জাতীয় নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ, জনগণের ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপের আশঙ্কাসহ নানা কারণে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শেষ মুহূর্তে এবারও নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে যেতে পারে সরকার। দু'বছরের জন্য আইনটি স্থগিত করা হতে পারে। এতে ১৯৯১ সালের আইনটিই আপাতত অব্যাহত থাকবে।
![]() |
| Add caption |
আগামী ২৮ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে আনা সংশোধনীসমূহ পাস করা হবে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে এ ঘোষণা দিতে পারেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক কমানোসহ এবারের বাজেটে বেশ কিছু সংশোধনী এনে ২৯ জুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মুহূর্তে কোনো কথা বলবেন না তিনি। গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের লভ্যাংশ চেক প্রদান হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা উল্লেখ করে মুহিত আরও বলেন, ২৮ তারিখে প্রস্তাবিত বাজেটের সংশোধনীর সময় যা বলার বলবেন। চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। গত সোমবার মন্ত্রিসভায়
এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী জানান, 'না'। প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাজেট পাসের পর সবাই খুশি হবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, '২৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, ওই দিন সংসদে জল ফেলে সব ঠাণ্ডা করা হবে।'
এনবিআর সূত্র বলেছে, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে না_ এমন কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে এখন পর্যন্ত নেই। তবে আইনে আরও কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তাদের দেওয়া প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আইএমএফের পরামর্শে প্রণীত ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন সংসদে পাস হয়। এরপর বাস্তবায়নের জন্য তিন বছর সময় নেয় সরকার। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গত অর্থবছরে তা কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের চাপে শেষ মুহূর্তে আরও এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেটে ১ জুলাই ২০১৭ থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। মুহিতের বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে তা উল্লেখ করা হয়।
গত ১ জুন এবারের বাজেট ঘোষণার পর থেকে সংসদের ভেতরে-বাইরে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। খোদ সরকারি দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা নতুন ভ্যাট আইনের প্রবল বিরোধিতা করেন। গতকাল এবং তার আগের দিন সংসদে এই ইস্যুতে তীর্যক ভাষায় আক্রমণ করা হয় অর্থমন্ত্রীকে। কেউ কেউ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন। অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের মধ্য থেকেই প্রবল বিরোধিতা করা হচ্ছে। ফলে দলের মধ্যে থেকে পূর্ণ সমর্থন না থাকায় নির্বাচনের আগে এ আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সরকার। যে কারণে আইনটি বাস্তবায়নের পথ থেকে সরে আসতে চাইছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাঁচ বছর ধরে ভ্যাট আইন নিয়ে কাজ হয়েছে। এবারের বাজেটে তা কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এত কিছু আয়োজনের পর বাজেটে ঘোষণা দিয়ে আইনটি বাস্তবায়ন না করলে তা হবে আত্মহত্যার শামিল। বাজেট ঘোষণা দেওয়ার পর তা কার্যকর না করা_ এ ধরনের নজির বিশ্বের কোনো দেশে দেখা যায়নি
