ভারত বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার কপিল দেবের গল্প
বিশ্ব ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। শুধু ভারতবাসীর কাছেই নয়, পুরো বিশ্বের কাছেই এক দামী ক্রিকেটীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবেন তিনি। তার হাত ধরেই প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটা জয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়েছিলো শত কোটি ক্রিকেট ভক্তের পুরো ভারতবর্ষ। বুঝতেই পারছেন! বলা হচ্ছে কপিল দেবের কথা। ক্রিকেটের সবুজ গালিচায় সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় তার নামটা শীর্ষে রাখতে হয়তো কলম কেঁপে উঠবে না কারও। ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তীদের নিয়ে খেলার সময়ের বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে কপিল দেবের গল্প।
৬ জানুয়ারি ১৯৫৯। ভারতের হরিয়ানায় জন্ম হয় এক ছোট্ট নক্ষত্রের। বাবা মা আদর নাম রাখেন কপিল দেব রাম লাল নিখঞ্জ। বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ায় যে শক্তিশালী অবস্থান ভারতের, তার পেছনের রূপকার তিনি। ১৯৭৮ সালে মাত্র ১৯ বছরে বয়সে জায়গা করে নেন ভারতীয় দলে। তার হাত ধরেই মোড় ঘুরে যায় ভারতীয় ক্রিকেটের।
পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৎকালীন সময়ে প্রতিটি দলেই ছিলো ত্রাস ছড়ানো ফাস্ট বোলারের ছড়াছড়ি। কিন্তু ভারতীয়রা ছিলো বড় অসহায়। ফাস্ট বোলিং বিষয়টাই ছিলো মরিচিকার মত। সে সময় কান্ডারী হয়ে আবির্ভাব কপিল দেবের। ভারত পায় তাদের প্রথম জেনুইন ফাস্ট বোলার ও সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভাঙ্গাচোরা একটা দলের নেতৃত্ব পান কপিল। আগের দুই বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলে পূর্ব আফ্রিকা ছাড়া যাদের জয় ছিলনা কারো বিপক্ষেই। কিন্তু সে দলটি নিয়েই বিশ্বকাপে পুরো দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন কপিল।
ব্যাটিং-বোলিংয়ের সঙ্গে ক্ষুরধার নেতৃত্ব। পরিস্থিতির দাবি অনুয়ায়ী নিজেকে উজাড় করে দেয়ার নাম কপিল দেব। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে যা ফুটে উঠেছিলো প্রতিটি ম্যাচেই। ফাইনালে দুর্ধর্ষ ক্যারিবিয়ানদের হ্যাটট্রিক শিরোপার স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়ে উপমহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক কপিল দেব।
একজন ক্রিকেটার যে শুধু মাঠের যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকবেন তা নয়, তাকে লড়াই করতে হবে ফিটনেস ঠিক রাখার ক্ষেত্রেও। এ ধারণার বীজ ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম বপন করেছিলেন কপিল। ১৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারণে কখনোই কোন টেস্ট ম্যাচ মিস করেননি এই কিংবদন্তী। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এক ইনিংসে বেস্ট বোলিং ফিগার এখনও দখলে রেখেছেন কপিল। ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৩ রানে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন কপিল।
ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরির নায়কও কপিল দেব। বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানের ইনিংসটি এখনও স্বপ্নীল এক মুহূর্ত ভারতীয়দের কাছে। শুধু কি তাই ১৮৩ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনোই রান আউট হননি কপিল। ১০০ এবং ৩০০ টেস্ট উইকেট নেয়া সর্বকনিষ্ট বোলারের পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেট প্রথম ২৫০ উইকেট নেয়া বোলারও কপিল দেব। এছাড়াও তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যার টেস্টে ৫ হাজার রান এবং চারশোররও বেশি উইকেট রয়েছে।
২০০২ সালে উইজডেনের বিচারে শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার নির্বাচিত হন কপিল। ২০১০ সালের মার্চে আইসিসির হল অব ফেমে জায়গা করে নেন তিনি।
১৯৯৪ সালে অবসর নেয়ার আগে কপিল ব্যাট হাতে ১৩১ টেস্টে করেন ৫২৪৮ রান। টেস্টে কপিলের উইকেট৪৩৪টি। ওয়ানডেতে কপিল খেলেছেন ২২৫ ম্যাচ। ৩৭৮৩ রানের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ শিবিরের ২৫৩টি উইকেট।
তিনি শুধু ক্রিকেট মাঠের যোদ্ধাই নন, কোচ হিসেবেও রেখেছেন সফলতার সাক্ষর। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী কপিল অর্জুন, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষন, এনডিটিভির গ্লোবাল লিভিং কিংবদন্তী সহ সম্মানিত হয়েছেন অনেক পুরস্কারে।
লেখকেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে কপিল দেবের। বাই গডস ডিক্রি,ক্রিকেট মাই স্টাইল, স্ট্রেট ফ্রম দ্যা হার্ট তার আত্মজীবনী হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও দিল্লাগি, মুঝসে শাদী কারোগি সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন কপিল।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয় ও ভারতীয় ক্রিকেটে কপিলের অর্জন নিয়ে পরিচালক কবির খান তৈরি করেছেন সিনেমা ৮৩। কপিলের চরিত্র অভিনয় করেছেন রনবীর সিং। শিগগিরই মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রটি।
Tag: games

No comments: