
পানাম নগর নারায়ণগঞ্জ জেলার, সোনারগাঁতে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসকে বহন করে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।
পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এ অবস্থিত। পানাম বাংলার প্রাচীনতম শহর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।
ঢাকা থেকে পানাম নগরের দূরত্ব ২৭ কিমি। এক সময় ধনী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস ছিল এখানে। ছিল মসলিনের জমজমাট ব্যবসায়। প্রাচীন সেই নগরীর তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এখন আছে শুধু ঘুরে দেখার মতো ঐতিহাসিক পুরনো বাড়িগুলো।
ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংস প্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁওর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। জানা যায়, ১৪০০ শতাব্দীতে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে পৃথিবীর নামী-দামি শিক্ষকেরা পড়াতে আসতেন।
পানাম নগরীর দুই ধারে ঔপনিবেশিক আমলের ৫২টি স্থাপনা রয়েছে। এর উত্তর দিকে ৩১টি এবং দক্ষিণ দিকে ২১টি স্থাপনা অবস্থিত। স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। পানাম নগরী নিখুঁত নকশার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন রয়েছে।
নগরীর পানি সরবরাহের জন্য দুই পাশে খাল ও পুকুরের অবস্থান লক্ষ করা যায়। এখানে আবাসিক ভবন ছাড়াও উপাসনালয়, গোসলখানা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ ইত্যাদি রয়েছে। পানাম নগরের আশপাশে আরও কিছু স্থাপনা আছে যেমন- ছোট সর্দারবাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুরবাড়ি, পানাম নগর সেতু।
আবহমান গ্রামবাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ১২ মার্চে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। পরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুরনো সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। এখানে আরো রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কারুপল্লী ও একটি বিশাল লেক।
এখানে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রামবাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। এসব শিল্প-সামগ্রীতে তৎকালীন প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র প্রস্ফুটিত হয়।
সর্দারবাড়িতে ১০টি গ্যালারি রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ অলঙ্কারসহ রয়েছে বহু কিছু।
বৈশাখ মাসে এখানে সাড়ম্বরে আয়োজিত হয় লোকশিল্প মেলা। এ মেলায় লোকসঙ্গীত, যাত্রাপালা, কবিগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া জাদুঘরের সম্মুখে অবস্থিত লেকে নৌকাভ্রমণ ও শীত মওসুমে টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা আছে। দর্শনার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য রয়েছে ক্যান্টিন।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে যাবেন মোরগাপাড়া চৌরাস্তা, ভাড়া ৪০/৫০ টাকা। সরাসরি বাস পাবেন, সময় লাগতে পারে ১ ঘণ্টা। মোরগাপাড়া চৌরাস্তা থেকে অটোতে জাদুঘর যেতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০ টাকা। জাদুঘরে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।
No comments: