আফগানিস্তান বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাশ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে যেখানে নিরাপদে আফগান ও বিদেশি নাগরিকদেরকে নিরাপদে আফগানিস্তান ত্যাগের সুযোগ দিতে তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রস্তাবে সাধারণ আফগানদের কাছে মানবিক সাহায্য পাঠানোর সুযোগ করে দিতেও তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৩টি দেশ ভোট দেয় এবং চীন ও রাশিয়া ভোট দানে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ প্রস্তাব তুলে ধরে এবং এতে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সমর্থন ছিল। ধারনা করা হচ্ছে, সংকট কবলিত আফগান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং সেখানে অবস্থিত সমস্ত বিদেশি সেনা পুরোপুরি সরিয়ে আনার ক্ষেত্র সৃষ্টির জন্যই নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে আফগানিস্তান ও তালেবানদের ব্যাপারে কি ধরনের আচরণ করা হবে তা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো চায় তালেবানদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে বাধ্য করতে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন রাজধানী কাবুলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য লন্ডন ও প্যারিসের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আফগানিস্তানে মানবিক ত্রাণ পাঠানো এবং তালেবানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
অন্যদিকে, চীন ও রাশিয়া চায় তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং যতদিন পর্যন্ত তারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অটল থাকবে ততদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখতে। প্রকৃতপক্ষে, চীন ও রাশিয়া আফগানিস্তানের ওপর তালেবানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে অনস্বীকার্য বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং তালেবানদের সঙ্গে বৈঠকে ওই দুই দেশ তালেবানদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের শর্তে তাদের শাসনকে মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও রাশিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু চীন আফগানিস্তানে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ওই দেশটিতে তাদের উপস্থিতি ধরে রাখার জন্য তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। অন্যদিকে তালেবানরাও আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য বেইজিংএর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
জোসেফ বোরেল
চীন ও রাশিয়ার নমনীয় নীতির বিপরীতে মার্কিন নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্ব তালেবানদের ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে।
বর্তমানে তারা তালেবানদেরকে স্বীকৃতি না দেয়ার বিষয়ে অটল রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, এ মুহূর্তে তারা আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি নাগরিকদেরকে এবং আফগান কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারবর্গকে নিরাপদে বের করে আনার জন্য তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে, তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ওই দেশটির ভবিষ্যতের ব্যাপারে এখনো বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। কেননা আল কায়দা ও দায়েশ বা আইএসের মতো উগ্র গোষ্ঠীগুলোর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে চরম বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর আগে তালেবানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হতো। কিন্তু এখন দায়েশ বা আইএস জঙ্গিরা কাবুল বিমান বন্দরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।#
Tag: English News Featured world
No comments: