইএর গোয়েন্দারা আগেই ওই এলাকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। এ সময় একদল নেভি সিল সদস্য অতিথি কক্ষের কাছের গ্যারেজ এলাকা দিয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ওই গুলি চালিয়েছিলেন সম্ভবত কুরিয়ার হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম সাঈদ আহমেদ বা আল–কুয়েতি। এর জবাব দেন সিল সদস্যরা। এতে নিহত হন তিনি। তাঁর স্ত্রীর কাঁধে গুলি লাগে। সিল সদস্যদের আরেকটি টিম মূল বাড়ির দিকে ঢোকে। বাড়ির নিচতলার শোবার কক্ষে ছিলেন ইব্রাহিমের ভাই আবরার আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী বুশরা। দুজনই সিল সদস্যদের গুলিতে মারা যান। এরপর প্রতিটি কক্ষে গিয়ে তল্লাশি শুরু করেন সিল সদস্যরা। দুটি বড় ঘর ও রান্নাঘর পার হয়ে তাঁরা ওপরে উঠতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। সেখানে সিঁড়ি আটকানো ছিল। তাঁরা তা উড়িয়ে দেন। এরপর তাঁরা ওপরের তলায় চলে যান। সেখানে তাঁরা ওসামা বিন লাদেনের ছেলে ২৩ বছর বয়সী খালিদকে গুলি করে হত্যা করেন। ওই তলায় আরও অনেক নারী ও শিশু ছিল। কিন্তু কাউকে তাঁদের বিপজ্জনক মনে হয়নি। এ সময় ওই বাড়িতে কেবল একজনই বয়স্ক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন তৃতীয় তলায়। তৃতীয় তলার দরজাও উড়িয়ে দেন সিল সদস্যরা। তাঁরা এরপর সবখানে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজতে থাকেন। সিল সদস্যদের ভাষ্য, এরপর তারা দীর্ঘকায় দাড়িওয়ালা এক লোককে দেখতে পান। তিনি দ্রুত শোবার ঘরে যাচ্ছিলেন। তাঁকে অনুসরণ করে সিল সদস্যরা। তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়। তাঁরা দেখেন, আহত বিন লাদেনকে দুজন নারী ঘিরে রেখেছেন। ওই সময় ওসামার মাথায় গুলি লেগেছিল। এ সময় নেভি সিল সদস্যরা ওই দুই নারীকে গুলি করেন এবং ওসামা বিন লাদেনের বুকে আরও গুলি করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পুরো ঘটনাটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে যায়। ঘটনার পরপরই তা জানানো হয় ম্যাকরাভেনকে। সিল সদস্যরা সংকেত দেন ‘পাস গেরোনিমো, গেরোনিমো, গেরোনিমো’। এর অর্থ মিশন সফল হয়েছে। বিন লাদেন নিহত। সংবাদ দ্রুত চলে যায় পানেত্তার কাছে। এ ঘটনার পর সিআইএ ও হোয়াইট হাউসে দ্রুতই সে বার্তা পৌঁছে যায়। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনেSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: