Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» »Unlabelled » টবে পুদিনা পাতার চাষ, ব্রোকলি , ঢেঁড়শ , লেটুস , ধনেপাতার , সবজি , জামরুল চাষ






    টবে
      পুদিনা পাতার চাষ,
     ব্রোকলি ,
     ঢেঁড়শ ,
     লেটুস ,
    ধনেপাতার ,
    সবজি  ,
    জামরুল চাষ ,
জামরুল

হঠাৎ করে কিনে শাড়ি-জামা পরা যায়, গাছ লাগানো যায় না। লাগানোর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভাবতে হয়, সে অনুযায়ী গর্ত করে গর্তে সার-মাটি ভরে রাখতে হয়। ছাদে বাগান এখন অনেকেই করছেন। তথ্য মতে, ঢাকায় প্রায় দেড় হাজার ছাদ বাগান রয়েছে। সেসব বাগানে নানা রকম ফল, ফুল ও বাহারি গাছ শোভা পাচ্ছে। তবে ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। বাজার থেকে যেসব ফল কিনছেন তা নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো, যে সবজি কিনছেন তাতে পোকা মারার বিষ দেয়া। তাই ওতে স্বাস্খ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া ফল ও সবজি গাছ থেকে তোলার পরই তার ভিটামিন কমতে থাকে। তাই বিষমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পেতে হলে নিজের আঙিনাতেই একটা ছোট্ট বাগান গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে কোথাও ফাঁকা জায়গা না থাকলে খোলা ছাদটাকে এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তাই ঝটপট পরিকল্পনা করে ফেলুন, এবার ছাদে কী কী গাছ লাগাবেন। ছাদে ভালো হয় এমন ফলের মধ্যে নানা জাতের জামরুল, করমচা, পেয়ারা, কাগজী লেবু, আম্রপালি আম, বারি আম ৪, ডালিম, কামরাঙ্গা, হাইব্রিড জলপাই, বাউকুল ও আপেল কুল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি অন্যতম। এ বছর না হয় এ ১০টি ফল দিয়েই শুরু করুন আপনার ছাদে ফলবাগানের যাত্রা। শুরুটা হোক নানা জাতের রূপবতী জামরুল দিয়ে।
জামরুলের আদি বাসভূমি আন্দামান-নিকোবর হলেও এখন আমাদের দেশী ফলে পরিণত হয়েছে। কাঁচাপাকা সব অবস্খাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।
সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।

জাত বাছাই দেশী জামরুল:
ফল আকারে ছোট, স্বাদে পানসে। তবে ফল ঝরে কম। দেশী জাতের জামরুলের বেশ কয়েক রঙের জামরুল দেখা যায়। লাল, গোলাপি, গোলাপি সবুজ ইত্যাদি রঙে দেশী জামরুলের কয়েকটি রকম আছে। গাছ বড় হওয়ায় ছাদে না লাগানোই ভালো।

থাই জামরুল:
থাই ভাষায় ছেম ফু পা, ফিলিপাইনে টামবিস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জামবু এয়ার নামের জামরুল বাংলাদেশে এসে হয়েছে থাই জামরুল। এ দেশে এখন কয়েক জাতের থাই জামরুল দেখা যাচ্ছে। এক জাতের থাই জামরুলের রঙ মোমের মতো সাদা, কিন্ত মুখের কাছে গোলাপি আভা। অন্য এক জাতের থাই জামরুলের রঙ সবুজাভ সাদা, অন্যটির রঙ দুধের মতো সাদা। আবার আরেক জাত আছে যেটার ফলের ওপর সাদা লম্বালম্বিভাবে গোলাপি আঁচড় আছে। আবার বড় লাল ফলও রয়েছে থাই জামরুলের। আছে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকার। লাল রঙের থাই জামরুলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব জাতের সেরা বড় আকারে সাদা রঙের মিষ্টি থাই জামরুল। দশটিতে কেজি হয়। স্বাদে বেশ রসাল, নরম। গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফল ধরতে শুরু কর্ বর্ষাতেও ফল ধরে। বছরে দু-তিন দফায় ফল ধরে। তবে বর্ষার জামরুলের স্বাদ কম হয়। ফল গাছে বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ও পচতে শুরু করে। বেশি বৃষ্টিতেও থাই জামরুলের ক্ষতি হয়।

রোজ অ্যাপেল:
থাই জামরুলের মধ্যে ‘রোজ আপেল’ সেরা। বছরে দু’বার ফল ধরে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একবার, এপ্রিল-মে মাসে আরেকবার। ফল আকারে খুব বড়। পাঁচ-ছ’টা জামরুলে এক কেজি হয়। ভেতরে পুরোটাই শাঁস। অত্যধিক মিষ্টি, শাঁসে চিনি বা সুগারের পরিমাণ প্রায় ২৫%। রঙ টকটকে লাল। অন্য জামরুল যেমন পাকার পর পরই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, এটা তেমন নয়।

আপেল জামরুল (বারি জামরুল ১):
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ জাতটির গাছে নিয়মিত প্রতি বছর ফল ধরে। এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয়। ফলের রঙ মেরুণ বলে অনেকে একে আপেল জামরুল নামেও ডাকেন। খেতে সুস্বাদু, মধ্যম রসালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল পাকে। ফল বড়, প্রতিটি ফলের ওজন ৩৫ গ্রাম। এ জাতটি ছাদে ড্রামে লাগানোর জন্য বাছাই করতে পারেন।

চাষ পদ্ধতি:
আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দোঁয়াশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে। সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারমাটি ভরবেন।
মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমর দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের মোক্ষম সময়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়। ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।
টবে পুদিনা পাতার চাষ
ঘরের ভেতর পুদিনা পাতার চাষ


ছাদে বাগান : প্রারম্ভে করনীয়

বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোন গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। আঙুর, বেদানা, ডালিম, আমড়া, পেয়ারা ইত্যাদি নান ধরনের মৌসুমী ফল ছাড়াও কলমি শাক, কলা, ডাঁটা, লাউ ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। কোন গাছের জন্য কি ধরনের মাটি উপযোগী তা নিশ্চিত হয়ে ছাদে বাগান করলে ভাল হয়। এ ছাড়া বেশি রোদ বা গরম সহ্য করতে পারে এমন গাছই ছাদে বপন করা উত্তম। ছাদে বাগান করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া। কারণ, বাগানের গাছগুলো যেহেতু সাধারণ মাটির সংস্পর্শ হতে দূরে থাকে তাই নিয়মিত পানি সেচ না দিলে গাছগুলো যেকোন সময় মারা যেতে পারে। সাধারণত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে গাছ ভাল জন্মে। ছাদে বাগান করতে হলে এ ধরনের মাটি ব্যবহার করলে ভাল হয়।

শখ করে আমাদের দেশে ছাদে বাগান করার প্রথা শুরু হলেও এখন রীতিমত অর্থনৈতিক খাত হিসেবে চিহ্নিত। অনেকেই আছে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে।

ছাদে বাগান করতে হলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল গাছে পানি দিতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া মাটির ধরণ জেনে বাগান করলে ছাদে যেকোন ধরনের গাছই জন্মানো সম্ভব। ৪-৫ কাঠা জমির উপর বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করলে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও বছরে বিক্রি কর যায় ৪০-৫০ হাজার টাকা।

ইচ্ছে করলেই শহরবাসী ফলের বাগান বা সবজি বাগান করতে জমি পান না। তাই বিকল্প উপায় বের করে আবাদি জমি নষ্ট না করে ছাদকে কাজে লাগিয়ে বাগান করা যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে এই ছাদে বাগান যা পরিবারকে করবে স্বচ্ছল।
ছাদে বাগান: বিস্তারিত তথ্য

বিশাল বাংলার জমিন যেমন বিস্তৃত, তেমনি লাখোকোটি দালান ঘরের ছাদও অবারিত বিস্তৃত। যদিও বাংলার জমিন এখনো যথোপোযুক্তভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে ছাদের কথা তো আরও পরে আসে। কিন্তু এ দেশের কিছু আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা ব্যক্তিগত আগ্রহ আর উদ্যোগে ছাদে বাগান করেন শখের বসে। বিনিয়োগের যেমন হিসাব থাকে না, তেমনি প্রাপ্তির হিসেবেও তেমনভাবে করা হয় না শখের ছাদের বাগানে। অথচ সামান্য আন্তরিকতা আর সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে এ প্রতিশ্রুতিশীল দিকটাকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারি। ছাদে বাগান করে ছাদের সৌন্দর্য যেমন বাড়ে, তার সাথে জায়গাটুকু ব্যবহার করে পরিবারের ফুল, শাকসবজি ও ফলের চাহিদা যথাযথভাবে মেটানো যায়। শুধু কি তাই পরিকল্পিতভাবে ছাদে বাগান করে বাড়তি আয়ও করা যায়। সর্বোপরি ছাদের বাগানে পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত আগ্রহী লোকগুলো দারুণভাবে সময় কাটাতে পারেন। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

বাগান পদ্ধতি ছাদে বাগান দু'ভাগে করা যায়। যেমন কাঠ বা লোহার ফ্রেমে এঁটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হলো টব, ড্রাম, পট কনটেইনার এসব ব্যবহার করে। প্রথম ক্ষেত্রে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। এ ক্ষেত্রে জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জল ছাদ না থাকলে আলাকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মাটি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে মাটির পুরুত্ব যত বেশি হবে। অন্তত দু'ফুট পুরু মাটির স্তর থাকতে হবে। তবে যত বেশি তত ভালো। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়েঅজনীয় পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রবার এসব ব্যবহার করা যায়। তবে যা কিছু দিয়ে বা যে ভাবেই বেড তৈরি হোক না কেন ৩/৪ বছর পর পুরো বেড ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ছাদে বাগানের জন্য শুরুতেই যদি মাটিকে ফরমালডিহাইড দিয়ে (প্রতি লিটার পানির সাথে ১০০ মিলিলিটার ফরমালডিহাইড) শোধন করে নেয়া যায় মাটি শোধনের কৌশল হলে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি নিয়ে বর্ণিত মাত্রায় ফরমালডিহাইড মিশ্রিত পানি মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে ৩/৪ দিন ঢেকে রাখতে হবে। পরে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের আলোর তাপে খুলে রাখতে হবে পরবর্তী ৩/৪ দিন পর্যন্ত। ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতির মধ্যে আছে ড্রাম, বালতি, টব, কনটেইনার এসবের যেকোন একটি বা দুটি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ খোয়া (ইট পাথরের কণা) দিতে হবে। ইটের খোয়া পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া এবং পাত্রের ভেতরে বাতাস চলাচলের সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রেও অর্ধেক মাটি এবং অর্দেক পঁচা জৈব সারের মিশ্রণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো। কেননা আমাদের বুঝতে হবে ফল গাছের শেকড় প্রকৃতিতভাবে বেশ গভীরে যায়। কিন্তু ড্রাম/টব/পাত্রের সীমিত জায়গার অভাবে যথাযথভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। সে জন্য ছাদের বাগানে টব/ড্রামের আকার যত বড় হয় তত ভালো হয়। টবে/ড্রামে গাছে/ জাত নির্বাচনের পর য়ৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে। যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিন পাশে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর পাশে দিতে হবে। এতে আলো বাতাস রোদ ভালোভাবে পাবে। তাছাড়া ছোট বড় জাতের মিশ্রণ করে সেটিং করলে গাছের গাত্র বৃদ্ধিসহ বাড় বাড়তি ভালো হয়। আরেকটি জরুরি কথা হলো ছাদে বাগাপন করার ক্সেত্রে ফল চাষাবাদে কলমের এবং হাইব্রিড জাতের ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।

তৃতীয় আরেকটি পদ্ধতি অনেকেই অনুসরণ করে। সুন্দরভাবে বাঁশ/পিলার রড দিয়ে জাংলো বা মাচা বানিয়ে পব/প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ গাছালী, অর্কিড আবাদ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ঝুলন্ত টব/পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার সদ্ব্যবহার করা যায়, দেখতেও সুন্দর লাগে।

যেভাবে করবেন মাটি তো নেই, বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের। কিন্তু গাছ তো দরকার। তাই শেষ ভরসা বাড়ির ছাদ। সেখানেই ফুল, সেখানেই ফল। পৃথিবীর অনেক দেশে এখন ছাদে বাগান করা সে দেশের সিটি করপোরেশনের বাধ্যতামূলক আইন। শহরের ইট-পাথর যেন সবুজের স্পর্শ পায়, আমাদের দেশে সেসবের বালাই নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে দুই-একটা ছাদ বাগান হয়েছে। কিন্তু নির্মল পরিবেশের জন্য যা খুবই কম। ছাদে বাগান আর মাটিতে বাগান এক বিষয় নয়, আবার কাজটি যে কঠিন, তাও নয়। জানা দরকার, ছাদের উপযোগী গাছ কোনগুলো। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য তা হাফ ড্রাম, টব নাকি চৌবাচ্চা কাঠামো করে লাগানো হবে এবং এসব গাছের জন্য পরিচর্যার ধরন কী হবে, তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। খোলামেলা ছাদ থাকলেই হলো। স্থায়ী বাগান করার জন্য ছাদে সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। গরুর নান্দার মতো বাজারে সিমেন্টের টব কিনতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে উত্তম হয় লোহার হাফ ব্যারেল হলে। ব্যারেলের দুই পাশে হাতল থাকতে হবে। এর সুবিধা হচ্ছে টবটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানো যাবে। টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। কয়েকটি ভাঙা চাড়ি ছিদ্রের মুখে দিয়ে মাটি ভরতে হবে। তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করুন। বর্ষার আগে আগে টবে চারা কলম লাগাতে হবে। এই টবে ফুল, ফল, সবজির চাষ করা যেতে পারে। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, দোলনচাঁপা, ডালিয়া, চন্দ্রমলি্লকা, ইউফোরবিয়াসহ মৌসুমি সব ফুলেরই চাষ করা সম্ভব। ছাদ বাগানে সবজিও ফলতে পারে। বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, শসা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, সিম, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি টবে ফলানো সম্ভব। ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, শরিফা, সফেদা, কামরাঙ্গা, বাতাবিলেবু, জলপাই, কদবেল, ডালিম, পেয়ারা, কমলা, মালটা, কুল ছাদ বাগানকে আকর্ষণীয়, অনন্য করে তুলতে পারে। আজকাল অনেকেই ছাদ বাগান করার জন্য এগিয়ে আসছেন। তবে ছাদে ফল গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। ছোট একটি টবে ফল ধরলে যেমন দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি ছাদে প্রচুর পরিমাণ রোদ লাগে বলে ফলও ভালো হয়।

ছাদে কি কি গাছ লাগাবেন : ছাদে বাগান করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছটি বড় আকারের না হয়। অর্থাৎ ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে। আম্রপালি ও মলি্লকা জাতের আম, পেয়ারা, আপেল কুল, জলপাই, করমচা, শরিফা, আতা, আমড়া, লেবু, ডালিম, পেঁপে, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। ছাদ বাগানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গাছ বাছাই। জেনে, বুঝে, বিশ্বস্ত নার্সারি, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করতে হবে। বেঁটে প্রজাতির অতিদ্রুত বর্ধনশীল ও ফল প্রদানকারী গাছই ছাদ বাগানের জন্য উত্তম। বীজের চারা নয়, কলমের চারা লাগালে অতিদ্রুত ফল পাওয়া যায়। আজকাল বিভিন্ন ফলের গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড় কলম পাওয়া যাচ্ছে। ছাদ বাগানের জন্য এসব কলমের চারা সংগ্রহ করতে পারলে ভালো হয়। টবে আমের মধ্যে আম্রপালি, আলফানসো, বেঁটে প্রজাতির বারোমেসে, লতা, ফিলিপাইনের সুপার সুইট, রাঙ্গু আই চাষ করা যেতে পারে। লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু, কমলা, মালটা, নারকেলি লেবু, কামকোয়াট, ইরানিলেবু, বাতাবিলেবু (অ্যাসেম্বল) টবে খুবই ভালো হয়। এ ছাড়া কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে। সঠিক মানের চারা হলে এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। আজকাল বিদেশ থেকে উন্নত মানের কিছু চারা কলম দেশে আসছে। ছাদ বাগানের সাধ পূরণ করার জন্য এসব সংগ্রহ করে লাগাতে পারেন। বাহারি পাতার জামরুল, পেয়ারা, সফেদা গাছও বিভিন্ন নার্সারিতে এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ছাদে এসব গাছ লাগানো হলে ছাদ বাগানের সৌন্দার্য বৃদ্ধি পায়।

টব : দরকারমতো সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। ছাদে টবে গাছ লাগানো অনেকেই পছন্দ করেন। টবে সার-মাটি দেওয়া খুব সহজ। আজকাল অনেকেই পোড়ামাটি এবং প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করেন। আবার টবের গায়ে রং দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। টবে গাছ লাগানোর সময় মনে রাখতে হবে যেন ওই গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টবের অল্প মাটিতে ওই গাছের খাদ্যপুষ্টি থাকে।

হাফ ড্রাম : বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে বড় দুটি টব তৈরি করা যায়। বড় জাতের এবং ফলের গাছের জন্য হাফ ড্রাম ভালো। এগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি টুকরো ইটের ওপর বসানো দরকার। অনেকে মনে করেন, ছাদের ওপর হাফ ড্রাম রাখলে ছাদের ক্ষতি হয়। এ ধারণা সঠিক নয়।

চৌবাচ্চা : ছাদে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর পানির ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে ইটের টুকরো এবং সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী চৌবাচ্চা তৈরি করা যায়। এই ধরনের চৌবাচ্চায় মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ চাষ করে ছাদের পরিবেশ সুন্দর রাখা যায় সহজেই।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি : ছাদের কোনো অংশে স্থায়ী বাগান করতে চাইলে সুবিধামতো আকারের স্থায়ী বেড তৈরি করা যায়। তবে চার ফুট দৈর্ঘ্য, চার ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট উচ্চতার বেড তৈরি করা ভালো। এ ধরনের বেড তৈরি করতে নিচে পুরু পলিথিন দিয়ে ঢালাই করলে ছাদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

টবের টিপস : ফুল কিংবা ফল গাছ যাই হোক না কেন, টব ব্যবহার করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, গাছের আকার কত বড় হবে। সেই মতো টবের আকার নির্ধারণ করা দরকার। পানি গড়িয়ে যাওয়ার জন্য টবের নিচে ছিদ্র থাকতে হবে। ছিদ্রের ওপর নারকেলের ছোবড়া বা ইটের টুকরো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। টবে ব্যবহারের আগে টবে ব্যবহার করা ছোবড়া বা ইটের টুকরো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। গরম পানিতে ধুয়ে নিতে পারলে ভালো। যে গাছের চারা লাগানো হবে তা সাধারণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এর ফলে রোগের সংক্রমণ অনেক কমে যায়। চারা কেনার সময় অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের চারা সংগ্রহ করা দরকার। গাছ বড় হলে প্রয়োজনে বড় টবে সাবধানে চারা স্থানান্তর করে নেওয়া যায়। তবে টব ভেঙে চারা গাছ বের করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, চারা গাছটি যেন কোনোভাবেই আঘাত না পায়।

টবের সার-মাটি : টবের গাছের খাদ্যপুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য মাটিতে দরকারি সার মেশাতে হবে। মাটি, গোবর সার, কম্পোস্ট, পচা পাতা, পরিমাণমতো রাসায়নিক সার মেশাতে হবে। শুকনো দূর্বা ঘাস টবের মাটির মাঝামাঝি দিয়ে তার ওপরে মাটি দিয়ে চারা গাছ লাগানো ভালো।

গাছ বা চারা নির্বাচন ছাদে বাগান যতটা না বাণিজ্যিক তার চেয়ে বেশি নান্দনিক এবং শখের। উদ্দেশ্য যাই থাক জাত নির্বাচনে সতর্ক সচেতন হওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে সাধারণ জমিতে যে ভাবে চাষ বাস করা যায় ছাদে সে ভাবে করা যায় না। গাছ সাধারণভাবে তাদের বাড় বাড়তির জন্য তেমন জায়গা পায়না। সেজন্য অতিরিক্ত যত্ম সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষভাবে সর্তক থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার ছাদের বাগানে কখনো ঝোপ/ঝাড়/বাঁশ টাইপের কোন বড় গাছ/জাত লাগানো যাবে না। এতে হিতের বীপরিত হয়ে যাবে। লেবু, পেয়ারা, আম, জামরুল, ডালিম, আমড়া, লিচু, কামরাঙ্গা, জলপাই, করমচা এসব ফল বেশী উপযোগী। ফলের ক্ষেত্রে হাইব্রিড বা দেশীয় যে কোন জাত থাকনা কেন কেন কলমের চারা ব্যবহার করা বেশি ভালো। এতে নানন্দিকতা ভালোভাবে রক্ষা পায়, কম জায়গা খরচ হয়। ফুল এবং সবজির ক্ষেত্রে জাতের কোন বালাই নেই। কেননা ফুল এবং সবজি কখনো বেশি জায়গা নেয় না। আমাদের দেশের প্রচলিত জাতের ফুল, শাকসবজির সবটাই সহজে উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়ির বারান্দায় মালতি লতা, দোপাটি, হাসনাহেনা। উঠোনে লাউয়ের মাচা, ঘি কাঞ্চন মরিচ। একটু দূরেই ডালিম, প্রবীণ আম বৃক্ষ। এসব স্মৃতি হয়ে গেছে। স্মৃতি হয়ে গেছে দলিজ ঘরের বারান্দার বাগান, নিকানো উঠোন। কংক্রিটের দেয়াল, বহুতল ভবন ওইসব স্মৃতি গিলে খেয়েছে। নগর সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটি। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। তারপরও অনেকে বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। জানালায় ঝুলিয়ে দেন মানিপ্লান্টের লতা। তবে স্বপ্ন থাকলে, ইচ্ছা থাকলে কংক্রিটের দালানকোঠার মধ্যেও বাগান করা সম্ভব। ফিরিয়ে আনা সম্ভব শৈশবের স্মৃতিঘেরা সেই হারানো লতা, ফুলের খশবু। ছাদে বাগান করে ফুল, ফল, সবজির সব স্বাদই পূরণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রথম প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি আর বাগানের প্রতি প্রেম।

যত্ম সেবা যেহেতু সীমিত আকারে সীমিত জায়গায় উৎপাদন করা হয় সেজন্য অতিরিক্ত যত্ম সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিভিন্ন পরিচর্যায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কেননা সার কমবেশি হলে, গাছের সাথে লেগে গেলে গাছ মরে যাবে, পরিমাণ মতো না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে।
টবের ক্ষেত্রে ছোট গাছ বড় হলে পট/টব বদল, ডিপটিং (পুরানো টবকে আলতো করে মাটিতে শুইয়ে গড়াগড়ি দিলে গাছটি টব থেকে বেড়িয়ে আসবে। পরে অতিরিক্ত মূল কেটে মাটি বদলিয়ে সার প্রয়োগসহ নতুনভাবে গাছ বসানো) করতে হবে সময়মতো। বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলিয়ে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে। ইদানিং বাজারে টবের মাটি কিনতে পাওয়া যায়। মানসম্মত মাটি কিনে টবে/পটে/ড্রামে ভরতে হবে।
খুব সাবধানতার সাথে টব/পটে/ড্রামে/চারা/কলম/বীজ লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণ মতো মাটির নিচে রোপন করতে হবে। চারা বা কলমের সাথে লাগানো মাটির বল যেন না ভাঙ্গে সেদিকে নজর রাখতে হবে। চারা বা কলমের ক্ষেত্রে বীজতলা/নার্সারিতে যতটুকু নিচে বা মাটির সমানে ছিল ততটুকু সমানে ছাদে লাগাতে হবে। বীজতলার থেকে বেশি বা কম গভীরে লাগালে গাছের বাড়বাড়তিতে সমস্যা হবে। মাঠে ফলমুল সবজি চাষের চেয়ে ছাদে সবজি চাষের অনেক পার্থক্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। চাদের বাগানে প্রতিদিন পরিষ্কার কার্যক্রম অনুসরণ করতে হবে। সেজন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে ফলনে সুবিধা হবে। ফুল এবং সবজিতে প্রয়োজন মাফিক সার প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে অন্তত দু'বার একবার বর্ষার আগে একবার বর্ষার পরে সাবধানে পরিমাণমত সার দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে নিতে হবে। কেননা বেশি আর্দ্র বা কম আর্দ্র কোন টাইপের সার প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কিছু সার পানিতে মিশিয়ে গাছ ছিটিয়ে দিতে হবে। গুঁটি সারও এ ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী।
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কোন ফলে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতি ২/৩ বার যদি চাদের বাগান পরিদর্শন করা যায় তাহলে বালাই আক্রমণ যেমন কম হবে তেমনি ফসলও পাওয়া যাবে অনেক। সুতরাং লাভ বেশি হবে। যদি হঠাৎ বেশি মারাত্মক আক্রান্ত হয়ে যায় তখন উপযুক্ত বালাইনাশক সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে হবে। আলোচ্য নিবন্ধে ছাদের কথা বলা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরন করে স্থানকালপাত্র অনুযায়ী ঘরের ভেতরে, সিঁড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় ও অনায়াসে গাছ লাগানো যায়।

সেচ নিস্কাশন ছাদে/টবে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপারা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে পড়ে মরে যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে প্রতিনিয়ত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ছাদের বাগানে সেচের জন্য ক্সিকিলার অর্থাৎ ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো। তাছাড়া প্লাস্টিকের চিকণ পাইপ দিয়েও পানি সরবরাহ বা দেয়া যায়। এক্ষেত্রে ডেলিভারি পাইপের মাথায় চাপ দিয়ে ধরলে পানি হালকাভাবে ছিটিয়ে পরে সুতরাং ইচ্ছে করলে ঐ পদ্ধতিও অনুসরণ করা যায়। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ অনেক নতুন তথ্য প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। শখের বিলাশী ঘটনাও সময়ের ব্যবধানে আবশ্যকীয় হয়ে যায় এবং সর্বজনবিদিত উপকারি ও জনপ্রিয় হয়ে যায়। ছাদের বাগানও তেমন। সময়ের প্রয়োজনে জীবনের প্রয়োজনে সবাই এক চিলতে জায়গাও খালি রাখতে চায় না। প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করতে চায়। দিন বদলের পরিক্রমায় অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ছাদের বাগান একটি আবশ্যকীয় প্রযুক্তি পদ্ধতি হয়ে স্থান পাবে। সবচেয়ে বড় কথা ছাদে বাগানকে একটি অতিরিক্ত লাভ হিসেবে পরিগণিত করা যায়।

তাই আমাদের যার যার সুযোগ আচে সে সুযোগকে যৌক্তিকভাবে কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের বহুমুখী লাভ হবে। আসুন আমরা সবাই এ সুযোগের আওতায় সর্বোচ্চ লাভ ঘরে তুলি, কৃষিকে সমৃদ্ধ করি দেশেকে সমৃদ্ধ করি।

ছাদে বাগানের কিছু জরুরি টিপস
১) লম্বা গাছকে ছোট গাছকে সামনে রাখতে হবে।
২) টবে বা ফ্রেমে খৈল দেয়া যাবে না, এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে।
৩) বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভালো।
৪) বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরাণ মাটি বদলিয়ে দিতে হবে। এটি অক্টোবর মাসে করলে ভালো।
৫) ছাদে বাগানের জন্য মিশ্র সার, গুঁটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুঁড়া (পচিয়ে) ব্যবহার করা ভালো।
৬) বাজারে স্টিল লোহার ফ্রেম পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে অনায়সে ছাদে বাগান করা যায়।
৭) অবস্থা বুঝে গাছের গোড়ায় চুনের পানি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করা যায়।





পুদিনা পাতা

পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। এই গাছের পাতা তরি-তরকারির সাথে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের বড়া তৈরির কাজে। বিশেষ করে রমজানের এই মাসে বাড়ি কিংবা ইফতারের দোকানগুলোতে ব্যাপকভাবে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও বোরহানী, সালাদ এমনকি ফুড ডেকোরেশন এর কাজেও ব্যবহার করা হয় এই পাতা। চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলেও রয়েছে পুদিনা পাতার নানা ব্যবহার। যারা রমজান মাসে পুদিনা পাতা পেতে চান তাদের এখনই বাড়ির ছাদে, বেলকনিতে অথবা বারান্দার গ্রীলে চাষ করতে পারেন এই পুদিনা পাতার গাছ।

চাষ কৌশল:
যে সব তেলের কন্টেইনার ফেলে দেয়া হয়, সেগুলো সংরক্ষণ করে খুব সহজেই চাষ করা যায় পুদিনা পাতার গাছ। এজন্য কন্টেইনারে শুকনো গোবর বা ফেলে দেয়া চা-পাতার সাথে দো-আঁশ মাটি ভালভাবে মেশাতে হবে। সেক্ষেত্রে গোবর ২কেজি, দো-আঁশ মাটি ৪ কেজি হারে মেশালে ফলাফল ভাল পাওয়া যাবে। ওই মিশ্রন থেকে প্রতিটি টব বা কন্টেইনারে ৩ থেকে ৪কেজি মিশ্রন স্থাপন করে পুদিনা পাতার গাছ লাগাতে হবে। অনেক নার্সারিতে পুদিনা পাতার গাছ পাওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই গাছের একটি পুরানো ডাল শিকড়সহ কেটে টবে বা কন্টেইনারে রোপন করলেই কিছুদিনের মধ্যে ওই পাত্র পুদিনা পাতার গাছে ভরে যায়। তাই প্রথমদিকে ২/৩টি গাছ সংগ্রহ করলে আর কখনও চারার জন্য অন্য জায়গায় যেতে হয় না। কন্টেইনারে বা টবে লাগানো গাছগুলো প্রয়োজনে তার দিয়ে বেঁধে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা ছাদেও এর চাষ করা যায়। যারা শহরে থাকেন তারা ছাদে, বরান্দায় এবং বেলকনিতে এর চাষ করতে পারেন।

অন্যান্য ব্যবস্থাপনা:
পুদিনা গাছের তেমন কোন যত্নের দরকার হয় না। তবে ২/৩ দিন পরপর সামান্য পানি দিতে হয়। এই গাছে সূর্যের আলোর তেমন প্রয়োজন হয় না তাই ডেকোরেশন প্লান্ট হিসেবে ঘরের মধ্যেও টবে লাগানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে টবগুলো বাইরে এনে গাছের গোড়ার মাটিগুলো আলগা করে দিতে হবে। লাগানো পাত্রের নীচে ২/৩টি ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে করে বাড়তি পানি পড়ে যায় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি পুরণ হয়। এ ছাড়াও ছাদের কোন এক স্থানে পলিথিন বিছিয়ে তার চারপাশে ইট অথবা বেড়া দিয়ে তারমধ্যে গোবর বা চা-পাতা মিশ্রিত মাটি দিয়েও পুদিনা পাতার চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেও এই পাতা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
এগ্রোবাংলা ডটকম
বানিজ্যিকভাবে পুদিনাপাতার চাষ

বাংলা, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, তেলেগু, তামিল সব ভাষাতেই এর এক নাম পুদিনা। এটা সুগন্ধিগাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছড়ার মধ্যেও বাজার থেকে পুদিনাপাতা কেনার ফরমায়েশ পাওয়া যায় ‘পুদিনা আনিও, পান আনিও’। খাদ্যকে সুরেচক করতে পুদিনাপাতার কোনো জুড়ি নেই। শহরাঞ্চলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। সুদূর অতীত থেকে এ দেশে পুদিনাপাতার চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ নয়, কোনোভাবে বাড়ির আঙিনায় দু-চারটা গাছ লাগিয়ে পারিবারিকভাবে ব্যবহার করা। আজকাল বাজারে আঁটি আঁটি পুদিনাপাতা সারা বছর বিক্রি হচ্ছে। তাই পুদিনাকে শুধু বাড়ির আঙিনায় আটকে রাখা ঠিক হবে না। চাইলে অন্য ফসলের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে। বিদেশেও পুদিনাপাতার চাহিদা আছে। রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ হতে পারে। পুদিনাপাতার ওপর ভিত্তি করে স্খাপিত হতে পারে পিপারমেন্ট অয়েল উৎপাদন শিল্প।

গাছ পরিচিতি : পুদিনা একটি সাধারণ আগাছা ধরনের গাছ। কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। কাণ্ডের রঙ বেগুনি, পাতার রঙ সবুজ। পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা। পাতা কিছুটা রোমশ ও মিন্টের তীব্র গìধযুক্ত। গাছের নিচের অংশ থেকে অনেক ধাবক বের হয়। পুদিনাপাতার গাছ লেবিয়েটিসি পরিবারের মেন্থা গনের অন্তর্গত। এ গনের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে গপষয়ভথ থড়ংপষঢ়মঢ় এ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ভালো জন্মে। জাপানি জাত চাষের জন্য ভালো।

ব্যবহার : পুদিনাপাতার গাছ থেকে পিপারমেন্ট তেল তৈরি হয়। তেল বেশ মূল্যবান। বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী বিশেষ করে টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১০ টন পিপারমেন্ট তেলের শিল্প চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। এই পরিমাণ তেল উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার একর জমিতে পুদিনা উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার পিপারমেন্ট অয়েল তাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ দেশের বাজারে মূলত কাঁচা পুদিনাপাতার চাহিদাই বেশি। প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন কাঁচা পুদিনাপাতার চাহিদা রয়েছে।

পুদিনা এ দেশে চাষ হয় মূলত চাটনি, সালাদ আর বোরহানি বানানোর জন্য। এর যে আরো অনেক ব্যবহার আছে সেটাই হয়তো আমরা জানি না। কাঁচা পুদিনাপাতার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চাটনি ও সালাদে। ইদানীং বিভিন্ন পার্টিতে টক দইয়ের বোরহানি তৈরির জন্য পুদিনা পাতার ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়া মাছ, গোশত, সস, স্যুপ, চা, তামাক, শরবত ইত্যাদি সুগìিধ করতে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে ভেড়ার গোশতের রোস্ট ও মিন্ট জেলি তৈরি করতে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার তেল তৈরিতে। গাছে যখন ফল আসে তখনই পাতায় তেলের মাত্রা বাড়ে। ওই সময় গাছ তুলে পাতন প্রক্রিয়ায় তেল নিষ্কাশন করা হয়। গাছের নিচের পাতা হলদে হওয়া শুরু করলেই কাটিং নিয়ে তেল নিষ্কাশন করা হয়। মৌসুমে একই গাছ থেকে দু’বার কাটিং সংগ্রহ করা যায়। কাটিংগুলোকে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে ঝুলিয়ে শুকানো হয়। কাঁচা পাতার চেয়ে শুকনো পাতা থেকে তেল নিষ্কাশন সহজ ও সস্তা।

চাষাবাদ : কাটিং বা তেউড় লাগিয়ে চারা তৈরি করা হয়। পুরনো ক্ষেত থেকে কাটিং নিয়ে হাপরে বসিয়ে চারা তৈরি করে নিতে হবে। কাটিংয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ সেন্টিমিটার। জমিতে চারা রোপণের সপ্তাহখানেক আগে চারা তৈরি করতে হবে। প্রতি হেক্টর জমি চাষের সময় মাটির সাথে ১০ থেকে ১৫ টন গোবর বা জৈবসার মিশিয়ে দিতে হয়। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করার পর চারা রোপণের আগে ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হয়। বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেন্টিমিটার। প্রতি বেডের মাঝে নালা থাকবে। বেডের দৈর্ঘ্য জমির আয়তন অনুসারে কম-বেশি হতে পারে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য বেডের আকার একটু অন্য রকম হবে। এ ক্ষেত্রে বেড ১ মিটার চওড়া ও ৪৫ মিটার লম্বা হবে। এ পরিমাণ জমির জন্য গোবর বা কম্পোস্ট সার লাগবে ২০ ঝুড়ি (২০০ কেজি), হাড়ের গুঁড়া ৫ কেজি, টিএসপি সার ১-১.৫ কেজি, কাঠের ছাই ৫ কেজি অথবা এমওপি সার ১ কেজি। এসব সার বেড তৈরির সময় বেডের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বর্ষার আগে ও পরে চারা রোপণের নিয়ম। সে অনুযায়ী জুন অথবা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পুদিনার চারা রোপণ করা যেতে পারে। বেডে ৩০ সেন্টিমিটার পরপর চারা রোপণ করা যেতে পারে। চারা রোপণের পর সেচ দিতে হবে। প্রতি দুই মাস পরপর প্রতি বর্গমিটারে ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গাছ লম্বা হতে শুরু করলে ১০ সেন্টিমিটার মাপের কাটিং বা ডাল কেটে ১০-১৫টি ডাল একটি আঁটিতে বেঁধে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠাতে হবে। প্রতি দু’বার কাটার পর একই নিয়মে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার দেয়ার পর সেচ দিতে হবে। বাণিজ্যিক জমিতে চারা রোপণের ১০-১২ সপ্তাহ পর থেকে প্রতি মাসে একবার করে প্রতি বর্গমিটারে ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে যেতে হবে।
টবে বাহারী ফুলের চাষ

পৃথিবীতে ফুলের মতো সুন্দর আর পবিত্র কোনো কিছু নেই। কিন্তু সেই সুন্দরকে কাছে রেখে উপভোগ করার সৌভাগ্য কয়জনের হয়? বিশেষ করে আমরা যারা শহরে থাকি তাদের তো ফুলগাছ লাগানোর জমিই নেই। বিল্ডিংয়ের ছাদ, বারান্দা, না হয় সিঁড়িঘরটাই ভরসা। সেখানে তো আর মাটি নেই। মাটি ছাড়া ফুলগাছ কেমন করে হবে? তাই পোড়ামাটির টবে কাঁচা মাটি রেখে তার ভেতর দুই-চারটা ফুলগাছ লাগিয়ে সে আনন্দ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মুশকিল হলো, সব ফুলের গাছ আবার টবে ভালো হয় না। বিশেষ করে বৃক্ষজাতীয় দীর্ঘজীবী ফুলগুলো টবে বেশি না লাগানোই ভালো। বিভিন্ন মৌসুমি ফুল টবের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে যে ফুলগাছই লাগানো হোক না কেন সেগুলো যেন রোদ পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটু হিসাব করে পরিকল্পনামতো টবে ফুলগাছ লাগালে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুলের দেখা পাবেন।

টবে কী কী ফুলগাছ লাগাবেন গ্রীষ্ক্নকালে টবের জন্য বেছে নিতে পারেন গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, সুর্যমুখী, জিনিয়া, পিটুনিয়া, সিলোসিয়া বা মোরগঝুঁটি, দোপাটি, ক্যালিয়েন্ড্রা বা মণিকুন্তলা, ব্রানফেলসিয়া বা বিচিত্রা ইত্যাদি। বর্ষার ফুল হিসেবে টবের জন্য ভালো হবে হাইড্রেঞ্জিয়া, বেলি, জুঁই, চাঁপা, পত্রলেখা বা মুসেন্ডা, তুষারমোতি বা পোর্টল্যান্ডিয়া, দোপাটি, জিনিয়া, সুর্যমুখী (ছোট), স্থলপদ্ম, মালতীলতা প্রভৃতি। শীতকালে টবে লাগাতে পারেন গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া ইত্যাদি। সারা বছর ফোটে এমন ফুলের মধ্যে রয়েছে কাঞ্চন (সাদা), জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা বা অ্যালামন্ডা, জয়তী বা জ্যাট্রোফা, হাজারপুটিয়া, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি। কয়েক বছর বাঁচা স্থায়ী স্বভাবের গাছগুলো হলো বেলি, জুঁই, বাগানবিলাস বা বোগেনভিলা, গোলাপ, জবা, করবী, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, কুন্দ, চাঁপা, মুসেন্ডা, কামিনী, অ্যালামন্ডা, স্থলপদ্ম, পোর্টল্যান্ডিয়া, ব্রানফেলসিয়া, ক্যামেলিয়া, টগর, শিউলি, পয়েনসেটিয়া। ছাদবাগানের জন্য এসব গাছ ভালো। সেখানকার জন্য এই বর্ষাতেই এসব গাছের চারা জোগাড় করে লাগিয়ে ফেলতে পারেন। তবে কোনো পুষ্কপ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে গাছ করার জন্য প্রদর্শনীর নির্ধারিত দিনের সঙ্গে নির্বাচিত গাছের প্রয়োজনীয় সময়ের হিসাব করে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা, বাগানের মাটিতে লাগানো গাছের ফুল ফোটার সময় টবের গাছের চেয়ে ১০-১২ দিন বেশি লাগবে।
তবে যাঁরা মাত্র কয়েকটা গাছ লাগিয়ে এবারই টবে গাছ লাগানোর হাতেখড়ি দিতে চান তাঁদের বলব, সহজে মরে না এবং একটু কম যত্ন নিলেও ফুল ফোটে, এমন সব গাছ লাগাতে। এ রকম ফুলের গাছগুলো বেশ পরিচিত, সহজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে নয়নতারা, সন্ধ্যামণি, দোলনচাঁপা, কলাবতী, অ্যালামন্ডা, গাঁদা, বেলি, নাইটকুইন, হাসনাহেনা, রঙ্গন, মুসেন্ডা, কুঞ্জলতা, পর্টুলেকা বা টাইমফুল প্রভৃতি লাগানোর জন্য পছন্দ করতে পারেন। লাগাতে পারেন ফুল দেওয়া বিভিন্ন ক্যাকটাস (যেমন−ইউফরবিয়া), এগুলো সহজে মরে না।

টবে ফুলগাছ লাগাবেন কী করে প্রথমে গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব চলবে না।
প্রতি টবের জন্য দোআঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু মুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়। এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকবে।

মৌসুমি ফুলের ক্ষেত্রে মাসখানেক বয়সের ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার বেলায় অল্পবয়সী ভালো ও তরতাজা, গাট্টাগোট্টা দেখে চারা বা কলম লাগানো ভালো। চারা লাগানোর পর আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। লাগানোর পর গোড়ায় পানি দিতে হবে।
গাছকে খাড়া রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। গাছের চারা অবস্থা থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি বা স্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
সদ্য লাগানো ফুলের চারা কয়েক দিন ছায়ায় রেখে সহনশীল করে নিতে হয়। এ অবস্থায় সকালে ও বিকেলে রোদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
টবে গাছের গোড়ার মাটি একেবারে গুঁড়ো না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ কাজটি প্রতি ১০ দিনে একবার করে করতে হবে।

কুঁড়ি আসার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ৫০ গ্রাম টিএসপি (কালো সার), ১০০ গ্রাম ইউরিয়া (সাদা সার) ও ২৫ গ্রাম এমওপি (লাল সার) একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতি গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর দিতে হবে। তবে এক মৌসুমে এই রাসায়নিক সার তিনবারের বেশি দেওয়ার দরকার নেই। তবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার কোনোক্রমেই শিকড়ের ওপর না পড়ে। ট্যাবলেট সার দিলে এসব সার দেওয়ার আর দরকার নেই।
বেশি দিন ধরে ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে কখনো ফুল শুকাতে দিতে নেই। ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভালো ফুল পাওয়া যায়। গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছ থেকে বেশি ফুল বেশি দিন ধরে পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ি চিমটি দিয়ে ছেঁটে দিতে হবে।


বে ব্রোকলি চাষ
টবে ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি চাষ

ব্রোকলি

ব্রোকলি। একটা উৎকৃষ্ট সবজি, তবে মাঠ থেকে তোলার পর তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় বলে টবে চাষ করতে পারলে ভাল হয়। ব্রোকলিতে ভিটামিন সি, ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি আছে। এছাড়া অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে অল্প পরিমাণে।

জাত:
আমাদের দেশে এল সেন্ট্রো, ডি সিক্কো, প্রিমিয়াম ক্রস, গ্রীন কমেট ইত্যাদি জাতের ব্রোকলি পাওয়া যায়।

সময়: আশ্বিন-অগ্রহায়ণ (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) চাষের সময়।

বীজ থেকে চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা তৈরি করে মূল টবে লাগাতে হবে। বীজ গজাতে সময় লাগে ৩/৪ দিনে। ৮/৯ দিন বয়সের চারা তুলে অল্প দূরত্বে আরেকটি বীজতলার টবে লাগাতে পারলে শক্তিশালী চারা পাওয়া যাবে।

সার ও মাটি:
গোবর, টিএসপি ও খৈল দিয়ে সার-মাটি তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে মাটি সব সময় নরম তুলতুলে থাকলে গাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে।

চারা রোপণ:
৩/৪ সপ্তাহের সুস্থ চারা সার-মাটি ভরা টবে লাগতে হবে। চারা লাগাতে হবে

বিকাল বেলাতে। চারা লাগানোর পর গোড়ায় মাটি খুব হালকা করে চেপে দিতে হবে। কেননা জোরে চাপ দিলে নরম শিকড় ছিঁড়ে যেতে পারে।

পরিচর্যা:
ব্রোকলির চারা লাগানোর প্রথম ৩/৪ দিন চারাকে ছায়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে
এবং চারা না লেগে যাওয়া পর্যন্ত সকাল-বিকাল পানি দিতে হবে। চারা লেগে গেলে মাঝে মাঝে মাটি একটু খুঁচিয়ে দিতে হবে এবং ২/১ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। গাছ একটু বড় হলে ১৫ দিন পরপর তরল সার বা পাতার সার দিলে ভাল হয়। পরে গোড়ার মাটি চারদিক থেকে তুলে দিতে হবে এবং টবের কিনার বরাবর সেচ দিতে হবে।

ক্ষতিকর পোকা: শুঁয়া পোকা ও জাব পোকা ব্রোকলির ক্ষতি করে।

প্রতিকার:
জাব পোকা বেশি হলে রিডেন ও শুঁয়া পোকা বেশি হলে মার্শাল ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে সহকারি উপ-কৃষি কর্মকতার পরামর্শ অনুযায়ী। যদি শুঁয়া পোকা এবং জাব পোকা একসাথে আক্রমণ করে তাহলে নাইট্রো ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে।

ফসল সংগ্রহ:
ব্রোকলির চারা রোপণের পর ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে সবজিটি খাবার উপযোগী হয়। ব্রোকলির কাণ্ডের শাঁস খুব নরম হয় বলে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ফুল ২/৩ সপ্তাহ হলে খাওয়ার উপযোগী হয়। ফসল সংগ্রহের সময় প্রথমে উপরের ফুলটি কেটে নিয়ে গাছটি বাড়তে দিলে নিচের পাতার গোড়া থেকে আবার ফুল বের হবে যা পরবর্তীতে সময়মত সংগ্রহ করা যাবে।


টবে ঢেঁড়শ চাষ

ঢেঁড়শ

শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই শ্রেষ্ঠ জায়গা। তবে যারা শহরে বাস করে তাদেরও শাকসবজি উৎপাদনের রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়।

ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাছাড়া ভিটামিন -এ সহ অন্যান্য উপাদানও কিছু কিছু রয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন সময় ঢেঁড়শ লাগানো যায়।

টবের মাটি:
গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভাল ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।

জাত:
ঢেঁড়শের নানা জাত রয়েছে। এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলী ডোয়ার্ফ, লক্ষৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট, পেন্টাগ্রীণ-এসব বিদেশী জাত জনপ্রিয়।

সময়:
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ঢেঁড়শ লাগানো যায়। এরপরও লাগানো যায় তবে নাবী ফসলে মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন ভাল হয় না।

বীজ বপন:
ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীণ সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে। ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে। প্রতি টবে ২ থেকে ৩টি বীজ বুনে দিতে হয়। চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরীতে গজায়। তাই বুনার আগে ২৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

পরিচর্যা:
ঢেঁড়শ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটা টবে পানি যাতে না বেধে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছ ১০ থেকে ১২ সেঃ মিঃ বড় হলে টবের কিনার ঘেঁসে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা-চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

রোগবালাই:
শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। শুঁয়া পোকার আক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিঃ লিঃ ডায়াজিনন-৮০, নুভাক্রণ-৪০, একালাক্স-২৫ এর যে কোনটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ-১০ মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপনের দু'মাস পরেই ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়। দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে।

টবে লেটুস চাষ

লেটুস

শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই একমাত্র স্থান নয়। শহরেও শাকসবজি উৎপাদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনের জন্য একান্ত ই যদি একখণ্ড জমি না থাকে তাহলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই শাকসবজি চাষ করা যায়।

লেটুস পুষ্টিকর সালাদ জাতীয় সবজি, লেটুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে। কাজেই সুষম খাদ্যের জন্য এটা বেশ প্রয়োজনীয়।

টবের মাটি: গাছের বৃদ্ধি এবং সবজি জাতীয় ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।

সময়: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন- অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগাতে হবে।

বীজ বা চারা: গামলা টবে বীজ বুনলে ৩ থেকে ৪ দিনে চারা গজায়। চারার ৪/৫টি পাতা গজালে টবে লাগাতে হয়। লেটুসের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।

চারা রোপণ: পরন্ত বিকেলে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয় যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়। চারা লাগানোর পর ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকনী দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে।বিভিন্ন নার্সারি থেকে ১০ টাকার পলিব্যাগে একটি চারা অথবা ৩০০ টাকায় এক হাজার বীজ কিনতে পারবেন।

রোগবালাই: গোড়া পচা, আগা পোড়া দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। জাব পোকা লেটুসের খুব ক্ষতি করে। কীটনাশক স্প্রে করতে হবে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী। কীটনাশক ছিঁটানোর ৭ দিনের মধ্যে লেটুস খাওয়া যাবে না। লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

পরিচর্যা: টবে চারা লাগানোর পরপরই অনেক সময় দেখা যায় চড়াই শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে দু'চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতোভাবে টবেটি ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে।

ফসল সংগ্রহ: চারা লাগনোর এক মাসের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।



টবে ধনেপাতার চাষ

ধনেপাতা

শীতকাল-হল নানা রকম সবজিসহ সালাদ-শস্য চাষের মৌসুম। শীতকালীন সালাদ-শস্যের মধ্যে ধনেপাতা অন্যতম। এর ইংরেজী নাম Parsley। বিভিন্ন তরকারি, চটপটি সুস্বাদু করতে ধনেপাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই বহুল প্রচলিত। যারা শহরে থাকেন তাদের জন্য সুসংবাদ হল শীতকালীন সালাদ-শস্য ধনেপাতা চাষ করতে পারেন টবে করে বাসার ছাদে অথবা বারান্দায়।

ধনেপাত: ধনেপাতার খাদ্যমান অনেক বেশি। এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। টবে ধনেপাতার চাষ করার সুবিধে হচ্ছে, মৌসুমে কয়েকবার খেয়ে আবার চাষ করা যায়।

চাষের সময়: আশ্বিন থেকে পৌষ (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর)

বীজ বপন: ধনের বীজ ২৪ ঘন্টা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে ভিজিয়ে রাখলে তাড়াতাড়ি গজাবে। ধনের জন্য চওড়া মুখ বিশিষ্ট টব নির্বাচন করতে হবে। ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বুনে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে জল দেওয়ার দরকার নেই।

পরবর্তী পরিচর্যা: মাটিতে রস না থাকলে ২/১ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে। পাখি যাতে পাতা না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ বোনার পর পিঁপড়া যাতে খেয়ে ফেলতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিঁপড়া লাগলে পাইরিফস বা পাইরিবান অথবা সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে পিঁপড়া দমন করতে হবে।

পাতা তোলা: গাছ খুব ঘন হলে তা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বেশি বড় হওয়ার আগে তুলে খেতে হবে।
ধনে উৎপাদন প্রযুক্তি

ধনিয়ার চাষ সব রকমের মাটিতে করা যায়। তবে বেলে দোঁআশ থেকে এঁটেল দোঁআশ মাটি ধনিয়া চাষের জন্য উপযোগী। ধনে আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকতে হবে।
বপনের সময় : সেপ্টেম্বর মাস।

জমি তৈরি : মাটিও জমির প্রকার ভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হয়।

বীজ বপন : বীজ বোনার আগে পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি দ্বিগুণ বীজ ব্যবহার করতে হবে। ধনে অন্য কোনো ফসলের সঙ্গে মিশ্র ফসল হিসেবে সারি পদ্ধতিতে বপনের জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : ধনে চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টর প্রতি ১৫০-৩০০ কেজি ইউরিয়া, ১০০-২০০ কেজি টিএসপি, ৮০-১০০ কেজি এমপি এবং ৭-১০ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ৮৮-১০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে এবং চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : পাতা ফসলের ক্ষেত্রে চারা গজানোর ১০-১৫ দিন পর প্রতি সারিতে ৫ সেন্টিমিটার পর পর একটি চারা রেখে অন্যগুলো তুলতে হবে। বীজ ফসলের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ সেন্টিমিটার পর পর একটি চারা রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। প্রতিবার সেচের পর পর জমির ‘জো’ আসা মাত্র মাটির চটা ভেঙে দিলে গাছের শিকড় প্রচুর পরিমাণে আলো বাতাস পাবে, ফলে গাছের বৃদ্ধি সহজ ত্বরান্বিত হবে। ধনে গাছে জমির পানি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমাকৃত অতিরিক্ত সেচের পানি বা বৃষ্টির পানি ২-১ ঘণ্টা মধ্যেই নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।




সবজি চাষ করুন টবে

সবজি চাষ করুন টবে

শাক-সবজি আমাদের শরীরের ভিটামিন ও খনিজ পর্দাথের উৎস। সুতরাং শাক-সবজি যত টাটকা খাওয়া যায় ততই ভাল। স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য শহরের বাসিন্দারা টাটকা সবজির জন্য মূলত বাজারের উপর নির্ভরশীল। অথচ অল্প পরিশ্রমেই বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, কার্ণিশে, বড়-মাঝারি-ছোট বিভিন্ন আকারের টবে পছন্দ মাফিক শাক-সবজির আবাদ করতে পারে। টবে আবাদযোগ্য শাক-সবজি হল টমেটো, বেগুন, মরিচ, শশা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, মটরশুটি, কলমি শুটি, কলমি শাক, লাউ, পুঁই শাক, পেঁপে, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, থানকুঁনি, লেটুস, ব্রোকলি ইত্যাদি।

টবের বীজতলার মাটি:
শাক-সবজির বীজতলার জন্য মাটি হতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা এবং পানি ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন। মাটি চালনি দিয়ে চেলে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। দুই ভাগ বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে দুই ভাগ জৈব সার মিলিয়ে নিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করে নিতে হয়। মাটি যদি এঁটেল হয় তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগমের সুবিধার জন্য একভাগ বালি মিশিয়ে হালকা করে নিতে হবে। মাটিকে শোধন করে জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে চারাকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করা সহজ। সাধারণত এক লিটার ফরমালডিহাইড শতকরা ৪০ ভাগ ৪০ লিটার পানিতে মিশিয়ে এই দ্রবণের ২৫ লিটার প্রতি ঘন মিটার মাটিতে কয়েক কিস্তিতে ভিজিয়ে দিতে হয়। এরপর দু'দিন চটের কাপড় দিয়ে মাটি ঢেকে রেখে পরে চট উঠিয়ে দিলে মাটি জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে।

বীজ বপন ও সেচ:
আগের নিয়মে মাটি হালকা ঝুরঝুরে করে টবের উপরের ভাগ সমতল করতে হবে। খুব হালকাভাবে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে টবের ভেতর। এরপর জৈব সার দিয়ে বীজগুলোকে ঢেকে দিতে হবে। পানি দিতে হবে নিয়মিত ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত ঝাজরি দিয়ে। লক্ষ্য রাখতে হবে, পানির ঝাপটায় যাতে বীজের উপর জৈব সারের আবরণ সরে না যায়। যে সব বীজ আকারে ছোট সেগুলোর ক্ষেত্রে উপর দিয়ে পানি দিলে বীজগুলো পানির ধাক্কায় একস্থানে অঙ্কুরোদগমে ব্যঘাত ঘটতে পারে। তাই সব টবের উপর দিয়ে পানি না দিয়ে তলা দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করা উচিত।

পরিচর্যা:
অনেক সময় শাক-সবজির চারা, বিভিন্ন প্রকার পাখি, পিঁপড়া, মাকড়সা ইত্যাদি নষ্ট করে ফেলতে পারে। তার জন্য হেপ্টোক্লোর ৪০ পরিমাণ মত দিয়ে যাবতীয় পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা যায়। তবে পাখির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে হলে টবের উপর তারের বা নাইলনের জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় টবের মাটিতে বীজ বপনের আগে বিভিন্ন প্রকার আগাছা জন্মাতে পারে। আগাছাগুলো নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে। টবে চারা জন্মালে চারার গোড়ায় যেন আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, শাক-সবজি টবগুলোতে অবশ্যই আলো-বাতাস পায় এমন জায়গায় রাখা দরকার। তবে অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি-রোদ-তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য সাময়িকভাবে টব নিরাপদ স্থানে সরানো যেতে পারে।

সবজি সংগ্রহ:
সবজি সময় মত সংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সবজি বেশিদিন গাছে না রেখে বেশি পোক্ত না করে নরম থাকতেই তুলে খাওয়া ভাল। এতে করে একদিকে যেমন নরম খাওয়া যায় অন্যদিক গাছে আরও বেশি সবজি আসে। সবজি গাছ থেকে ছিঁড়ে সংগ্রহ করা যাবে না। আস্তে করে কেটে সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে সবজি গাছের কোন ক্ষতি হবে না।

টবে সবজি আবাদের সুবিধা:
টবে সবজি আবাদের বিশেষ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। যেমন- প্রাকৃতিক দূযোর্গ, প্রচণ্ড গরম, অতিরিক্ত বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদির কবল থেকে টবের সবজিকে রক্ষা করা যায় স্থানান-র করে। পশু-পাখির উপদ্রব থেকে বাঁচানো যায় জাল দিয়ে ঘিরে রেখে। সংসারের অব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পাত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে আনা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি অপব্যয় হয় না। নিজেরা তৈরি করে জৈব সার ব্যবহার করা যায় সবজিতে। ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এগুলো সাজিয়ে রাখা যায় ঘরের বিভিন্ন জায়গায়।







«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply