আয় বৃদ্ধিতে বেড়েছে ভোগ, খাল ভরছে আবর্জনায়: এলজিআরডি মন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগ বেড়েছে। আর এ কারণেই ময়লা আবর্জনার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। নদ-নদী, খালসমূহে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশন হওয়ার ফলে পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। মেঘনা নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখার লক্ষে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য আজকের এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বলে জানান তিনি। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ওয়াসার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীতব্য ‘মেঘনা নদীর মাস্টার প্ল্যান’ শীর্ষক এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান। মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, সকলের সমন্বিত উদ্যোগে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে পারবো। রাজধানীর খালসমূহ দখলমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে হাতিরঝিলের আদলে নির্মাণ করলে ঢাকা শুধু বাসযোগ্য নয় দৃষ্টিনন্দন এবং বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে জানান মন্ত্রী। মেঘনা নদীকে দখল ও দূষণ এবং নাব্যতা সংকট থেকে রক্ষা করতে একটি মহাপরিকল্পনা নিতে এ মাস্টার প্ল্যান যা বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি চার লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ১৮ মাস বলে জানান তিনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা এবং খালের দায়িত্ব দেওয়ার পরেই দুই মেয়র অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে দিয়েছেন এবং কার্যক্রম চলমান আছে। খালসমূহ এবং নদীর দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিকল্পিতভাবে ঢাকাকে শুধু বাসযোগ্যই নয়, আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন এবং বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান পদ্মা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। এছাড়াও সরকার তুরাগসহ ঢাকার অদূরে বেশ কিছু নতুন শহর গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করার পর নদীরক্ষাসহ অনেক জাতীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। নদীপথ ব্যবহার করেই বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের চলাচলের পাশাপাশি পণ্য আনা নেয়া করা হতো। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এক সময় পিছিয়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত দূরদর্শী এবং গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ এ রূপান্তরিত হবে। কর্ণফুলীসহ ঢাকা শহরের আশপাশের ৪টি নদীর দূষণ ও দলখমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ সময় মন্ত্রী জানান, ঢাকার ৩৯টি খালকেও পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ওয়াসা এবং ইনস্টিটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মেঘনা নদী যাতে দূষণ ও দখলের কবলে না পড়ে সে জন্য এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্থানীয় সরকারের ও নদী নিয়ে কাজ করা দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ চুক্তি হয়। ১৮ মাসের প্রকল্পে নদীর দূষণ ও দখল রোধে করণীয় নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকারকে অবগত করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটি। পরে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ প্রকল্পে ফোকাল পারসন হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সহায়তা দেবে ঢাকা ওয়াসা।