করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা
“করোনার সময় অনেক দেশ বাজেট দিতে পারছে না। কিন্তু আমরা একদিকে যেমন করোনা মোকাবেলা করবো, পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবো। তারা যেন কষ্ট না পায় সে জন্য যা যা করণীয় করে যাবো। আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কী আছে? করোনা ভাইরাসেও মরতে পারি, গুলি খেয়েও মরতে পারি, অসুস্থ হয়েও মরতে পারি এমনকি এখানে কথা বলতে বলতেও মরতে পারি। মরতে তো একদিন হবেই। এই মৃত্যু যখন অবধারিত, সেটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কখনো ভয় পাবো না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন সে জীবন নিয়ে যাবেন। আর আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেন, সেই কাজটুকু যখন পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো আমি কাজ করে যাব। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে, সময় শেষ হবে। তখন আমি চলে যাবো। তাই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।”
১০ জুন জাতীয় সংসদে এ কথাগুলো বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশ রত্ন শেখ হাসিনা। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারীতে পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রনেতাকে এভাবে জনগণের কথা বলতে ও শক্তি সাহস জোগাতে দেখা যায়নি। অনেক রাষ্ট্রনেতাকে দেখেছি সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে কান্না করতে, আবার অনেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আইসোলেশনে চলে যেতে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি অদম্য সাহস ও ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে সংকট মোকাবেলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
সারা বিশ্বের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত তার ঢেউ বাংলাদেশে এসেও পড়ে। লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, গার্মেন্টসের অর্ডার বাতিল হওয়ার খবর, কারো কারো চাকুরি হারানোর ভয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। এমন একটি সময় চারিদিকে যখন অস্থিরতা, হাহাকার বিরাজ করছিল তখনই দেশপ্রেমিক জনদরদী নেতা শেখ হাসিনা একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদের মত ঘোষণা করলেন ১ লক্ষ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ। যা জিডিপির ৩.৭ শতাংশ। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল প্রদান করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিষদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, কৃষি খাতে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র-মাঝারী উদ্যোক্তা, কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।
একদিকে তিনি সরকার প্রধান হলেও অপরদিকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। যে দলে আছে লক্ষ কোটি নিবেদিত নেতাকর্মী। সংকটে ও দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। করোনা মোকাবেলায় দুঃসময়ের কান্ডারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশনা পেয়েই জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের প্রতিটি এলাকার আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা যার যার অবস্থান থেকে অসহায়, অভুক্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে মিটিংয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে নির্দেশনা দেন যে, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠন করতে। ত্রাণ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন কোন দলীয় পরিচয় বিবেচনা না করা হয়। প্রকৃত যারা ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যাপক ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে।
দলীয়ভাবে সারা দেশে আজ পর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৮ হাজার ৮১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ১০ কোটি ৪২ লক্ষ ১৮ হাজার নগদ টাকা ছাড়াও পিপিই, মাস্ক, সাবান, ব্লিচিং, পাউডার, হ্যান্ড গ্লাবস, স্প্রেসহ চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস যেহেতু মানুষের সংস্পর্শে ছড়ায় কিন্তু সভানেত্রীর নির্দেশে জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। তারপরও জনগণকে সেবা করা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা দূরে সরে যায়নি। লকডাউনের কারণে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় যখন কৃষকের ধান কাটতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিলেন কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিতে। ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ এমনকি আওয়ামী লীগও ধান কাটার কাজে অংশ নেয়। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, বিনামূল্যে সবজি বিতরণ ও লাশ দাফনের মত কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের লড়াইটা অন্য দেশগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে বিশাল জনগোষ্ঠীকে সীমিত সম্পদ নিয়ে লড়তে হচ্ছে। সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে জীবন বাঁচানো বড় নাকি অর্থনীতি রক্ষা করা বড় এই কঠিন প্রশ্নে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, মানবতার জননী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই জীবন ও জীবিকা দুটোর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন করোনা আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। অন্যদিকে আবার বিশাল জনগোষ্টী যারা দিন আনে দিন খায় তাদের খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কর্মসূচী গ্রহন করেছেন। অর্থনীতির চাকাকেও গতিশীল রেখেছেন। গণভবন থেকে তিনি নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরাসরি মনিটরিং করছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ১০টি বিভাগ ও ৬৪টি জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মী, মাঠ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। দলমত নির্বিশেষে সঠিক তালিকা তৈরি করে প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে সরকারের সহযোগিতা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সংকট মোকাবেলায় ১০ এপ্রিল ৩১ টি, ১৬ এপ্রিল ১০ টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি, ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন, যা জনগণের মাঝে টনিক হিসেবে কাজ করছে। গণভবন থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক ফোরামেও অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫ মার্চ সার্ক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় করোনা মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন, ২৩এপ্রিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করতে পাঁচ দ্রফা প্রস্তাবনা পেশ করেন যা সদস্য দেশগুলোর প্রশংসা কুড়িয়েছে। ৪ জুন যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ তহবিলে ৫০ হাজার ডলার প্রদানের ঘোষণা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিন ২৪ এপ্রিল করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের দুইশতটি দেশের মধ্যে ৭টি দেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার মধ্যে একটি দেশ বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৬১ (১৬ কোটিরও বেশি) মিলিয়ন মানুষের বাস। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবেলা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। করোনা মোকাবেলায়ও তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশ শুরু থেকেই দুটো চ্যালেঞ্জ নিয়ে লড়াই করছে। জীবনকে রক্ষা করা ও জীবিকাকে সচল রাখা। একটি মাত্র করোনা পরীক্ষার ল্যাব থেকে ৬৮টি ল্যাবে উন্নতিকরণ, সকল হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা, জরুরি ভিত্তিতে দুহাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ। আরো দুই হাজার ডাক্তার, পাঁচ হাজার নার্স ও পাঁচ হাজার হেলথ টেকনোলজিষ্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে বিশেষ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজেটে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০ হাজার কোটি টাকার থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকা নিশ্চিতকরণের জন্য নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের প্রায় ৫ কোটি লোককে রেশনের আওতায় এনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১ কোটির বেশি পরিবারকে (৬ কোটি লোক) ত্রাণ দেয়া হয়েছে। ৫০ লক্ষ পরিবারকে এককালীন ২৫০০ টাকা মোবাইলের মাধ্যমে নগদ পাঠানো হয়েছে। নন-এমপিওভুক্ত ৮১ হাজার শিক্ষক ও ২৫ হাজার কর্মচারী, ৪৬ হাজার গ্রাম পুলিশদের মাঝে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। একটি মানুষের যাতে না খেয়ে থাকে না হয়, সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটে সর্বাধিক ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আমরা যদি করোনা মোকাবেলায় তথাকথিত সফল দেশগুলোর তালিকার দিকে তাকাই তাহলে চীন, নিউজিল্যান্ড, অষ্টেলিয়া, তাইওয়ান, ইরিত্রিয়া, ফিজি, মন্টিনিগ্রোর মতো কিছু দেশের নাম দেখবো। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি এই দেশগুলোর আর আমাদের দেশের সমস্যা এক নয়। চীনে গণতন্ত্র নেই, অর্থেরও কোন সমস্যা নেই। সে জন্য জোর করে কার্ফু দিয়ে মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখতে পেরেছে। নিউজিল্যান্ডে জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লক্ষ, আয়তন আমাদের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। অষ্ট্রেলিয়ায় জনসংখ্যা আমাদের ছয় ভাগের একভাগ, আয়তন আমাদের ছাপান্ন গুণ বড়। অন্যসব দেশগুলো আমাদের যেকোন একটি জেলার চেয়েও কম জনসংখ্যা।
বিশাল আয়তন, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং শতভাগ শিক্ষিত হওয়ার ফলে তারা যে সুবিধাটা পেয়েছে বাংলাদেশকে তার সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০.৪ শতাংশ লোক এখনও দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে, বিশাল জনগোষ্টী শ্রমজীবী। আমাদের দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন হলে লক্ষ লক্ষ লোক কর্মহীন হয়ে পড়বে, না খেয়ে মারা যাবে। অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার লড়াইটা সে জন্যই অন্যদের চেয়ে শত সহস্র গুণ বেশি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক সময়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর যেকোন দেশের থেকে বাংলাদেশে মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেলজিয়ামে মৃত্যুহার ১৫.৯ শতাংশ,ফ্রান্স ১৪.৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ড ১২.২, স্পেন ১১.৪ শতাংশ, ইতালি ১৪.৫ শতাংশ, কানাডা ৮.২শতাংশ, সুইডেন ৮.১, চীন ৫.৫ শতাংশ, জাপান ৫.৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৫ শতাংশ, ভারত ৩.০৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ১.৪ শতাংশ আর বাংলাদেশে ১.৩ (বর্তমানে ১.২৫) শতাংশ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটা স্বস্তির খবর। এটা সম্ভব হয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে।
মরার উপর খড়ার ঘায়ের মতো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে হাজির হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভানেত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে। আমাদের দেশ থেকে কম গতিতে আঘাত হানলেও পঞ্চিমবঙ্গ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ৩ জুন ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত মহাসাগরে মে মাসে যখন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সৃষ্টি হয় তখন ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ানক ছোবলের চেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ২৪ লক্ষ মানুষকে কোভিড-১৯ থেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখাটা ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে নতুন ১০ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের নেতৃত্বে মাস্ক, পানি, সাবান স্যানিটাইজার এবং শুকনো খাবার বিতরণ করে শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে আম্ফানের মতো প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়’।
বৈশ্বিক মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দেশি-বিদেশি অপপ্রচার স্বত্বেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দুরন্ত ও দুর্বার গতিতে। এত সংকটময় মুহুর্তেও অনেক ভালো খবর বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো উজ্জল থেকে উজ্জলতর হচ্ছে। ৩ মে বিশ্বখ্যাত অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকী দি ইকোনমিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬ টি উদীয়মান অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে নবম স্থানে।
যেখানে চীন (১০), ভারত(১৮), পাকিস্তান (৪৩) তম স্থানে থাকবে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিপি) একটি গবেষণায় বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে ভালো থাকবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ (বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮.২ শতাংশ) হবে, অন্যদিকে ভারতে ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৪.৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৩ শতাংশ মালদ্বীপ ৩.৭ শতাংশ পাকিস্তান ২শতাংশ হতে পারে মতামত দিয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশাল সুখবর এসেছে। সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোরও বর্তমানে অর্থনীতি ভয়াবহ ধসে বিপর্যস্ত। সেখানে বাংলাদেশ আগের সব অর্জনকে হার মানিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিটেন্স।
প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬.১৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৬শ ১৬ কোটি) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে গত জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ১৮৩ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। এক মাসে যা আগে কখনো আসেনি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থাকলেই অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে। বাংলাদেশের কাছে এখন ৮ মাসেরও বেশি ব্যয় মিটানোর বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বড় পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাবার মতই দেশের মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন। নেত্রীর ভালোবাসাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে ভুল হবে। তিনি পুরো বাংলাদেশই তাঁর পরিবার মনে করেন। পরিবারের প্রধান হিসেবে তিনি দিন রাত দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সংকটে হয় নেতৃত্বের পরীক্ষা। এই সংকটে আবারও প্রমাণ হল বাংলাদেশের নেতা একজনই, তিনি শেখ হাসিনা। দল হিসেবে জনগণের একটিই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সুউচ্চ মর্যদার আসনে নিয়ে গেছেন। সারা বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতারা ভূয়সী প্রশংসা করছেন। নেতৃত্ব গুণে তিনি আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। দুর্দমনীয় অসীম সাহসে করোনা মোকাবেলা করে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সারা পৃথিবী যখন থমকে গেছে তখনও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকার ও দলের সমন্বয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত জনগণের মাঝে সুফল পৌঁছে যাচ্ছে। আজ সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। সমগ্র জাতি বিশ্বাস করে বঙ্গবন্ধু কন্যা সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে। স্ব-স্ব ধর্ম মতে প্রতিটি মানুষ মানবতার জননী শেখ হাসিনার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছে। সবাই বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা সুস্থ থাকলে কোন সংকটই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ বিজয়ী হবেই।
No comments: