Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» »Unlabelled » মেহেরপুর দরগা ও কিছু কথা




দরগাঃ বা দরগাহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ দরবেশের কবর বা মাজার। পারিভাষিক অর্থ বাংলাদেশর বিভিন্ন অঞ্চলে দীন ইসলাম প্রচারের জন্য শত-শত আল্লাহর ওলি এদেশে এসে প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের চরিত্র মাধুর্য ও ইসলামের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে পবিত্র ইসলামের প্রচার-প্রসার করে আমৃত্যু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে তার কর্মস্থলে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন; ওই সকল আল্লাওয়ালাদের পবিত্র কবরস্থানই ‘দরগা’ হিসেবে পরিচিত। এমন শত-শত অলি আউলিয়াদের ভিতর আমার আলোচ্য বিষয় কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পাড় সংলগ্ন পীর মেহেরুল্লার দরগা প্রসঙ্গে। বিষয়টি আলোচনার পূর্বে একবার ভাবা প্রয়োজন যে, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর ধর্ম প্রচারের প্রায় শেষাংশে দশম হিজরীতে বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি লক্ষ লক্ষ সাহাবিদের উদ্দেশ্যে ইসলামের পবিত্র বাণী যারা শুনতে ও জানতে পারেনি তাদের কাছে ওই বাণী পৌঁছে দেওয়ার যে উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন, তা সকল সাহাবীর হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। একাদশ হিজরীতে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ইন্তেকালের পর সেই সব সাহাবী নিজ দায়িত্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের বাণী প্রচার করতে থাকেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তাদের অনুসারিদের (তাবেইন) প্রচারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার ওসিয়াত করে যান। অনুসারীরাও সাহাবীদের ওসিয়ত মত ইসলামের দাওয়াতের কাজ চালাতে চালাতে মৃত্যুর পূর্বে তার অনুসারিদেরও (তাবে- তাবেইন) ইসলামের দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার ওসিয়ত করে যান। এইরূপে বংশ-পরম্পরা অজানা লোকদের নিকট ইসলামের মহান বাণী পৌঁছাতে থাকে। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার এরই ধারাবাহিকতার ফল। বাংলাদেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ট “ব” দ্বীপ। অসংখ্য নদ-নদী এদেশে জালের মত বিছিয়ে আছে। নদী বাহিত পলি দ্বারা এদেশ গঠিত। সুদূর অতীত থেকে অদ্যাবধি ঝড়-ঝঞ্জা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প-ভূমিধস প্রভৃতি প্রতি বছরেরই ঘটনা। কালের বিবর্তনে এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের অসংখ্য মানুষ ও প্রাণীকূলের জীবনহানি ঘটিয়ে চলেছে প্রতি বছর। এরপরও সকল দুঃখ-বেদনা ভুলে পুনঃ পুনঃ শক্তি সঞ্চয় করে নব উদ্যমে মানুষেরা উঠে দাঁড়িয়েছে। এদেশের উর্বর পলিমাটি আজও সোনার ফসলে দেশ ভরিয়ে দিচ্ছে। এই উর্বর ভূমির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরদেশী, লুটেরা বার বার এদেশের প্রতি তাদের সুঁচালো নখরের থাবা বসিয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে এদের উর্বর ভূমি। আবার সেই সব আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের আগমনের সাথে সাথে এদেশের কৃষ্টি কালচারেও ঘটেছে তাদের কৃষ্টি-চালচারের প্রভাব। রেখে গেছে তাদের দেশ-কালের ছাপ। বাঙালীর ইতিহাস খুঁজতে গেলে যে মাইল ষ্টোনে দাঁড়িয়ে পথের অনুসন্ধান করতে হবে তা হল বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। ৬ষ্ঠ শতকেই চর্যার কাল বলে ধরা হলেও বাঙালীর ইতিহাস আরও হাজার বছরের পুরাতন। বিভিন্ন দেশ ও জাতির সংমিশ্রণে এজাতি শংকর জাতিতে পরিণত হয়েছে। এর পিছনে সুস্পষ্ট অনেক কারণও রয়েছে। চর্যাপদের আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই এগুলো বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য ধর্মীয় রিতি-নীতির নিগুঢ় রহস্য। এটা বৌদ্ধদের সাধন সংগীত। সম্রাট অশোকের চেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম ভারত-বর্ষের গন্ডি পেরিয়ে শ্রীলংকা, চীন, লাওস, কম্পোডিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে এর বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের পূর্বে এখানে বসবাসকারীরা ছিল অনার্য। তারা বিকৃত হিন্দু ধর্ম পালন করত। তৎকালীন সমতট অঞ্চলে (দক্ষিণ বঙ্গ) বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির লোক বাস করত। পরবর্তী সময় এ অঞ্চল হিন্দু রাজাদের শাসনাধীনে আসে। হিন্দু রাজাদের চাপে অনেক বৌদ্ধ হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বাংলাদেশে মুসলমানদের ইতিহাস বহু পরের ঘটনা। মুসলমানদের ভাষায় এটা দারুল হরফ বা বিধর্মীর দেশ। ৭১২ খৃষ্টাব্দে মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু অভিযানের মধ্য দিয়ে ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমন শুরু হয়। গজনীর শাসক সুলতান মহামুদের সতের বার সফল ভারত বিজয় অভিযানের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ভারত বিজয়ের ধারা শুরু হয়ে পরবর্তীতে তা অব্যাহত থাকে। ১২০৪ খৃষ্টাব্দে বাংলাদেশে বিজয় অভিযান পরিচালনা করনে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন-বখতিয়ার খিলজি। তিনি মাত্র সতেরজন সৈন্য নিয়ে বঙ্গ আক্রমণ করেন। তখন সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান এবং বঙ্গ দেশে মুসলমানদের শাসন শুরু হয়। মুসলমানদের এই বিজয়ের ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে মুঘল সম্রাট আকবরের পরিপূর্ণ বাংলা মুসলিম শাসনাধীনে আনার মধ্য দিয়ে। ভারত ও বঙ্গদেশে মুসলিম শাসক ও সেনানায়কদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশের মুসলিম শাসকদের রাজ্য স্থাপনের পাশাপাশি ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটতে থাকে। মুসলিম রাজন্যবর্গের অভিযানের পূর্বে ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ সমুদ্র পথে সিংহল, চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বিভিন্ন ওলি-আউলিয়া, পীর-মাশায়েকরা। ইসলামের সেবায় নিজেদের উৎসর্গকৃত ওই সকল ইসলাম প্রচারকগণ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে ধর্ম প্রচারের কাজ করতে থাকেন। এমনই একজন পীর মেহের উদ্দীন। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ২নং সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের পূর্বপাড়ে তৎকালীন সুন্দরবনের অংশ বিশেষ এই মেহেরপুর গ্রাম। মেহেরুদ্দীন পীরের আগমনের পূর্বে এই গ্রামের অন্য কোন নাম ছিল কি না তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মেহের উদ্দীন পীরের আগমনের সময় এখানে হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের লোকের বসবাস ছিল। বর্তমানে এই গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার হলেও এর ভিতর মুসলিম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মালম্বী নেই। এলাকাবাসীর মতে এখানে বসবাসকারী সকল হিন্দু বা বৌদ্ধরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। কখন মেহেরুদ্দিন পীর এখানে আসে এ সম্পর্কে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলেছেন। এক শ্রেণীর ব্যক্তিরা মনে করেন দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ (সম্ভবত ইয়েমেন) থেকে হযরত মেহেরুদ্দীন আউলিয়া (রঃ) এদেশে এসে কলেমার দাওয়াত দেন এবং এখানকার লোকদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। তবে এই মতের পিছনে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। যারা এই মত প্রকাশ করেছে তাদের কথায় মনে হয়েছে এটা অনুমান নির্ভর। আর এক শ্রেণী মনে করে মেহেরুদ্দিন পীর খান জাহান আলী পীরের অনুসারী। তারা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, খান জাহান আলী শিষ্য-সাবুদ নিয়ে বারবাজারে অবস্থান করে। সেখান থেকে যশোরে এসে তাদের দুভাগে ভাগ করে দেন। এদের একটা ভাগ কেশবপুরের উপর দিয়ে সুন্দরবন অঞ্চলে চলে যান। যাওয়ার পথে এক এক জনকে এক এক অঞ্চলে অবস্থান করে ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। এদেরই একজন মেহের উদ্দীন পীর। যারা এই মতাদর্শে বিশ্বাসী তারা জানায় বিষয়টি গ্রন্থ থেকে জেনেছে। তারা সঠিক ভাবে গ্রস্থ ও লেখকের নাম বলতে পারেননি। কখনও বলেছে ‘আমার দেখা সুন্দরবন’ আবার কখনও বলেছে ‘তাছকেরাতুল আউলিয়া’ তবে লেখকের নাম বলতে পারেননি। আর একটি বর্ণনায় জানা যায় ফরিদ উদ্দীন আক্তার লিখিত ‘তাছকেরাতুল আউলিয়ায়’ মেহের পীরের কথা আছে, কিন্তু ওই গ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এই মতের পক্ষে সতীশ চন্দ্র মিত্রের ‘যশোর- খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থে পঞ্চম পরিচ্ছেদে এমনি একটি বর্ণনা রয়েছে। বর্ণনায় খান জাহানকে সুন্দরবনাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত শাসনকর্তা বলা হয়েছে। তাকে দিল্লী বা বঙ্গের অধীনতা স্বীকার করে চলতে হয়েছিল। এ সময় নাসির উদ্দীন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-৬০) বঙ্গে শান্তিতে রাজত্ব করতেন। খান জাহান অনুচরদের নিয়ে বারবাজার থেকে মুরলী কসরা আসেন। সেখান থেকে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভাগ ভৈরবের কূল ধরে বাগেরহাট চলে যায় অপর ভাগটি সোজা দক্ষিণমুখে কপোতাক্ষের পূর্বধার দিয়ে ক্রমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সাহস, কর্মতৎপরতা, ধর্মনিষ্ঠায় বিখ্যাত থাকায় বুড়া খাঁ ও তার পুত্র ফতে খাঁ-কে আবাদ পত্তন ও ধর্ম প্রচারের ভার দিয়ে যান খান জাহান। বুড়া খাঁ ও ফতে খাঁর নেতৃত্বে দলটি কেশবপুরের বিদ্যানন্দকাটী, সরফাবাদ ও মির্জাপুর অঞ্চলে কিছুদিন অবস্থান করেন ও কিছু দীঘিও খান জাহান আলী খনন করেন। এ সময় খান জাহান আলী নিজে এসে এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। তাঁর কোন অনুচরের নামের স্মৃতি রক্ষার্থে সরফাবাদ গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। এরপর বুড়া খাঁ আরও কয়েকজন অনুচর নিয়ে বিদ্যানন্দকাটী হতে পশ্চিম মুখে এসে কপোতাক্ষের কূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন। এর মধ্যে ত্রিমোহিনীর সন্নিকটে গোপালপুরে একজন অনুচরকে রেখে যান। এখানে এখনও খান জাহান আলী নামে একটি মসজিদ আছে। গোপালপুর হতে দক্ষিণ দিক কপোতাক্ষের পূর্বকূল দিয়ে অগ্রসর হলে মেহেরপুরে পীর মেদ্দিন বা মেহের উদ্দীনের সমাধি। উল্লেখিত বর্ণনানুযায়ী মেহের উদ্দীন পীর খান জাহান আলীর অনুচর ছিলেন। সতীশ চন্দ্র মিত্রের বর্ণনায় মেহের পীর খান জাহান আলীর অনুচর বলে মনে হয়। তার বর্ণনায় এক লাইনে মেহের উদ্দীনের কথা শেষ করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলার চেষ্টা করেছেন মেহের পীর দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে খাজা মঈনউদ্দীন চিশতীর নিকটে আসেন এবং তারই ইজাজাত নিয়ে এদেশে আসেন। তিনি কপোতাক্ষ নদ দিয়ে মেহেরপুর পৌঁছান। তিনি ইসলাম প্রচারের সাথে-সাথে মেহেরপুরে চিশতিয়া তরিকার অনুসারী ছিল বলে জানা যায়। আর এক শ্রেণী মনে করে মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনের অধিবাসী মেহের উদ্দীন আজমীর শরীফে কিছুদিন অবস্থানের পর খান জাহান আলীর অনুসারী হয়ে এদেশে আসেন। বাগেরহাটে খান জাহান আলীর দীঘিতে কালা পাহাড় ও ধলা পাহাড় নামে যে কুমির আছে তারা অদ্যাবধি কোন মানুষ কামড়ায় না। এটা খান জাহান আলীর কেরামতি। মেহেরপুরে মেহের উদ্দীন পীরের মাজারের পাশে গাছের শিকড় কুমির আকৃতি হওয়ার পিছনে কোন অলৌকিকতা থাকতে পারে। এছাড়াও ওই স্থানের মাহাত্ম সম্পর্কে লোক মুখে কিছু কেরামতির কথা শোনা যায়। ১) মেহেরপুরের আবুল খাঁ ওই দরগা এলাকার গাছের পাতা ও ছোট শুকনা ডাল কুড়িয়ে জ্বালানি করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যায়, তার এই কাজের জন্য কেউ কেউ নিষেধ করে এবং ক্ষতি হতে পারে সাবধান করা সত্ত্বেও সে ওই জ্বালানি নিয়ে গিয়ে রস জালায়। ঘটনার পরদিন তার ২/৩ বছরের মেয়ে আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং তার পরদিন তার ৬/৭ বছরের ছেলে পানিতে ডুবে মারা যায়। ২) ওই এলাকার জনৈক ব্যক্তির একটি ঘোড়া হারিয়ে যায়, বহু খোঁজা-খুঁজির পরও তাকে পায় না। ওই ব্যক্তি দরগায় এসে দেখে তার ঘোড়া শুয়ে আছে। সে নিজের ঘোড়া মনে করে এখানে শুয়ে আছিস বলে ঘোড়ার পিঠে একটা লাটি দিয়ে আঘাত করার সঙ্গে-সঙ্গে ঘোড়াটি বাঘের রূপ নিয়ে ওই ব্যক্তির মাথায় থাবা দেয়। লোকটি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। সে একদিন স্বপ্ন দেখে কোন ঔষধ পত্র না খেয়ে দরগা থেকে বালি নিয়ে সেঁক দিলে সে ভাল হবে। সে স্বপ্নের বিবরণ অনুযায়ী তাই করে এবং তাতেই তার সুস্থতা ফিরে আসে। ৩) ওই এলাকার জনৈক ব্যক্তির নারকেল গাছে নুতন নারিকেল ধরায় অন্য এক ব্যক্তি ওই নারিকেল খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। মালিক তখন মেহের পীরের দরগায় একটা নারকেল না দিয়ে নিজে খাবেনা বলে জানালে ওই ব্যক্তি কিছু হবে না বলে নিজেই গাছে উঠে এবং নারিকেল ছেঁড়ার চেষ্টা করার সাথে সাথে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ওঠে। ৪) একবার খুলনা এলাকার এক পুলিশ কর্মকর্তা জনৈক ব্যক্তিকে একটি কচু পীরের দরগার আনতে দেখে কচুটি চায়। লোকটি কচু পীরের দরগায় দেবে বলে জানালে পুলিশ ব্যক্তিটি রসিকতা করে নিজে মেহেরপীর বলে কচু নেয়। ওই কচু খেয়ে পুলিশ ব্যক্তিটির পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘদিন সপরিবারে পীরের দরগায়ে এসে ধীরে ধীরে অসুস্থতা থেকে মুক্তি পায়। আজ থেকে প্রায় দুই প্রজন্ম আগে একবার মেহেরপুরে কলেরায় অসংখ্যা লোকের মৃত্যু হতে থাকে। এলাকার মুরুব্বীরা তৎকালীন দরগার খাদেমের সংগে পরামর্শ করে দরগায় একটি খাসী ছাগল জবাই করে মুসল্লীদের নিয়ে মৃতদের জন্য সম্মিলিতভাবে দোয়া করে খানাপিনার পরে মেহেরপুরের চারিদিকের সীমানায় দরগার শিকল ও আশা নিয়ে লোহার পিলার পুতে সীমানা বন্ধ করে খাদেম ঘোষণা করে আজ থেকে আর কখনও এই গ্রামে কোন বড় মহামারী ঘটবে না। সেই থেকে অদ্যাবধি আর কোন বড় মহামারী মেহেরপুরে হয়নি। এ রকম আরও অনেক কেরামতির কথা শোনা যায়। এলাকার সকল মানুষ মেহের পরীকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। এই দরগার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি দরগা কমিটি আছে। ওই কমিটির সভাপতি অত্র এলাকার শিক্ষক মোঃ অজিয়ার রহমান মোল্যা ও সেক্রেটারী সাবেক বি ডি আর সদস্য মোঃ আব্দুল মজিদ মোড়ল। ৩ একর ২৬ শতাংশ জমির উপর ৪টি বড় বটবৃক্ষ ও ১টি বড় বকুল গাছ সমগ্র দরগা এলাকাটি ছাতার মত ঢেকে রেখেছে। দেখলে মনে হয় সমগ্র দরগা এলাকাটি আল্লার রহমতের অপরূপ নিদর্শন। বর্তমান কমিটির প্রচেষ্টায় নতুন করে মেহগনি, আম, সুপারি ও অন্যান্য প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। দরগার পুরো এলাকাটি খাস জমি হিসেবে রয়েছে। কমিটির প্রচেষ্টায় দরগা এলাকার বেশ কিছুটা উন্নয়ন করা হয়েছে। মূল দরগাটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ১৬ ফুট ৩ ইঞ্চি বর্গাকার। বর্গাকৃতির মাজারটির ভিতরে ঢুকে চারপাশ প্রদক্ষিণ করা যায়। এক দরজা বিশিষ্ট মাজারটি ভিতরে ঢুকলে মনে পবিত্রতা আসে এবং পীর মেহেরুদ্দিনের প্রতি মাথা শ্রদ্ধায় অবনত হয়। মূল কবরের উপর পাকা গাঁথুনিটিও প্রায় বর্গাকৃতি। কবরের উপর নির্মিত ভবনটি দেওয়াল গাত্র সংলগ্ন চারটি ছোট মিনার কারুকার্য খচিত ইট দ্বারা নির্মিত। দক্ষিণ দিকে ছোট একটি দরজা। দরজার দক্ষিণ পাশে একটি বড় বকুল গাছ। গাছের পাশেই একটি বেদী। মূল দরগাটি তৎকালীন পুরু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। দরগার দরজার বাহির পাশে তার কোন এক অনুসারীর বাধানো কবর রয়েছে। পীরের রওজার উত্তর পাশে পাঁকা ইঁদারা আছে। সমগ্র এলাকাটিতে মসজিদ ও অনেক কবর রয়েছে। যেগুলো বর্তমানে মাটির সাথে মিশে গেছে বলে কমিটির সভাপতি জানান। দরগা কমিটির প্রচেষ্টায় এখানে প্রতি বছর ১লা জ্যৈষ্ঠ একদিনের মেলা বসে। ওই দিন বহু লোকের সমাগম হয়। মেহের পীরের বহু ভক্তেরা সেদিন পীরের দরগায় শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার পীরের দরগায় কিছু লোকের আগমন ঘটে। তারা তাদের আকাঙ্খা অনুযায়ী মানত করে বা মানত পরিশোধ করতে আসে, বর্তমানে মাজার খাদেম হিসেবে খন্দকার সলিমুল্লাহ দায়িত্ব পালন করছেন। মাজারে আগতরা তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেন। মাজার কমিটি দরগার জিনিসপত্র সংরক্ষণ ও একটি লাইব্রেরী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে আগত ব্যক্তিদের রান্না ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য একটি রদ্ধনশালা, ডেক, থালাসহ আনুসঙ্গিক জিনিষপত্র সংগ্রহ করেছেন। আগত লোকদের বসার জন্য দুটি বাঁধাই বেঞ্চ তৈরী করেছে। আগামী দিনে কমিটি লাইব্রেরী উন্নয়নসহ দরগা শরীফের ব্যাপক উন্নয়নের আশা করছেন। মেহেরপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগোষ্ঠি এই দরগার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা মনে করে এমন একজন আউলিয়া তাদের মাটিতে শায়িত থাকার তাদের এলাকার প্রতি আল্লার রহমত বর্ষিত হয়। এই চিন্তা ধারা বক্ষে ধারণ করে মেহেরপুরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আজও মেহেরপীরের দরগার গর্বে গর্বিত। তথ্য সংগ্রহ: ১) যশোর-খুলনার ইতিহাস – সতিশ চন্দ্র মিত্র। ২) পাক ভারত ও বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস – কে, আলী।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply