দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে
১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাস্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে গতবছর সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে এ রুটে।
দর্শনা ইমিগ্রেশন জানিয়েছে , ২০১৬ সালে এই রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং অন্যান্য দেশের ৪৭ জন। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ অন্যান্য দেশী।
অপরদিকে, বিদায়ী ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ২ লাখ ৪০ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৭০২ জন ভারতীয় এবং ১০৩ জন অন্যান্য দেশের। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৮ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৯০৪ জন ভারতীয় এবং ৮৪ জন অন্যান্যদেশের । সব মিলিয়ে গত বছর সর্বমোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে।
হঠাৎ করে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দুরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়াও সড়কপথে ফেরি জটিলতা এবং ঢাকা কোলকাতা, কোলকাতা-ঢাকা রুটে ট্রেনের টিকেট মূল্য বৃদ্ধি এবং সহজলভ্য না হওয়ার কারণেও যাত্রীরা এই রুট বেছে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশী যাত্রীদের হঠাৎ ভারতমুখী হবার পিছনে যে সমস্ত কারনগুলো রয়েছে, তার মধ্যে ভারত কর্তৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, ভারতের চিকিৎসা নিতে যাওয়া এবং দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও যাত্রীরা এ রুট মুখি হচ্ছেন।
এ রুটে নিয়মিত আশা যাওয়া করছেন , এ রকম একজন যাত্রী নির্মল কুমার ঘোষ বলেন, দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সঙ্গে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চেকপোস্টে ভ্রমনকর পরিশোধের সুবিধার্তে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন। কারন কোন যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় ফেরত আসতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক ইমাম হাসান ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন , কঠোর অবস্থানের কারণে চেকপোস্ট এলাকা বর্তমানে সম্পূর্র্ণভাবে দালালমুক্ত হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারছে। এখন আর নেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিজিবির নাম ভাঙ্গানো দালালচক্রের সদস্য।
দর্শনা ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা এস এম আব্দুল আলিম জানান, সীমিত সামর্থের মধ্যেও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবার চেষ্টা করছি, বর্তমান নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন চালু হলে যাত্রী সেবা আরো বৃদ্ধি পাবে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবার ও চালু হয়।এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা স্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ট্রেন লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে।
পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে রাস্তার দুধার দিয়ে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান । অপর দিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে।
No comments: