Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » সরাসরি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিশর-তুরস্ক!




  সরাসরি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিশর-তুরস্ক!

কয়েক সপ্তাহ আগেও লিবিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। তবে ত্রিপোলির উপকণ্ঠ থেকে হাফতার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে পুরো দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারি বাহিনী। আর সরকারি সেনাদের এই সাফল্যের কারিগর মূলত তুরস্ক। লিবিয়ায় তুরস্কের এই সাফল্যে সৌদি-আমিরাতের মিত্র মিশর যে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তা সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে আসলেও এবার দেশটিতে সরাসরি সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশর। প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসির এই সিদ্ধান্তে এরিমধ্যে সায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিরতে শহর এবং আল জুফরা এয়ারবেস ঘিরে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে যেকোনো সময় দেশটিতে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিতে পারে মিশরের স্বৈরশাসক সিসি। আর তেমনটা হলে সামরিক সংশ্লিষ্টতা না বাড়িয়ে তুরস্কের উপায় থাকবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। আর তাই লিবিয়ায় সরাসরির সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মিশর এবং তুরস্কের।

লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িত দুই পক্ষেরই শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত জিএনএ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক, ইতালি এবং কাতার। অপরদিকে জেনারেল হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে (এলএনএ) সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফ্রান্স। যদিও ফরাসি সরকার জেনারেল হাফতারকে সমর্থন দেয়ার কথা বরাবর অস্বীকার করে আসছে।

গত বছরের এপ্রিল থেকে ত্রিপলি দখলের জন্য অভিযান চালিয়ে আসছিলো এলএনএ। হাফতারের লাগাতার আক্রমণে কোণঠাসা জিএনএ সরকারের সঙ্গে ২০১৯ সালে একটি সামরিক চুক্তি করে তুরস্ক। এরপরই আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে লিবিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। তুরস্ক সেখানে সামরিক উপদেষ্টা পাঠায়। তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ড্রোন হাফতারের সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করে। গতমাসে (জুনে) জিএনএ বাহিনী অবশেষে ত্রিপলির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। জেনারেল হাফতার শহরের উপকণ্ঠ থেকে তার সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে সরকারি বাহিনী। এতে গুরুত্বপূর্ণ আল ওয়াতিয়া এয়ারবেসসহ পশ্চিম লিবিয়ার বেশিরভাগ এলাকা দখলে আসে তাদের।

হাফতারের এই পিছু হটা চরম অস্বস্তি আর হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে তাকে সমর্থন দিয়ে আসা দেশগুলোকে। তুরস্ক জিএনএ সরকারকে দেয়া সমর্থন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না আরো বেশি এলাকা পুনর্দখলের মধ্যমে পূর্ব লিবিয়ায় হাফতারের ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যায়।

গত ৫ জুন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান টুইটারে ঘোষণা দেন, জিএনএর পরবর্তী টার্গেট দেশটির সবচেয়ে বড় এয়ারবেস আল জুফরা এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় কৌশলগত শহর সির্তে। এর আগে মে মাসে দীর্ঘ অবরোধ থেকে পিছু হটা এবং আল ওয়াতিয়া এয়ারবেসের দখল হারানোর পর লিবিয়ায় ১৪টি মিগ-২৯ এবং সু-২৪ ফেন্সার যুদ্ধ বিমানের একটি বহর আল জুফরা এয়ারবেসে মোতায়েন করে রাশিয়া। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এলএনএর পক্ষে লিবিয়ায় যুদ্ধ বিমান মোতায়েনের কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। এর দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়, এয়ারবেসটিতে তুর্কি সমর্থিত সেনারা হামলা চালিয়ে দখল করে নিলে কিংবা বিমানগুলো ধ্বংস হলে সরাসরি পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে না রাশিয়া।

এই পরিস্থিতির মধ্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে লিবিয়ার প্রতিবেশী দেশ মিশর। যার ফলে দেশটিতে তাদের সরাসরি সেনা মোতায়েন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

এদিকে গত ৪ জুলাই, আল ওয়াতিয়া এয়ারবেসে অজ্ঞাত বিমান থেকে হামলা চালানো হয়। এয়ারবেসটি পুনর্দখলে নেয়ার পর সেখানে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোয়ান শুরু করেছে তুরস্ক। ধারণা করা হচ্ছে, তুর্কি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে টার্গেট করেই হামলাটি চালানো হয়েছিলো। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সের তৈরি ডাসল্ট রাফাল বিমান থেকে এ হামলা চালানো হয়েছিলো। আর এ থেকে ধরনা করা হয় হামলাটি মিশরই চালিয়েছে।

হামলা যদি সত্যিই মিশর চালিয়ে থাকে তাহলে বুঝাই যায়, লিবিয়ায় নিজেদের স্বার্থ নিয়ে সিসি কতটা সিরিয়াস। যুদ্ধক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর অগ্রগতি থামাতে যেকোনো কিছু করতে তিনি পিছুপা হবেন না।

লিবিয়ায় এই মুহূর্তে তুরস্কের বেশ কিছু মাঝারি পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নিজেদের তৈরি বায়রাতকার টিবি-২ ড্রোন এবং কিছু সামরিক উপদেষ্টা মোতায়েন আছে। এছাড়া সিরিয়া থেকে কিছু বিদ্রোহীকেও লিবিয়ায় পাঠিয়েছে তুরস্ক; যারা সরকারি বাহিনীর পক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করছে।

তবে মিশর যদি লিবিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করে তাহলে নিশ্চিতভাবেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। সরকারি সেনাদের আক্রমণাত্মক অবস্থান বদলে রক্ষণাত্মক কৌশলে চলে যেতে হবে যদি না তুরস্ক বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়।

তুরস্ক অবশ্য এরিমধ্যে লিবিয়ায় তাদের শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, গত জুনে ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার নৌ সীমানায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের অনুশীলন চালিয়েছে তুর্কি বিমানবাহিনী। এছাড়া টার্কিশ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেটের বহর ত্রিপোলির আকাশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত এপ্রিলে এই বহরের একটি ফ্রিগেট থেকে এলএন বাহিনীর ড্রোন লক্ষ্য করে মিসাইলও ছোড়া হয়। তবে তুরস্ক যদি নিজ দেশের এয়ারবেস থেকে লিবিয়ায় এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করতে চায় তাহলে খুব একটা সুবিধা পাবে না। কারণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে যুদ্ধক্ষেত্রে বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারবে না বিমানগুলো। কারণ, তাদের আবার ফিরেও যেতে হবে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে। এছাড়া লিবিয়ার প্রতিবেশী আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়াও তাদের ঘাটি ব্যবহার করতে তুরস্কের আবেদনে সাড়া দেয়নি।

তবে মিশরের এই ধরণের কোনো সমস্যা নাই। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় তারা স্বাভাবিকভাবেই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। আর তাই বিমান বাহিনীর ডগফাইটে সমানে সমানে লড়াইয়ের জন্য লিবিয়ার বিমান ঘাটিতেই এফ-১৬ মোতায়েন করতে হবে তুরস্কের। আর সেটা যদি তুরস্ক করে তাহলে ন্যাটোভুক্ত দেশটির জন্য তা হবে বিরাট সিদ্ধান্ত।

মিশরের স্বৈরশাসক সিসি আগেই  সিরতে এবং আল জুফরা এয়ার বেসকে ‘রেডলাইন’ বলে রেখেছেন। এখন সরকারি বাহিনী হামলা শুরু করলে মিশর যদি সেনা পাঠিয়েই দেয় তাহলে বড়সড় সংঘর্ষে জড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে তুরস্ক এবং মিশরের। আর সেক্ষেত্রে সিরিয়ার থেকেও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে তুর্কিদের। কারণ গ্লোবাল মিলিটারি র‍্যাংকিংয় অনুযায়ী, তুরস্কের চেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী এখন মিশরের। র‍্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান নবম আর তুরস্কের ১১তম।

তবে দুই দেশই সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবেই জ্ঞাত। আর তাই এই পথে না হেটে ভিন্ন কোনো পথ নিশ্চয়ই তারা খুঁজছে।

লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট:

২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহীরা লিবিয়ার ৪১ বছরের স্বৈরশাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যা করে। এরপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

২০১৪ সালে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের সঙ্গে বড় ধরণের সংঘাত শুরু হয় পূর্বাঞ্চলের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়া মেজর জেনারেলে খলিফা হাফতার। তবে ফায়াজ আল-সারাজের জিএনএ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িত দুই পক্ষেরই আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত জিএনএ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক, ইতালি এবং কাতার। অপরদিকে জেনারেল হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে (এলএনএ) সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফ্রান্স। যদিও ফরাসি সরকার জেনারেল হাফতারকে সমর্থন দেয়ার কথা বরাবর অস্বীকার করে আসছে।

জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, লিবিয়াতে কোনো সৈন্য মোতায়েন এবং অস্ত্র পাঠানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বিবদমান দুই পক্ষই সেটি মানছে না।

গত বছরের এপ্রিল থেকে ত্রিপলি দখলের জন্য অভিযান চালিয়ে আসছে এলএনএ। হাফতারের লাগাতার আক্রমণে কোণঠাসা জিএনএ সরকারের সঙ্গে ২০১৯ সালে একটি সামরিক চুক্তি করে তুরস্ক। ওই বছর জানুয়ারি মাসেই লিবিয়ায় সেনা মোতায়েন করে আঙ্কারা।

এরপরই আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে লিবিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। গত বছরের এপ্রিল থেকে ত্রিপোলি দখলের মাধ্যমে পুরো লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে আসছিলো খলিফা হাফতারের বাহিনী। কিন্তু তুরস্কের সেনা ও অস্ত্র সহায়তায় সেই আশা পূরণ হয়নি হাফতারের। তুর্কি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ড্রোন হাফতারের সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করে। গতমাসে (জুনে) জিএনএ বাহিনী অবশেষে ত্রিপলির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। জেনারেল হাফতার শহরের উপকণ্ঠ থেকে তার সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়।

মে মাসে জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়। যাতে বলা হয়, ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন পরিচালিত রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ থেকে কয়েক’শ সৈন্য লিবিয়ায় জেনারেল হাফতারের সমর্থনে যুদ্ধ করছে। বলা হয় ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

তবে সম্প্রতি ত্রিপোলি থেকে থেকে ব্যর্থ হয়ে হাফতারের পিছু হটার মধ্যে খবর প্রকাশিত হয় যে, ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা লিবিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। লিবিয়ায় ওয়েগনার গ্রুপের ভাড়াটে সেনাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তারা যদি লিবিয়া যুদ্ধে জড়িত থাকেও তাহলে তাতে রুশ সরকারের কোনো হাত নেই। তারা রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে না।

বর্তমানে পশ্চিম লিবিয়ার অধিকাংশ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকারি বাহিনী। এখন দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শহর সিরতে পুনরুদ্ধারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে তারা। এটি সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির জন্মভূমি। এদিকে সিরতে রক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছে এলনএন।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply