Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির : মেহেরপুর জেলায় সাম্প্রদায়িকতার শিকার এক স্থাপনা




সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির : মেহেরপুর জেলায় সাম্প্রদায়িকতার শিকার এক স্থাপনা আবহমান কাল থেকেই এই বাংলায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ একসাথে সহাবস্থান করে আসছে। দীর্ঘ সময় ঔপনিবেশিক শাসনের আমলে থাকার ফলে এই ভৌগলিক অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার প্রবণতা বেশ পুরাতন। স্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন মন্দির এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার এবং এই অঞ্চলের সুপ্রাচীন সনাতন ইতিহাসের প্রতিফলন করে। তেমনই এক মন্দিরের সাথে পাঠক দের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে আমার আজকের এই লেখনীর অবতারণ। বলছিলাম মেহেরপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরের কথা। দেশের বিভিন্ন কোণায় আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শতবর্ষ পুরাতন এই মন্দির টিও অন্যতম। মন্দিরটির অবস্থান মেহেরপুর জেলা শহরের বড় বাজারে। একদম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই মন্দির টিকে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে গণ্য করে থাকেন। মন্দিরের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে বালা দেবীর বিগ্রহ। কালি হিন্দুধর্ম মত অনুসারে বিনাশের দেবী, শিষ্টের লালন এবং দুষ্টের দমনই যার প্রধান কাজ বলে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলার সু-প্রাচীন এই মন্দিরটির নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি, ঠিক যেমন সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায়নি কে সর্বপ্রথম এই মন্দিরের গোড়াপত্তন করেন। বিভিন্ন গবেষকের মতের ওপর ভিত্তি করে অনুমাণ করা হয় রাজা গোয়ালা চৌধুরী কিংবা তার বংশধরেরা তাদের যশ, প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের আশায় এই মন্দিরটির গোড়াপত্তন করেছিলেন। তবে মন্দিরের দেয়ালে উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায় ভিন্ন এক ইতিহাস। সেখানের লিপি অনুযায়ী বাংলা ১৩৩২ সনে প্রয়াত গোপাল সাহার স্ত্রী পাচু বালা দাসী নির্মাণ করেন এই মন্দিরটি।

সাম্প্রদায়িক আক্রোশের শিকার হওয়ার এক করুণ ইতিহাস রয়েছে এই মন্দিরের। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের দোসরদের রোষের শিকার হয় এই মন্দিরটি। তারা সেসময়ে এই মন্দিরটি আক্রমণ করে এবং অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত বিগ্রহটি গুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে স্থানীয় সরকার এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় পুনরায় বিগ্রহ স্থাপিত হয় এবং নিয়মত পূজা অর্চনা শুরু হয়। প্রতিবছরই এখানে কালী পূজা ছাড়াও দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়। বৈশাখ মাসের শেষ সংক্রান্তিতে এই মন্দির জুড়ে বসে বৈশাখ সংক্রান্তির মেলা। তখন দূর দূরান্ত থেকে লোক সমাগম হয় এই মন্দিরকে ঘিরে। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন মেহেরপুরের এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে, কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা এই মন্দির দর্শনের সাথে সাথে মেহেরপুর জেলার আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যেমন : মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স,আমদহ গ্রামের স্থাপত্য, আমঝুপি নীলকুঠি, ভাটপাড়া নীলকুঠি ইত্যাদি ঘুরে আসতে পারেন। আর অবশ্যই মেহেরপুরের বিখ্যাত 'সাবিত্রী' নামক মিষ্টির স্বাদ নিয়ে আসতে ভুলবেন না। ইতিহাস-ঐতিহ্যে পূর্ণ এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্ম এবং উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে যুগের পর যুগ। অতীতের করুণ ইতিহাস ঝেড়ে ফেলে এখন ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেন এই মন্দির অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে বহুকাল ধরে। অতীতের জৌলুস কিছুটা ম্লান হয়ে এলেও এখনও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা এই মন্দির তার দর্শনার্থী কিংবা বিশ্বাসীদেরকে হতাশ করবে না কখনোই। কিভাবে যাবেন : মেহেরপুরের এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির দেখতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে মেহেরপুর সদরে । ঢাকা থেকে সড়কপথে মেহেরপুর সদরের দূরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। পৌঁছাতে সময় লেগে যেতে পারে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা । সড়কপথে ঢাকা থেকে মেহেরপুর আসার দুটি পথ রয়েছে, গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে মেহেরপুর অথবা গাবতলী থেকে যমুনা সেতু হয়ে মেহেরপুর। সড়কপথে ঢাকা টু মেহেরপুর বেশ কিছু পরিবহন সংস্থার বাস চলাচল করে, তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, দর্শনা ডিলাক্স, এমএম পরিবহন, জে আর পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকা। মেহেরপুর জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেটেই যেতে পারবেন বড়বাজারে অবস্থিত এই মন্দিরে, অথবা বাস টার্মিনাল থেকে রিকশা ভ্যানে করেও পৌঁছাতে পারবেন এই স্থানে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply