বিগ বসের অভিজ্ঞতা বিষাক্ত!
বিগ বসের চ্যাম্পিয়ন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবেই বর্ণনা করলেন বিগ বসের বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর অভিজ্ঞতা। অকপট সাক্ষাৎকারে বললেন, আবার বিগ বসে গেলে বর্ম পরে যাব।
বিগ বসে যাবার আগের অনুভূতিটা ঠিক কেমন ছিল?
• ভয় এবং আনন্দ মেশানো বলা যায়। কারণ আমি জানতাম যে আমি এমন একটা জায়গায় যাচ্ছি, যেখানে তিন মাসেরও বেশি সময় বাইরের জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে আমাকে কাটাতে হবে। সামান্য কিছু কেনার মতো পয়সাও আমার কাছে থাকবে না। ফোন থাকবে না। আর আমার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় যে পিছুটানটা ছিল সেটা হল, আমার ছেলে। যার গলার আওয়াজ না শুনলে আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। তাই ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত হয়ত আমি টিকে থাকতে পারব না। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমায় ব্যাক টু প্যাভেলিয়ন হতে হবে।
কিন্তু ঘটনাটা ঘটল একদম বিপরীত। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরলেন। বিগ বসের বাড়িতে থাকাকালীন অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
• খুব সত্যি কথা বললে বলতে হয় বিষাক্ত, বিষাক্ত এবং বিষাক্ত। মানুষ যে এত নেগেটিভ হতে পারে, ওখানে না গেলে আমি হয়ত জানতেই পারতাম না। কোনও ভদ্রবাড়ির মহিলাদের মুখে যে এমন কুৎসিত ভাষা থাকতে পারে, আমি ভাবতেও পারিনি। সেই সঙ্গে মানুষের সঙ্গে এমন খারাপ ব্যবহার যে করা যায়, সেটা সত্যিই আমাকে অবাক করেছে। সে রকম পরিস্থিতিতেও যে আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছি, সেটা আমার সৌভাগ্য। আর সৌভাগ্য সেই সব ভদ্র মানুষদের পাশে পেয়ে, যাঁদের ভোটের ফলে আজ আমি ওইরকম খারাপ পরিবেশের মধ্যে থেকেও বিজয়ী হতে পেরেছি। তবে এই প্রসঙ্গে একজনের কথা না বললেই নয়, তিনি শিলাজিৎদা। বিগ বসের পরিবারে ওঁর মতো ভদ্র মানুষ আমি পাইনি।
কিন্তু শিলাজিতের ওপর তো মহিলাদের অহেতুক ‘হ্যারাস’ করার অভিযোগ উঠেছিল—
• প্রত্যেকটা মানুষের একটা সহ্যের সীমা আছে। আমরা ওখানে খেলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেইরকম একটা প্রেক্ষাপটে যদি কেউ বা কারা কোনও পুরুষ প্রতিযোগীর স্ত্রী, সন্তান এবং তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ক্রমাগত খারাপ কথা বলতে থাকে, তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে, তবে মাথাগরম হতে বাধ্য। শিলাদার ঠিক সেটাই হয়েছিল। আসলে শিলাদা এমন একটা মানুষ, যে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে ভয় পান না। আমি সব কিছু সহ্য করে মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছি, শিলাদা সেটা পারেননি। এটাই পার্থক্য।
কিন্তু আপনাদের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ উঠেছিল যে আপনারা ইচ্ছাকৃতভাবে মহিলাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন?
• শুধু তাই কেন? আমরা লবি করছিলাম— এই অভিযোগটাও তো উঠেছিল। দেখুন, আমার বাড়িতে বাবা- মা আছেন। আমার স্ত্রী আছে। আমরা সবাই মিলে বসবাস করতেই অভ্যস্ত। তাই সকলকে যেমন মানিয়ে নিতে পারি, ঠিক সেরকমই মহিলাদের সম্মানও দিতে জানি। সেই শিক্ষাতেই আমি বড় হয়েছি। তাই এ সব যারা রটায়, আমার তো মনে হয় গলদটা আসলে তাদের নিজেদের মধ্যেই। একজন মহিলা ইচ্ছাকৃতভাবে জানালার পর্দা সরিয়ে পোশাক পরিবর্তন করছেন। সেদিকে একটি পুরুষের চোখ পড়লেই তা অপরাধ হয়ে গেল! বিগ বসে একটা সময় তো দেবলীনা, এনা বা অদিতিও আমাদের সঙ্গে ছিল। তখন তো তারা এরকম কোনও অভিযোগ আনেনি।
আপনাদের টিমের প্রীতি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল, আপনি নাকি ওর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন। এটা কি ঠিক?
• প্রীতির প্রাণের বন্ধু ছিল স্যান্ডি। আর সেই স্যান্ডিই ওকে একদিন ধাক্কা মেরেছিল। ঠিক তার পরেই স্যান্ডি নমিনেটেড হয়ে যায়। আসলে ওখানে অনেকেই আমার ঠান্ডা আচরণ ও সহ্যশক্তির প্রশংসা করে বলাবলি করছিল যে আমিই চ্যাম্পিয়ন হব। আর প্রীতি চাইছিল আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নমিনেটেড করতে। তা ছাড়া অতগুলো ক্যামেরার সামনে খারাপ কিছু করলে ধরা পড়ত না?
কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রীতি তো বলেছিল যে, ওর হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এই এপিসোডটা দেখছে, তাতে ওর সম্মানহানিও নাকি হয়েছে?
• যে সপ্তাহে আমার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনা হল, তার পরের সপ্তাহেই দেখা গেল অভিযোগকারিণীর একটি নতুন ছেলের সঙ্গে অস্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতার ছবি। এতে সম্মানহানি হয় না? আসলে আমি বিগ বসে গিয়েছিলাম এই গেমটার ভেতরের খবর সম্পর্কে কিচ্ছু না জেনে। আর ওরা গিয়েছিল গেমটাকে গুলে খেয়ে। তাই প্রথম থেকেই নিজেদের রূপ দেখাতে শুরু করেছিল।
আপনাদের টিমের অন।তম ফাইনালিস্ট প্রিয়াও তো একাধিকবার আপনার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে?
• কিন্তু অভিযোগ প্রমান করার মতো কিছুই দেখাতে পারেনি। অভিযোগ করলেই তো আর হল না। আমি জানি এবং অন্য আরও কয়েকজন জানত যে আমি অবিযোগ করার মতো কিছু করতেই পারি না।
আর ঋ? ওর সম্পর্কে কী বলবেন?
• কিচ্ছু না। নামটা ভাবতেই চাই না।
তা হলে কি বলবেন বিগ বস আদ্যন্ত নেগেটিভ একটা গেম?
• আমি বলব বিগ বস আদ্যন্ত পজেটিভ একটা গেম। আমি গিয়েছিলাম অচেনা মাঠে ক্রিকেট খেলতে। কোনও টার্গেট ছিল না আমার। সরল মন এবং মানসিকতা নিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিলাম। পেরেছি। মানুষের খারাপ মানসিকতার জন্য কোনও প্রেক্ষাপট দোষী হতে পারে না।
এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে কখনও কি মনে হয়েছিল যে বিগ বসের বাড়ি ছেড়ে চলে আসবেন?
• একটা সময় তো ঠিকই করে ফেলেছিলাম যে চলে আসব। ভাবছিলাম আমার ছেলে এই সব দেখলে কী ভাববে? খুব কান্না পেত। মনেপ্রাণে চাইছিলাম যেন নমিনেটেড হয়ে যাই। কিন্তু মানুষের ভোট খেলায় আমাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আর তাদের জন্যই আমি জয়ীও হলাম।
এই অনুষ্ঠানের ট্যাগ লাইন ছিল— ব্যাটা দু’মুখো। আপনি কি মনে করেন এখানকার সব বাসিন্দারাই ছিলেন দু’মুখো?
• একেবারেই না। আসলে আসল যেটা সেটাতে মুখোশ লাগানো ছিল। তাই দু’মুখো। তবে কেউ কেউ তো অবশ্যই দু’মুখো ছিল।
যাদের বিরুদ্ধে এত কথা বললেন, তারা প্রায় প্রত্যেকেই আপনার প্রফেশনেরই মানুষ। তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে অন্য কাজ করতে অসুবিধে হবে না?
• তাদের সঙ্গে কাজ করতে হলে ভাবব সিনে আমি একা অভিনয় করছি। কারণ, অভিনয়টা আমার পেশা। মুখে রঙ মেখে কাজ করেই আমাকে খেতে হবে। তবুও বিগ বসের অভিজ্ঞতাটাও তো ভুলে যাওয়ার মতো নয়।
৩৫ লক্ষ টাকা। বিরাট অ্যামাউন্ট। কী করবেন?
• পুরোটাই তোলা থাকবে আমার ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য। আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা ব্যাঙ্কে চাকরি করে সংসার চালিয়েছেন। আমি অভিনয় করে চালাই। যদিও বিগ বসে কেউ কেউ বলেছেন আমি নাকি আমার বউয়ের পয়সায় খাই! যা–ই হোক, আমি চিরদিন চেয়েছি একজন ভাল এবং শিক্ষিত মানুষ হয়ে বাঁচতে। ছেলেকেও সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই। যার জন্য এই টাকাটা খুব প্রয়োজন পড়বে।
ভবিষ্যতে আবার বিগ বসে ডাক পেলে যাবেন?
• যাব। তবে গায়ে একটা বর্ম পরে যাব। আর ব্রেনটাকে সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা রেখে যাব। যাতে সেটার গুণগত বৃদ্ধি হয়।
No comments: