মাসে আয় ২ লাখ টাকা মধু বিক্রি করে এক স্বজনের পরামর্শে ১০ হাজার টাকা আর চারটি মৌ-বাক্স দিয়ে মৌচাষ শুরু করেন
রোকনুজ্জামান। মৌচাষে পুরোদমে আত্মনিয়োগ করে মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী। তার দেখানো পথে অনেকেই মধু খামার গড়ে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। প্রথমে চারটি মৌ বাক্স দিয়ে খামার শুরু করলেও এখন দুই শতাধিক মৌ বাক্সের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই মণ মধু উৎপাদিত হচ্ছে। মধু বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। শুরুতে দেশীয় মৌমাছি নিয়ে চাষ শুরু করেন রোকনুজ্জামান। পরে অস্ট্রেলিয়ান জাতের মৌমাছি কিনে আনেন। এরপর থেকে তাকে আর ভাবতে হয়নি। দেশীয় জাতের মৌমাছির চেয়ে অস্ট্রেলিয়ান জাতের মৌমাছিতে অনেক মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম। রোকনুজ্জামান এখন নিজেই একজন দক্ষ প্রশিক্ষক ও জেলার সর্বোচ্চ মধু উৎপাদনকারী। কৃষিকাজ করে সংসার চালানো রোকনুজ্জামান ২০০৪ সাল মাগুরা জেলায় এক স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে এক খামারির মৌচাষ দেখে মুগ্ধ হন। বাড়িতে এসে তিনিও সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কারিগরি প্রশিক্ষণ ছিল না, তবে মাগুরা থেকে মৌচাষ ও মধু সংগ্রহের কলাকৌশল জেনে আসেন তিনি। প্রথমে ১০ হাজার টাকা দিয়ে চারটি মৌ বাক্স কিনে আনেন এবং পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেন মৌ চাষে। নিরলস পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি স্বাবলম্বী। মধু বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় ২ লাখ টাকা। পরে তিনি মৌচাষ ও মধু উৎপাদনের জন্য কারগরি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সরেজমিনে কুতুরপুর গ্রামের হাসপাতাল পাড়ায় রোকনুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ওঠানভর্তি একাধিক মৌ-বাক্স। মৌমাছিরা বাক্সে আনাগোনা করছে। এখন আম ও লিচুর মুকুলের মৌসুম। মৌমাছি আম ও লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব বাক্সে জমা করছে। প্রতিটি বাক্সের উপরিভাগ কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কালো পলিথিনের মোড়ক খুলে মৌ-বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে ধরে থাকা মৌচাক বের করা হচ্ছে। এরপর মধু আহরণ যন্ত্র দিয়ে চাক থেকে মধু বের করে নিচ্ছেন কর্মচারীরা। খামারি রোকনুজ্জামান বলেন, মৌচাষ শুরু করতে অনেকটা সময় লেগেছে আমার। প্রথমে এত লাভজনক ছিল না। ধীরে ধীরে মৌমাছির আচরণ বোঝার পর মৌচাষে সফলতা পেয়েছি। এরপর এলাকায় আরও চারটি বাগানে মৌচাষ করার জন্য মৌবাক্স তৈরি করে রাখা হয়েছে। সহযোগিতার জন্য দুজন মাসিক বেতনে কাজে করছে। এখন প্রতি সপ্তাহে ৩ মণ করে মধু উৎপন্ন হচ্ছে। সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন, মৌচাষ করে পরিবারের খরচ মিটিয়ে কৃষিজমি কিনেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একটি বাড়ি বানাব। সেটিও পূরণ হয়েছে। খামারি রোকনুজ্জামান প্রথম দিকে তিনি দেশীয় মৌমাছি নিয়ে চাষ শুরু করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ান জাতের মৌমাছি কিনে আনেন। এখন তার অনেক টাকা আয় হচ্ছে। অনেকে তার কাছ থেকে মৌমাছি ও বাক্স কিনে চাষ শুরু করেছেন বলে জানান রোকনুজ্জামান। খামারের কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম জানান, ৮ থেকে ১০ দিন পরপর মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌ-বাক্সে আছে একটি করে ‘এপিস মেলি ফেরা’ জাতের রানি মৌমাছি। রানির আকর্ষণে ২৫০ থেকে ৩০০টি পুরুষ মৌমাছি মুখে মধু নিয়ে বাক্সে প্রবেশ করে মধু জমা রেখে চলে যায়। রানি মাছির প্রত্যেকের শরীরের ঘ্রাণ আলাদা। এক বাক্সের মৌমাছিরা কখনো অন্য বাক্সে যায় না। ভুল করে গেলেও ওই বাক্সের মৌমাছিরা তাকে মেরে ফেলে। আর রানিদের ঘ্রাণ যাতে বাইরে না ছড়ায়, সে কারণেই প্রতিটি বাক্স মোটা কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো হয়। রানি মৌমাছি প্রতিদিন একটি করে পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে দৈহিক মিলন ঘটায়। মিলনের পর পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়। মৌমাছিদের আচার-আচরণের এমন বিচিত্র গল্প শোনাচ্ছিলেন খামারের দক্ষ কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম। কর্মচারীরা জানান, দুই ধরনের মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়। একটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন্য মধু এবং দেশীয় জাতের মৌচাষ। সাধারণত বন্য মৌমাছিরা গাছের ডালে এবং বনজঙ্গলের চাকে মধু ছাড়ে। অন্যদিকে দেশীয় মৌচাষ হয় কাঠের তৈরি বাক্সের মধ্যে। কুতুবপুর গ্রামের রোকনুজ্জামান দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই মধু সংগ্রহ করেন। তার খামারে বর্তমানে দুই শতাধিক মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি বাক্সের মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কুতুবপুর গ্রামের জাকের শেখ বলেন, রোকনুজ্জামান মৌচাষ করে তার জীবনের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। মৌচাষ বৃদ্ধিতে আবারও বিভিন্ন স্থানে তার মৌ বাক্স স্থাপন করছেন। খামারের কর্মচারী হারুন আলী বলেন, মধুমাসে সবচেয়ে বেশি মধু তৈরি হয়। আম, জাম, লিচু, সরিষার খেত, নানা ফুল থেকে মধু নিয়ে এসে জমা করে মৌমাছি। এসব মধু বর্তমান বাজারে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল না থাকায় শহর থেকে অনেকে পাইকারি দামে কিনে নেন। খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, এতে আমাদের মধুর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। এ কারণে মধুর চাহিদা প্রচুর। বারো মাস মধু সংগ্রহ চলে। বিভিন্ন দোকানিও পাইকারি নিয়ে বিক্রি করেন রোকনুজ্জামানের খামারের খাঁটি মধু। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পারভিন আক্তার জানান, মৌচাষে রোকনুজ্জামানের সফলতা সত্যিকারে একটি মৌচাষের আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি কার্যালয় থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করি। এর আগে সরকারিভাবে আমদানি করা প্লাস্টিকের মৌবাক্স প্রদান করা হয়েছে। বেকার যুবকরাও বাড়িতে বসে না থেকে রোকনুজ্জামানকে অনুবরণ করতে পারেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খা বলেন, রোকনুজ্জামানের সফলতা দেখে জেলার বেকার যুবকদের মৌচাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রোকনুজ্জান প্রশিক্ষণে উপস্থিত থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জেলায় বর্তমানে অর্ধশতাধিক বেকার যুবক মৌচাষে আত্মনিয়োগ করেছে। অচিরেই মধু সংগ্রহে মেহেরপুরের নাম প্রকাশ পাবে সারা দেশে।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: