Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » হিংয়ের এগারটি ভেষজ গুণ




পেটের অসুখ সারাতে হিং উপকারি। হিং এমন একটি মশলা যার প্রয়োজন হয় সাধারণত তরকারিতে বা ডালে ফোড়ন দেওয়ার নন্য। হিন্দিতে ফোড়ন দেওয়াকে বলা হয় ‘বধারনা’। হিং ফোড়ন দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয় বলে একে বলা হয় ‘বধারনী’ । অনেক সময় পেয়াজের বদলেও হিং ব্যবহার করা হয়। অরুচি, গ্যাস, পেটের নানা অসুখ সারাতে হিং ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে।
আয়ুর্বেদ মতে, হিং স্নিগ্ধ, খাবার হজম করায়, খারক বা বায়ু মল মূত্র নিঃসারণ করে, উষ্ণ, রুচি বৃদ্ধি করে, তীক্ষ, বাত নাশ করে, রস ও কফ বের করে দেয়, বায়ু ও তড়কা বা খিচুনি নিবারণ করে, স্নায়ুতে উত্তেজনার সৃষ্টি করে, কামোদ্দীপক, অজীর্ণ শূল, গুল্ম ও কৃমি নাশ করে।
হাকিমি মতে, মাথার রোগে উপকারী, চোখের জ্যোতি ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, বায়ুনাশ করে। চোখ, কান, নাক, মুখ, গলা, বুক, পাকস্থলী, লিভার, প্লীহার নানা রকম অসুখের ও জনডিসের উপশম করে। হিং-এর কাজল ব্যবহার করলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়নি এবং অন্যান্য চোখের অসুখে উপকার হয়।
চিকিৎসকদের মতে, পেট ফাঁপা, হিস্টিরিয়া, স্নায়বিক পীড়া, শ্বাস, কাশি, ফুসফুসের প্রদাহে হিং ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। চরকের ও সুশ্রুতের মতে, হিং কফহর, দীপন, শূল, অজীর্ণ, অধোবায়ুযুক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগের কষ্ট দূর করে। আরও একজন প্রখ্যাত বৈদ্যের মতে হিং চোখের পক্ষে ভাল।
আয়ুর্বেদে হিজাষ্টক চূর্ণ, হিং-এর সঙ্গে আরও অনেক উষ্ণ, পাচন (হজম করায়) বায়ুহর উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিখ্যাত হিজাষ্টক চূর্ণ। এতে হিংসহ আট রকমের উপকরণ সমান মাত্রা মেশানো হয় সেইজন্যে এর নাম হয়েছে হিঙ্গাষ্টকচূর্ণ।
হিজাষ্টক চূর্ণ তৈরি করবার পদ্ধতি :
অল্প পরিমাণ দেশি ঘিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাজা হিং শুঠ বা শুকনা আদা, গোলমরিচ, পিপুল, সৈন্ধব লবণ, জোয়ান, জিরে আর শাহজিরা। এই আট রকম মশলা সমান ভাবে এক চা চামচ করে নিয়ে মিহি গুড়া করে চালুনি দিয়ে চেলে নিয়ে ভাল ঢাকনা যুক্ত পরিষ্কার শুষ্ক শিশিতে ভরে রাখতে হবে। বাড়িতে তৈরি এই চুর্ণ বাজারে যে চূর্ণ পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি উপকারী ও ভেজালহীন সেইনে বেশি কার্যকর।
খাওয়া দাওয়ার আগে বিশেষত গুরু ভোজনের আগে একটু ঘোলের সঙ্গে বা ভাত ও ঘিয়ের সঙ্গে অল্প পরিমাণে এই চুর্ণ খেলে অজীর্ণ, বায়ু, পেট ব্যথা, গ্যাস, গুল্ম প্রভৃতি রোগে তো উপকার হয়ই এমন কী কলেরাও হয় না। কবিরাজি, হাকিমি ও ডাক্তারি নানা ওষুধে হিং ব্যবহার করা হয়। হিং ম্যালেরিয়ার প্রতিরেধক বলে মনে করা হয়। কোষ্ঠবদ্ধতায় হিং উপকারী। যে মেয়েদের বার বার গর্ভস্রাব হয় তাদের পক্ষে ভাল ওষুধ।
সুস্থ থাকতে হিং-এর প্রয়োগ :
১. কাশি দূর করে: মুরগির ডিমের কুসুমের সঙ্গে হিং মিশিয়ে খেলে শুকনা কাশি ও শরীরের ব্যথার প্রশমন হয়।
২. পেটের অসুখে: জলের সঙ্গে হিং মিশিয়ে খেলে কণ্ঠস্বর পরিষ্কার হয়, পেটের বায়ু, ব্যথা ও শূল প্রভৃতি রোগে উপকার পাওয়া যায়। পুরনো পেটের অসুখে টাটকা ঘোলের সঙ্গে হিজাষ্টকর্ণ খাওয়ালে এবং অন্য খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখলে উপকার পাওয়া যায়। কফ এবং বাতের কষ্টতেও হিজাষ্টক চুর্ণ খেলে লাভ হয়। হিং-এর ছোলা আকারের গুলি বা বটি তৈরি করে একটু ঘিয়ে ডুবিয়ে নিয়ে জল দিয়ে গিলে ফেললে অজীর্ণ ও গুল্ম রোগে উপকার পাওয়া যায়।
হিং জল দিয়ে পিষে পেটে প্রলেপ লাগালে অধো বায়ু নিষ্কাশন হয় এবং বমিও বন্ধ হয় । পেটে যদি খুব গ্যাস হয় এবং পেট ফুলে গিয়ে ঢোলের মতো হয়ে যায় এবং পেটে ব্যথা হয় তাহলে নাভির আশেপাশে পেটে হিং-এর প্রলেপ লাগালে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরাম পাওয়া যায়। বাচ্চাদের যদি পেট কামড়ায় বা পেটে মোচড় দেয় তাহলে নাভির ওপর হিং-এর প্রলেপ লাগালে অধোবায়ু বেরিয়ে যায় এবং আরাম হয়।
৩. ব্যথা নাশে: তিল তেলে হিং মিশিয়ে মালিশ করলে বাতের ব্যথা, আঘাত পাওয়ার ব্যথা কমে। এক ডেলা হিং দু গ্লাস জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটে ফুটে আট ভাগের এক ভাগ জল যখন বাকি থেকে যাবে সেই জলটা খেলে বাতের ব্যথার উপশম হবে। হিং জলে গুলে তার ফোঁটা নাকে দিলে আধ-কপালে মাথা ব্যথা সারে।
৪. বিষক্রিয়া নষ্টে: হিং বিষের প্রভাব নাশ করে।
৫. জ্বর সারাতে: হিং নৌমাদর বা গুগলের (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে টাইফয়েড রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য: তাওয়ায় সেঁকা অল্প পরিমাণে হিং একটু গরম জলে গুলি ধীরে ধীরে পান করলে গলাভাঙ্গা, পুরনো কাশি, সর্দি, মলরোধ বা কোষ্ঠবদ্ধতা, পার্শ্ব শূল প্রভৃতির প্রশমন হয়।
৭. জন্ডিসে উপকার পেতে: হিং আর শুকনা ডুমুর এক সঙ্গে ভাল করে পিষে খেলে জনডিসে উপকার হয়।
৮. আমাশা সারাতে: কর্পূর ও খয়ের সমপরিমাণে সেই পরিমাণে অর্ধেক হিং এবং কিছু কচি নিমপাতা একসঙ্গে তুলসীপাতার রসে পিষে নিয়ে ছোলার বটিকা আকারের বা গুলি তৈরি কমতে হবে। এই গুলি জাম গাছের ছালের রসের সঙ্গে দিনে তিন চার বার খেলে আমাশা সেরে যায়।
৯. কলেরা সারাতে: হিং, কর্পূর আর আমের আঁটির শাঁস সমপরিমাণে নিয়ে পুদিনা পাতার রসে পিষে ছোলার আকারের বড়ি তৈরি করে খেলে কলেরা ও আত্মিক রোগে স্বস্তি পাওয়া যায়।
১০. ক্ষত সারাতে: হিং আর নিমপাতা পিষে সেই প্রলেপ লাগালে ক্ষত স্থানে বা ঘায়ে যদি পোকা পড়ে যায় সেই পোকা মরে যাবে।
১১. গলার রোগে: হিং ঘি বা তেলে না সেঁকে কাঁচা ব্যবহার করলে গলার ক্ষতি হয় সেইজন্যে গলার অসুখে বা অন্য কোনো অসুখে হিং ব্যবহার করলে তা তাওয়ায় ঘি বা তেল দিয়ে সেঁকে নেওয়া উচিত।
এছাড়া বুক ধড়ফড়ানি, বাচ্চাদের দাঁত উঠতে উঠতে কষ্ট হলে, কৃমি রোগে হিং উপকার দেয়। গোলাপ জলের সঙ্গে খেলে কলেরা ভালো হয় ও আন্ত্রিক রোগেও উপকার পাওয়া যায়। হিং গুল্ম, অজীর্ণ, মৃগীরোগ, শূল,পেটের অসুখ এমন কী আন্ত্রিক ও কলেরা পর্যন্ত আরোগ্য করবার ক্ষমতা রাখে।
হিং খেয়ে পুরনো কোষ্ঠবদ্ধতা বা কোষ্ঠকাঠিন্য সার। যাঁদের বারবার গর্ভপাত হয়েছে সেইসব মেয়েরা হিং খেলে উপকার পারেন। হিং-এর গুণপনার কথা তো কিছুটা জানা গেল এবার হকিমি চিকিৎসার অভিমতে হিং-এর উপকারি তার আর একটু বলে নেওয়া যাক।
হাকিমি মতে : হিং কফ ও উষ্ণ।
১. কৃমিনাশক, ঋতুস্রাব-নিরামক, স্নায়ুবিক অস্থিরতা দূর করে— অধোবায়ু, সন্ধিবাত (গাঁটের বাত), মাথা ঘোরা, বধিরতা, খাস, কাশি, কফের প্রকোপ, চোখের অসুখ, গলার রোগ, যকৃৎ (লিভার) ও প্লীহার রোগ নষ্ট করে ।
২. হিং-এ আছে অধোবায়ু মুক্ত করবার অপার শক্তি। অতএব হিং খেলে গ্যাস শীঘ্রই কমে যায়।
৩. বায়ুবিকারে বা বায়ুর প্রকোপে হিং খযুধ হিসেবে খাওয়ানো হয়।
৪. হিং কামোত্তেজক-পুরুষেন্দ্রিয়ের শিথিলতা দূর করে। এই শিথিলতা দূর করবার জন্যে অন্য ওষুধের সঙ্গে হিং মিশিয়ে বা শুধুই হিং খাওয়ানো হয়।
৫. হিং-এ মূত্র নিঃসারণ করবার গুণ থাকায় কলেরা বা আদ্রিক রোগে যখন প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তখন হিং খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৬. হিং কফ তাড়াতাড়ি নিঃসারণ করিয়ে দেয় সেইজন্যে শুকনা কাশি ও শ্বস কষ্টে লাভ দায়ক।
৭. হিং স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র:
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, ২১৩-২১৭।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply